#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi
#পর্ব_১৩ (অন্তিম পর্ব)
–আপনার বাচ্চাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি
কথাটা শুনেই ফ্লোরে ধপ করে বসে পড়লো ইয়ামিন,প্রতিভা এটা জানতে পারলে ও এটা মেনে নেবে কি করে।রিয়াজ এসে ইয়ামিনকে ধরে দাঁড় করালো।
–শান্ত হ ভাই,নিজেকে শক্ত কর।
–আপনার ওয়াইফের শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দিয়েছিলো,সে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত আপনারা সেই বিষয়ে অবগত।গর্ভে থাকা বাচ্চাটাও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিল,নির্দিষ্ট সময়ে ব্লাড এডপ্ট না করায় মা বাচ্চা দুজনেই মৃত্যুঝুকিতে ছিল।আপনার ওয়াইফকে তো বাচিয়ে নিয়েছি বাট আপনার সন্তান আগে থেকেই মৃত ছিল।আই এম সরি মিঃইয়ামিন চৌধুরী,আপনি নিজেকে শক্ত করুন।আপনার ওয়াইফের সেন্স আসলে ওনার সাথে দেখা করতে পারবেন।বি স্ট্রং ম্যান।
ডক্টর ইয়ামিনের কাঁধে দুবার ধীরে চাপড় মেরে চলে গেলো,ইয়ামিনের চোখ ছলছল করছে তবুও নিজেকে নরমাল রাখার চেষ্টা করছে ও,প্রতিভার সামনে কিভাবে দাঁড়াবে বুঝতে পারছেনা ইয়ামিন।
ঘন্টাখানেক পর প্রতিভার সেন্স আসলে নার্স এসে ইয়ামিনকে ভেতরে যেতে বললো।ইয়ামিন কেবিনে ঢুকে দেখে বেডে হ্যালান দিয়ে সুয়ে আছে প্রতিভা,হাতে স্যালাইন চলছে ওর।
ইয়ামিন গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো,আওয়াজ পেয়ে চোখ মেলে তাকালো প্রতিভা,ইয়ামিন মাথা নিচু করে বসে আছে।
–আমার বেবি,আমার বেবি ঠিক আছে তো ইয়ামিন?
–(নিশ্চুপ)
–কি হলো,চুপ করে আছেন কেন আপনি?
আমার বেবি ঠিক আছে তো,বলুননা
–কেমন লাগছে তোমার,এখনওকি পেটে পেইন হচ্ছে?
–নাহ্,আমি ঠিক আছি।কিন্তু আমার বাচ্চা..
ইয়ামিন কিছু না বলে উঠে দাড়িয়ে উল্টাদিকে ঘুরে চোখের কার্ণিশে আসা চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো,প্রতিভার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা ওর নেই।
ইয়ামিন বেরিয়ে যেতেই মিসেসঃফাতেমা বেগম এসে কেবিনে ঢুকলেন।
–আম্মু,তুমি কাঁদছো?
কি হয়েছে আম্মু,আমিতো ঠিক আছি,দেখো কিছু হয়নি।আচ্ছা ওনার কি হয়েছে?এমন করে বেরিয়ে গেলো কেন?আমার বাচ্চা ঠিক আছেতো আম্মু?
মেয়ের প্রশ্ন শুনে মিসেসঃফাতেমা বেগম ডুকরে কেঁদে উঠলেন।
–তোর বাচ্চা আর নেইরে মা,তখন বলছিলিনা কি যেন জরায়ুমুখ দিয়ে টয়লেটে পরে গেছে,ওটা গর্ভফুল ছিলোরে,তোর বাচ্চা তোর পেটেই মরে গেছে (কাঁদতে কাঁদতে)
মায়ের কথা শুনে প্রতিভা একটা চিৎকার দিয়েই সেন্সলেস হয়ে গেলো।
রোগির সেন্স আসা পরপরই এতবড় একটা শোক সে নিতে পারেনি,যার জন্য ব্রেনে চাপ পড়ায় আবার জ্ঞান হারিয়েছে প্রতিভা।মিসেসঃফাতেমা বেগমের এই বোকামির জন্য ডক্টর বেশ ক্ষেপে গেছিলেন।
★
কেটে গেছে ১সপ্তাহ
প্রতিভা কেমন চুপচাপ হয়ে গেছে,আগের মতো প্রাণবন্ত চঞ্চলতা তার মধ্যে নেই,আর্টস স্কুলেও যায়না,কারোর সাথে কথাও বলেনা,নিজেকে ঘরবন্দী করে ফেলেছে একরকম।এত রিস্ক নিয়ে বেবি নিলো,কিন্তু কনসিভ করার পর এতবড় একটা ঘটনা।যে বাচ্চার জন্য এতো কাহিনি হলে সেই বাচ্চাকেই পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলোনা সে,কেমন মা ও।নিজেই নিজেকে দোষারোপ করতে করতে দিন কাটে প্রতিভার,বাচ্চা হারানোর শোকে সে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেছে।কথায় আছে না,অতি শোকে পাথর,প্রতিভারও সেই অবস্থা,একদম পাথরের মতো হয়ে গেছে ও।ওর মা ফাতেমা বেগম,ইয়ামিন জোর করে খাবার খাওয়ায়,তানাহলে খাবারও খায়না।
★
রাত ৯টা
ইয়ামিন অফিস থেকে বাসায় এসেছে,সেও কম শোকে নেই,কিন্তু সে তো অন্যের আন্ডারে জব করে,অফিসে তো যেতেই হবে।ইয়ামিন বেডরুমে গিয়ে দেখে প্রতিভা ছোট কাঁথা নিয়ে বসে আছে,বাচ্চার জন্য অনেকগুলো কাঁথা সেলাই করেছিলো প্রতিভা,এটা তার মধ্যেই একটা।
ইয়ামিন নিজের ব্যাগ টেবিলে রেখে শার্টের ট্রাই খুলে রাখলো।
–প্রতিভা
–(নো রেসপন্স)
–প্রতিভাআ
–(নো রেসপন্স)
–কি শুরু করেছোটা কি তুমি,এরকম করলে কি করে চলবে বলো।আল্লাহর জিনিস,আল্লাহ নিয়ে গেছেন।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন,হয়তো আমাদের কপালে ভালোকিছুই লিখে রেখেছেন উনি।
সন্তান হারিয়ে আমি কি কষ্ট পাচ্ছি না বলো,আমিও কষ্ট পাচ্ছি,কিন্তু পুরুষমানুষ তো তাই প্রকাশ করতে পারছিনা।আমিও যদি তোমার মতো করি তাহলে কিভাবে চলবে বলো,শক্ত হতে হবে তোমাকে।
কি হলো,শুনছো আমার কথা,প্রতিভা।
প্রতিভার মধ্যে কোনো রিয়াকশন নেই,সে নিজের মতো কাঁথা আকড়ে বিরবির করতে ব্যস্ত।প্রতিভাকে নিয়ে ইয়ামিন অনেকের সঙ্গে ডিসকাস করেছে,কি করলে প্রতিভাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যাবে।প্রায় সবাই দুটো জিনিস সাজেস্ট করেছে,
১.আবার বেবি নেওয়া উচিত,আল্লাহ কপালে ভালো কিছু লিখে রেখেছেন হয়তোে।
২.কোথাও থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসা উচিত,এতে যদি মনমাইন্ড ফ্রেশ হয়।
২য় অপশন টাই ইয়ামিনের কাছে বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হলো,ভালো কোনো জায়গা থেকে প্রতিভাকে ঘুরিয়ে নিয়াসাই ভালো হবে,তারপর ২-৩মাস যাক তখন নাহয় ২য় বেবির কথা ভাবা যাবে।এখন প্রতিভার নরমাল লাইফে ব্যাক করাটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট।
**দুদিন পরে অফিসে থেকে ছুটি নিয়ে ইয়ামিনের প্রতিভাকে নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।সিলেটের মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কারোর মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট,আর সে যদি প্রকৃতি প্রেমি হয় তাহলে তো কথাই নেই।প্রতিভা একজন প্রকৃতি প্রেমি মেয়ে,আর জলরাশি তো ওর সবচেয়ে প্রিয়।সিলেটের জাফলং সহ আরও অনেক জায়গা রয়েছে দেখার মতো,সব দিক বিবেচনা করে ইয়ামিন প্রতিভাকে নিয়ে এখানে এসেছে।প্রতিভার মা মিসেসঃফাতেমা বেগম রিয়াজদের বাড়িতে আছে।
★
১বছর পর,,
আবারও কনসিভ করেছে প্রতিভা,৯মাস চলছে ওর প্রেগন্যান্সির।এবারের টেস্ট রিপোর্টে জানা গেছে গর্ভের বাচ্চা একদম সুস্থ রয়েছে,তার মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার কোনো লক্ষন নেই।প্রতিভাও অনেক খুশি,একটা সুস্থ বাচ্চার জন্য আল্লাহর কাছে কতশত প্রার্থনা যে করেছে সে,তার হিসেব নেই,প্রতি রাত্রে রাত জেগে তাহাজ্জুদের নামাজও পরেছে স্বামীস্ত্রী দু’জন একসঙ্গে,আল্লাহ তাদের আশাহত করেননি,তাইতো সুস্থ বাচ্চা দান করেছেন তিনি।
সেইবার সিলেট থেকে ফেরার পরেও মাসখানেকের মতো সময় লেগেছে প্রতিভার শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে,এরপরপরই বাচ্চা নিয়েছে ওরা,মূলত প্রতিভাকে পুরোপুরি নরমাল করার জন্য।১ম থেকেই ইয়ামিন প্রতিভাকে ডক্টরের তত্ত্বাবধানে রেখেছে,যাতে এবার কোনো প্রবলেম না হয়।৪-৫জন ব্লাড ডোনারের সঙ্গেও কন্টাক্ট রেখেছে ইয়ামিন,যাতে যখন ব্লাড প্রয়োজন হবে সঙ্গে সঙ্গে ব্লাড পাওয়া যায়।আগেরবারের মতো ভুল কিছুতেই করা যাবেনা,বাড়িতে ১জন নার্সও রেখেছে ইয়ামিন,যে সবসময়ই প্রতিভার টেককেয়ার করে।এমন একজন ছেলেকে মেয়েজামাই হিসেবে পেয়ে মিসেসঃফাতেমা বেগম আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছে,এমন ছেলে লাখে একটা মিলে।
★
কেটেগেলো আরও কয়েকটা দিন,প্রতিভার প্রেগন্যান্সির সাড়ে ন’মাস চলছে।দুপুরের দিকে লিভার পেইন উঠেছে ওর।ইয়ামিন দ্রুত অফিস থেকে এসে প্রতিভাকে নিয়ে রাজশাহীর একটা প্রাইভেট মেডিকেলে নিয়েসেছে,আল্লাহর ইচ্ছায় ইয়ামিন মোটামুটি ভালো স্যালারি পায়।নিজের ওয়াইফ আর সন্তানকে নিয়ে কোনে রিস্ক নিতে চায়না সে,যত টাকা লাগে লাগুক প্রাইভেট হসপিটালে এডমিট করাই উত্তম।
হসপিটালে অটিতে নেওয়া হয়েছে প্রতিভাকে,৩জন ব্লাড ডোনারকে কল করে ডেকে এনেছে ইয়ামিন,৪ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন।৩ব্যাগ রক্ত ডোনাররা দেবে আর বাকি ১ব্যাগ রক্ত ইয়ামিন নিজেই দেবে।
ইয়ামিন,রিয়াজ,রাজিয়া,রিম,ঝিম অটির বাইরে করিডোরে অপেক্ষা করছে,মিসেসঃফাতেমা বেগম বাসায় নামাজ পরে নিজের মেয়ের জন্য প্রার্থনা করছেন।মনেমনে যত দোয়া কালমা আছে ইতিমধ্যে সব পড়ে ফেলেছে ইয়ামিন,ভয় চিন্তায় হাতপা ঠান্ডা হয়ে আসছে ওর,নাজানি কি হয়।
–ঘাবড়াসনা বন্ধু,ইনশাআল্লাহ খারাপ কিছু হবে না,আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ,তিনি পরম করুনাময়,দয়ালু (রিয়াজ)
প্রায় ৪০মিনিট পর একজন নার্স অটি থেকে বের হলেন।
–সিস্টার,সব ঠিক আছেতো?
আমার ওয়াইফ ক…
–ইমিডিয়েটলি ব্লাড প্রয়োজন,আমাদের ব্লাড ব্যাঙ্কে O- ব্লাড নেই,আপনাদের মধ্যে…
–চলুন,আমি দিচ্ছি রক্ত,আমার ব্লাড গ্রুপ O-
–ওকে স্যার,আপনি আসুন আমাদের সাথে
ইয়ামিন নার্সের সাথে অটিতে ঢুকলো,প্রায় ৩০মিনিট পর একজন নার্স তোয়ালে জোড়ানো একটা ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চাকে নিয়ে অটি থেকে বের হলো,মেয়ে হয়েছে।রাজিয়া নার্সের থেকে বাবুকে কোলে নিলো।
এরপর প্রায় ২০মিনিট পর ইয়ামিন অটি থেকে বের হলো,ব্লাড দেওয়া শেষ।১০মিনিট ব্রেক নিয়ে আরেকজন ব্লাড দেবে আবার,ঘন্টাখানেক পর প্রতিভাকে কেবিনে দেওয়া হবে।
–কংগ্রাচুলেশনস ব্রাদার,মেয়ের বাবা হয়েছিস (রিয়াজ এগিয়ে এসে ইয়ামিনকে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপড়ে বললো)
–ভাই,তোমার মেয়ের ফেইসা কিন্তু প্রতিভার মতোই হয়েছে,তবে নাকটা তোমার মতো হাহাহা (রাজিয়া)
রিম ঝিম তো বাবুকে পেয়ে ভীষণ খুশি,দু’জনেই বাবুকে কোলে নেওয়ার জন্য জিদ করছে,ওরাও ছোট মানুষ যদি হাত থেকে পরে যায়,তাই ওদের কাছে বাবুকে দিচ্ছে না রাজিয়া।
ইয়ামিন এগিয়ে এসে মিসেসঃরাজিয়ার থেকে নিজের কন্যাসন্তান কে কোলে নিলো,ছোট্ট একটা বাচ্চা পিটপিট করে ইয়ামিনের দিকে তাকাচ্ছে।১ম বাবা হওয়ার সুখ যে পরম সুখ,ইয়ামিনের এখন নিজেকে পরিপূর্ণ মানুষ বলে মনে হচ্ছে।প্রতিভা নিজের জীবন বাজি রেখে এই মেয়েকে জন্ম দিয়েছে,শুধু ইয়ামিনকে পরিপূর্ণ করার জন্য,প্রতিভা আজ সার্থক।ইয়ামিন বাচ্চাটার কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু একে দিলো।
★
প্রতিভাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে,মিসেসঃফাতেমা বেগমও চলে এসেছেন হসপিটালে,রিয়াজ নিজেই গিয়ে ওনাকে নিয়ে এসেছেন।একেএকে সবাই প্রতিভার সঙ্গে দেখা করলেও ইয়ামিন এখনও দেখা করেনি,সে বাবুকে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেছে টেস্ট করাতে।যদিও এর আগে ডক্টর কনফার্ম করেছে বাচ্চা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত নয়,একদম সুস্থ তবুও সেটা ছিল গর্ভাবস্থায়।ইয়ামিন কোনোপ্রকার রিস্ক নিতে চায়না,তাই এক্ষুনি টেস্ট করাচ্ছে।
আলহামদুলিল্লাহ টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে,দ্যাটস মিন বাবু একদম সুস্থ।
–ইয়ামিন,প্রতিভা তোর অপেক্ষা করছে।যাবিনা?
–হুম,চল
এবার ইয়ামিন বাবুকে নিয়ে কেবিনে ঢুকলো,একজন একজন করে রোগির সঙ্গে দেখা করার অনুমতি দিয়েছেন ডক্টর।
ইয়ামিন বাবুকে নিয়ে চেয়ার টেনে বসলো প্রতিভার পাশে।
–আমার বাচ্চা?? (ছলছল চোখে)
–এইতো আমাদের মেয়ে,একদম সুস্থ।
আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলামনা,ওর জন্মের পর আবার টেস্ট করাবো,করিয়েছি,রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে।আমাদের বাচ্চা পুরোপুরি সুস্থ প্রতিভা,আল্লাহ আমাদের ফেরাননি
কথাগুলো শুনে প্রতিভা ঢ়েন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
–আমি তোমাকে বলেছিলাম না,আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন,তিনি হয়তো আমাদের কপালে ভালোকিছু লিখে রেখেছেন,কি-ই মিললো তো আমার কথা
–বাবুকে একটু আমার কাছে দিননা
ইয়ামিন প্রতিভার বাহুডোরে আস্তে করে বাবুকে সুয়ে দিলো,প্রতিভা বাচ্চাটিকে আগলে নিলো।একটু উঁচু হওয়ার চেষ্টা করতেই পেটে ব্যথা অনুভুত হওয়ায় আবার সুয়ে পড়লো সে।প্রতিভার ইচ্ছে বুঝতে পেরে ইয়ামিন নিজেই বাচ্চাকে প্রতিভার মুখের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলো,প্রতিভা নিজের মেয়ের কপালে,গালে,হাতে চুমু দিলো।
–শান্তিই,এখন আমার মৃত্যু হলেও কোনো আফসোস থাকবেনা,আমি আপনাকে পূর্ণ করতে পেরেছি,আমি না থাকলে আমাদের মেয়েকে আঁকড়ে বাঁচবেন,ওর মাঝে আমাকে খুঁজে পাবেন।
–কি যা-তা বলছো তুমি প্রতিভা,ফারদার তোমার মুখে এসব মৃত্যুর কথা যেন না শুনি,এত সুখকর মুহুর্তে এসব বাজে কথা না বললেই নয় (রাগিস্বরে)
–রাগলে আপনাকে অনেক কিউট দেখায় মিঃইয়ামিন চৌধুরী।
মানুষতো মরনশীল বলুন,আজ নয়তো কাল তো মৃত্যু হবেই,এটাই পৃথিবীর নিয়ম,এটাই আল্লাহর ইচ্ছে।আর আমার মৃত্যু তো সন্নিকটে,সর্বোচ্চ আর ৭-সাড়ে ৭ বছর বাঁচতে পারি,এর বেশী না।এরপরের কথাই বলছিলাম আমি
–কি হবে না হবে পরে দেখা যাবে,বাট তুমি নেক্সট টাইম এধরনের কথা মুখেও আনবেনা বুঝেছো।
আমার কষ্ট হয়,বুঝেও কি বুঝোনা তুমি
–সরি,সরি আর বলবোনা।
মূহুর্ত টা উপভোগ করি বলুন,আমাদের #ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ যে উপস্থিত,আমাদের মেয়ে আজ আমাদের দুজনকে পরিপূর্ণ করেছে বলুন,ও যে আমাদের অংশ,আমাদের ভালোবাসার প্রতীক।
–তুমি আমার জীবনে এসে আমাকে পূর্ণ করেছো,আর আজ আমাকে বাবা হওয়ার সুখ দিয়ে আমাকে পরিপূর্ণ করেছো প্রতিভা।আজ আমি পরিপূর্ণ,ভালোবাসি প্রতিভা,অনেক বেশিই ভালোবাসি তোমাকে,ভালোবাসি আমার বাবুর আম্মুকে।
–আমিও ভালোবাসি আমার বাবুর আব্বুকে (মুচকি হেসে)
–আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছে,যতটুকু দিয়েছে তা-ই আলহামদুলিল্লাহ,জীবনে আর কিছু চাওয়ার নেই,শুধু একটাই চাওয়া আছে আর
–কি
–সুস্থ হয়ে নাও,সামনে বছর সবাই মিলে হজ্জ করে আসবো।
ইয়ামিনের কথা শুনে প্রতিভার চোখ থেকে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়লো,দুঃখের নয় এই অশ্রু আনন্দের।সে মুচকি হেসে বললো..
–ইনশাআল্লাহ
~~~~সমাপ্ত~~~~
((অবশেষে শেষ করলাম গল্প টা,বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি,থ্যালাসেমিয়া রোগ সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব সঠিক তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।স্যাড এন্ডিং আমি নিজেও সহ্য করতে পারিনা তাই এখানেই এভাবে শেষ করলাম।বাস্তবধর্মী গল্প লিখতে গিয়ে গল্পের রিচ এতে কম ছিল বলার মতো না,সত্যিই আমি আশাহত,যে কয়জন এতদিন গল্পটার সাথে থেকে আমাকে সাপোর্ট করেছেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আজ গল্পটি সম্পর্কে দু’লাইন লিখে যেতে ভুলবেননা,সাইলেন্ট রিডার্সরাও সাড়া দিবেন।ভালো থাকবেন সবাই,আসসালামু আলাইকুম))