ভালোবাসার সন্ধিক্ষণ পর্ব ৪

0
321

#ভালোবাসার_সন্ধিক্ষণ
#পর্ব_০৪
#গল্পছোঁয়া Jannatul Ferdous Mahi

সে এবার ডাক দিলো প্রতিভা কে।

–হ্যালো,এক্সকিউজ মি,মিস প্রতিভা,হ্যালো

ইয়ামিনের ডাকে প্রতিভা ইয়ামিনের দিকে মাথা ঘুরাতেই ইয়ামিনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।

–কিছু বলবেন??

–তুমি সেই মেয়েটা না,কিছুদিন আগে রাজশাহী টি-বাঁধে বসে থেকে স্কেচ আর্ট করছিলে?

–জ্বি,কিন্তু কেন?

–আমাকে চিনতে পেরেছো,আমি ইয়ামিন চৌধুরী।

–সরি,আপনাকে তো ঠিক চিনলামনা,আর আমি মাঝেমধ্যেই পদ্মাপাড়ে যাই,একান্ত কিছুটা সময় কাটাতে,কত মানুষের সঙ্গেই তো দেখা হয়,বাচ্চাদের স্কেচ আর্ট করে দিই

–আরে গতমাসে,তুমি আমার আর আমার বন্ধুর দুই মেয়ের স্কেচ বানিয়েছিলে,হাসানোর জন্য আমার বড় বড় দাঁত চোখে চশমা,আর মাথায় শিং একে রাক্ষস বানিয়ে দিয়েছিলে মনে নেই।

এতক্ষণে প্রতিভার মনে হলো,মাসখানেক আগে।আর্ট স্কুলের কিছু বাচ্চাদের নিয়ে প্রতিভা রাজশাহী টি-বাঁধে গিয়েছিলো,মূলত চিত্রঅঙ্কন করতে।বাচ্চাদের বিভিন্ন জিনিস দেখিয়ে দিয়ে তাদেরকে আর্ট করতে লাগিয়ে দিয়ে প্রতিভা একমনে নদীর জলরাশীর দিকে চেয়েছিলো।হঠাৎ চোখ যায় ওর কিছুটা দূরে থাকা বরফওয়ালার দিকে,৩-৪,৬-৭বছরের দুটো বাচ্চা মজা করে বরফ খাচ্ছে,ওদের সঙ্গে একটা লোকও রয়েছে,সেযে বিরক্ত সেটা তার মুখের এক্সপ্রেসন দেখেই বুঝা যাচ্ছে।হঠাৎ কি মনে করে জানেনা,প্রতিভা বাচ্চাদের আইসক্রিম খাওয়ার দৃশ্য টা আর্ট করতে লাগলো।
বাচ্চাগুলো আরও আইসক্রিম খাওয়ার জন্য জিদ করলে ওদের সঙ্গে থাকা লোকটি ধমক দিলো,৩-৪বছরের বাচ্চাটা মন খারাপ করে কাঁদতে কাঁদতে প্রতিভার এদিকে এগিয়ে আসতেই ড্রয়িং টা ওর চোখে পড়লো।

–আপুই,দেকো দেকো এই আপুটা আমাদের একেছে দেকো (চেচিয়ে)

৬-৭বছরের বাচ্চাসহ ওদের সাথে থাকা লোকটিও ছুটে আসলো,প্রতিভার আর্ট তাদের মনে ধরেছে,বাচ্চাগুলো প্রতিভার সঙ্গে একদম মিশে গিয়েছে,প্রতিভা সুন্দর করে দুটো বাচ্চারই স্কেচ বানিয়ে দিলো,শেষে বাচ্চাদের কথামতো ওদের সঙ্গে থাকা লোকটিরও স্কেচ বানিয়েছিলো তবে ফান করে রাক্ষস রূপে,সেদিন স্কেচটা দেখার পর লোকটির কি রাগি ফেইস,মনে হতেই প্রতিভার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।এই লোকটিই যে সেই লোক

–কিই,মনে পরেছে?

–হ্যাঁ,আপনাকে একবার সরি বলতে চেয়েছিলাম পরে আর খুঁজে পাইনি,রাগ করেননিতো?আসলে বাচ্চাগুলোকে খুশি করার জন্য ওমন করেছিলাম,ওরা বারবার আপনাকে রাক্ষস আঙ্কেল বলে ডাকছিলো তাই।

–আরে ব্যপার না,আমারও বেশ লেগেছে,ভালো আঁকো কিন্তু তুমি

–ধন্যবাদ,ওই আরকি একটুআধটু পারি,খুব ভালো নয়

–তুমি চাইলে আর্ট নিয়ে অনেককিছু করতে পারো,যেমন ধরো ও..

–আমার মতো মেয়েদের এতটা মানায়না স্যার,নিজের রোজকার জীবন নিয়ে বেশ আছি,বাচবোইবা কতদিন বলুন,আমার আর্টস্কুলের বাচ্চারা,আমার মা,আর আমার কাজ এইতো জীবন,দিব্যি আছি আর কিছু চাইনা। (নিচু স্বরে)

প্রতিভার কথা শুনে ইয়ামিনের মুখের হাসিটা উবে গেলো।

–বিয়ে করতে পারো,ইচ্ছে হয়না?

–হাহ,আমার মতো মেয়েদের জন্য বিয়ে সংসার এসব নয়,নিছান্তই কল্পনা করা মাত্র,কে শুধু শুধু নিজের জীবনটা নষ্ট করবে বলুনতো,আমরা তো এই পৃথিবীর কিছুদিনের অতিথি মাত্র,আপনাদের মতো কিছু হৃদয়বান মানুষের রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকি,পরনির্ভরশীল আমরা।
আজকে আপনি ব্লাড দিলেন,সামনে মাসে আদোও ব্লাড পাব কিনা নিশ্চয়তা নেই,দেখা গেলো ব্লাডের অভাবে সময়ের আগেও মৃত্যু হতে পারে আমার।

—তুমি চাইলে আমি ব্লাড দেব,আমি প্রফেশনাল ব্লাড ডোনার,এটা আমার একটা শখ বলতে পারো

ইয়ামিনের কথা শুনে হেসে দিলো প্রতিভা,

–পাগল আপনি,আপনি কি জানেন আমার প্রতি দেড়মাস অন্তর ব্লাড নিতে হয়,আর একজন ডোনার মিনিমাম ৩মাস পরপর ব্লাড দিতে পারে,রক্তদানের শর্তগুলো পূরণ হয়ে থাকলে যেকোনো সুস্থ ব্যক্তি প্রতি ৩-৪মাস পরপর এক ব্যাগ করে রক্ত দিতে পারবেন,যার পরিমাণ ৪৫০মিলিলিটার।এক ব্যাগ রক্ত শরীরের মোট রক্তের মাত্র ২-৩%,তাই এই পরিমান রক্ত দিলে ডোনারের ক্ষতির কোনো আশংকা নেই,তবে মিনিমাম ৩মাস পরপর,তার আগে নয়।
তাহলে কিভাবে আমাকে ব্লাড দিবেন শুনি?

–হাসিটা সুন্দর,তোমার মিষ্টি হাসিটা দেখার জন্যই মজা করে বলেছিলাম,প্লিজ ডন্ট মাইন্ড।তোমাকে চিন্তা করতে হবেনা,আমি ডোনার খুজে বের করবো,যাতে পরের মাসে সে তোমাকে ব্লাড দেয়,আর তার পরের মাসে তো আমি আছিই,i promised you Protibha

–আপনি আমার জন্য এতকিছু কেন করবেন?

–ও তুমি বুঝবেনা,তুমি চাইলে আমরা বন্ধু হতে পারি,যদি চাও তো।
তো পদ্মাপাড়ে আর যাওয় হয়?আমিতো প্রায়ই যাই,তোমাকে দেখিনা যে

–আসলে সময় হয়ে ওঠেনা,আর্ট স্কুল + নিজের কর্মব্যস্ততাসহ অসুস্থতা,সবমিলিয়ে সময় পাইনি।এনিওয়েস,রিম ঝিম, (সেদিনের বাচ্চাদুটোর নাম) ওরা কেমন আছে

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো,এই তো গতকাল বরিশালে ওদের নানির বাড়ি থেকে ঘুরে আসলো,এসেই জিদ ধরেছে তোমার সঙ্গে দেখা করার জন্য,কি একটা অবস্থা বলোতো

–হাহাহা,তাই নাকি,তাহলে তো দেখা করতেই হয়।
কালকে তাহলে নিয়াসবেন ওদের,আপনার বেবিদেরও নিয়াসবেন

–আমি আনম্যারিড

–ওফস,সরি,আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো ম্যারিড

–ইট’স ওকে


ব্লাড এবসর্ভ করা হয়ে গেলে নার্স এসে দুজনেরই হাত থেকে সূচ বের করে নিলো,এখন প্রায় এক-দেড় ঘণ্টার মতো ইয়ামিনকে এখানেই রেস্ট নিতে হবে।প্রতিভার লোকটিকে এভাবে রেখে যেতে ইচ্ছে করছিলোনা,এখন অবধি ওকে যেকয়জন ডোনার রক্ত দিয়েছে সবাই মূল্য নিয়েছে অথচ এই ইয়ামিন নামের লোকটি ১পয়সাও নিলোনা,উল্টে নিজের নম্বর দিয়েছে,নেক্সট কখনও যাতে ব্লাড প্রবলেম না হয়,তাই ডোনার খুজে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে,লোকটা আসলেই বন্ধুসুলভ ও ভালো মানসকিতার অধিকারী,এখনকার যুগে এমন মানুষ সহজে পাওয়া যায়না,যেখানে ওর নিজের আত্মীয়রাই ওদের কে দূরে ঠেলে দিয়েছে সেখানে ২দিনের পরিচয়ে এক অপরিচিত ব্যক্তি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইয়ামিন বেডে বসে রয়েছে ওর সামনের বেডে প্রতিভা,প্রতিভা এক বোতল পানি ইয়ামিনের দিকে এগিয়ে দিলো।

–নিন পানি খান,রক্তদানের পর পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা জরুরি।আর এইযে রক্ত দেওয়ার পর আপনার হাতে যে স্ট্রিপ ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়েছে,অন্তত কয়েকঘন্টা এটি খুলবেননা বুঝছেন,খোলার পর যদি র‍্যাশ বের হয় তাহলে ভালো করে সাবানপানি দিয়ে ধুয়ে নেবেন।

–হুম জানি মিসঃসবজান্তা

–আমি আসছি,ওয়েট করুন।

প্রতিভা ম্যাডিকেলে থেকে বের হয়ে বাইরের রেস্টুরেন্ট থেকে মাছের তরকারি,ভাত,দুটো সিদ্ধ ডিম,পানির বোতল কিনে নিলো,আর হাফ কেজি স্ট্রবেরিও কিনে নিয়ে আবার ম্যাডিকেলের ওই কেবিনে আসলো যেখানে ইয়ামিন রয়েছে,এসে দেখে ইয়ামিন বেডটা উঁচু করে সাইডে নিয়ে যাচ্ছে,আর সূচ ফোটানো জায়গা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে।
প্রতিভা দ্রুত খাবারের প্যাকেট আর পানির বোতল বক্সের ওপর রেখে দিয়ে ইয়ামিনের বামহাত ধরে টান দিয়ে সরিয়ে নিলো,ডান হাত টান করে ধরে,যেখানে সূচ ফোটানো হয়েছিলো সেখানে চাপ দিয়ে ধরে হাত উঁচু করে রাখলো,এভাবে প্রায় ৫-৬মিনিট রাখলেই ব্লেডিং বন্ধ হবে।তানাহলে যতক্ষণ ব্লেডিং বন্ধ নাহয় ততক্ষণ এভাবে ধরে রাখতে হবে।

–পাগল নাকি আপনি,আপনি জানেননা রক্তদানের পর ভারিকিছু তুলতে নেই,এমনকি ওই দিন কোনোরূপ এক্সারসাইজ করাও নিষিদ্ধ,আর এরকম করবেননা ঠিক আছে (চিন্তিত হয়ে)

ইয়ামিন কিছু না বলে একদৃষ্টিতে প্রতিভার দিকে চেয়ে আছে,প্রতিভার ফ্যাকাসে মুখটা চিন্তায় জর্জরিত।ব্লেডিং অফ হলে প্রতিভা ইয়ামিনের হাত ছেড়ে দিলো।

–বসুন এবার,আর শুনুন মাথা ঘুরলে বা শারিরীক অস্বস্তি হলে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকুন বা বসে থাকুন,যতক্ষণ না সুস্থ বোধ করছেন বুঝেছেন।

ইয়ামিন মাথা নাড়িয়ে বেডে হ্যালান দিয়ে শুয়ে পড়লো,খাবারের প্যাকেট দেখে সে প্রতিভার দিকে তাকালো..

–এগুলো কি?

–আপনার জন্য এনেছি।
রক্তদানের পর একজন ডোনারের জন্য সর্বোত্তম হলো আয়রনযুক্ত খাবার খাওয়া।আয়রন সমৃদ্ধ খাবার হিসেবে চিকেন,ভেড়ার মাংস,মটন,মাছ,ডিম,সবজি হিসেবে মিষ্টি আলু,ব্রকোলি,বিনস,মটরশুঁটি,ফলের মধ্যে তরমুজ,স্ট্রবেরি,শুকনো ফল এছাড়াও পাস্তা,ওটস,ভাত,রুটি ইত্যাদি খেতে পারেন।আপনি যেহেতু প্রফেশনাল ব্লাড ডোনার,আপনি তাহলে নিশ্চয়ই এই বিষয়ে অবগত রয়েছেন।

–হুম জানি

–আমি আপনার জন্য ভাত,মাছের তরকারি,ডিম আর কিছু স্ট্রবেরি কিনে এনেছি,খেয়ে নিন ভালো লাগবে।

–তোমার এতকিছু আনার কি দরকার ছিল?

–বারে,তখন না আমাকে নিজের ফ্রেন্ড বললেন তো ফ্রেন্ডের জন্য এটুকু করতে পারিনা,নিন খেয়ে নিনতো জলদি জলদি।

ইয়ামিন নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে প্রতিভার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো,

–ওফ সরি সরি,আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি আপনাকে….

To be continue….

((কেমন হচ্ছে জানাবেন,গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন))

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here