#আকাশে_তারার_মেলা
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব -৭
মৃদু মৃদু হাওয়া বয়ে যাচ্ছে চারদিকে। একটু একটু ঠান্ডার সমারোহ। বাতাসে তুলির খোলা চুল উপচে পড়ছে কপালে। বার বার কানের পিঠে গুঁজে দিচ্ছে তুলি। একদমই বিরক্ত লাগছে না তার। এমন নির্মল প্রশান্তির হাওয়া মন ছুঁয়ে গেলে বিরক্তি আপনা আপনি পালিয়ে যেতে বাধ্য। গলায় জড়ানো কালো ওড়না টা একটু টেনে নিল। পাশে আমরিন হাঁটছে। কলেজ থেকে ট্যুরে যে যাবে না এটা পুরো নিশ্চিত তুলি। কিন্তু এই সন্ধ্যায় রেইল স্টেশন কেন এসেছে তা বুঝতে পারছে না তুলি। বহুবার প্রশ্ন করে ও কোনো উত্তর মেলে নি আমরিনের কাছ থেকে। ড্রাইভার কলেজ গেইটে নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। অন্য একটা গাড়ি আসতেই আমরিন তুলি কে নিয়ে ট্রেন স্টেশন চলে আসল। তুলির প্রশ্ন কানে ঢুকলেও সে যেন মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। হাত ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল সাতটা বেজে ৩০ মিনিট। দ্রুত পা চালিয়ে তুলি কে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল আমরিন। হাতে তার ট্রলি ব্যাগ। তুলি ভ্রু কুঁচকে আমরিনের দিকে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।
কিছুটা দূরে তিনটা ছেলে ও দুটো মেয়ে কে দেখে আমরিনের মুখে হাসি ফুটল। পায়ের গতি বাড়িয়ে ওদের নিকটে এসে দাঁড়াল। তুলিও পিছন পিছন এল। আমরিন কে দেখে নিবিড় হালকা হাসল। ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করল,,
–আসতে সমস্যা হয় নি তো?
–একদমই না ভাইয়া। কেমন আছেন আপনারা সবাই?
নিবিড়, অন্তু,রিমি,পায়েল,সাগর সবাই হেসে একসাথে বলে উঠল,,,
–আলহামদুলিল্লাহ!
—ট্রেন কখন আসবে?
–আরো আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে।
তুলি কাউকে চিনে না তাই মুখ কাচুমাচু করে এক পাশে দাঁড়িয়ে রইল। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না সে। তবে এতটুকু বুঝতে পেরেছে ছেলেমেয়ে গুলো আমরিনের পূর্ব পরিচিত। তুলিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তুলির হাত টা ধরে সামনে আনল আমরিন। সবার উদ্দেশ্যে বলল,,
–ওর নাম ইশতাক তুলি। আমার কাজিন।
মুখ তুলে সবার দিকে এক নজর চাইল তুলি। সবার মুখে প্রস্ফুটিত হাসি। ভীষণ অস্বস্তি বোধ করছে তুলি। স্টেশনে মানুষের সমাগম বেড়ে গেছে। গরম পড়ছে অনেক। নীরবতা ভেঙে পায়েল এগিয়ে এসে তুলির হাত টা ধরে বলল,,
–মাশাল্লাহ! তুলি তুমি তো তোমার নামের মতোই ভীষণ কিউট। ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা আদ্রর বন্ধুমহল। খুব খুব কাছের বন্ধু।
অতিশয় বিস্ময় নিয়ে তাকাল তুলি। আদ্রর ফ্রেন্ড। তাহলে তুলি কেন এখানে এসেছে? আমরিন ওনাদের কাছে কেন নিয়ে আসল?আদ্র কোথায়? শত শত প্রশ্নের ভিড় তুলির মনে। পায়েল আবারও হেসে বলে উঠল,,,
–জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন। ছোট্ট মস্তিষ্কে এতো চাপ দিও না তুলি। জাস্ট এতটুকু জেনে রাখো আমরা সবাই সিলেট যাচ্ছি।
অবাক হল তুলি। আমরিনের হাত চেপে ধরতেই চোখের ইশারায় বুঝাল সব সত্যি। আমরিনের উপর অগাধ বিশ্বাস আছে তার। আর আদ্রর বন্ধুদের সন্দেহ করার কিছুই নেই। নিঃসন্দেহে আদ্র বন্ধু নির্বাচনে সচেতন। নিবিড় কে হাতিরঝিলে দেখেছিল আদ্রর সাথে। ট্রেন জার্নি করবে ভাবতেই তুলির মনে হাজারো খুশি বাসা বাঁধতে লাগল। ট্রেনে আজ প্রথম বার চড়বে তুলি। তুলির আবেগি মন অপেক্ষায় আছে ট্রেনের এবং খুব করে চাইছে মনে সদ্য প্রেমের জন্ম দেওয়া মানুষ টা কে। খানিক বাদেই স্টেশনে ট্রেন ঢুকতে দেখতে পেল তুলি। উচ্ছ্বসিত হওয়ার বদলে মনটা ছেয়ে গেল অন্ধকারে। ভেবেছিল আদ্র আসবে। নিবিড় তাড়া দিতেই সবাই উঠে দাঁড়াল। আমরিনের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে নিল নিবিড়। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,
–উঠতে পারবে তো?
নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে আমরিন জবাব দিল,,
–পারবো।
তবুও যেন নিবিড়ের মন মানল না। আমরিনের এক হাত শক্ত করে মুঠোয় পুরে নিল নিজের এক হাতে। এতো গরমের মাঝে ও শীতল অনুভব করতে লাগল আমরিন। নিবিড়ের দিকে তাকাতেই দেখল অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। তুলি পাশে দাড়িয়ে ভাবছে এতো ভিড়ের মাঝে কিভাবে উঠবে সে ট্রেনে। ট্রেনে উঠার অভিজ্ঞতা তো তার নেই। ট্রেন থামতেই ভিড় যেন আরো বেড়ে গেল। মানুষ যেন প্রতিযোগিতায় লেগে পড়ল কার আগে কে উঠবে।ধাক্কা খেয়ে তুলি পড়ে যেতে নিলে শক্ত করে আঁকড়ে ধরল কেউ। চোখের পলকে মিশিয়ে নিল একদম নিজের সাথে। সাগর তুলি কে উঠতে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছিল। কিন্তু তুলির বাহুতে হাত রাখা মানুষ টা কে দেখে আর নামল না ট্রেন থেকে। ভয়ে আঁতকে আছে তুলি। চোখ বুঁজে থরথর করে কাঁপছে। কোমরে চাপ অনুভব করতেই চোখ মেলে দেখার আগেই আঁকড়ে ধরে কেউ ট্রেনে উঠিয়ে দিল তাকে। দৃশ্যমান হল আদ্রর সুদর্শন চেহারা টা। নিমিষেই শুরু হল বুকের ভিতরে কাঁপুনি। আদ্র ও ঝটপট করে উঠে পড়ল ট্রেনে। তুলি এখনও তাকিয়ে ভ্যাবলাকান্তের মতো। নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না আদ্র এসেছে। তীর্যক চাহনি নিক্ষেপ করল আদ্র। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,
–এখানে দাড়িয়ে থাকলে ট্রেন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিব।
আদ্রর কথায় হুঁশ ফিরে এল তুলির। এই লোক কেন সবসময় হুমকি দেয়?কথাটা ভেবে একটা নিশ্বাস ছাড়ল। যা বুঝার বুঝে গেল। তবে প্রশ্ন জাগছে সায়েরা বেগম কে মিথ্যে বলে দুই ভাই -বোন এমন প্ল্যান কেন করল। ট্রেন চলতে শুরু করেছে। বার বার বেসামাল হয়ে পড়ছে তুলি। কোমল কন্ঠে আদ্রর উদ্দেশ্যে বলল,,
–আমি ট্রেনে কখনও চড়ি নি। আমি কি নিজের হাতটা আপনার বাহুতে রেখে সামনের দিকে এগোতে পারি?
তীক্ষ্ণ নজরে চাইল আদ্র। ভয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল তুলি। সাথে সাথেই নিজের কোমরে স্পর্শ পেতেই মনে জড়ো হল লজ্জা। আদ্র কোমরে হাত দিয়ে নিজের একদম কাছে টেনে নিল তুলি কে। সবার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই মিটমিট করে হাসতে লাগল। আমরিন দেখেও না দেখার ভান করে বাহিরে তাকিয়ে রইল। তুলি আদ্রর হাত সরাতে নিলে আরো চেপে ধরল আদ্র। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে তুলির। আদ্রর থেকে ছাড়া পেতেই জানালার পাশের সিটে বসে পড়ল অনাসয়ে। একটু হেসে আদ্র ও বসে পড়ল তুলির পাশে। ইতিমধ্যে ট্রেন ভীষণ গতিতে ছুটে চলেছে। বাতাসের দাপটে তুলির খোলা চুল আদ্রর মুখে আছড়ে পড়ছে। সিটে মাথা এলিয়ে আদ্র তুলির শ্যাম্পু করা চুলের সুবাসে হারিয়ে যাচ্ছে। তুলির কানে ভেসে আসছে একের পর এক হাসির শোরগোল। হঠাৎ অন্তু বলে উঠল,,,
–“শোন শোন আমার জীবনের এক বিশেষ অর্থাৎ সেরা মুহুর্তের কথা শুনাতে যাচ্ছি তোদের। ”
পায়েল বলে উঠল,,–“আর কতো শুনাবি সেই বিশেষ কাহিনী?”
গলা ঝেড়ে অন্তু বলে উঠল,,,
–তুলি ও আমরিন তো শুনে নি। আমি ওদের শুনাবো। পুরো বন্ধুমহলের কাছে তুই আমার ইজ্জতের রফাদফা করেছিস। কিন্তু তুই যে কত্ত খারাপ সেটা শুনাতে হবে না?
চোখ কটমট করে তাকাল পায়েল। নিবিড়, সাগর ও রিমি কানে হেডফোন গুঁজে নিল। দু জনের জগড়া শুরু হয়ে যাবে এখন। অন্তু পায়েলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,
–এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। শুনো আমরিন,,,
–“গত মাসের কথা। ইহা খুবই এক লজ্জাকর পরিস্থিতি ছিল। সকাল সকাল মা বলল অন্তু আজ কিন্তু পাত্রী দেখতে যাব। তাড়াতাড়ি উঠ। অবশ্য তখন বারোটা বাজে। তবুও তা আমার জন্য সকাল ছিল। মায়ের টানা হেচড়ায় কোনো রকমে রেডি হয়ে গেলাম পাত্রী দেখতে ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও। পাত্রী দেখতে সেই ছিল। পুরোই পাগল করা রূপ তাহার। বয়স হইয়া গেছে সাতাশ। এমন সুন্দর বউ পাইলে বুড়ো থেকে আমি হইয়া যামু সতেরো বছরের যুবক। আহা মনে মনে তো আমার লাড্ডু ফুটতেছিল। যখন আমাগো আলাদা কথা কইতে দিল তখন আমি তো মেয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকাই ছিলাম প্রেমের ভাষায় মুগ্ধকর বলা যায়। পাত্রী আমার একটু কাছে মুখ আনতেই আমি তো শেষ। মেয়ে এতো এডভান্স। নিজেও মুখ টা এগিয়ে নিতেই মেয়ে ফিসফিস করে বলে উঠল,,,–“বুইড়া দাদা আপনার অফিস খোলা। নেক্সট টাইম অফিস বন্ধ করে পাত্রী দেখতে যাবেন।”
অন্তুর কথা শুনে ফিক করে হেসে দিল সবাই। তাল মিলিয়ে হাসতে লাগল অন্তুও। হাসতে হাসতে বলল,,
–“সেই মেয়েটা আর কেউ না আমাদের পায়েল ম্যাডাম ছিল। এই মেয়ের চোখ যে এতো খারাপ এটা সেদিনই বুঝতে পেরেছি।”
–“তোর মতো হারামি পোলার কাছে যে আমি বিয়ে বসছি এটাই অনেক। তুই তো এখনও শর্ট প্যান্ট পড়ে বাহিরে চলে যাস। লোকে দেখলে দোষ নেই। আর আমি সত্যি বললে দোষ! হুহ্!”
–“হাসবেন্ড কে তুই করে বলছিস?ক্লাসমেইট বিয়ে করে কপাল টাই পুড়ল আমার। গুন্ডি মেয়ে একটা!”
ওদের কথা শুনে তুলি হাসতে হাসতে ঢলে পড়ল আদ্রর উপর। কি লাগাম ছাড়া কথা বার্তা! তুলির পেট ফেটে হাসি আসছে। চোখ রাঙিয়ে তাকাল আদ্র। সাথে সাথে গায়েব হয়ে গেল তুলির হাসি টা। তুলির কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে দুষ্ট স্বরে আদ্র বলল,,,,
—ওড়না সরে গিয়ে তোমার ওই জায়গার তিল টা দেখা যাচ্ছে তুলা। ওড়না সামলে রাখো। ড্রেস টা একটু বেশিই ঢিলে। যখন তখন হেলে পড়ো না।
পিলে চমকে উঠল তুলির। আদ্রর মুখে এতো ভয়ংকর এক বাক্য শুনে চুপসে গেল তুলি। ওড়না পেঁচিয়ে দূরে সরে বসল আদ্রর থেকে। কানে বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বাক্য টা। ছি! আদ্রর নজর এতো খারাপ! কথাটা মনে না রেখে কিশোরী তুলি আদ্রর সাথে কিছু টা ঘেঁষে বসল। চোখ ছোট ছোট করে তাকাল আদ্র। তুলি ফিসফিস করে বলল,,
–ছি! আপনার নজর এতো খারাপ! আমি আগেই শুনেছি ডাক্তার রা লুচু হয়। আপনি তার প্রমাণ আদ্র ভাই।
চোখ কপালে তুলে আদ্র চাপা স্বরে বলল,,
–আমি কি তোমায় কামড় দিয়েছে? নাকি চুমু খেয়েছি? অথবা এটা ও বলতে পারি বিয়ের আগে তোমার সাথে ফুলশয্যা করেছি?
আদ্রর লাগামহীন কথা তুলির রন্ধ্রে রন্ধ্রে শিহরণ জাগিয়ে দিল। দমে গেল তুলি। আদ্র যে কতো বড় অসভ্য, বেহায়া লোক বুঝা হয়ে গেছে তার। দূরত্ব রেখে বসতে নিলে সবার অগোচরে তুলি কে নিজের কাছে টেনে গলায় কামড় বসিয়ে দিল আদ্র। তুলি লজ্জায় চুপ হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে রইল। লাইট গুলো নিভিয়ে দিয়েছে কিছু সময় আগে। বাহিরের চা্ঁদের আলোয় আদ্রর চেহারাটা স্পষ্ট। তুলি যেন আর নিজের মাঝে নেই। কি করল এটা আদ্র? এখন হার্ট এট্যাক হলে তার দায় কি আদ্র নিবে? অপলক চোখে তাকিয়ে থেকে তুলির হাত টা চেপে ধরে আবারও আদ্র মুখ ডুবাল তুলির গলায়। ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে সরে এল অতি সন্তর্পণে। বন্ধ চোখ দুটো ধপ করে মেলে আদ্রর জ্যাকেট টা খামচে ধরল তুলি। ছলছল চোখ নিয়ে শুকিয়ে যাওয়া গলায় প্রশ্ন করল,,
–“কি করলেন এটা আদ্র?”
মুখের হাসির রেখা টা দীর্ঘ করে আদ্র একটু নত হয়ে জবাব দিল,,
–“অসভ্য বলার জন্য পারফেক্ট কারণ খুঁজে দিয়েছি।”
কম্পনরত হৃদপিণ্ড নিয়ে ঘোর লাগা কন্ঠে তুলি বলে উঠল,,
–“সত্যিই আপনি অনেক অসভ্য আদ্র।”
–“শুধু তোমার জন্য। ”
মুচকি হেসে বলল আদ্র। তুলি ডুবে গেল আদ্রর নেশায়। তার অযাচিত মন বলে উঠল-“কোথায় ছিল এতোদিন এতো আবেগ? এতো মাদকতা! এতো মোহনীয় প্রেমময় দৃষ্টি! নিজেকে সামলে রাখা যে প্রচন্ড কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আজ যে তুলি আদ্রর এক অন্যরকম রূপের সাথে পরিচিত হল। যেই রূপের প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করে আদ্র কে অসভ্য খেতাব দেওয়া যায়। আদ্রর জ্যাকেট আরেকটু শক্ত করে খামচে ধরল তুলি। সবার দিকে একনজর তাকিয়ে আদ্র নিচু গলায় বলল,,
–“জ্যাকেট টা ছিড়ে ফেলবে নাকি তুলা রানী?এভাবে ধরে রাখলে সহ্যের সীমা যে অতিক্রম হয়ে যাবে। হৃদপিণ্ডে যে প্রলয় হবে। ক্ষত বিক্ষত হৃদয়ের দায় কি তুমি নিবে?”
তুলির দৃষ্টি এখনও আদ্রর চোখে। আদ্রর সারা মুখে চোখ বুলাতেই দ্রুত গতিতে স্পন্দিত হতে লাগল হৃদপিণ্ড। আদ্রর আকস্মিক হামলাতে তুলি জমে বরফ হয়ে গেল। হাত পা ঠান্ডা হয়ে অসার হয়ে পড়ল। আচমকা আদ্রর বুকে মুখ লুকাল সে। হকচকিয়ে গেল আদ্র। থমকে গেল মুহুর্তের জন্য। পিঠে হাত রেখে ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,,
–“কি হয়েছে তুলি?”
–“আমার হার্টের চিকিৎসা করে দেন ডাক্তার মহাশয়।”
আদ্রর বুকে মুখ ঘষে নিজের অজান্তেই কথাটা বলে বসল তুলি। বুকে ঝড় শুরু হল আদ্রর। নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে জরিয়ে নিল তুলি কে।মাথায় আদ্রর স্পর্শ পেতেই রাজ্যের ঘুম ভর করল তুলির দু চোখে। ভালোবাসার মানুষের বুকে ঘুমানোর সাধ্য কয়জনের হয়। তুলির হয়েছে সেই সুযোগ অজান্তেই। আদ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বাহিরে। ছোট্ট তুলি তার মনে দহন সৃষ্টি করছে । এতো বছরের জীবনে মনের দিক থেকে কঠোর হওয়া আদ্র কে বাধ্য করছে কোমল হতে। সতেরো বছরের কিশোরী কন্যা যে সাতাশ বছরের যুবক কে এলোমেলো করে দিচ্ছে, প্রতি মুহুর্তে অস্বাভাবিক করে তুলছে তা যদি মেয়েটা বুঝতে পারত তবে হয়তো লজ্জায় লুকিয়ে যেত তার ভিতরকার সত্তা।
______
আজকের চাঁদ টা খুবই নজরকাড়া। চাদেঁর ঝলমলে আলোয় সবকিছু স্পষ্ট। চোখে চশমা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য অবলোকন করছে আমরিন। একবার যদি সম্মুখে দৃষ্টি পাত করত তবে চোখ বাঁধা পড়ত কারো চোখের মায়ায়। সবাই বেঘোরে ঘুমোলেও ঘুম নেই আদ্র, নিবিড় ও আমরিনের চোখে। আদ্র ব্যস্ত তার বুকে ঘুমিয়ে থাকা মেয়ে টা কে সামলে রাখতে। নিবিড় সে তো চাঁদের ঝলমলে আলোয় আমরিনের মায়ায় জড়াচ্ছে শতবার। দু বছর ধরে ভালোবাসে আমরিন কে। হাঁটুর বয়সী মেয়েটা কে মনের কথা বলতে গেলেও বুক কাপে তার। বলবে বলবে বলেও বলা হয় নি কোনোদিন। হঠাৎ আমরিনের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি দেখে বুকটা ধুক করে উঠল নিবিড়ের। দৃষ্টি সরিয়ে নিল সে। পাশের সিটে তাকাতেই দেখতে পেল আদ্রর বুকে ঘুমন্ত তুলি কে। জিহ্বায় কামড় দিয়ে মাথা নিচু করে ফেলল নিবিড়। যেদিকেই তাকায় সেদিকেই সর্বনাশ। এখন তো তার মনে হচ্ছে প্রেয়সীর মাঝে হারিয়ে যাওয়ার সর্বনাশ টাই বড্ড শ্রেয়। এক চিলতে হাসি আর অসম্ভব ভালো লাগা নিয়ে আমরিন আঁড়চোখে নিবিড়ের দিকে চাইল। মনে মনে বলে উঠল,,,
—“এতো টাও বোকা আমি নয় নিবিড় ভাই। ডুবে ডুবে যে জল খাচ্ছেন তা দিব্যি টের পাচ্ছি।”
ফোনটা বেজে উঠল আদ্রর। পিনপিনে নিরবতায় ফোন বাজার ঝংকার শব্দে অনেকেই কেঁপে উঠল। আবারও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। এক হাত তুলির পিঠ থেকে উঠিয়ে কোনো রকমে ফোন টা পকেট থেকে বের করল আদ্র। স্ক্রিনে চাইতেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল তার। ইচ্ছে করল মোবাইল টা জানালা দিয়ে ফেলে দিতে। গম্ভীর স্বরে হ্যালো বলতেই কিছু একটা শুনে মেজাজ চওড়া হয়ে গেল আদ্রর। চোয়াল শক্ত করে ধীর কন্ঠে বলে উঠল,,,
–সবকিছুর একটা লিমিটেশন আছে। নিজের সীমাবদ্ধতায় থাকো। নয়তো আমার চেয়ে খারাপ তোমার জন্য কেউ হবে না। আগে অধিকার পাওয়ার যোগ্যতা রাখো তারপর নাহয় হস্তক্ষেপ করো।
চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন। কেউ বকা দিবেন না।??)