#তোর_শহরে_ভালোবাসা ?
পর্ব-২৬
ফাবিহা নওশীন
??
সামু বিছানায় শুয়ে আদিবাকে ঘুম পাড়াচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা ঘুমিয়ে পরলো।এবার সামুর আসল মিশন শুরু।আদিবাকে রেখে ঘরের লক করে আদির খোজ করছে।আদি সোফায় বসে বসে গেমস খেলছে।এটা দেখে সামুর রাগ যেন আরো বেড়ে গেলো।
নিজের রাগ কন্ট্রোল করে কঠিন গলায় বলল,
–আদিবা ঘুমিয়ে পড়েছে এখন তুমি যাও।আমি মেইন ডোর লক করবো।
আদি সামুর কথা শুনে খেলা রেখে মাথা তুলে সামান্তার দিকে চেয়ে বললো,
–কোথায় যাবো?
–কোথায় যাবো মানে কি?তোমার কি থাকার জায়গা নেই।যেখানে ছিলে সেখানে যাও।বাট তাড়াতাড়ি যাও।
–এত রাতে তুমি আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছো?তোমার মায়া দয়া নেই?
–একদম ঢং করবা না।আর আমি যাকে তাকে দয়া করিনা।তাড়াতাড়ি বের হও।
–তুমি যতই তাড়াও আমি কোথাও যাচ্ছিনা।
–মামার বাড়ির আবদার নাকি হুহ?অনেকক্ষন যাবত সহ্য করছি আর না।এতক্ষণ কিছু বলিনি আদিবার জন্য।বাচ্চা মেয়ের সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাইনি।এবার যাও প্লিজ।
আদি উঠে সামান্তার হাত ধরে আর সামান্তা এক ঝাটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে চিতকার করে বললো,
–একদম টাচ করবেনা।স্টে এওয়ে ফ্রম মি।
আদি হাত সরিয়ে বললো,
–ওকে ওকে,,বাট চিতকার করোনা প্লিজ।
–তো কি করবো?
কিছুক্ষণ থেমে তারপর শান্ত গলায় বলল, দেখো আমি কথা বাড়াতে চাইনা।তুমি প্লিজ যাও।
–সামু,,আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না?
সামান্তা অবাক হয়ে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো তারপর ফিক করে হেসে দিলো।তাচ্ছিল্যের হাসি।
–ক্ষমা? তুমি কেন ক্ষমা চাইছো?তোমার তো কোনো দোষ ছিলো না সব দোষ আমার ছিলো।তাই আমাকেই ভুগতে হয়েছে।
–সামু প্লিজ,,
আমি কি কষ্ট পাইনি।আমি কি ভালো ছিলাম?
–দেখো তুমি কি করেছো,কেমন ছিলে আমার জানার দরকার নেই।তুমি যদি ভেবে থাকো তুমি এত বছর পর এসে ক্ষমা চাইবে আর সব ভুলে যাবো তাহলে ভুল ভাবছো,,ইউ আর এবসুলেটলি রং।তুমি যা করেছো আমার সাথে তা আমি না কোনো দিন ভুলবো আর না ভুলতে চাই।
–আমি তো আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।এর জন্য আমি কতটা অনুতপ্ত সেটা আমি জানি।তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি।ক্ষমা করো আমাকে।আমি আর এ বোঝা নিতে পারছিনা।
–তুমি ক্ষমা চাইছো?ভুল বুঝতে পারছো তাতে কি হবে?আমার জীবনের এতগুলো বছর ফিরে আসবে?এত দুঃখ,কষ্ট পেয়েছি সেগুলো,,,
বাইরের আঘাত দেখা যায় তাতে ওষুধ লাগালে সেরে যায়,,কিন্তু ভিতরে যে আঘাত লাগে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় তাতে ওষুধ লাগানো যায়না আর তাই সারেওনা।আমার এ ক্ষতও কোনোদিন সারবেনা।
আদি মাথা নিচু করে বললো,
–সেদিন দোষ কি শুধু আমার ছিলো? তোমার ছিলো না?মানছি দোষ বেশি আমার ছিলো কিন্তু তোমার কি ছিলো না?
–দোষ ছিলো,,, এতটাই দোষ করে ফেলেছিলাম যে আমার ডিভোর্স প্রাপ্য ছিলো।তুমি ৫বছর কেন ১০বছর পর ফিরতে মেনে নিতাম কিন্তু ডিভোর্স?
–হ্যা,,ওটাই আমার লাইফের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।রাগের মাথায় অনেক বড় ভুল করেছিলাম।কিন্তু বিশ্বাস করো যে ভুলের মাশুল আমি এতগুলো বছর দিয়েছি।তোমাকে কষ্ট দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি নিজেকে কষ্ট দিয়েছি।তোমাকে আঘাত করতে চেয়েছিলাম।কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম।তোমাকে শতশত টুকরো করতে গিয়ে আমি নিজেই কয়েক কোটি টুকরো হয়ে গেছি।তোমার সাথে করা অন্যায়ের শাস্তি আমি পেয়েছি।অনেক পেয়েছি।আর দিও না প্লিজ।(অনুনয়ের সুরে)
–আচ্ছা তাই নাকি?তুমি কি ভাবছো তোমার এসব কথায় আমি গলে যাবো?
আমার স্বামী আমাকে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ডিভোর্স দিয়েছে তুমি জানতে না এই সমাজে ডিভোর্সি মেয়েদের অবস্থান কি?বিশেষ করে মফস্বল শহরে।সব জানতে তুমি,,আমার সাথে কি কি হতে পারে,,সবাই আমাকে কোন নজরে দেখবে।জানতে না?
প্রতিনিয়ত ডিভোর্সি হিসেবে কত কথা শুনতে হয়েছে।কত আজেবাজে কথা শুনতে হিয়েছে আমাকে।এলাকার মানুষেরা প্রতিনিয়ত কানাঘুষা করতো বাইরে বের হলে অদ্ভুৎ ভাবে তাকাতো।যেন আমি বড় কোনো পাপ করে ফেলেছি।আমার জন্য আমার পরিবারকে কত কথা শুনতে হয়েছে।তারা নাকি লোভে পড়ে বড়লোকের ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিয়েছে।আর সেই ছেলে দুদিন ফূর্তি করে প্রেগন্যান্ট করে ছেড়ে দিয়েছে।ছিঃ
সামুর কথা শুনে আদি সোফায় বসে পড়ল মাথায় হাত দিয়ে।
ও ভাবতেই পারছেনা ওর রাগ,জেদ,ইগো সামুর জীবনটা কতটা বিষিয়ে দিয়েছিলো।কতটা সাফার করতে হয়েছে ওকে।নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছে।ওর জন্য ওর ভালোবাসাকে লোকে ফূর্তির সাথে তুলনা করেছে।কতটা বাজে ভাবে নিয়েছে ওদের সম্পর্ক।অনুশোচনার আগুনে দগ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
মাথা নিচু করা অবস্থায় মিনমিন করে বললো,
–সব আমার এই অতিরিক্ত রাগের জন্য হয়েছে।আমার এই রাগ আমার জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে।
সেটা শুনে সামু বললো,
–হুহ,,তোমাকে আগেই বলেছিলাম তোমার রাগকে কন্ট্রোল করো।তোমার এই রাগ সব শেষ করে দিবে।তুমি আসলে আমাকে ভালোই বাসোনি কখনো।তাহলে তোমার রাগ এতটা প্রায়োরিটি পেতো না।
আদি বসা থেকে উঠে বললো,
–সামু আর যাই বলো এটা বলোনা।এটা আমি মেনে নিতে পারবোনা যে আমি তোমাকে ভালোবাসি নি।আমি তোমাকে ভালোবেসেছি।তুমি সেদিনও আমার ভালোবাসাকে উপহাস করেছিলে।আমার ভালোবাসায় পাগলামি ছিলো বাট মিথ্যে ছিলো না।প্লিজ এসব বলো না।
সামু মুখ ঘুরিয়ে নিলো।
আদি আবার বলা শুরু করলো,
–আমি জেনে বুঝে কিছু করিনি।সব কিছু রাগের মাথায় করেছি।তুমি তো জানতে আমায়।তুমি সেদিন বলেছিলে আমার সাথে থাকা যায়না,,তোমার এই একটা কথা আমাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে,কতটা রক্তাক্ত করেছে সে খবর তুমি রেখেছিলে?কেন বলেছিলে?
–হ্যা বলেছিলাম রাগের মাথায় বলে ফেলেছি।অনেক কিছু বলে ফেলেছিলাম।কিন্তু মিথ্যে কিছু বলিনি।তুমি আমার সাথে খেলার পুতুলের মতো বিহেব করতে না?আমি বলেছিলাম থাকা যায়না কিন্তু এটা বলিনি যে আমি তোমার সাথে থাকবোনা।একবারো বলেছিলাম?
–আমি রাগের মাথায় উল্টো পাল্টা কাজ করলে আমাকে কে থামাতো?কে বুঝাতো?কে শান্ত হতে বলতো?কে পরবর্তীতে আমাকে আমার ভুল ধরিয়ে দিতো?আমি তোমাকে বলিনি আমাকে সামলে নিও।তুমি কথা দেওনি সব সময় আমাকে সামলে নিবে?তুমি বলোনি আমার সব দায়িত্ব তোমার?তবে সেদিন কেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে?
–তুমি সময় দিয়েছিলে আমাকে?
আদি শুকনো হাসি দিয়ে বললো,সময়?সারারাত অপেক্ষা করেছি।ভেবেছি আমার সামু আসবে,আমার সাথে কথা বলবে।কিন্তু তুমি আসোনি।আমি সারারাত জেগে ছিলাম।কিন্তু তুমি আসোনি।কেন আসোনি?সেদিন যদি আসতে,,
বলেই আদি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
সামু আদির কথা শুনে বিস্মিত হয়।তারপর বলে, আমি যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু বাবা আমাকে যেতে দেয়নি।
–বাবা?লাইক সিরিয়াসলি?বাবা আমাদের গুরুজন কিন্তু আমরা স্বামী স্ত্রী আমাদের পার্সোনাল লাইফে শুধু মাত্র আমাদের অধিকার।স্বামী স্ত্রী সম্পর্কে অন্য কেউ আসতে পারেনা।তুমি কিভাবে আসতে দিলে।তোমার আমার সাথে কথা বলা উচিত ছিলো।আমার প্রচন্ড অভিমান হয়েছিলো সেদিন।
সামু চুপ করে আছে।
তারপর আবার আদি বললো,সেদিন রাগে অভিমানে আমি এমন একটা ভুল ডিসিশন নিয়ে ফেলেছি।আর তার জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত পস্তাতে হয়েছে।আমি ভেবেছিলাম আমি তোমাকে ঘৃণা করে বাচতে পারবো অনেক চেষ্টা করেছি ঘৃণা করার কিন্তু পারিনি।আমি কিছুদিন পরই ভুল বুঝতে পেরেছি।
–তবে কেন ফিরোনি?ভুল যদি বুঝেই থাকো তবে কেন ফিরনি?জবাব দেও।
–কোন মুখে তোমার সামনে দাড়াতাম।আমার তোমার সামনে দাড়ানোর মুখ ছিলো না।তাছাড়া ভেবেছিলাম সব শেষ হয়ে গেছে।
আমি কাউকে জিজ্ঞেস পর্যন্ত করতে পারিনি তোমার সম্পর্কে।আমার কেন জানি ভয় হতো।তারপর একদিন নিশির কাছে শুনলাম তুমি তোমার লাইফে হ্যাপি আছো।ভেবেছিলাম নতুন করে বিয়ে সংসার করেছো।তাই তোমার জীবনে আর দুঃখ আনতে চাইনি।
–কিন্তু শান্তিতে থাকতে দিলে কই?সেই তো আবার ঝড় হয়ে এলে।
–সামু প্লিজ ফিরে চলো।
সামু আদির কথা শুনে ভিষণ খেপে গেলো।
–তুমি কি আমার কথা এখনো বুঝোনি?তুমি বুঝতে পারছোনা আমি তোমাকে সহ্য করতে পারছিনা।আমি অনলি আদিবার জন্য তোমাকে টুলারেট করছি।আমি চাইনা ও ওর পাপাকে পেয়ে হারাক।ওর চোখে যে খুশির ঝলক দেখেছি তা হারিয়ে যাক।তুমি অনলি আদিবার পাপা।আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই আর না হবে।
–তুমি কি এখন আর আমাকে ভালোবাসো না?
সামান্তা অন্যদিকে ঘুরে বললো,তোমাকে এখনো সেটা বুঝাতে হবে?
–আচ্ছা,তাই?তাহলে ডিভোর্স পেপারে এতবছরেও সাইন করোনি কেন?
–সেটা নিতান্তই আমার ব্যাপার।এর কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।তুমি কালকে পেপার এনে দিও আমি সাইন করে দিবো।তারপর তুমি বিয়ে করো যা খুশি করো আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার।
–সামু তুমি মন থেকে এসব বলছোনা,তোমার অনেক কিছু যায় আসে।এত বছরে তোমার আমার কথা মনে পড়েনি?তুমি যতবার আদিবাকে আদিবা বলে ডেকেছো ততবারই আমাকে মনে করেছো।আদিবাকে আদিবা ডাকার সময় প্রথম আমার নাম নিয়েছো।আমাদের বিয়ে আমাদের সংসার সব এতো সহজে ভুলে যাওয়া সম্ভব।আমি যেমন ভুলতে পারি নি তুমিও পারোনি।অস্বীকার করোনা।
–হ্যা,মনে পড়ে।৯মাসের সংসারে ১৪মাসের বিবাহিত জীবনে তুমি কি করেছো সব মনে পড়ে।তা ভুলি কি করে।
–হ্যা আমি তোমার স্বাধীনতার হস্তক্ষেপ করেছি।সব সময় নজরে রেখেছি।কিন্তু আমি তোমাকে কখনো সন্দেহ করিনি,অবিশ্বাস করিনি।কিন্তু কেন করেছি?
ভুলে গেলে রাজের ঘটনা আর ক্লাবের ঘটনা।কি হতে যাচ্ছিলো।আর তোমার ফ্রেন্ড জানভি ও তো তোমাকে ড্রাগের ট্রাপে ফেলতে চেয়েছিলো।ফিনান্সশিয়াল বেনিফিটের জন্য। এ ঘটনা গুলো আমাকে বেশ ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো।খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তাই আমি রিক্স নিতে চাইনি।তোমাকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে চেয়েছি।
বিপদ থেকে দূরে রাখতে চেয়েছি।
হয়তো আমার ওয়েটা অন্যরকম ছিলো।
–বিপদ?বিপদের ভয়ে কি মানুষ ঘরে বসে থাকে।তুমি থাকো?বিপদকে মোকাবিলা করতে হয়।আমি এই ৫বছরে কি কোনো সমস্যায় পড়িনি।সব মোকাবিলা করিনি।তুমি বিপদে পড়োনি?
–আমি তো বলছি ভুল করেছি।এর চেয়ে বেশি আমি কি করতে পারি?বলো কি করতে পারি?না বুঝে করেছি ভুল।তাই বলে কি এই ভুলের ক্ষমা নেই?প্লিজ ফিরে চলো।আদিবা আমার মেয়ে।ও সুন্দর একটা লাইফ ডিজার্ভ করে।ওকে আমি সুন্দর একটা লাইফ দিতে চাই।
–না আমি কোথাও যাবো আর না আদিবা।তুমি ওর বাবা।তুমি ওর সাথে দেখা করতে পারো,সময় কাটাতে পারো বাট ও ওর মায়ের কাছেই থাকবে।ওকে তুমি নিতে পারবে না।
–সামু তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি চাইলেই আদিবাকে আমার কাছে নিয়ে যেতে পারি।সে ক্ষমতা আমার আছে।
সামু আদির কথা শুনে ঘাবড়ে যায়।আসলেই আদি চাইলেই আদিবাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে।সে পাওয়ার ওর আছে।সামু ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আদির দিকে চাইলো।
তারপর কিচেনে চলে গেলো।আদি বুঝতে পারলো না সামু এই মুহুর্তে কেন এভাবে চলে গেলো।কিছুক্ষণ পর সামু মাছ,মাংস কাটার ছুড়ি নিয়ে এলো।
আদি কিছুই বুঝতে পারছেনা।
তারপর আদির হাতে ছুড়ি দিয়ে বললো,
–যদি আদিবাকে আমার কাছ থেকে নিতেই হয় আইনী ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই এটা দিয়ে আমাকে খুন করে নিয়ে যাও।
আদি ছুড়িটা ফেলে দিয়ে বললো,
–কি বলছো?আমি আদিবাকে নিতে চাইলে নিয়েই যেতাম।আমি শুধু আদিবাকে নয় তোমাকেও চাই।আমি তো এত বছর জানতাম না আমার কোনো মেয়ে আছে।আমি তো শুধু জেনে এসেছি সামু আছে।আমার সামু।আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি তুমি।তুমি কেন বুঝতে চাইছো না?
সামু চিতকার করে উঠলো।
–আমার বুঝার দরকার নেই কিচ্ছু বুঝতে চাইনা।আমি তোমাকে ঘৃণা করি শুধু ঘৃণা করি।
–সামু প্লিজ চিতকার চেচামেচি করোনা।আমি নিতে পারিনা।আস্তে বলো।আমি শুনছি।
সামু হা হয়ে গেলো।আদি নাকি চিতকার চেচামেচি নিতে পারেনা।সামু আর কিছু না বলে দ্রুত পায়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
আদি পিছনে থেকে বললো,যতই ঘৃণা করো আমি যাচ্ছিনা।বিকজ আই লাভ ইউ।
রাতে আর কারো খাওয়া হলো না।সামু রাগে গজগজ করতে করতে ফ্রেশ হয়ে আদিবার পাশে শুয়ে পরলো। তারপর ধপ করে উঠে বসে,
আশ্চর্যজনক ব্যাপার!আমি তো খেয়ালই করিনি।আদির সাথে এত কথা বলছি।রাগারাগি করছি।চেচামেচি করছি।কিন্তু ও আমার সাথে যখনি কথা বলছে শান্ত গলায় কথা বলছে।একবার ও উঁচু গলায় কথা বলেনি।আর না রাগ দেখিয়েছে ঘটনা কি?ও তো এতটা শান্ত কখনো ছিলো না।ওর তো এতোক্ষনে কয়েক দফা চিতকার করার কথা।ভাংচুর করার কথা।
আমি এসব কেন ভাবছি যা খুশি হোক।
সামু আবার শুয়ে পরলো।
???
আদির খুব ক্ষুধা পেয়েছে।এপাশ ওপাশ করে অনেক কষ্টে ঘুমালো।হটাৎ মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলো।ক্ষুধায় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে।ঘুম আসছেনা।আদি উঠে পানি খেয়ে নিলো।
তারপর কিচেনে গেলো।কিন্তু কাউকে না জানিয়ে খেতেও বাধছে।কেমন চুরি চুরি মনে হচ্ছে।আবার সামুকে যে ডাকবে সেটাও কেমন বেমানান দেখায়।কিছুক্ষণ আগেই ওদের মধ্যে যেসব কথা হয়েছে তাতে।
আদি এতকিছু না ভেবে ক্ষুধার জ্বালায় সামুর দরজায় নক করলো।কিন্তু সামুর হুশ নেই।অনেক বার নক করার পর সামু বিরক্তি নিয়ে হাই তুলতে তুলতে দরজা খোলে দিলো।কিন্তু চোখ মেলতে পারছেনা।
–কি চাই?
আদি হা করে সামুর দিকে চেয়ে আছে।আদি কোনো উত্তর না দেওয়ায় সামু চোখ ভালো ভাবে খোলে আদিকে দেখছে।আদি ওর দিকে চেয়ে আছে তাই নিজের দিকে তাকালো।ওর চুল এলোমেলো,টিশার্ট দিয়ে পেট বের হয়ে আছে,লেডিস টাওজার হাটুর জায়গায় ঘুচিয়ে থাকার কারণে উঠে আছে।
সামু নিজেকে দেখে চিতকার করে দরজা বন্ধ করে দিলো।
তারপর জামাকাপড় ঠিক করে ওড়না জড়িয়ে বের হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–কি চাই এই মাঝরাতে?
–সামু আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে।ক্ষুধায় পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে আর কামড়াচ্ছে।ঘুম আসছেনা।(পেটে হাত দিয়ে)
আদিকে এভাবে দেখে সামুর হাসি পেলেও বেশি মায়া লাগলো।নিশ্চয়ই অনেক ক্ষুধা লেগেছে।
–এসো।
সামু আদিকে ডাইনিং টেবিলে নিয়ে খাবার দিলো।খাবার দেখে মনে হচ্ছে আদি হীরার ক্ষনি পেয়েছে।
আদি খেতে নিবে তখনই সামুকে বললো,
–তুমিও তো খাওনি।ঝগড়া করেই শুয়ে পড়েছো।
–আমি ঝগড়া করেছি?
–না,,মানে,,তুমি না আমি করেছি।তুমিও খেয়ে নেও।তোমার বাড়িতে তোমার খাবার খাব আর তুমি না খেয়ে থাকবে?ব্যাপারটা ভালো দেখায়না।
–আমার ক্ষুধা নেই।চুপচাপ খেয়ে উঠো।
আদি আর কথা না বাড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো।এমনিতেই পেটে ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেছে।
আদি খুব স্পীডে খাচ্ছে।তা দেখে সামু আপেলে কামড় দিয়ে বললো,
–কতদিন যাবত অভুক্ত?
আদি খাবার থামিয়ে বললো,
–খাবারের খুটা দিচ্ছো?সে দেও।সারাদিনে দু কাপ কফি খেয়েছি মাত্র।তুমি তো কিছু খেতে দিলে না।
কথাটা শুনে সামুর খারাপ লাগলো।যতই রাগ অভিমান থাকুক বর বলে কথা যাকে কোনো একদিন জানপ্রাণ দিয়ে ভালোবেসেছিলো।সামু তো জানে আদির না খেয়ে থাকার অভ্যাস নেই।
খাওয়া শেষ করে আদি বললো,বাচা গেলো।নয়তো ইদুরেরা আমার পেটের নাড়িভুড়ি খেয়ে নিতো।
সামু ভ্রু কুচকে তাকালো।
সামু একটা রুম দেখিয়ে বললো,
ওখানে গিয়ে ঘুমাও।
সকালে সামু আদিবাকে স্কুলের জন্যে রেডি করছে।অফিস থেকে ২দিনের ছুটি নিয়েছে।কেননা ওর আদিবাকে আদির কাছে ছাড়তে ভয় হয়।মনে হয় ও না থাকলেই আদি মেয়েকে নিয়ে যাবে।
বাইরে বের হতেই দেখে আদি গাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে।তা দেখে সামু ভ্রু কুচকে তাকালো।আদি বললো,
চলো আমি তোমাদের সাথে যাবো।
–কোনো প্রয়োজন নেই?তোমাকে যেতে হবেনা।
–আমি গেলে কি সমস্যা?আমি কি আমার মেয়ের স্কুলে যেতে পারিনা?
–আমরা যাচ্ছি।আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।
আদিবা চুপচাপ।গাল ফুলিয়ে রেখেছে।দুজনেই আদিবার দিকে চেয়ে আছে তারপর একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে।
আদি আদিবার সামনে বসে বললো,
–চড়ুই পাখি কি হয়েছে?
–পাপা মাম্মা আজ আমাকে আদর করে নি।
সামু অবাক হয়ে আদিবার সামনে বসে বললো,আমি কি করেছি সানসাইন?
–তুমি আমাকে রেডি করে প্রতিদিন কপালে চুমু দেও আজকে দেওনি।
–ওলে,,আমার সোনা ভুল হয়ে গেছে।চলো ভুলের জন্য দুইটা দিয়ে দিলাম।
সামু মনে মনে বলছে, বাপকা বেটি।আদি যেমন করতো মেয়েও তেমন করে।
আদি মনে সেই স্মৃতি গুলো ভেসে উঠছে।অফিসের জন্য রেডি করে সামু আদির কপালে কিস করতো আর আদি মজা করে বলতো,
প্যাক্টিস করে রাখো ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।
–পাপা তুমিও দেও,,,
আদি মুচকি হেসে আদিবার কপালে চুমু দিলো।
আদিবা বাবা-মায়ের কাছ থেকে আদর পেয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো।
চলবে..