শুরুটা অন্যরকম পর্ব ৩১

0
342

#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_৩১
#অধির_রায়

হসপিটালের করিডরে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে নিয়তি৷ নিয়তির পাশেই আসে আছে নির্বণের মা৷ নিয়তির চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে কতদিন থেকে কিছু খায় না৷ চোখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে৷ ঠোঁট জোড়া ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।
নিয়তি এই জন্য ভয় পেয়ে আছে যে, “গতকাল রাতে বমির সাথে রক্ত এসেছে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না কি হবে? তার সাথে কিছু হলে মেনে নিতে পারবে৷ কিন্তু তার বেবির কিছু হলে মেনে নিতে পারবে না৷

— নার্স এসে বলে উঠেন, ” ম্যাম আপনাদের রিপোর্ট এসে পড়েছে। স্যার আপনাদের ডাকছন।”

রিপোর্টের কথা শুনে নিয়তি হাত পা কাঁপতে থাকে৷ সে নিজের মাঝে নেই৷ মনের ভিতরের ভয়টা আরও চেপে ধরেছে৷ সবকিছু পজিটিভ আসবে আসবে তো।

— নিয়তির কাঁধ হাত রেখে, ” কি হলো? এভাবে ভয় পেয়ে আছো কেন? তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে ? ”

— নিয়তি কেঁপে উঠে, ” হ্যাঁ মা যাচ্ছি৷ আর আমি একদম ঠিক আছি৷ আমার কোন কষ্ট হচ্ছে না৷ ”

ধীরে পায়ে ডক্টরের চ্যাম্বারে প্রবেশ করেন দু’জনে৷ নিয়তি মুখ একদম ফ্যাকাশে হয়ে আছে। সে কিছুই বুঝতে পারছে না। কেন তার মাঝে ভয় চেপে ধরে বসে আছে?

— নির্বণের মা বলে উঠেন, ” ডক্টর সবকিছু ঠিক আছে তো৷ কোন সমস্যা নেই তো। দেখেন কিভাবে ভয় পেয়ে আছে৷ প্রথমবার মা হতে যাচ্ছে তো৷ ”

ডক্টর নির্বণের মায়ের কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে৷ এতে নিয়তির ভয়টা সত্যতে প্রমাণ হয়৷ ডক্টররা কোন কারণ ছাড়া মাথা নিচু করে না৷

— নিয়তি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে, ” ডক্টর আমার বেবি একদম ঠিক আছে তো৷ প্লিজ ডক্টর আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।”

— মুখ কালো করে ডক্টর বলে উঠেন, ” দেখেন ম্যাম, আমরা ডাক্তার। আমরা রোগীর কাছ থেকে কিছু লুকাতে চাইনা৷ তবে আপনাকে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে আগে৷”

— ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,” কি জানতে চান? আমি একদম ঠিক আছি৷”

— ম্যাম বমির সময় বমির সাথে কখনও ব্লাড আসতো কি?

ব্লাডের কথা শুনে নির্বণের মায়ের চোখ অনেক বড় হয়ে যায়৷ নির্বণ মা নিজেকে সামলিয়ে নেয়৷ নিয়তি বুঝতে পারে এখানে মিথ্যা কথা বললে তার সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখানো যাবে৷

— নিয়তি মাথা নিচু করে বলে উঠে, ” বমির সাথে কখনও ব্লাড আসেনি। আর আমার ঘন ঘন বমি আসে না৷ আমি প্রায় সারাদিন টক খায়৷”

— গ্রেট। আপনার রিপোর্টে রক্তশূন্যতার কথা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা চাইনা আপনি রিস্ক নিয়ে সন্তান জন্ম দেন এবর্শন করে ফেলেন৷

— নিয়তি বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” হোয়াইট! আপনার মাথা ঠিক আছে৷ আপনি কি বলছেন এসব৷ আমি এবর্শন করব৷”

— ম্যাম বুঝার চেষ্টা করেন এভিয়েশন না করলে আপনার লাইফ রিস্ক হতে পারে৷ হয় মা বাঁচবে না হয় সন্তান বাঁচবে।

— নিয়তি পেটে হাত রেখে, ” আমি আমার সন্তানকে হত্যা করতে পারব না৷ নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিব তবুও আমার সন্তানের গায়ে কোন আঁচ লাগতে দিব না৷”

নিয়তি রাগ দেখিয়ে হন হন করে বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে৷

— ম্যাম আপনি বুঝার চেষ্টা করেন। সন্তান নেওয়া তার জন্য রিস্কের বিষয়৷

— নির্বণ মা কোমল হতাশা জনিত কন্ঠে বলে উঠে, ” নিয়তি বাচ্চা মানুষ৷ আমি তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বলবো। তাকে সবকিছু বুঝিয়ে বললে সে সবকিছু বুঝতে পারবে।”

— থ্যাংকস ম্যাম৷ যেভাবেই হোক এবর্শনে উনাকে রাজি করাতে হবে৷ অলরেডি ছয় মাস চলছে৷ এর পর এভিয়েশন করা ক্ষতি কর হবে৷ এমনকি বাচ্চা ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে৷

নির্বণের মা ডক্টরের কথা শুনে একটা বড় সড় ধাক্কা খায়৷ তিনি কখনো ভাবতে পারেনি এতটা ক্রিটিক্যাল হয়ে যাব৷
__________

নিয়তি নির্বণের পায়ের কাছে বসে বাচ্চা পোলাপানের মতো কান্না করে যাচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তিকে দাঁড় করায়৷

— চোখের জল মুছে দিয়ে, ” কি হয়েছে তোমার? তোমার কি খুব কষ্ট হচ্ছে? প্লিজ আমাকে বল না৷”

নিয়তি কান্না করার কারণে কোন কথা বলতে পারছে না৷ ডক্টরের কাছ থেকে ফিরে এসে ঘরে নিজেকে বন্ধি করে রেখেছে। নির্বণ আসাতে নিয়তি ঘরের দরজা খুলে দিয়েছে।

— নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে, ” প্লিজ নিয়তি কান্না কর না৷ তোমার কান্না আমি সহ্য করতে পারব না৷ তোমার চোখের জল দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়৷”

— আপনাকে একটা কথা দিতে হবে।

— কি কথা? আমি তোমার সব কথা রাখার চেষ্টা করব৷

নিয়তি আবারও নির্বণ পায়ে বসে পড়ে। এবার নির্বণ নিজেকে কষ্ট করে নিয়তিকে সোফায় বসিয়ে দেয়৷

— নির্বণ নিয়তির দিকে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” আমি তোমায় খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না।”

— আমিও আপনাকে খুব ভালোবাসি। আপনি সব সময় আমার পাশে থাকবেন তো৷

— নিয়তি হাত কষ্ট করে চেপে ধরে, “হ্যাঁ আমি সব সময় তোমার পাশে থাকবো৷ তোমার হাত আমি কোনদিন ছেড়ে দিব না৷”

— এভাবে আমার হাত কষ্ট করেই ধরে থাকবেন৷ আমাকে আজ একটা কথদ দিতে হবে৷

— বল কি কথা? আমি আমার জীবন দিয়ে তোমার কথা রাখার চেষ্টা করবো।

— নিয়তি এক বুক কষ্ট নিয়ে বলে উঠে, ” আমি বাচ্চা এভিয়েশন করবো না৷ আমি আমাদের বাচ্চাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে চাই৷”

নিয়তির কথা শুনে নির্বণ নিয়তির হাত ছেড়ে দেয়৷ নির্বণ বুঝতে পারছে না সে কি করবে? নির্বণ নিজের হাত বুকের বাঁ পাশে রাখে৷ বুকটা চিনচিন ব্যথা শুরু করে দিয়েছে৷ নির্বণ চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷

— নিয়তি কান্না করে, ” আমার জীবন থাকতে আমি আমার বাচ্চার গায়ে কোন আঁচ লাগতে দিব না৷ ”

— বুকে পাথর জমা রেখে নিয়তির গাল ধরে কান্না করে, ” প্লিজ নিয়তি তুমি বুঝার চেষ্টা করো৷ এভাবে হয় না৷ তোমাকে আমি হারাতে পারবো না৷ আমার কাছে আর কোন শক্তি নেই৷”

— আমার কাছে আমার সন্তান আগে৷ আমি কিছুতেই আমার সন্তানকে একা হতে দিব না৷ আমি তার ঢাল হয়ে থাকবো৷ আমার ধারের কাছে কাউকে ঘেঁষতে দিব না৷

— নিয়তি আমি যতটা তোমায় ভালোবাসি ততটায় আমাদের সন্তানকে ভালোবাসি৷ আমরা পরবর্তীতে চেষ্টা করতে পারি তো।

— নিয়তি ঘৃণার সাথে বলে উঠে, ” আপনি কিনা বাবা৷ বাবা হয়ে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলতে চান ৷ আমার কিছু লাগবে না৷ আমি আমার সন্তনকে ঠিক আগলে রাখবো৷

— নির্বণ এক বুক কষ্ট নিয়ে, ” আচ্ছা নিয়তি৷ তুমি যা বলবে ঠিক তাই হবে।।তুমি যা যাও আমি তাই করে দিব৷

নিয়তি নিজের চোখের জল মুছে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে। মিয়তি কিছুতেই এত বড় ধাক্কা নিতে পারছে না৷

নির্বণ অপলক দৃষ্টিতে নিয়তির দিকে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে৷ না চাওয়া সত্ত্বেও চোখ থেকে অনবরত অশ্রু গড়িয়ে যাচ্ছে।

নির্বণ মনে মনে বলে উঠে, ” আমি কি করে তোমায় ছাড়া থাকবো৷ তুমি ছাড়া আমার পৃথিবী অন্ধকার৷ তুমি আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাওয়া মানে মনে আমাকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঢেলে দেওয়া৷ আমি এই ঘরে কার সাথে কথা বলবো? কাকে বলবো নিয়তি বুকের রোজটা ঠিক করে দাও৷ কে আমার ট্রাই বেঁধে দিবে৷ কে আমার সাথে পায়ে পা রেখে ঝগড়া করবে৷”

নির্বণ আর নিতে পারছে না৷ নির্রণের মুখ থেকে আর কিছু বের হচ্ছে না। মুখে সব কথা আটকে পড়ে যাচ্ছে৷ মাথা ঘুরতেছে৷ বুকটা চিনচিন ব্যথা করছে৷ একবার নিয়তির চাঁদ মাখা মুখের দিকে তাকাচ্ছে অন্য বার নিয়তির পেটের দিকে তাকাচ্ছে৷

নিয়তির হাত ধরে নিয়তির পাশে বসে কান্না করতে করতে নির্বণ ঘুমিয়ে পড়ে৷ তবে নির্বণ আশা ছাড়েনি যে, ” সে নিয়তিকে বুঝাতে পারবে না৷ আজ না হয় কাল ঠিক নিয়তিকে বুঝাতে সক্ষম হবে৷”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here