#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_৩০
#অধির_রায়
নিয়তি গা গুলিয়ে আসাতে নিয়তি কোন মতো নিজের গাড়ে শাড়ি প্যাঁচিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ তড়িঘড়ি করে নির্বণও তার পিছু পিছু ছুটে আসে৷
— নির্বণ হন্তদন্ত হয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি তোমার কি হলো? এভাবে বমি করার কারণ কি? প্লিজ নিয়তি নিজেকে সামলিয়ে নাও৷ আমার খুব ভয় লাগছে৷”
আমি এখনই ডাক্তারকে ফোন করছি৷
নির্বণ চলে আসতে নিলেই তার হাত ধরে ফেলে নিয়তি৷ নির্বণের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, “ব্যস্ত হতে হবে না৷ এমন সময় আমাদের বমি বমি ভাব হবেই এবং বমি আসবেই ৷ এটাই তো মা হবার আনন্দ।”
নির্বণ নিজের কষ্ট মনের মাঝে জমা রেখে নিয়তির হাত ধরে নিয়তিকে ধীরে ধীরে রুমে নিয়ে আসে৷ বিছানায় নিয়তিকে ধীরে ধীরে শুইয়ে দেয়৷ পিছন থেকে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে৷
_______
আবারও একটা নতুন দিনের সুচনা করলেন সূর্যদেব। সূর্যের তেজস্বী আলোতে আকাশের চাঁদ তারকা হার মেনে নিয়েছে। অন্ধকার আছেই বলেই দিনের এত কদর৷ নিয়তি ঘুম থেকে উঠে নির্বণকে পাশে পায় না৷ নির্বণকে দেখতে না পেয়ে মন খারাপ হয়ে যায়৷ কেন এমন নেশা হয়ে গেছে নির্বণকে দেখার৷
নিয়তি মন ভার করে টিপ টিপ পায়ে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ ওয়াসরুম থেকে বের হতেই নির্বণ তার পথ আটকায়।
— নিয়তি ব্রু কুঁচকে বলে উঠে, ” এভাবে পথ আটকানোর কারণ কি? আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
— ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ আমি মানুষ, কোন হনুমান বা উগান্ডা নয়৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আপনাকে দেখে আমার হনুমানই মনে হয়। সত্যি বলছি আপনার পিছনে যদি লেজ থাকতো একদম হনুমান দেখাতো৷ কল্পনাতেই হাসি পায়৷”
— হাসা হয়ে থাকলে এবার হাসি থামিয়ে আমার সাথে আসো৷
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ধীরে পায়ে নিয়ে আসে৷ তাকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে কিছু শপিং ব্যাগ তার দিকে এগিয়ে দেয়।
— নিয়তি অবাক চোখে তাকিয়ে, ” এসব কি? আর আপনি সকালে শপিং এ গিয়েছিলেন! আমার জানামতে এত সকাল বেলা শপিংমল খুলে না৷”
— কে বলেছে সকাল বেলা শপিং মল খুলে না? এটা কোন অভিধানে লেখা আছে৷ তবে আমি এসব কিছু তোমার জন্য বানিয়ে এনেছি৷ তারাতাড়ি খুলে দেখে বল তো কেমন হয়েছে?
নিয়তি খুব যত্ন সহকারে শপিং ব্যাগ খুলে। নির্বণ নিয়তির জন্য রাতে পড়া নাইটিং মতো ঠিলেঠালা পোশাক নিয়ে এসেছে৷
— নিয়তি ঠিলে ঠালা পোশাক নির্বণের সামনে ধরে,” এসব কি? এসব দিয়ে আমি কি করব? আমি এমন মোটা মানুষ৷ আমার মতো আস্ত তিনটা লোক এই পোশাকের মাঝে ঢুকতে পারবে৷”
— এটার নাম মেক্সি৷ প্রেগন্যান্সির সময় মায়ের এমন পোশাক পড়ে৷ এতে মা ও বাচ্চা উভয়েই ভালো থাকে৷
— কি! আমি এখন মেক্সি পড়বো৷ আমার জানা মতো মেক্সি গ্রাউনের মতো৷ কিন্তু এটা দেখে মনে হচ্ছে হরর মুভির ভুতের পোশাক মনে হচ্ছে৷
— সে যাই হোক৷ আজ থেকে তোমাকে এসব পোশাক পড়তে হবে৷ ডক্টর তোমাকে এসব পোশাক পড়ার জন্যই বলেছে৷
________
— “নিয়তি তোমাকে আগামীকাল ডাক্টরের কাছে নিয়ে যাব। সকাল সকাল রেডি থেকো৷” নির্বণের মা কাঁথা সেলাই করতে করতে বলে উঠেন।
— মা আমি তো কয়েকদিন আগেই ডক্টর দেখিয়ে আসছি৷ এখন আবার যেতে হবে৷
— হ্যাঁ আমার যখন মন বলবে তখনই তোমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব৷ আমি কোন রিস্ক নিতে চাইনা৷
— মা আপনি শুধু শুধু টেনশন করছেন৷ আমার কিছু হবে না৷ আমি একদম ঠিক আছি৷
— নিয়তি দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” আমি তোমার থেকে এই বিষয়ে পারদর্শী বেশি৷ তুমি তো এর আগে কোন দিন মা হওনি। নাকি এর আগেও মা হয়েছো?”
— নিয়তি মাথা নিচু করে, ” না মানে আমি বলতে চেয়েছিলাম কয়েকদিন পর পর না গেলে হয় না৷ প্রতি এক মাস পর পর চেক আপ করলেই তো হতো৷”
— নিয়তিকে কাছে বসিয়ে, ” না সোনা মা হওয়া এতটা সহজ নয়৷ গর্ভকালীন অনেক সমস্যা হতে পারে৷ রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে৷ শরীর কখন খারাপ হয় জানা নেই৷ আমরা তো বমি থেকে দুর্বলতা ধরে নেয়৷”
— নিয়তি টলমল চোখে বলে উঠে, ” আজ যদি আমার মা বেঁচে থাকতো তাহলে আমার খেয়াল এভাবেই রাখতো।”
— কড়া গলায় বলে উঠে, ” একদম কাঁদবে না৷ কে বলেছে তোমার মা বেঁচে নেই? আমিই তোমার মা৷ আমি তোমাকে বউমা হিসেবে দেখি না। আমি তোমাকে নিজের মেয়ের মতোই দেখি৷”
— চোখের জল মুছে, ” আচ্ছা মা কাঁথা সেলাই করে কি হবে? ”
— অবাক চোখে নিয়তির দিকে তাকিয়ে, “কি হবে! মানে কি? আমি এসব আমার নাতি বা নাতনিকে গিফট করবো৷ গ্রেনির হাতের প্রথম ছোঁয়া লাগবে তার দেহে।”
— নিয়তি মুচকি হেঁসে বলে উঠে, “বুঝতে পেরেছি মা৷”
— ছোঁয়ার মা বলে উঠে, ” আমি কিন্তু টুইন বেবি চাই৷ চাই মানে কি, আমি তো এটাই বিশ্বাস করি আমার নিয়তির টুইন বেবি হবে৷”
মন খারাপ করে, ” ছোঁয়া চলে যাওয়ার পর নিয়তিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি৷”
— নির্বণের মা বলে উঠেন, ” একদম মন খারাপ করবেন না৷ আমরা সব সময় আপনার পাশে আছি৷ আর সারাজীবন আপনার পাশে থাকব৷”
— ছোঁয়ার ভাঙা গলায় বলে উঠেন, ” ইশ্বর আমার ভালোবাসার মানুষগুলোকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিচ্ছেন৷ প্রথমে আমার কাছ থেকে আমার রঙ কেঁড়ে নিলেন৷ এখন হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে পেয়েও পেলাম না৷ আমি কি অন্যায় করেছি, যার জন্য ইশ্বর আমাকে এত শাস্তি দিচ্ছেন৷”
“আমি জানি ছোঁয়া আপনাদের সাথে অনেক অন্যায় করেছে৷ তনুও আপনারা আমায় মাথায় করে রেখেছেন৷ কোনদিন আপনাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারব না৷”
— আমাদের কাছে আপনি কোন ফেলনা নয়৷ আপনি আমাদের পরিবারের একটা সদস্য। পরিবারে সবাই আত্মার বন্ধনে আটকে পড়ে৷ আপনার সাথে এখন আমাদের আত্নার সম্পর্ক।
— নিয়তি বলে উঠে, ” আচ্ছা মা আমি রুমে যাচ্ছি, আপনারা গল্প করেন৷”
— নির্বণের মা বলে উঠে, ” ধীরে ধীরে যাবে৷ সব সময় নিজের খেয়াল রাখবে?” কাকে বলছি আমি? যে নিজের খেয়াল রাখেই না৷”
অরিনকে ঢেকে এনে বলে উঠেন, ” নিয়তিকে রুমে পৌঁছে দিয়ে আয়৷”
— নিয়তি বলে উঠে, ” মা আমি একা যেতে পারবো৷”
— অরিন নিয়তির হাত ধরে, ” ম্যাম আপনি একা যেতে পারবেন না৷ আমি আপনাকে দিয়ে আসছি৷”
নিয়তি আর কিছু বলতে পারল না৷ নির্বণ & ছোঁয়ার মা চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে৷ তাদের হাতের পুতুলের মতো নিয়তি অরিনের সাথে চলে আসে ।
__________
— নিয়তি বসে বসে তেঁতুলের আচার খাচ্ছে ৷ পিছন থেকে নির্বণ নিয়তির চোখ হাত দিয়ে চেপে ধরে৷
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, “আপনি আমাকে বোকা বানাতে পারবেন না। আমি আপনার উপস্থিতি বুঝতে পারি৷”
— নির্বণ মুখ গোমড়া করে, ” দিলে তো মনটা ভেঙে৷ কই বলবে বাঁচাও বাঁচাও? আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে৷ বা ভয়ে কাঁদু হয়ে যাবে।”
“তা না বলে আমি আপনার উপস্থিত বুঝতে পারি৷” ভেংচি কেটে বলে উঠে।
— নির্বণের কাঁধে মাথা রেখে, “আপনাকে এত খুশি খুশি লাগছে কেন? কি ব্যাপার? ”
— চোখ বন্ধ করো৷ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷
— না আমি চোখ বন্ধ করবো না৷ কি সারপ্রাইজ আছে আমাকে আগে বলেন?
— ব্রু নাচিয়ে, “না বলা যাবে না৷ সারপ্রাইজ কোনদিন কাউকে বলা যায় না৷”
— আচ্ছা আমি চোখ বন্ধ করে নিচ্ছি৷ আপনার সারপ্রাইজ দেখার জন্য আমার মন আকুল হয়ে আছে৷
নিয়তি চোখ বন্ধ করা নাম করে পিন পিন করে চোখ খুলে সব দেখছে৷ নির্বণ তার পকেট থেকে একটা রিং এর বক্স বের করে৷ নিয়তির সামনে বক্স রেখে বলে উঠে , “এবার আঁখি মেলে তাকায়৷”
— অজানার ভান করে অবাক হয়ে বলে উঠে, ” ওয়াও ডায়মন্ডের রিং! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না৷ আমার হাতে একটা চিমটি কাটেন। ”
— তোমার পছন্দ হয়েছে! তোমার হাতটা বাড়িয়ে দাও৷ আমি নিজ হাতে আমার আঙ্গুলে পড়িয়ে দিব৷
নির্বণ নিয়তির হাতে ডায়মন্ডের রিং পড়িয়ে দেয়৷ নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” সারপ্রাইজ আপনার দেখার আগেই আমি দেখে ফেলেছি৷ এভাবে না বললে আপনি রাগ করতেন৷ তাই এভাবে একটু অভিনয় করে বললাম৷”
নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে৷ নির্বণ বলে উঠে, ” আমাদের ছোট একটা রাজকন্যা হবে৷”
— নিয়তি নির্বণের কাঁধে শুরশুরি দিয়ে, ” না আমাদের একটা রাজপুত্র হবে। আমাদের রাজপুত্র ঘোড়ায় চড়ে আমাদের মন খারাপ হলে মন ভালো করবে৷”
— নির্বণ চোখ বড় করে, “না আমাদের রাজ কন্যা হবে৷”
— নিয়তি নির্বণের থেকে চোখ আরও বড় করে, “না আমাদের রাজপুত্র হবে৷ ”
— আচ্ছা মেনে নিলাম আমাদের রাজপুত্র হবে৷
— আচ্ছা আমিও মেনে নিলাম আমাদের রাজকন্যা হবে।
নিয়তি নির্বণ দু”জনেই খুশিতে মেতে উঠে। নির্বণ বলে উঠে, ” তোমার রাজপুত্রের নাম কি রাখবে?”
— নিয়তি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলে উঠে, ” আমার রাজপুত্রের নাম রাখবো ‘নিহান’। আমার খুব প্রিয় নাম নিহান৷”
আপনার রাজকন্যার নাম কি রাখবেন?
— নিয়তির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে, “আমার রাজকন্যার নাম হবে নিধি। ”
— বাহ্ খুব সুন্দর নাম৷ নিধি নামটা আমারও খুব পছন্দের৷
— তুমি কি জানো?
— নিয়তি অবাক হয়ে, ” আমি কি জানবো?”
— আমাদের টুইন বেবি হবে৷ আমাদের মনের আশা পূরণ করবে৷ একটা ছেলে, একটা মেয়ে৷
— আপনি কি বিজ্ঞানী? আপনার কথা আমার বিশ্বাস হয়না৷
— আমার কথা মিলিয়ে নিও৷
চলবে….