#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৬
#অধির_রায়
“আপনি একটা প্লে বয়৷ আপনি এতগুলো প্রেম করছেন! তৃনা, মিনা, রিনা, চিনা৷ ঘরে বউ থাকতে বাইরে মেয়ের সাথে প্রেম।” কিছুটা ক্ষেপে বলে উঠে নিয়তি৷
— নির্বণ নিয়তির কাঁধে হাত রেখে নিয়তির নাকে নাক ঘেঁষে, ” কেন তোমার হিংসা হচ্ছে?”
— নিয়তি এক কদম পিছিয়ে, ” আপনি কি করলেন আজ?” আমার চোখের সামনে অন্য মেয়েদের জন্য শপিং করলেন৷
— চকিত চোখে তাকিয়ে, ” আমি কি করলাম! আমার মতো নিষ্পাপ শিশু এই ত্রি ভবনে পাবে না৷”
— নিয়তি অট্টহাসি দিয়ে, ” আমার হাসতেও কষ্ট হয়। আপনি নিষ্পাপ শিশু৷ আপনি শিশু তাহলে ফিটার খান৷ বাবু খাইছো৷”
— নির্বণ ক্ষেপে বলে উঠে, ” মিস নিয়তি এসব কি ধরনের কথা? তোমাকে আমার বাবু মনে হয়? ”
— “আপনাকে আমার বাবু মনে হবে কেন? আপনি চাইলে তো প্রতিবছর জোড়ায় জোড়ায় বাচ্চা জন্ম দিতেন৷ আর আপনি কিনা ঘরে বউ থাকলে বাইরে মেয়েদের জন্য শপিং করলেন৷ তাও আবার কোনগুলো। মর্ডান ওয়েস্টার্ন পোশাক।” কিছুটা আফসোস নিয়ে বলে উঠে।
নিয়তি কথা শুনে নির্বণ বুঝতে পারে নিয়তি খুব রেগে আছে৷ নিয়তিকে আরও রাগানোর জন্য বলে উঠে, ” ঘরের বউ কি কোনদিন প্রেমিকা হতে পারে৷ ”
নিয়তির দিকে ঠোঁট জোড়া এগিয়ে দিয়ে, ” প্রেমিকা মিষ্টি হিসেবে আমার ঠোঁট জোড়া বেছে নেয়৷ কিন্তু ঘরের বউ তা করে না। ”
নির্বণেট কথা শুনে নিয়তির পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়৷ নিয়তি আর সহ্য করতে পারছে না৷ নিয়তি নির্বণকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে৷ নির্বণের ঠোঁট জোড়া দখল করে নেয়৷ নিয়তি রাগে নির্বণের ঠোঁটে খুব জোরে একটা কাপড় বসায়৷
নির্বণ নিয়তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে বলে উঠে, ” নিয়তি আমি তোমাকে বলেছিলাম আমি এই বিয়ে বাধ্য হয়ে করেছি৷ আমাকে এই বিয়ের বন্ধনে জড়াবে না৷”
আর পোশাক গুলো আমি বাহিরের কোন মেয়ের জন্য কিনে নিয়ে আসনি৷ সবগুলো পোশাক তোমার৷
নির্বণ আর কিছু না বলে বেলকনিতে চলে যায়৷ নিয়তি নির্বণকে আবারও ভুল ভাবে৷ নিয়তি ভেবে নিয়েছিল নির্বণ অন্য কারো জন্য এসব করেছি৷ কিন্তু আমার সাথে এমন ব্যবহার কেন করল?
নিয়তি নিজের কাছে নিজেকেই দোষী মনে করছে৷ নির্বণের চোখে জল টলমল করছে৷ নির্বণের চোখে শুধু ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠছে৷ কেন নির্বণ ছোঁয়াকে ভুলতে পারছে না?
নির্বণ ট্রি টেবিলে একটা ঘুশি মেরে, ” আমার চোখের সামনে কেন ছোঁয়ার ছবি ভেসে উঠে৷ ছোঁয়া আজও আমি তোমায় ভালোবাসি৷ তোমাকে কোনদিন আমি ঘৃণা করতে পারব না৷ কথা দিয়েছিলাম তোমার জায়গা কাউকে দিব না৷ আমি আমার কথা রেখেছি৷ আমি নিয়তিকেও ফিরিয়ে দিয়েছে৷ অথচও যার সাথে এখন আমি সাত জন্মের বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছি৷ ”
নিয়তি নির্বণের সব কথা শুনে নেয়৷ নিয়তি বুঝতে পারে তাকে অনেক কষ্ট করতে নির্বণকে পাওয়ার জন্য। আজও তার মনে ছোঁয়া রয়েছে।
________
নির্বণ রাতে কখন ঘুমিয়েছে জানা নেই৷ নির্বণ বেলকনিতেই ঘুমিয়ে আছে৷ নিয়তি বাসার সকল কাজ সেরে নির্বণের জন্য খাবার নিয়ে আসে৷ নির্বণ স্নান করে ওয়াসরুমে থেকে বের হচ্ছে।
নিয়তি হাঁ করে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণের পরনে শুধু তাওয়াল। ফর্সা গায়ে বিন্দু বিন্দু জলের ফোঁটা মুক্ত দানার মতো দেখাচ্ছে৷ বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী নির্বণ৷ যেকোনো মেয়ে নির্বণের এমন রুপ দেখে প্রেমে পড়তে বাধ্য।
নির্বণ হাত দিয়ে চুল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নিয়তির কাছে আসে৷ নিয়তি গাল টেনে বলে উঠে, ” ওই দিকে কাকে দেখছো? আমি এখানে।”
নির্বণের কথায় নিয়তি লজ্জা পায়৷ নিয়তি নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে নির্বণের দেহ ঢেকে দেয়৷ নির্বণ চকিত হয়ে নিয়তির দিকে তাকয়৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনাকে আমি বলেছিলাম আপনি খালি গায়ে আমার সামনে আসবেন না৷”
— কেন? আমায় খালি গায়ে দেখলে তোমায় আদর করতে মন চাই৷ আমি ছেলে মানুষ৷ আমিতো এখন থেকে খালি গায়েই বেশি থাকবো৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” না। আপনি খালি গায়ে থাকবেন না৷ যদি কোনদিন খালি গায়ে দেখছি তাহলে.. ”
— তাহলে কি নিয়তি? আমার গায়ের উপর থেকে শাড়ি সরিয়ে নাও৷
— না সারাবো না৷ আপনি আগে একটা ট্রি শাট পড়েন। তার পর আমি শাড়ি সরিয়ে নিব৷
— আমায় খালি দেখলে তোমার লজ্জা লাগে। তখন তোমার মুখ রংধনুর সাত রং হয়ে যায়৷ তখন তোমায় অনেক মিষ্টি লাগে। কিন্তু তোমার পিছনের কালো তিলটা গ্লাসে দেখা যাচ্ছে৷
— আপনি একটা অসভ্য লোক। আপনার একটু লজ্জা নেই৷
নিয়তি শাড়ি সরিয়ে নিতে নিলেই নিয়তির শাড়িতে আঁচল নির্বন পা দিয়ে ধরে রাখে। যা নির্বণ বা নিয়তি কেউ জানে না৷ শাড়ি টান দিতেই নিয়তি পড়ে যেতে নেয়৷ কিন্তু নির্বণ হিরোর মতো নিয়তিকে বাঁচিয়ে নেয়৷
নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রেখে নিয়তির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷ নিয়তির নির্বণের দিকে তাকিয়ে আছে৷ নির্বণ নিয়তির কোমরে হাত রাখতেই নিয়তির দেহে ১২০০ ভোল্টেজের বিদ্যুৎ উঠানামা করছে৷
নিয়তি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে লজ্জা লজ্জা ভাব করে বলে উঠে, ” ধন্যবাদ। আপনি পোশাক পড়ে নেন৷ আমি বাহিরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি৷”
নিয়তি চলে যেতেই নির্বণ গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে, ” হ্যাঁ ভগবান, মেয়েদের মন কি দিয়ে তৈরি করছো? ঝগড়া করবে আবার লজ্জায় পাবে। ”
__________
— স্যার একটা কথা বলবো? প্লিজ রাগ করবেন না!
— নিয়তি তুমি এর আগেও ভুল করেছো৷ এখনও ভুল করে যাচ্ছে৷ আমাদের এখন বিয়ে হয়ে গেছে৷ আমাকে স্যার বলা বন্ধ কর। আমাকে নির্বণ বলে সম্মোধন করবে৷ যদি নির্বণ বলে ডাকতে না পারো তাহলে তোমার কথা শুনছি না৷ আমার নাম ধরে বল, ” নির্বণ আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।”
— নিয়তি আমতা আমতা করে, ” নি..নি..নি…”
— কি নি..নি করে যাচ্ছো? আমার নাম নি. নয় আমার নাম নির্বণ৷
— নিয়তি চোখ বন্ধ করে, ” নির্বণ আপনার সাথে কিছু কথা ছিল?”
— হুম বল, কি কথা? আমি শুনছি। আর হ্যাঁ রাগ করব না৷
— “আপনি আপনার বাবাকে খুব ভালোবাসতেন তাই না৷ ” কোমল স্বরে ভয়ে ভয়ে বলে উঠে।
— নির্বণ ভাঙা গলায় বলে উঠে, ” হুম আমাকে কাছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তিনি এখন আর নেই৷ জানো নিয়তি রাতের আকাশের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারাটা আমার বাবা৷ ”
— আপনি জানেন আপনার জন্য আপনার বাবা কষ্ট পাচ্ছে । আপনি অনেক ভুল করছেন৷ আপনি কেন খাবার টেবিলে যান মা৷
— নিয়তি আমি কেন খাবার টেবিলে যায় না সেটা না জানলে ভালো?
— আমি সব জানি৷ আর এইজন্য তো আপনার সাথে কথা বলতে এসেছি৷ আপনি জানেন কি?, ” বাবা সে দূর আকাশে তাকিয়ে আমাদের সবাইকে দেখছেন৷ প্লিজ আপনি বাবাকে আট কষ্ট দিবেন না৷ বাবা চাইনা আপনি আলাদা ভাবে খান৷ ”
— নির্বণ কিছু একটা ভেবে বলে উঠে, ” আমার এখন কিছু ভালো লাগে না৷ আমাকে এসব নিয়ে প্লিজ বিরক্ত করবে না৷”
— আপনি তাহলে রাজি এক সাথে খাওয়ার জন্য৷ আপনার পায়ে পড়ি আপনি প্লিজ আর বাবাকে কষ্ট দিবেন না৷ আপনার এমন ব্যবহারে বাবা কষ্ট পায়৷
— নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ভাঙা গলায় বলে উঠে , “আমি জানি তুমি ভুল বল না৷ তোমার সাথে নিশ্চয় বাবার কথা হয়৷ আমাকে একটু কথা বলিয়ে দাও না৷ আমি সকলের সাথে খাবো৷ আমি আর বাবাকে কষ্ট দিব৷”
চলবে….
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১৭
#অধির_রায়
— “নিয়তি আমি আজ খুব খুশি। তুমি আমার কাছে কি চাও? তুমি যা চাইবে আমি তাই দেওয়ার চেষ্টা করব৷” আনন্দের সাথে বলে উঠে নির্বণ।
— নিয়তি মুচকি হেঁসে, ” আমি যা চাইব আপনি তাই আমাকে এনে দিবেন৷ কথাটা ভেবে বলছেন তো?”
— হ্যাঁ, আমি কথা ভেবেই বলি৷ বল তোমার কি লাগবে?
— নিয়তি আস্তে আস্তে বলে উঠে, ” আমি তো আপনাকে চাই৷ আপনাকে কখন, কবে, কিভাবে ভালোবেসে ফেলেছি নিজের অজান্তে, আমার জানা নেই৷ আমি শুধু আপনাকে চাই৷”
— কি বলছে? আমি কিছুই শুনতে পারলাম না৷ প্লিজ একটু জোরে বল।
— আপনার সময় সম্পর্কে একটুও জ্ঞান নেই৷ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন কয়টা বাজে৷ আপনার অফিসের সময় হয়ে গেছে৷ এখন বের না হলে লেট হয়ে যাবে।
— “তাহলে তোমার কিছু লাগবে না৷ আমি তোমাকে একটা উপহার দিতে চাইলাম আর তুমি না করে দিলে।” অভিমানী স্বরে বলে উঠে।
— আমার যখন লাগবে আমি চেয়ে নিব৷ ধরে নেন এটা আপনার কাছে আমার পাওনা৷ আর আপনার শর্ত ভুলবেন না কিন্তু।
________
— “নিয়তি তুমি আজ ম্যাজিক দেখিয়ে দিলে।” আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না৷
— নিয়তি চকিত হয়ে, ” মা আমি কি ম্যাজিক করলাম? আমি তো কিছুই করিনি৷”
— মুখে হাসি রেখা ফুটিয়ে, ” মা তুমি আজ সব থেকে বড় কাজ করেছো৷ যা আমরা সবাই মিলেও করতে পারিনি৷ আমরা অনেক চেষ্টা করেছি সেই কাজ করার জন্য। ”
— নিয়তি চোখ ছোট করে কোমল কন্ঠে, ” মা আপনি সব সময় আমাকে ধাঁধায় ফেলে দেন৷ আমি তো সকাল বেলা কোন কাজই করিনি৷ আপনি কোন কাজের কথা বলছেন? ”
— কে বলেছে তুমি কাজ কর নি? তুমি সব থেকে কষ্টকর কাজ সম্পন্ন করেছো সকাল বেলা৷ একমাত্র তুমিই নির্বণকে খাবার টেবিলে নিয়ে আসতে পেরেছো৷ আমরা অনেকে অনেক চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু কখনও সফল হয়নি৷ প্রতিবার আমরা ব্যর্থ হয়েছি৷
— না মা এটা আমার কোন কাজ নয়৷ আমি সকলের মুখের হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য নির্বণকে খাবার টেবিলে নিয়ে এসেছি৷ নির্বণও চাই হাসি খুশিতে বাঁচে থাকতে। কিন্তু… (থেমে যায়)
— কিন্তু কি? বল না নির্বণ কেন হাসতে ভুলে গেছে? আমার ছেলেকে আগের মতো করে দাও৷ আমি তোমার পায়ে পড়ি।
— ছি! ছি! এসব কি বলেন? আমি আমার সর্বত্র দিয়ে চেষ্টা করব, নির্বণের মুখে হাসি ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য ৷ আমি নির্বণের সমস্যা সম্পের্ক জানতে পেরেছি৷
— তোমার কোন সাহায্য লাগবে আমাকে বলবে? আমি যতটা পারি সাহায্য করব৷
— ওকে মা। আমার সাহায্য লাগলে আপনাকে না বলে কি থাকতে পারব? আপনিই আমাকে শক্তি জোগান। আমি আপনার কাছ থেকেই সাহায্য নিব৷ “কিন্তু আমি এখন আপনার ওপর রেগে আছি৷” অভিমানী স্বরে বলে উঠে।
— চকিত হয়ে, ” আমার ওপর রেগে থাকার কারণ কি? আমি কি ভুল করেছি ম্যাম? প্লিজ ম্যাম আমি কোন ভুল করে থাকলে আমায় ক্ষমা করে দিবেন৷”
— মা আমি একটু ফার্ন করছি না৷ আমি এভার সত্যি সত্যি রেগে যাব৷ আপনাকে মুভ অন করতে বলেছি৷ কিন্তু আপনি একটুও নড়াচড়া করেন না৷ এভাবে চলে না৷
— আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি৷ প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দেন৷ আজ থেকে আমি মুভ অন করব৷ আমি আর হেয়ালি করব না৷ আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই৷
নিয়তি নির্বণের মায়ের হাত ধরে ধীরে ধীরে দাঁড় করায়৷ নির্বণের মা নিয়তিকে ভর করে অনেকক্ষণ হাঁটাচলা করে৷ নির্বণের মা আর পারছে না৷ তিনি নিয়তির কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিচে বসে পড়েন৷
— নিয়তি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠে, ” মা আপনাকে প্রতিদিন দুই ঘন্টা করে হাঁটতে হবে৷ থেমে গেলে চলবে না৷ ”
— পায়ে উপর হাত রেখে বলে উঠেন, ” প্লিজ নিয়তি আজ আর নয়৷ আমার পা ভীষণ ব্যথা করছে৷ আমি আর পারব না৷”
— নিয়তি কর্কশ কন্ঠ বলে উঠে, ” মা আপনাকে হার মানলে চলবে না৷ আপনাকে উঠে দাঁড়াতে হবে৷ আপনি যদি মন থেকে প্রথমেই হেরে যান তাহলে তো আপনি বাস্তবে সফো হতে পারবেন না।”
— “আমার পায়ে ব্যথা৷ ব্যথা পায়ে মনোবল ফিরিয়ে নিয়ে আসব কিভাবে? ” অসহায়ভাবে বলে উঠেন।
— অরিন মাকে ধর তো। মায়ের কোন কথা শুনতে চাই না৷
নিয়তি আর অরিন নির্বণের মাকে ধরে একটু হাঁটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু নির্বণের মা পা ফেলতে আর পারছে না৷ নিয়তি নির্বণের মায়ের কষ্ট বুঝতে পেরে মাকে রুমে নিয়ে আসে৷
— মা আজ আপনাকে ছেড়ে দিলাম। কিন্তু কাল আপনাকে আর ছাড়বো না৷ পুরো দুই ঘন্টা আপনাকে হাঁটতে হবে৷
নির্বণের মা অসহায় ভাবে নিয়তির দিকে তাকয়৷ বির্বণের মায়ের মুখটা একদম ছোট হয়ে গেছে৷
— মা ভয়ের কিছু নেই৷ আমি আপনাকে ফিজিওথেরাপি দিব এখন। যা আপনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে পায়ের ব্যথা চলে যাবে।
_________
রাতে ডিনার শেষে নিয়তি আর নির্বণ এক সাথে রুমে প্রবেশ করছে৷ ধরতে গেলে নিয়তি একটু এগিয়ে৷ নির্বণ পিছু পিছু আসছে৷ নিয়তি রুমের ভিতরে পা না রাখতেই নির্বণ নিয়তিকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷
নিয়তিকে এমনভাবে নির্বণ টান দেয়, যেন নিয়তি দূরে কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে৷ নিয়তি ভয়ে চিৎকার করতে নিলেই নির্বণ নিয়তির মুখ চেপে ধরে৷
— নিয়তি কিছুটা উঁচু স্বরে বলে উঠে, ” আপনি আমাকে রুমে যাওয়া থেকে আটকাচ্ছেন কেন? কি আছে রুমে? আমি তো রুমে যাবই৷ ”
— তুমি তো রুমেই যাবে৷ তবে এভাবে যেতে পারবে না৷ আমি তোমাকে রুমের ভিতরে এভাবে যেতে দিতে পারব না।
— সন্দেহের চোখে, “আপনি রুমে কাকে লুকিয়ে রেখেছেন? আমি অনেকবার রুমে প্রবেশ করতে চেয়েছি৷ কিন্তু আপনি প্রতিবারই আমাকে আটকিয়ে দিয়েছেন৷ কেন?”
— তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে৷
— নিয়তি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” আমার জন্য সারপ্রাইজ! আমি স্বপ্ন দেখছি৷ নির্বণ চৌধুরী এই নিয়তির জন্য সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করছে৷ [লেখাঃ অধির রায়]
— তো কি হয়েছে? আমি কি কাউকে সারপ্রাইজ দিতে পারি না৷ আমার মাঝে কি কোন মূল্যবোধ নেই?
— তাহলে চলেন দেখি, আপনি আমার জন্য কেমন সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছেন৷ নাকি এখনো বাদ আছে৷
নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” হ্যাঁ, ইশ্বর। তুমি সাহায্য কর৷ যেন নির্বণ আমাকে তার ভালোবাসার কথা বলে৷ আমি জানি নির্বণ আমাকে এখন ভালোবাসে৷”
— সারপ্রাইজ পেতে চাইলে তোমাকে চোঝ বন্ধ করতে হবে৷
— না না আমি চোখ বন্ধ করতে পারব না। আপনি যদি আমাকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন৷ আপনি তো আমাকে সহ্য করতে পারেন না৷
— মিসেস কূটনীতি, আমি এমন কোন কাজ করব না৷ তোমার চোখ বন্ধ করতে হবে না৷ আমি তোমার চোখ বেঁধে দিচ্ছি৷
— নির্বণ দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে, ” আমার চোখ বাঁধার চেষ্টা করবেন না৷ চোখ বাঁধলে নিজেকে অন্ধ মনে হয়৷ আমাকে আপনি অন্ধ বানিয়ে দিতে চান৷”
নির্বণ নিয়তির আঙ্গুল নিচে নামিয়ে নিয়তির কোমর চেপে ধরে নিয়তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ নিয়তি কোমরে নির্বণের ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে৷ নির্বণের শার্ট চেপে ধরে৷
— নির্বণ নিয়তি গলায় নাক ঘেঁষে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি জানি তুমি সহজে হার মানবে না৷ তোমাকে কিভাবে হার মানাতে হয়, আমার ভালো করেই জানা আছে?
নিয়তি নির্বণ কথায় আরও নির্বণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে৷ নিয়তি ঠোঁট জোড়া কাঁপতে থাকে। নির্বণ সুযোগের সৎ ব্যবহার করে নিয়তি চোখ বেঁধে দেয়৷
— এখন চল আমার সাথে। আমার সাথে কেউ কোনদিন পেরে উঠেনি৷ আর কোনদিন পেরে উঠতেও পারবে না৷
— আকুল কন্ঠে বলে উঠে, “ছাড়েন আমাকে। এভাবে আমাকে ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমি আপনার সাথে যাব না৷”
— একটা কথা বললে তোমাকে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসব৷ আমাকে তুমি এখনও চিন না৷ তাই চুপচাপ আমার সাথে হাঁটতে থাকো৷
নিয়তি ভয় পেয়ে নির্বণের সাথে হাটতে থাকে। নির্বণ নিয়তিকে বেলকনিতে নিয়ে আসে৷
— একটা শর্তে তোমার চোখ খুলে দিতে পারি৷
— কি শর্তে?
— চোখ খুলে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে আঁখি মেলে তাকাবে।
— আমি আপনার শর্তে রাজি। প্লিজ আমাকে এভাবে অন্ধ বানিয়ে রাখবেন না!
“আগে চোখের বাঁধন খুলে দেন৷ পরের বিষয় পরে দেখা যাবে। আমার একদম অস্বস্তি লাগছে।” মনে মনে বলে উঠে।
নির্বণ নিয়তির চোখ খুলে দিয়েই আঙুল দিয়ে নিয়তির চোখ চেপে ধরে৷
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনি আমার সাথে দুর্নীতি করতে পারেন না৷ আপনি এভাবে চোখ চেপে ধরলেন কেন?
— আমি জানতান তুমি সোজা কথার মানুষ নয়৷ আমি ধীরে ধীর হাত সরাবো তুমি ধীরে ধীরে চোখ মেলতে পারবে।
নিয়তি বিরক্ত স্বরে বলে উঠে, ” আসলে আপনি এমন একটা লোক, যাকে চেনা খুব কঠিন৷”
নির্বণ নিয়তির চোখ ছেড়ে দেয়৷ নিয়তি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নিয়তির সামনে এক জোড়া শালিক পাখি৷
— নিয়তি খুশি হয়ে বলে উঠে, ” আপনি কি করে জানলেন শালিক আমার প্রিয়৷” আমি খুব খুশি হয়েছে৷ আপনি আমাকে সব থেকে ভালো সারপ্রাইজ দিয়েছেন৷
নিয়তি খুশিতে ঠেলায় নির্বণকে জড়িয়ে ধরে৷ নিয়তি বুঝতে পারছে না সে কি করছে? নির্বণ নিয়তির মুখের হাসির কথা ভেবে নিয়তির কানে কানে বলে উঠে, ” মিসেস নিয়তি আমাকে জড়িয়ে না ধরে পাখিগুলো দেখো৷ তোমাকে দেখার জন্য পাখিগুলো আকুতি মিনতি করছে৷”
নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরেছে নিয়তি নিজেই জানে না৷ আসলে নিয়তি শাকিল পাখি পেয়ে কতটা খুশি হয়েছে যা বলে বুঝাতে পারব না৷ নিয়তি এখন নিজেই লজ্জা পাচ্ছে৷ নিয়তি চোখ তুলে তাকাতে পারছি না৷ নির্বণ নিয়তির লজ্জা মাখা মুখটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। নিয়তিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। নিয়তি কেঁপে নির্বণে হাত চেপে ধরে৷
— নির্বণ নিয়তি কানে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে, ” তোমার লজ্জা জনিত মুখটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে৷ তোমাকে একদম স্ট বেরির মতো লাগে।”
নির্বণ কথায় নিয়তি আরও লজ্জা পায়৷ নিয়তি চোখ বন্ধ করে ফেলে৷ নির্বণ নিয়তির গলায় থাকা কালো তিলটাতে ডিপ কিস দিয়ে, ” কি হলো নিয়তি? কথা বলছো না কেন? আমার পছন্দ হয়নি পাখিগুলো৷”
— নিয়তি আর নিতে পারছে না৷ নিয়তি ভাবতেও পারেনি নির্বণ তার এত কাছে চলে আসবে৷ নিয়তির কেন জানি আজ খুব ভালো লাগছে। অন্য দিন নির্বণ তার হাত ধরলেই ঘৃণা হতো৷ আজ কেন এমন অনুভব হচ্ছে৷
নিয়তি নির্বণের হাত সরিয়ে লজ্জা মাখা মুখে নির্বণের দিকে ছোট করে তাকিয়ে রুমে চলে আসে৷ নির্বণ তখন বুঝতে পারে সে কি করেছে নিয়তির সাথে?
নিয়তির গলায় কালো তিলটা নির্বণকে আকৃষ্ট করেছে। মেয়েদের গলায় কালো তিল যেকোনো ছেলেকে আকৃষ্ট করতে পারে। নির্বণ দেয়ালে ঘুশি মেরে, “আমি কিভাবে করতে পারলাম এমন কাজ? আমি নিয়তির প্রতি এতটা কেন দুর্বল হয়ে পড়লাম?” আমি তো নিয়তিকে ভালোবাসি না৷
নির্বণ দ্রুত গতিতে রুমে চলে আসে৷ রুমে এসে দেখে নিয়তি এখনও লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বসে আছে৷ নিয়তির গলার কালো তিলটা আবারও দেখা যাচ্ছে। নির্বন একটা ওড়না নিয়ে নিয়তি গলায় ঝুলিয়ে দেয়৷
— কিছুটূ কর্কশ কন্ঠে বলে উঠে, ” গলা থেকে যেন কখনো ওড়না না নামে। বিশেষ করে তোমার কালো তিলটা যেন না দেখা যায়৷”
নির্বন আর কিছু না বলে উল্টো দিক হয়ে শুয়ে পড়ে৷
নিয়তি ছোট থেকেই কালো তিনটা লুকিয়ে রেখেছে৷ শাড়ির আঁচল সরে যাওয়ার ফলে তিলটা নির্বণের চোখে পড়ে।
চলবে…..