#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_১০
#অধির_রায়
— নিয়তি নির্বণের সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠে” আপনি যদি কাউকে মন থেকে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে আজ সব কিছু বলবে।”
— আমি কাউকে মন থেকে ভালোবাসি কিনা সেটা জেনে তোমার কি? তুমি আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়াও৷ আমাকে রাগিয়ে তুল না৷
— আমাকে একটা কথা বলবেন? আপনি রাগ করা ছাড়া আর কি করতে পারেন? মাঝে মাঝে হাসতেও তো পারেন৷
— মিস নিয়তি তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো৷ আমার পার্সনাল লাইফে ঢুকার চেষ্টা করবে না৷
— আমি ঢুকতে চাই না৷ আমি আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা করতে চাই৷
— সত্যি তাই! আমি ডিপ্রেশনে কেন আছি তুমি জানো? আমার লাইফ নিয়ে তোমায় মাথা ঘামাতে হবে না৷ আমার জীবনে এক সময় একজন ছিল।
— নির্বণ পিছনে ফিরে ওয়াসরুমে দিকে পা বাড়াতেই নিয়তি বলে উঠে, ” যদি বলি ছোঁয়া আপনার এমন লাইফের জন্য দায়ী৷ তখন কি করবেন?”
— নির্বণ ক্ষেপে নিয়তির হাত ধরে বলে উঠে, ” আমার সামনে ছোঁয়া নামটাও নিবে না৷ আমি ছোঁয়া নাম সহ্য করতে পারি না৷ ”
নির্বণ নিয়তির হাত খুব জোড়ে চেপে ধরে৷ ব্যথায় নিয়তির চোখে জল চলে আসে৷ টলমল চোখে নিয়তি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে উঠে, ” প্লিজ স্যার আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমার লাগছে৷”
— নিয়তিকে ছেড়ে দিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে মিহি স্বরে, ” সরি! আমার খেয়াল ছিল না৷”
— ইট’স ওকে। স্যার আমি যতটুকু জানি আপনি ছোঁয়াকে ভালোবাসেন৷ তাহলে তাকে ঘৃণা করার কথা কোথা থেকে আসছে?
— আমি এই নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না৷ ছোঁয়া আমার জীবনে কেউ না৷ ছোঁয়া আমার জীবনে একটা দুঃস্বপ্ন ছিল।
— ছোঁয়া আপনার জীবনে এখনো রয়েছে। আপনি তাকে এখনো ভুলতে পারেননি৷
— নির্বণ ভাঙা গলায়, ” হ্যাঁ আমি ছোঁয়াকে ভুলতে পারিনি৷ তার সেই মিষ্টি মিষ্টি কথাগুলো এখানো কানে বাজে।”
নিয়তি নির্বণের হাত ধরে নির্বণকে বিছানা বসতে বলে৷ নির্বণ নিয়তির কথামতো বিছানায় বসে পড়ে। নিয়তি এক গ্লাস জল নির্বণের দিকে এগিয়ে দেয়৷
— জলটা খেয়ে নেন৷ ভালো লাগবে৷ জল অনেক সময় মানুষের জীবনে শক্তি এবং সাহস জোয়ায়৷
নির্বণ জল খাওয়ার পর নিজের কোর্টটা খুলে ফেলে৷ অফিস থেকে এসে এখনো চেঞ্জ করা হয়নি৷ ট্রাই টাও খুলে রেখে দেয়৷
— নিয়তি নির্বণের পাশে বসে নির্বণের হাত ধরে, “স্যার আমি জানি আমি আপনার কাছে অন্যায় দাবী করছি৷ তবুও বলব মনের ভেতরে কষ্ট লুকিয়ে রাখতে নেই৷ আপনি আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন৷ আমি আপনাকে সাহায্য করবে ছোঁয়ার কাছে নিয়ে যেতে৷”
— অনেক দেরি হয়ে গেছে নিয়তি৷ ছোঁয়া আমার জীবনে আর নেই৷ সে ফিরে আসতে চাইলেও আমি তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব না৷ ছোঁয়াকে অন্ধের মতো ভালোবাসতাম৷”
— আপনার সাথে ছোঁয়ার কি হয়েছিল? যার জন্য ছোঁয়া সোনা ছেড়ে পিতল বেছে নিল।
________
নির্বণ বলতে শুরু করে….
নির্বণ কেবিনে বসে অফিসের কাজ করছিল৷ তখন ছোঁয়া নির্বণের কেবিনে প্রবেশ করে।
— ছোঁয়া নির্বণের কাঁধে হাত রেখে, ” আর কত কাজ করবে৷ চলনা একটু ঘুরে আসি৷ ”
— নির্বণ ছোঁয়ার হাত টান নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে, ” এই তো হয়ে এসেছে। জাস্ট অ্যা টু মিনিট। ”
— আহ্লাদীর স্বরে বলে উঠে, “রেখে দাও না এসব ফাইল। আগামীকাল চেক করে নিবে৷”
— রেখে দিতে পারি একটা শর্তে। যদি তুমি আমায়.. চোখের ব্রু নাচাতে থাকে৷
— ছোঁয়া চোখে মুখে হাত রেখে লজ্জা পেয়ে বলে উঠে, ” তুমি এত দুষ্টু কেন? সত্যি তুমি একটা অসভ্য।”
— নির্বণ ছোঁয়ার হাত সরিয়ে নাকে নাক ঘেষে, ” আমি শুধু তোমার প্রেমে অসভ্য। প্লিজ একটা মাত্র কিস৷ আর কিছু না৷
— চোখ বন্ধ করতে হবে৷
ছোঁয়ার কথা মতো নির্বণ চোখ বন্ধ করে ছোঁয়া নির্বণের গালে আলতো করে একটা কিস দেয়৷ কিস দিয়েই নির্বণের গলা জড়িয়ে ধরে।
— তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করলে না৷ আমি শোধসহ আসল তুলে নিব৷
— তোমার কথা শেষ হলে এখন যাওয়া যাক।
ছোঁয়া আর নির্বণ সেদিন অনেক ঘুরাঘুরি করে। এভাবে তাদের প্রেম আরও গভীর হতে থাকে।
একদিন নির্বণ তার মা বাবাকে নিয়ে বিয়ের কথা বলে৷ সে ছোঁয়াকে বিয়ে করতে চাই৷ বিয়ের কথা শুনে নির্বণের মা বাবা খুব খুশি৷
নির্বণ ছোঁয়াকে “নর্থ ক্যারোলাইনার” হোটেলে নিয়ে আসে। অনেক প্রকার গল্পে তারা মেতে উঠে৷ নির্বণ ছোঁয়ার দিকে অপলক দৃষ্টি তাকিয়ে আছে।
— ছোঁয়া নির্বণের চোখে ফুঁ দিয়ে, ” এভাবে তাকিয়ে থাকবে৷ আমাদের তো বাড়ি ফিরতে হবে৷”
— ওকে চল।
ছোঁয়াকে নিয়ে সিঁড়ির কাছে আসতেই নির্বণ ছোঁয়াকে কোলে তুলে নেয়৷
— এই কি করছ? সকলে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে?
— ডোন্ট কেয়ার লুক নিয়ে বলে উঠে, ” আমি তো অন্য কাউকে কোলে তুলিনি৷ আমি আমার পাখিকে কোলে তুলে নিয়েছি৷”
— লজ্জা মুখে বলে উঠে, ” যা অসভ্য। ভরা লোকসমাজে আমার তো সম্মান আছে৷”
নির্বণ কোন কথা না বলে ছাঁদের দিকে হাঁটতে থাকে৷ ছাঁদে নিয়ে এসে ছোঁয়াকে নামিয়ে দেয়৷ ছোঁয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাতে রিং নিয়ে নির্বণ বিয়ের প্রপোজাল দেয়৷
ছোঁয়া হিরার রিং দেখে সাথে সাথে নিজের হাতে পড়ে নেয়৷ আর নির্বণকে একটা আলতো করে লিপ কিস দেয়৷ নির্বণ ভেবে নেয় ছোঁয়া তার প্রপোজালে খুশি৷
— নির্বণ মুখে হাসি রেখা নিয়ে বলে উঠে, ” তাহলে আমরা আগামী সানডে বিয়ে করে নিব৷ আমি মা বাবাকে সব কিছুর আয়োজন করতে বলি৷”
— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” আমি এখন বিয়ে করতে প্রস্তত নয়৷ প্লিজ আমাকে বিয়েতে জোর করবে না৷”
ছোঁয়া এক ঝাঁক বিরক্তি নিয়ে চলে আসে৷ নির্বণ আকাশের দিকে তাকিয়ে লম্বা একটা শ্বাস নেয়। এভাবে কেটে যায় প্রায় একমাস৷ কিন্তু ছোঁয়া নির্বণের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেনি৷ নির্বণ ফোন দিলে ছোঁয়ার ফোন সুইচ অফ পাই৷ ছোঁয়া যে বাসার ঠিকানা দিয়েছে সেটা ছোঁয়ার বাসা নয়৷
________
নির্বণ মন খারাপ করে ছাঁদে বসে বসে গিটারে টুং টুং শব্দ তুলার চেষ্টা করছে। ছোঁয়ার কোন বিপদ হয়নি তো। ছোঁয়া নিখোঁজ কিভাবে হতে পারে৷ তখন নির্বণের ফোন বেজে উঠে। ছোঁয়ার নাম্বার দেখে নির্বণের মৃত দেহে প্রাণ ফিরে আসে৷
— ছোঁয়া আমি জানতাম তুমি আমার কাছে ফিরে আসবে৷ তুমি ঠিক আছো তো৷ এতদিন কোথায় ছিলে।
— অপর পাশ থেকে ছোঁয়া বলে উঠে, ” আমার সাথে বৃষ্টি বাড়ির ধামের ধারে ব্রিজে দেখা কর৷”
— তুমি সেখানে কি করছো? ওই জায়গায় কিভাবে পৌঁছলে।
ছোঁয়া কোন রিপ্লাই না দিয়ে ফোন সুইচ অফ করে রাখে৷ ছোঁয়া বিপদে আছে জেনে নির্বণ তাড়াতাড়ি করে বৃষ্টি বাড়ি দামের ধারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়৷
সন্ধ্যার দিকে নির্বণ ব্রীজে পৌঁছে যায়। পাহাড়ি এলাকা সেজন্য সন্ধ্যায় কোন লোকজন নেই৷ একদম জনশূন্য জায়গা৷ নির্বণ এসে দেখে নিয়তি একটা ছেলের ঘাঁ ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে।
নির্বণ রেগে তাদের দিকে তেড়ে আসতেই ছোঁয়া সামনে এসে নির্বণের গালে কষিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। নির্বণ ছোঁয়ার এমন ব্যবহার দেখে খুবই আশ্চর্য হয়৷
— ছোঁয়া বলে উঠে, ” তোর মতো দুইটার ব্যবসীকে আমি বিয়ে করব৷ তোকে তো সাথে রেখেছিলাম নিজেকে প্রটেক্ট করতে।” আরও একটা কারণ আছে, ” সেটা হলো আমি গরিব৷ তাই তোর টাকা দিয়ে চলতে হয়েছে। আমার জীবনে তোর দিন শেষ এখন তুই যেতে পারিস৷ ”
— নির্বণ কান্না করে দিয়ে, ” প্লিজ ছোঁয়া আমাকে ছেড়ে দিও না৷ আমি তোমায় খুব ভালোবাসি৷”
ছোঁয়ার সামনে হাতজোড় করে ছোঁয়ার পায়ের কাছে বসে পড়ে।
— ছোয়াঁ অচেনা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে, ” জান এই কালপ্যাট বেঁচে থাকলে আমাদের জীবনে সমস্যা হতে পারে৷ চল একে মেরে ফেলা যাক। ”
— ইয়া সিউর৷
দু’জনে এক সাথে নির্বণের বুকে লাথি মারে। যার ফলে নির্বণ ব্রীজ থেকে পড়ে যায়৷ কিন্তু নির্বণ নিজেকে বাঁচানোর জন্য ব্রীজের পাড় ধরে৷
— প্লিজ ছোঁয়া আমাকে মেরে না৷ আমি ছাড়া আমার মা বাবার কেউ নেই৷ ছোঁয়া আমি সাতার জানি না৷
— তুই বেঁচে থাকলে আমাদের অনেক ক্ষতি করবি৷ তোকে বাঁচিয়ে রাখবো না৷
ছোঁয়া নির্বণের হাতে লাথি মারতে থাকে৷ নির্বণ চিৎকার করতে থাকে৷ তবুও ব্রীজ পাড় থেকে হাত সরিয়ে নিচ্ছে না৷ হাত থেকে রক্ত ঝড়ে যাচ্ছে। এক সময় নির্বণ সহ্য করতে না পেরে ব্রীজের উপর থেকে পড়ে যায়।
চলবে……