#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০৭
#অধির_রায়
নিয়তির মাথা সরাতে নিলে নিয়তির ঠোঁট জোড়া নির্বণের ঠোঁটের সাথে লেগে যায়৷ দু’জনের চোখ কলকাতার রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷ একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কারো মুখে কোন কথা নেই৷
— নিয়তি নিজেকে সংযত করে, ” আমার হাত ছেড়ে দেন৷ আপনার সাহস কি করে হলো আমার হাত ধরার?”
নির্বণ নিয়তির হাত ছাড়তেই নিয়তি নির্বণের উপর থেকে উঠে যায়৷ নিয়তি ফ্লোরে বিছানা করতে নিলে নির্বণ নিয়তির হাত থেকে চাঁদর কেড়ে নেয়৷
— নিয়তি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, ” একি আপনার পা ঠিক হয়ে গেছে স্যার৷ আপনি তো.. ”
— নিয়তিকে থামিয়ে, ” আমি সোফায় শুয়ে পড়ছি৷ আর আমার পা একদম ঠিক আছে। আমি ইচ্ছা করেই তোমাকে দিয়ে এমন কাজ করিয়েছি৷”
— নিয়তি ক্ষেপে বলে উঠে, ” আপনার মূল্যবোধ বলতে কিছু নেই৷ মানুষের ইমোশনাল নিয়ে খেলা করতে খুব ভালো লাগে। একদিন এমনও দিন আসবে কেউ আপনার ইমোশনাল বুঝতে আসবে না৷”
— রেগে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে, ” হাও ডেয়ার ইউ৷ তোমার এত বড় সাহস হলো কি করে, আমার মুখের উপর কথা বলার?”
— আমি সাহস দেখায় না৷ সত্য কথা বলি৷ আর আমি বড়লোকদের মতো অহংকারী নয়৷
— চোখ পাকিয়ে বলে উঠে, ” হ্যাঁ আমার টাকা আছে৷ আমার অহংকার থাকবে না তো তোমার থাকবে।”
— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” হ্যাঁ টাকা আছেই বলে আজ একটা মেয়েকে এক মাসের জন্য বউ করে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন৷” একবার কি ভেবে দেখেছেন, একটা মেয়ে কোন পরিস্থিতিতে এমন বাজে শর্তে রাজি হয়েছে? ”
— হোয়াট ডু ইউ মিম? তুমি কি বলতে চাও? তুমিও পরিস্থিতির স্বীকার আমিও পরিস্থিতির স্বীকার। এটা ভুলে যাও কেন?
— আমি বলতে চাই টাকা থাকলেই সব হয় না৷ টাকা দিয়ে কি আপনি আপনার বাবাকে বাঁচাতে পেরেছেন? আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করেন৷ মানুষদের দাম দেন৷
নিয়তি কথাতে নির্বণ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়৷ নির্বণ আর কিছু না বলে সোফায় শুয়ে পড়ে। নিয়তি কথা বলে যাচ্ছে৷ নির্বণ নিয়তির কথার কোন উত্তর দিচ্ছে না৷
নিয়তি এক প্রকার বাধ্য হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সারারাত শুধু নির্বণের কানে একটা কথাই বাজে টাকা দিয়ে কি আপনি আপনার বাবাকে বাঁচাতে পরেছেন?
__________
সারারাত ঘুমাতে পারেনি নির্বণ। চোখের জল ফেলে গেছে সারারাত৷ চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে।
— নির্বণের এমন অবস্থা দেখে নির্বণের মা নির্বণকে কাছে টেনে নেন৷ পাশে বসিয়ে বলে উঠে, ” নির্বণ তোমার চোখ মুখ এভাবে ফোলা ফোলা লাগছে কেন? তোমার কি হয়েছে?”
— নির্বণ আমতা আমতা করে, ” আসলে মা কাল রাতে ঘুম হয়নি৷ অফিসের কাজ নিয়ে বিজি ছিলাম।”
— শক্ত গলায় বলে উঠেন, ” তোমাকে কতবার বলেছি, আগে নিজের খেয়াল রাখবে৷”
— প্লিজ মা রাগ কর না৷ তুমি তো আমার সোনা মা৷ প্লিজ একটু হাসো। তোমার হাসিমাখা মুখ না দেখে আমি অফিসে কোনদিন যায় না৷
— হয়েছে। আর আদর দেখাতে হবে না৷ লাঞ্চ করে নিও দুপুরে।
নির্বণ মার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দরজার কাছে আসতেই নিয়তি নির্বণের হাতে একটা টিফিন ক্যারিয়ার ধরিয়ে দেয়৷
— নির্বণ অবাক চোখে, ” আমি এটা দিয়ে কি করব?”
— নিয়তি কোমরে হাত দিয়ে বলে উঠে, ” কি করবেন মানে কি? আমি লাঞ্চ বানিয়ে দিয়েছি৷ দুপুরে বাহিরের বাজে খাবার খেতে হবে না৷”
— আমি পারব না নিয়ে যেতে। এতদিন বাহিরে খেয়ে এসেছি আজও বাহিরে খেয়ে নিব৷
— নির্বণের মা পিছন থেকে ডাক দেয়, ” নির্বণ খাবার টা নিয়ে যাও। নিয়তি খুব কষ্ট করে রান্না করেছে৷”
— প্লিজ মা বুঝার চেষ্টা কর৷ কেউ অফিসে খাবার নিয়ে আসে না৷ আর আমাদের ক্যান্টিনে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার তৈরি করা হয়।
নির্বণ আর কিছু না বলে নিয়তিকে চোখ পাকিয়ে চলে যায়৷ নিয়তিও নির্বণের চাহনি দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। নিয়তি নির্বণের মায়ের পাশে বসে পড়ে।
— মা আজ কিন্তু আপনাকে নিজে থেকে সব করতে হবে৷ আপনাকে সুস্থ হতেই হবে৷
— নিয়তি বুঝার চেষ্টা কর৷ আমি নিজে থেকে পারব না৷ থেরাপি কাজটা অনেক কষ্টকর৷ আর নিজে থেকে করতে নিলে আরও কষ্ট কর৷
— নিয়তি শক্ত গলায় বলে উঠে, ” আমি আপনার কোন কথা শুনতে চাই না৷ আমার একমাত্র এবং প্রধান কাজ হলো আপনাকে সুস্থ করে তোলা৷ ”
— হুম মা৷ আমি তোমার ভালোবাসা বুঝি৷ কিন্তু তুমি আমার ভালোবাসা বুঝ না৷ আমি একা একা পারব না৷
— আপনি পারবেন কিনা আমি জানি না৷ কোন সাহায্য লাগলে আমি করব৷ আমি আছি কিসের জন্য৷ আপনি শুয়ে পা তুলার চেষ্টা করেন৷
নির্বণের মা একপ্রকার বাধ্য হয়ে নিয়তির কথা মেনে নেন৷ তিনি তো জানেন নিয়তি তার মঙ্গল চায়৷ কষ্ট হলেও তিনি পা তুলার চেষ্টা করেন৷ অনেক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই পা উপরের দিকে তুলতে পারছে না৷ চোখে জল টলমল করছে।
— মা আর লাগবে না৷ আপনি অনেক চেষ্টা করেছেন৷ মা আমি বলেছিলাম চোখে জল আনবেন না। জল আমাদের দুর্বল করে তুলে।
— আমি ইচ্ছা করে আনিনি৷ কখন যে ব্যথার কারণে জল এসে পড়েছে নিজেই জানি না৷
— আমি তো ভেবেছিলাম আজ আপনাকে হাঁটানোর চেষ্টা করব৷ কিন্তু তা আর হলো না৷ তবে আমি কাল ছাড়ছি না৷
নিয়তি নির্বণের মায়ের পা মালিশ করে দেয়৷ মালিশ শেষে ইলেকট্রনিকস তাপ দেয়৷ যা মানুষের হাড়কে শক্ত ও মজবুত রাখতে সহায়তা করে।
_________
নির্বণ রাত ১২ টার দিকে বাড়ি ফিরে৷ বাড়িতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। নির্বণ তার মায়ের রুমে উঁকি দিয়ে নিজের রুমে আসে। রুমে এসে দেখে নিয়তি বিছানা পা তুলে বসে আছে। নির্বণকে দেখে সামনে এসে দাঁড়ায়।
— স্যার আজ এত রাত হলো কেন? আপনার ফোন বন্ধ কেন?
— সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিব না৷ আমি কেন রাত করে বাড়ি ফিরেছি সে কথা না জানলেও হবে?
— আমি অফিসে ফোন করে জেনে নিয়েছি আপনি অফিস থেকে সন্ধ্যায় বের হয়েছেন৷ আর কোন মিটিং ছিল না আজ৷
— এই শুন৷ তুমি আমার বিবাহিত বউ নয়। আমাকে এত প্রশ্ন করার দায়িত্ব তোমার নেই।
— নির্বণ সেফায় নিজের কোর্টটা ছুঁড়ে মারে৷ নিয়তি কোর্টটা নিয়ে আলমারির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্বণ ওয়াসরুমের দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে যায়৷
— টাকা পৌঁছে দিয়েছে কি?
— কিসের টাকা পৌঁছে দিব৷ আমি তো আপনার টাকায় হাত বুলাইনি।
— আমি আমার টাকার কথা বলছি না৷ তোমার বাবার মেডিসিনের টাকার কথা বলছি৷
— কোমল কন্ঠে বলে উঠে, ” হ্যাঁ আমি নিজে গিয়ে দিয়ে এসেছি৷ আর আপানার দেওয়া নিয়মের অমান্য করেছি। এর পর থেকে আর এমন হবে না৷”
— তুই চাইলে প্রতিদিন তোমার বাবার সাথে দেখা করে আসতে পারো।
নির্বণের কথা শুনে নিয়তি খুব খুশি হয়৷ ভেবেছিল নির্বণ নিয়তিকে বাজেভাবে বকে দিবে৷ নির্বণ নিয়তির মুখে হাসি দেখে সেও মুচকি হেঁসে ওয়াসরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিয়তি নির্বণের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।
— মিস নিয়তি আমি আজ বাহিরে ডিনার করেছি৷
— “কিন্তু আমি আজ নিজ হাতে সব রান্না করেছি৷ একটু খেয়ে দেখবেন না৷ ” নরম স্বরে বলে উঠে।
— “তোমার মতো মিডিল ক্লাসের মেয়ের হাতের খাবার খাবে না এই নির্বণ চৌধুরী।” নিয়তিকে নিচু করে বলে উঠে।
নির্বণ আর কিছু না বলে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে শুয়ে পড়ে। নির্বণের কথা নিয়তির বুকের মাঝে লাগে।
— নিয়তি মনে মনে বলে উঠে, ” স্যার আজ থেকে আমার কাজ শুধু আপনার মাকে সুস্থ করা নয়৷ আপনাকে সোজা পথে নিয়ে আসাও আমার কাজ। আমি আপনার অহংকার যদি মাটির সাথে মিশাতে না পারছি তাহলে আমিও নিয়তি নয়৷”
চলবে….