” আমাকে কি বাজারের মেয়ে মনে হয় আপনার? যে আপনার সাথে এক মাস রাত কাটাবো৷” নিয়তি বিদ্বেষের ভাব নিয়ে কাগজটি টেবিলে নিক্ষেপ করে বলে উঠে।
— সোফায় বসতে বসতে নির্বণ বলে উঠে, ” অ্যাজ ইউর ইউশ৷ তোমার ইচ্ছা৷ তুমি যদি আমার শর্তে রাজি হও তাহলে তোমার বাবা এই যাত্রায় বেঁচে যাবে।”
— করুণ স্বরে বলে উঠে, ” স্যার আপনি কি আমার দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইছেন? আমি আপনার কাছে নিজেকে সুপে দিব! ”
— মিস নিয়তি তুমি হয়তো ভুল ভাবছো৷ আমি এমন কোন কথা বলি নি৷ আমার শর্তটা ঠিকভাবে পড়ে দেখো?
— আমি কি পড়ে দেখবো? সেখানে লেখা আছে এক মাস আপনার সাথে থাকতে হবে। আপনি যা বলবেন তাই করতে হবে। এক মাসের জন্য আপনি আমার হাসবেন্ড হবেন৷
— রাইট আমি যা বলবো তাই করতে হবে। আর হ্যাঁ আমি কখনো হাসবেন্ডের দাবী নিয়ে তোমার সামনে আসবো না৷ জাস্ট অভিনয়।
— হতদন্ত হয়ে বলে উঠে, ” আপনি কি বলতে চান? ”
— আমি বিয়ের কোন বন্ধন মানি না৷ আমি বিয়ের কোন বন্ধনে নিজেকে জড়াতে চাই না।
— তাহলে কেন আমাকে এক মাস আপনার ওয়াইফের অভিনয় করতে বলছেন?
— সেটা তোমার না জানলেও হবে৷ তোমার হাতে দুইটা সুযোগ আছে। এক আমাকে বিয়ে করা। দুই আমার সাথে এক বিছানায় রাত কাটানো। যদি বিয়ে কর তাহলে তোমাকে স্পর্শও করে দেখবো না৷ সিদ্ধান্ত তোমার৷
নির্বণ কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই নিয়তি পিছন থেকে নির্বণকে ডাক দেয়৷ নিয়তির ডাক শুনে নির্বণ দাঁড়িয়ে যায়৷
— নিয়তি হাত কাচুমাচু করে বলে উঠে, ” স্যার আমি আপনার চুক্তি নামায় সাইন করতে রাজি। কিন্তু আমারও কিছু শর্ত আছে?
— নির্বণ প্যান্টের পকেটে হাত গুছে, ” কি শর্ত মিস নিয়তি?” তোমার শর্তটাও শুনি।
— আমার শর্ত হলো আমাকে দিনে দু’ঘন্টা সময় দিতে হবে। আমি এই দুই ঘন্টা আপনার কোন কথা শুনবো না৷ দুই ঘন্টা আমি আমার বাবাকে সময় দিব৷ কারণ তিনি…
— নিয়তিকে থামিয়ে দিয়ে, “ব্যাস আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি৷ তোমার কাছ থেকে আমি দুই ঘন্টা কেঁড়ে নিব না৷ চুক্তিনামায় সাইন করে তোমার বাবার চিকিৎসার টাকা নিয়ে যাও৷ ”
নিয়তি চুক্তিনামায় সাইন করে দেয়৷ সাইন করার সাথে সাথে নির্বণ চুক্তিনামাটা এক টানে নিয়ে নেয়৷ এমন ব্যবহারে নিয়তি অনেকটা ভয় পেয়ে যায়৷ নিয়তি ধরে নেয় নির্বণ তার বাবার খরচ দিবে না৷
— নিয়তি নরম স্বরে বলে উঠে, ” স্যার টাকা দেন প্লিজ! টাকা দিলে আমার বাবার অপারেশন হবে৷”
— নির্বণ চেয়ারে বসতে বসতে, ” ক্যাশ চাই নাকি ব্যাংক চেক।”
— “এই মুহুর্তে আমার ক্যাশ লাগবে।” আতঙ্কিত হয়ে বলে উঠে।
— নির্বণ এক লক্ষ টাকা নিয়তির সামনে ছুঁড়ে মারে। নিয়তি অন্য কোন সময় হলে এই টাকা নিত না৷ নিয়তি নিরুপায় হয়ে টাকাগুলো তুলে নেয়।
— এখানে এক লক্ষ টাকা আছে৷ কাল এক লক্ষ পেয়ে যাবে। আশা করি “এক লক্ষ টাকা দিয়ে তোমার বাবার অপারেশন হয়ে যাবে।” কাল যখন আমার সাথে আমার বউ হিসেবে আমার বাড়িতে প্রবেশ করবে ঠিক তখন তোমাকে এক লক্ষ টাকা দিয়ে দিব৷
— নিয়তি চোখের জল মুছে বলে উঠে, ” ওকে স্যার। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার এই ঋণ আমি কোনদিন ভুলবো না৷ ”
নিয়তি টাকা নিয়ে হসপিটালে চলে আসে৷ টাকা প্রি মেন্ট করার পর তার বাবার কিডনির অপারেশন শুরু করে দেয়৷
নিয়তি বাবার কিডনিতে চুনাপাথর ধরা দেয়। যার ফলে নিয়তির বাবা ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। নিয়তি তার বাবার জন্য অনেক চেষ্টা করে। মেডিসিন খাওয়ানোর মাধ্যমে কমেনি। বরং পাথরগুলো বৃদ্ধি পেয়েছে। নিয়তির বাবার অবস্থা বর্তমানে এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে, “অপারেশন না করলে নিয়তির বাবা মারা যাবে ৷” সে জন্য নিয়তি এমন বাজে চুক্তি নামায় সাইন করতে বাদ্য হয়েছে।
নিয়তির পৃথিবী বলতে নিয়তির বাবা৷ নিয়তির জন্মের ২ বছর পর নিয়তির মা নিয়তিকে ছেড়ে চলে যান৷ মা চলে যাওয়ার পর বাবাই নিয়তির সমস্ত দায়িত্ব নেন৷ দ্বিতীয় বিয়ে করেননি নিয়তির অবহেলা হতে পারে বলে। আজ দিন এসেছে নিয়তির তার প্রতিদান দেওয়ার৷ নিয়তি নিজের সর্বত্র দিয়ে নিজের বাবাকে বাঁচাতে চায়৷
______
নির্বণ অফিসের কাজ শেষ করে বাড়িতে পৌঁছে যায়।ফ্রেশ হয়ে নির্বণ তার প্যারালাইছিস মায়ের সাথে দেখা করতে যায়৷ নির্বণের মা হার্ট অ্যাটাক থেকে প্যারালাইছিস হয়৷ নির্বণের মায়ের অঙ্গ প্রতঙ্গের এক সাইট কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে৷
নির্বণ তার মায়ের মাথার পাশে বসে মাথায় হাত রাখতেই নির্বণের মা চোখ মেলে তাকায়৷ নির্বণকে দেখে ছোট বাচ্চার মতো মুখে ফুটে মিষ্টি হাসি।
— নির্বণ তুমি অফিস থেকে কখন ফিরলে? দুপুরে তুমি খাওনি৷ তোমার মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে কেন?
— মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ” প্লিজ মা উত্তেজিত হবে না৷ আমি দুপুরে খেয়েছি৷ আর আমার মুখ কই শুকনো লাগছে। আমি তো একদম ভালো আছি৷”
— নির্বণের মা মুখ গোমড়া করে বলে উঠে, ” আমি যখন থাকবো না তখন দেখবি কেউ তোকে এসব কথা বলবে না৷ আর তো মাত্র ২৮ দিন বেঁচে থাকবো৷ প্লিজ একটা বউ নিয়ে আয় না৷ আমি আমার চোখের দেখা দেখে যেতে পারব না৷”
— মা তুমি সব সময় ইমোশনাল কথা কেন বল? তোমার কিছু হবে না। আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিব না৷ তোমাকে আমি বিদেশের বড় ডক্টরের কাছে নিয়ে যাব৷
— আরে বোকা ছেলে আমাকে নিয়ে ভাবা বন্ধ কর। আমার জন্য একটা লাল টুকটুকে বউমা এনে দাও। আমি সুস্থ হয়ে যাব৷
— বুকের মাঝে কষ্ট চেপে ধরে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বলে উঠে, ” মা কাল তোমার জন্য একটা লাল টুকটুকে বউ নিয়ে আসবো৷ ”
— মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে উঠে, ” সত্যি তুমি কাল বিয়ে করবে৷ কিন্তু একদিনে কিভাবে সম্ভব? ”
— ডোন্ট ওরি মা৷ আমার বান্ধবী বিয়েতে রাজি হয়েছে৷ তাকে বলেছি দেশের অবস্থা ভালো না আমরা বরং মন্দিরে বিয়ে করে নিব৷ সে আমার কথামতো রাজি হয়ে গেছে। কাল সকালে আমরা বিয়ে করব৷
— আমি তোমাদের আশীর্বাদ করি তোমরা সব সময় সুখী থাকো৷ সৃষ্টি কর্তা তোমাদের সব আশা পূর্ণ করুক।
— মা এখন প্লিজ ঘুমিয়ে পড়। আর কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করবে না৷ আমি আবার এসে যদি দেখতে পাই তুমি ঘুম আসোনি তাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে৷ এই আমি বলে রাখলাম।
— আচ্ছা বাবা৷ আর কোন চিন্তা করব না৷ তুমিও খেয়ে শুয়ে পড়৷ কাল তো তোমার অনেক কাজ৷
— হুম মা৷
নির্বণ তার মায়ের গায়ে কম্বল দিয়ে রুমের বাহিরে এসে কেঁদে ফেলে৷ মায়ের সামনে বুকের উপর পাথর রেখে নিজের কষ্ট গুলো লুকিয়ে রেখেছে।
— চোখের জল মুছে মনে মনে বলে উঠে, ” মা পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও৷ আমি তোমাকে অনেক মিথ্যা করা বলছি৷ ” আমি তোমার ভালোর জন্যই মিথ্যা কথা বলছি৷
_________
পরের দিন নির্বণ নিয়তিকে বউ সাজিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। নির্বণের কথামতো নিয়তি বাড়ির ভিতরে পা রাখতেই বাকি এক লক্ষ টাকা হাতে ধরিয়ে দেয়৷ নিয়তিকে নিজের রুমে নিয়ে যায়৷
— নির্বণ রুমের দরজা বন্ধ করে “মিস নিয়তি আমার কথাগুলো মন দিয়ে শুনবে। ”
— দরজা বন্ধ করাতে নিয়তি ভয় পেয়ে যায়৷ শুকনো গলায় ভয়ে ভয়ে বলে উঠে, ” আপনি কি বলতে চান? এভাবে দরজা বন্ধ করলেন কেন?”
— কোন ভয় নেই৷ আমি তোমার উপর হামলা করব না৷ শর্তগুলো হলো –
১.আমাকে স্যার ডাকা বন্ধ করতে হবে৷
২. আমার মা প্যারালাইছিস রোগী। তার উপর হার্টের রোগী৷ ডাক্তার বলে দিয়েছেন আর মাত্র ২৮ দিন বাঁচবেন । অলরেডি একদিন চলে গেছে। ২৭ দিন আমার মায়ের সামনে এমনভাবে অভিনয় করবে যেন মা মনে করে তুমি আমার সত্যিকারের বিবাহিত স্ত্রী।
৩.তুমি যখন বাহিরে যাবে তখন কোন সার্ভেন্টকে মার কাছে রেখে যাবে৷
— নিয়তি মাথা নিচু করে, ” ওকে স্যার৷ আপনি যেমনটা বলবেন ঠিক তেমনটাই হবে৷ আমি আমার সর্বত্র দিয়ে চেষ্টা করব৷ ”
— চল মার সাথে দেখা করে আসি৷
নির্বণ নিয়তির হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে তার মার রুমে। এই প্রথম নির্বণ নিয়তির হাত ধরে৷ নিয়তির কেমন জানি একটা একটা বিরক্ত লাগা অনুভব করছে। আবার কোথাও একটা ভালো লাগা কাজ করছে৷
— নিয়তি নির্বণের মাকে সালাম করে নির্বণের মায়ের পাশে দাঁড়ায়৷ নির্বণ চোখের ইশারায় তার মায়ের পাশে বসতে বলে। নির্বণের চোখের ইশারা বুঝতে পেয়ে নিয়তি তার মায়ের পাশে বসে।
— মা আমি তোমাকে সব সময় আশীর্বাদ করি তুমি সুখী হয়৷ তুমি আমার সোনা মা৷
— সোনা মা ডাকটা শুনে নিয়তি কেঁদে ফেলে৷ নিয়তি কান্না করে বলে উঠে, ” মা আপনি আমাকে কি বললেন?”
— নির্বণের মা কিছুটা আতঙ্কিত হয়ে, ” কেন? আমি তোমাকে সুখী হওয়ার জন্য আশীর্বাদ করলাম৷ ”
— তারপর আমাকে কি মা বলে ডাকলেন?
— সোনা মা বলে ডেকেছি৷
— প্লিজ আমাকে আর একবার সোনা মা বলে ডাকেন!
— আমার সোনা মা৷
নিয়তি নির্বণের মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে বলে উঠে, ” জানেন মা৷ বাবা বলেছিল আমার মাও আমাকে সোনা মা বলে ডাকত৷ আজ তিনি বেঁচে নেই৷ আমাকে সোনা মা বলে ডাকত আমি জানতাম না ঠিক৷ বাবা সব সময় বলত মাকে আমাকে সোনা মা বলে ডাকত৷ ”
নির্বণের মা নিয়তির মাথায় এক হাত রেখে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বলে উঠে, ” আজ থেকে আমিই তো তোমার মা৷ আমি তোমাকে সোনা মা বলেই ডাকব৷ ”
— নির্বণ বির বির করে বলে উঠে, ” এ তো দেখছি নাটকের মহারানী তুফান মে। ডিস্ট্রিক্টিং এত নাটক ভালো লাগে না৷ নির্বণ রুম থেকে নিজের রুমে চলে যায়৷
— নিয়তি চেখের জল মুছে বলে উঠে, ” মা আজ থেকে আপনার সব দায়িত্ব আমার৷ আপনাকে আমি সুস্থ করে তুলব। আপনি আবার আগের মতো হাঁটতে পারবেন৷ ”
— নির্বণের মা মুচকি হেঁসে, ” মা আমাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিও না৷ আমার আয়ু আর বেশি দিন নেই৷ ”
— “রাখে হরি মারে কে” আপনার কিছু হবে না৷ ডক্টররা অনেক সময় তো ভুল করে। ডক্টরদের সব কথা সব সময় সত্যি হয় না৷ সৃষ্টি কর্তা চাইলে সব হবে৷
নিয়তি ভালোবাসা পেয়ে নির্বণের মায়ের চোখে জল এসে পড়ে। নির্বণের জন্য এমন একটা বউ চেয়েছিল নির্বণের মা৷
— টলমল চোখে “তোমার নাম কি মা? ”
— আমার নাম নিয়তি৷
— নিয়তি আমার আলমারিতে একটা বক্স আছে। একটু কষ্ট করে এনে দাও৷
নিয়তি আলমারি খুলে নির্বণের মায়ের কথা মতো বক্সটা নিয়ে আসে৷ তার পর নির্বণের মা যা বলে নিয়তি উত্তর দেওয়ার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷
চলবে…..
#শুরুটা_অন্যরকম
#পর্ব_০১
#অধির_রায়