ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব ২২

0
605

#ভালোবাসি_হয়নি_বলা
#লেখকঃ mahin_al_islam
#পর্বঃ২২

উনার বাসায় পৌঁছানোর পর যেটা দেখলাম আর যেটা শুনলাম আমি একদম হতবাক এতো কিছু হয়ে গেছে।।। আমার একটু ভুলের জন্য

আমি ওনার বাসায় পৌছে দেখি ছূটকি কান্না করতেছে

আমিয়ে ছুটকির কাছে চলে গেলাম কারণ ওর কান্না করার বিষয়টা আমি জানতে চাই

আমিঃ কি হয়েছে আপু’ এভাবে কান্না করতেছ কেন

ছুটকিঃ ভাইয়া গতকাল থেকে বাসায় আসতেছে না আর আমি অনেকবার ফোন ট্রাই করলাম ফোনটাও রিসিভ করতেছে না

আমি শুটকির মুখ থেকে এই কথা শুনে কি বলবো ভেবে পাইতাছি না আমার শরীর যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেছে আমি দুনিয়ার খেয়াল হারিয়ে ফেললাম এই টা আমি কি শুনতেছি আমার নিজের কানকে আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারতেছি না তার মানে উনি কি আমার সাথে রাগ করে বাসা থেকে চলে গেছেন উনার আবার কিছু হয়নি তো

আমিঃ আরে ছুটকি কান্না করার কি আছে একটু পর চলে আসবে হয়তো কোন কাজে বেরিয়েছে তাই হয়তো ফোনটা তুলতে পারতাছে না একটু পর ঠিকই দেখবে বাসায় চলে আসবে

( ছুটকি কে সান্তনা দিচ্ছি ঠিকই কিন্তু আমি আমার মনটাকে শান্ত্বনা দিতে পারতাছিনা
নিজের চোখের পানি ছুটকি থেকে আড়াল করে রাখলাম কারণ আমার চোখে পানি দেখলে ছুটকি আরো ভেঙে পড়বে)

এইদিকে

ডক্টর : হ্যালো রাকিব চৌধুরী আপনার প্রেসেন্ডের জ্ঞান ফিরে এসেছে আপনারা এসে তাকে নিয়ে যেতে পারেন

রাকিবঃ আমরা খুব শীঘ্রই হসপিটালে পৌঁছেছি

কথা টা বলে রাকিব চৌধুরী তার ড্রাইভার কে ডাক দিলেন ড্রাইভারসহ রাকিব চৌধুরী হসপিটালে চলে আসলেন

রাকিব চৌধুরী ও তার ড্রাইভার দুজনেই মাহিনের কেবিনে প্রবেশ করল

রাকিবঃ হ্যালো ঈয়ঙ্গম্যান এখন কেমন বোধ হচ্ছে

মাহিনঃ এইতো ভাইয়া অনেকটাই ভালো

রাকিবঃ আচ্ছা তাহলে তোমার বাসার ঠিকানা বলো তোমার বাসায় তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি

মাহিনঃ আপনাকে আমি কি বলে ধন্যবাদ দেবো হয়তো আপনি না থাকলে আমি আর এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে পারতাম না হয়তো এতদিন আমার পরপারে চলে যেতে হতো

রাকিবঃ মহান আল্লাহতালা তোমার হায়াত রেখেছিল তাই আমি সেখানে ঠিক সময় উপস্থিত হয়েছি,,,

মাহিনঃ জি ভাইয়া হয়তো আল্লাহতালা আমার এত তাড়াতাড়ি মৃত্যু লেখেনি

রাকিবঃ ওকে চলো গাড়িতে বসে সব কথা হবে তোমার বাসা যেতে যেতে

তারপর মাহীন রাকিব আর তার ড্রাইভার তিনজনেই গাড়িতে করে মাহিনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল

রাকিবঃ আচ্ছা বলতো তোমার সাথে সেদিন কি এমন হয়েছিল যাওয়ার জন্য এইরকম অবস্থায় হয়েছিল তোমার

মাহিনঃ সে এক লম্বা কাহিনী

রাকিবঃ আরে লম্বা কাইনি হয়েছে তো কি হয়েছে তুমি সর্টকাট করে বল শর্ট ফিল্মের মত

তারপর মাহীন রাকিব চৌধুরী সব কিছু খুলে বলল

রাকিবঃ আসলে তোমার একটু ভুল আছে কি জানো তোমার রাগটা হতে যুক্ত আর তুমি তোমার রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারো না

রা কখনো কারো জীবনে শান্তি বয়ে আনে না দুঃখ ছাড়া তাই তুমি তোমার রাগটা যত কন্ট্রোল করতে পারবে তোমার জীবনটা তত শান্তি ময় হয়ে উঠবে

মাহিনঃ ভাইয়া আমি কি করবো আমি জানিনা আমার কেন এত রাগ হয় আমি এত চেষ্টা করেছি আমি সবসময় ঠান্ডা মাথায় সবকিছু সমস্যার সমাধান করব কিন্তু আমি পারিনা

রাকিবঃ আমি একটা কথা বলি রাগ করোনা

মাহিনঃ জী ভাইয়া বলেন

রাকিবঃ আসলে এই সময় তোমার একজন জীবনসঙ্গিনী দরকার যার সাথে তুমি সবকিছু শেয়ার করতে পারবা যত রাগ অভিমান জমা আছে তোমার মনের মধ্যে সবকিছু তার সাথে শেয়ার করো দেখবে তোমার জীবনটা আর তোমার রাগ অভিমান সব কিছু হালকা হয়ে যাবে,,, তার সাথে তুমি সব সময় হাসি খুশিতে থাকো এবং তাকে সব সময় হাসি খুশিতে রাখো তাহলে দেখবে তোমার জীবনে সব থেকে মূল্যবান উপহার তুমি পাবে আর সেটা হলো সুন্দর একটা জীবন

মাহিনঃ ভাইয়া আমি এটাই করতে পারিনা কারো সাথে কোনো কিছু শেয়ার করতে পারিনা
শেয়ার করতে গেলেই আমার কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগে সে যেই হোক না কেন

রাকিবঃ এটা কোন ব্যাপার না তুমি তোমার জীবন সঙ্গিনীর সাথে মিশে দেখো একবার দেখবে তখন তার সাথে সব কথাই তুমি শেয়ার করতে পারবে যতদিন না তুমি তার সাথে ভালোভাবে ব্যবহার করতেছো তার সাথে সময় দিচ্ছো ততদিন তুমি কখনোই তার সাথে শেয়ার করতে পারবে না কোন কিছু

যখন তুমি তোমার জীবনসঙ্গিনীকে সময় দিবা পাতার সাথে হাসিখুশিতে কথা বলবা তখন দেখবে তোমার জীবন সঙ্গিনী তোমাকে তার পৃথিবী মনে করবে আর তুমিও তাকে তোমার পৃথিবী মনে করবে জাস্ট একটু মিশে দেখো তার সাথে

মাহিনঃ জ্বী ভাইয়া আপনি অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন কারণ কারো সাথে মিশতে হলে তার সাথে আগে বন্ধুত্ব করতে হবে আমি এখন থেকে চেষ্টা করব সবকিছু তার সাথে শেয়ার করার

রাকিবঃ তারমানে তোমার ওয়াইফ আছে আর তুমি বিবাহিত

মাহিনঃ জ্বী ভাইয়া আমি বিবাহিত একটা দুর্ঘটনার মাধ্যমে আমি তাকে বিয়ে করেছিলাম

রাকিবঃ এই জন্য তুমি তার সাথে সবকিছু শেয়ার করতে পারো না তাইতো দুর্ঘটনার মাধ্যমে বিয়ে করেছ

মাহিনঃ জি ভাইয়া আমার জন্য কেমন কেমন লাগে তার সাথে সবসময় ফ্রি হয়ে কথা বলতে গেলে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে রাখো চলে আসে মাথায় কখন কি করে বুঝবো সেটা নিজেও জানিনা

রাকিবঃ এই রাগটাকে তুমি কন্ট্রোল করা শেখো তাহলে তোমার জন পাল্টে যাবে আর তোমার ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর হবে

রাকিব চৌধুরী আর মাহিন কথা বলতে বলতে মাহিনের বাসায় চলে এসেছে

মাহিনঃ এই ড্রাইভার গাড়ি থামানো এটাই আমার বাসা বাড়ি আসুন ড্রাইভার ভাই আপনিও আসুন

এইদিকে,,,

আমি ছুটকি সাথে কথা বলতেছি তখনই কলিং বেলটা বেজে উঠলো

ছুটকিঃ তুমি বস আমি দেখছি কে এসেছে

তারপর ছুটকি দরজার দিকে এগোতে লাগল আর আমি দরজার দিকে তাকিয়ে আছি কে এসেছে তাই দেখার জন্য

ছুটকি দরজাটা খুলে ভাইয়া বলে জোরে একটা চিত্কার দিয়ে কান্না করা শুরু করে দিল

আমার বুকের ভিতর দুমড়ে মুচড়ে উঠলো

চোখ আটকে গেল দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই লোকটার উপর

একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দরজারই এ থাকা মানুষটার উপর

একই অবস্থা হয়েছে উনার আমি স্বপ্ন দেখতে চাই না তো আমি কি দেখতেছি,,,এটা কিভাবে হলো

মাহিনঃ আরে পাগলি বইন কান্না করার কিছু হয়নি আমি একদম ঠিক আছি এখন বাসার ভিতরে যাইতে দিবি না কি এখান থেকে তাড়িয়ে দিবে

অনেকটা অভিমানী ঘন্টায় কথাটা বললেন উনি

ছুটকিঃ বদমাশ কোথাকার আমি কি বলছি তোকে এখান থেকে তাড়িয়ে দেবো আয় ভিতরে আয় বলতেছি তোকে আর কোনদিন বাসার বাইরে যাইতে দিব না

মাহিনঃ উফফফ এত জোরে কেউ কথা বলে আমার মাথায় লাগতাছে তো আস্তে কথা বল

ছুটকিঃ ওহ স্যরি ভাইয়া’

মাহিনঃ উনাদের বসতে দে আর চা নাস্তার ব্যবস্থা কর

আমি শুধু একমাস ধরে উনার দিকে তাকিয়ে আছি মাথায় ব্যান্ডেজ করা হাতের ব্যান্ডেজ করা বুকে ব্যান্ডেজ করা

পায়ে ব্যান্ডেজ করা ভালো মতো হাঁটতে পারতেছিনা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আসতেছে

উনাকে এই অবস্থায় দেখে আমার বুকের ভিতর হাহাকার শুরু হয়ে গেল

উনি নিশ্চিত আমার উপর রাগ করে গাড়ি অনেকে স্পিডে চালিয়েছে হয়তো কোনো অ্যাক্সিডেন্ট করেছে

ছুটকির সাথে কথা বলতে বলতে উনি হঠাৎ আমার দিকে তাকালেন

আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার চোখ টা সরিয়ে নিলেন আমার চোখ দিয়ে পানি টুপ টুপ করে পড়তেছে গরিয়ে

মাহিনঃ ছুটকি তুই ওনাদের আপ্পায়ন কর আমি রুমে যাচ্ছি একটু বিশ্রাম নিতে হবে না হলে মাথাটা ব্যাথা করা শুরু করবে

তারপর উনি একা উপরে উঠতে যাচ্ছিলেন কিন্তু পাচ্ছে না

আমি উঠে গিয়ে ওনার হাত ধরে উপরে নিয়ে যেতে চাইলাম

মাহিনঃ আমি একাই যেতে পারবো কারো সাহায্য দরকার হবে না

বুঝতে পারলাম অনেকটা অভিমান এবং তার সাথে অনেকটা রাগ জমে আছে আমার উপর

আমিঃ এখন কোন কথা হচ্ছে না আমি যেটা করতেছি করতে দেন নয়তো এখান থেকে ফেলে দিয়ে একদম যমের বাড়ি পাঠিয়ে দেব

মাহিনঃ একটুকুও অধিকার খাটানোর চেষ্টা করবেন না তাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে

আমিঃ আর একবার বকবক করলে না সত্যি সত্যি এখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে কোমর টা ভেঙে ফেলব আপনার

মাহিনঃ বলছি তো আমি একাই যেতে পারব আপনার সাহায্য আমার দরকার হবে না

আমিঃ এখন কি আপনি চুপচাপ আমার সাথে ওপরে উঠবেন না কি ফেলে দেবে ধাক্কা দিয়ে আর একটা কথা বললে সত্যি সত্যি ধাক্কা দিব আমার কিন্তু এখন রাগ উঠতেছে প্রচুর

কান্না করতেছি আর উনার সাথে ঝগড়া করতেছি

তারপর উনি আর আমার সাথে কোন কথা বললেন না আর তোর কল করলেন না আমি ওনাকে উপরে নিয়ে গেলাম উনার রুমে

আমাকে আস্তে আস্তে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলাম

উনার পা থেকে জুতা জোড়া খুলে ফেললাম

মাহিনঃ আমি সবকিছু একা করতে পারবো কারো সাহায্য দরকার হবে না প্লিজ আপনি আমার রুম থেকে আসতে পারেন

আমিঃ বেশি রকম বকবক করবেন না এটা আমার রুম আপনার না

মাহিনঃ বলছি তো বাইরে যান যখন সুস্থ হবো না তখন দেখবেন কি অবস্থা করি এখনো অসুস্থ তো তাই কিছু করতে পারতেছিনা তাই মাথার উপর চড়ে নাচতেছেন তাইতো

আমি ওনার একদম কাছে চলে গেলাম উনার গায়ে যে হাত বসিয়ে দিলাম

আমিঃ আর একটা বার যদি উল্টাপাল্টা কোন কিছু কথা শুনি আমি না তাহলে গলা টিপে একদম মেরে ফেলবো

মাহিনঃ মানা করছে কে মেরে ফেলুন সমস্যা নাই

বুঝতে পারলাম পাহাড় সমান অভিমান জমে আছে আমার উপর আল্লাহ কতদিন এভাবে আল্লাহই ভালো জানে

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here