#সম্পর্কের_বন্ধন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৬
অবহেলায় নিষ্প্রাণ হেলে পড়া মুঠোফোন মৃদু আলোতে জ্বলজ্বল করছে। সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই ইভানের। মধ্যরাত নিস্তব্ধ,শান্ত কোলাহলহীন। শুধু দূর থেকে কিছু ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ভেসে আসছে।
হুট করে হাড় কাঁপানো জ্বর এসে কয়েক ঘন্টা স্থায়ী থেকে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করে দিয়ে গেছে। জ্বর নেমে গিয়ে দরদরিয়ে ছুঁইয়ে পড়ছে ঘর্মস্রোত। শরীরে জড়ানো টি-শার্ট খুলে উদাম গায়ে বারান্দার খোলা বায়ুতে উন্মুক্ত করছে নিজেকে।
কপলে অভিন্যস্ত ভাবে বেড়ে ওঠা খোঁচা খোঁচা চাপ দাঁড়িতে মৃদু হাত বুলিয়ে রেলিংএ ঠেস দিয়ে বসেছে। নেত্রজোড়া বন্ধ। ভেতরে হাহাকার,মৃদু আর্তনাদ। অঙ্গে মন খারাপের চাদর জড়ানো। দু’একটা মশা উড়ে এসে উন্মুক্ত শরীরে বসছে। একটুখানি র’ক্ত চুষে নিজের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।
পেশিবহুল হাতে বসে থাকা মশার দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো ইভান।
সুদীর্ঘ অন্ধকারে নিজেকে বিলীন করে দিতে পারলেই বুঝি প্রশান্তি মিলতো?
লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মধু মেয় মুহূর্তগুলো স্মৃতির ফটকে নড়াচড়া করার প্রচেষ্টা। সম্পর্ক গুলো এমন কেনো? এরা যতটা প্রশান্তি দেয় তারচেয়ে দশগুণ অনলে পু’ড়িয়ে ভষ্ম করে দেয় অন্তস্থল। কা’টা’ছে’ড়া বিহীন র’ক্তক্ষরণ ঘটিয়ে দূরে সরে যায়। দাগহীন ক্ষ’ততে তীব্র যন্ত্রণার আভাস। মনে জমা হলো ঘন বর্ষায় আচ্ছন্ন পাহাড়সম অভিমান।
পুরো রাত্রি বারান্দায় কাটিয়ে ভোরে মুয়াজ্জিনের শ্রুতিমধুর আজানের ধ্বনি কর্ণধারে পৌঁছাতেই রুমে পা বাড়ালো। পরিষ্কার হয়ে দরজা খুলে বের হলো। গন্তব্য মসজিদ।
সারারাত অস্থিরতায় কাটিয়ে বিতৃষ্ণায় ভরে উঠলো মন। জীবনের এই গ্যাঁড়াকল গুড়িয়ে দিচ্ছে ভেতর থেকে। তিক্ত হলো ভোঁতা অনুভূতি গুলো। দিনের শুরুতে পূর্বাকাশে সূর্যের অস্তিত্ব টের পেতেই নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত করে ঘর ছেড়ে বের হলো তুহা।
নাস্তার টেবিলে বসা প্রত্যেকের মুখে গাম্ভীর্য। ছোট চাচা নিজেকে যতটা গম্ভীরভাবে প্রকাশ করছেন ভেতরে ভেতরে চিন্তার সাগর তাকে ডুবিয়ে মা/র/ছে।
গতকালের ভিডিও তুহা সহ তাদের দুই পরিবারেই ছড়িয়েছে। এমন লোমহর্ষক,আপত্তিকর দৃশ্যে সবাই যেনো স্তব্ধ। ছোট চাচা সব সামাল দিতেই তুহাকে ফোন করে জানান। সময় না নিয়ে তুহা কুমিল্লায় ফিরে আসে। ভুলবশত ফোন রেখে এসেছে।
গম্ভীরমুখো,শিথিল পরিবেশের নিস্তব্ধতার অবসান ঘটাতে তুহা খুকখুক করে কেশে উঠলো।
তুহার বাবা থমথমে গলায় বললেন,’ কিছু বলতে চাও?’
তুহা যেনো এই প্রশ্নটার অপেক্ষাতেই ছিলো। কাঙ্খিত সুযোগ হাতের মুঠোয় ধরা দিতেই তাকে কাজে লাগালো। উত্তপ্ত,ফুটন্ত তেলে ভাজা এক টুকরো পুরি মুখে তুলে অকপটে বলল,’ আমি আজই ঢাকায় ফিরে যাবো। একথাই বলার ছিলো।’
তুহার বাবা মাঝপথে খাবার চিবোনো ছেড়ে দিয়ে মেয়ের মুখের দিকে তীক্ষ্ণ,গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। কিছুটা সময় অতিবাহিত হতেই রাশভারি কন্ঠস্বর শোনা গেলো।
‘তোমাকে কাল থেকেই বলছি সবটা ঠিক হওয়ার আগ পর্যন্ত তুমি এখানেই থাকবে। বিয়ের পূর্বের এমন ভদ্রতা,লোকমুখে সুনাম এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো ছেলেটার। আর তুমি কিনা সেই ছেলের বাসায় ফিরতে চাও? কি করলে সবটা বুঝবে তুমি?
তিক্ত হলো সকল অনুভূতি। খাবারের প্লেট দূরে ঠেলে দিয়ে তুহা উঁচু কন্ঠে বলল,’ একদিনের একটা ঘটনায় মানুষ বিচার করা যায় না। তার উপর ভিত্তিহীন প্রমাণে তো নয়ই। কি কিরলে তোমাকে বোঝাতে পারবো বাবা?’
তুহার বাবা মেয়ের আচরণে রুষ্ট,অপ্রসন্ন হলেন। রোষানল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন,’ তোমার এখনো ভালোমন্দ বোঝার বয়স হয়নি। কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। তোমার ভালোমন্দ দেখার জন্য আমরা আছি। তুমি আবেগ ঝরিয়ে ভবিষ্যত নষ্ট করতে যেওনা।’
হতবিহ্বল তুহার অধরে তাচ্ছিল্যের হাসি। ভীতিহীন তার চাহনি। খানিকটা রগড় করেই বলল,’ কম বয়সি মেয়েদের কেউ বিয়ে দেয় নাকি? বিয়ে দেওয়ার সময় অন্তত এই কথাটি মাথায় রাখা উচিত ছিলো যে তোমার মেয়েটা এখনো অবুঝ।”
আমরা কতটুকু জানি? একপাক্ষিক দিক দেখলে কখনো সুবিচার করা যায় না। ব্যাপারটা যেহেতু ইভানকে নিয়ে তাই তার মতামত সবার আগে জরুরি।’
কাল থেকে কতবার তোমাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি ইভান মানুষটা এমন প্রকৃতির নয়। ছিলামতো তার সাথে আমি। অন্তত সেই জোরে তাকে বিশ্বাস করতে পারি। তোমাদের এখনই তাকে সাধু ভাবতে হবেনা। নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ অন্তত দাও।
রাদিফ গলা ঝেড়ে ভাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,’ তুহার কথাটা অন্তত ভেবে দেখা উচিত।’
তুহার বাবা ভাইয়ের দিকে রোষপূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে খাবার ছেড়ে উঠে গেলেন। যাওয়ার আগে গমগমে স্বরে বলে গেলেন,’আমার কথা অমান্য করে যাতে কেউ বাসা থেকে এক পা ও না বাড়ায়। তবে দ্বিতীয়বারের জন্য এ বাসার দরজা তার জন্য বন্ধ থাকবে।’
তুহার মা শাহিনুর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে নমনীয় কন্ঠে বললেন,’ সব ঠিক হয়ে যাবে মা। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।’
————————————————————
রান্নাঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আর্ধকা’টা তরকারি,ভাতের পাতিল সব কিছু পরিষ্কার করে ইভান নিজের জন্য কড়া লিকারের এক কাপ চা বানিয়ে চুমুক দিলো। মাথাটা বড্ড যন্ত্রনা দিচ্ছে। গতকালের পর আর ফোন হাতে নেওয়া হয়নি। ফোন হাতে নিয়ে আনলক করতেই অনেকগুলো মিসড কল ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। সব গুলো ফোন তুহার চাচা রাদিফের নাম্বার থেকে আসা। ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসলো ইভানের। তুহার চাচা কেনো কল দিচ্ছে?
সেসময় আবারও কল আসলো। ইভান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে নিজেকে ধাতস্থ করে নিলো। এখনই হয়তো নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
ফোন রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে তুহার অপেক্ষমাণ ঝাঁঝালো কন্ঠ কর্ণগোচর হলো।
‘গতকাল থেকে এতবার ফোন দিচ্ছি রিসিভ করছেননা কেনো?’ফোন কোথায় থাকে? আর আমার ফোন সুইচ অফ কেনো? ‘দুটো ফোনে অনবরত কতটা কল দিয়েছি জানা আছে আপনার?’
ইভান নিরুত্তর রইলো। চুপ করে তুহার অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করছে। যেনো এটাই তার একমাত্র কাজ।
দ্বিতীয়বারের মতো তুহার কন্ঠস্বর কানে আসলো।
“আপনি আজই একবার কুমিল্লায় আসুন। আপনার সাথে আমার কিছু বোঝা’পড়া আছে।”
শাহিনুর মেয়েকে ডেকে উঠতেই তুহা ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলল,”কি হলো আসবেন তো? আপনার আসাটা খুবই জরুরি। আমার পক্ষে এখন ঢাকায় যাওয়া সম্ভব নয়। তাই আপনাকেই আসতে হবে। তাড়াতাড়ি উত্তর দিন আম্মু ডাকছে আমায়।”
ইভান ছোট্ট করে উত্তর দিলো,”ঠিক আছে। আমি আসবো কুমিল্লায়।”
তুহা হুঁ! বলে কল কেটে দিলো।
ফোন কান থেকে নামিয়ে ইভান নিজেকে শক্ত করে নিলো। তুহা যা চায় তাই হবে। একটা সম্পর্কে দু’পক্ষের মধ্যে বোঝা’পড়া, বিশ্বাস, ভরসা থাকা লাগে। একপাক্ষিক কোনো কিছুই সম্ভবনা। সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তো নয়ই।
বছর বাইশ’এক আগে যেমন ইভানের বাবা আর মায়ের সম্পর্কে ফা’টল ধরেছিলো? বিশ্বাসটা ছিলো ঠুনকো। ইভানের মা ছোট্ট একটা কারণে ভুল বুঝে তার বাবাকে ছেড়ে গিয়েছিলো।
ইভান চায় না অবিশ্বাসের বন্ধনে জোর করে তুহাকে আটকে রাখতে। সিদ্ধান্ত তুহা নিবে। সে থাকতে চায় নাকি বাবার বাড়ি ফিরতে চায়?
দেয়াল ঘড়িতে টুংটাং শব্দ তুলে ঘড়ির কাঁ’টা চারটার ঘরে গিয়ে পৌঁছালো। সাদা সেলোয়ার-কামিজ পড়ে মাকে বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা বলেই বাড়ি থেকে বের হলো তুহা। প্রথমে মা সন্দেহের চোখে দেখলেও ছোট চাচা যখন বলল তিনি নিয়ে যাবেন তখন আর কিছু বলেননি।
তুহাকে সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়ে রাদিফ তুহার মাথায় হাত রেখে কোমল কন্ঠে বলল,’ যা করবি ভেবে চিন্তে করবি। মনে রাখিস ভালোবাসা একবার হারালে সেটা আর প্রথমবারের মতো স্বাদ দেয়না।
নিজের দিকে আঙ্গুল তাক করে ম্লান হেসে বলল,’তোর এই অধম চাচাকে দেখ। দ্বিতীবার আর কাউকে হৃদয়ে স্থান দিতে পারেনি। নিজের ছোট্ট ভুলে সবটা ওলোট পালোট হয়ে গেলো। ইভানকে সবার চেয়ে তুই ভালো চিনিস তাই বলেই আমি তোকে সাপোর্ট করছি। আমার ভরসা আছে তোর উপর। সব ঠিকঠাকই হবে।
তুহা রাদিফের বাহুতে হাত রেখে আশ্বাস্ত করে বলল,’আমি মানুষটাকে চিনি চাচ্চু। কিন্তু হুট করে প্রিয় মানুষদের বিরুদ্ধে কোনো খা’রাপ কিছু দেখলে মনটা ভেঙে পড়ে। বড্ড ভয় তাড়া করে। যার কারণে আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। তবে তুমি চিন্তা করোনা। আমি সেটাই করবো যেটা সবার জন্য মঙ্গল হবে।
রাদিফ মুচকি হেসে ড্রাইভারকে বলল,’তুহাকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে।’
গোমতী নদীর তীরে এসে অপেক্ষা করছে ইভান। আশপাশ ধূ ধূ ফাঁকা। চক্ষু সীমানায় মানুষজন দেখা যাচ্ছেনা। বাতাসের গতি হু হু করে বেড়েই চলেছে। অবিন্যস্ত চুলগুলো উড়ে এসে চোখে পড়ছে। চোখ দুটো ক্রমশ ছোট হয়ে এলো। হাত দিয়ে মাথা ভর্তি ঝাকড়া চুল পেছনে ঠেলে দিয়ে ঠোঁট ভেজালো ইভান।
দূর থেকে একজনকে আসতে দেখা যাচ্ছে। হাঁটার ভাবভঙ্গি বলে দিচ্ছে এটা তুহা।
আরেকটু কাছাকাছি আসতেই ইভানের বুকটা ধুক করে উঠলো।
তুহা এসে মুখোমুখি দাঁড়ালো ইভানের। তড়াক করে হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠলো ইভানের চেহারা দেখে। একটা রাতে মানুষটার একি হাল হলো? চোখ দুটো গর্তে নেমে পড়েছে। চোয়ালে মলিনতার চাপ। খানিকটা অসুস্থ দেখাচ্ছে তাকে। গায়ে শুভ্ররাঙা শার্ট নজরে আসতেই তুহা আলগোছে হাসলো।
ইভান নিজেই আগে মুখ খুললো,’ কেমন আছো?’
তুহা মাথা নেড়ে জানালো,”ভালোই আছি। তবে আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না ভালো আছেন।’
ইভান তাচ্ছিল্য হাসলো। তার আর ভালো থাকা। ভালোথাকার মানুষটাই যে দূরে সরে যাচ্ছে।
খানিকটা কঠোর হয়ে রাশভারি কন্ঠে সুধালো,’কি সিদ্ধান্ত নিলে?’
তুহা অবুঝ ভঙ্গিতে চোখ পিটপিট করে জিজ্ঞেস করলো,’কোন ব্যাপারে?’
ইভান আবার ও হাসলো। ক্ষীণ হাসিটা পরপরই মিলিয়ে গেলো। কাঠকাঠ গলায় বলল,’ আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে। তুমি যা চাইবে আমি সেটাই মেনো নেবো। আমি তোমার ভালো থাকা দেখতে চাই। এর জন্য যদি বিচ্ছেদ ও মেনে নিতে হয় তবে হোক।’
বিষ্ময়য়ে হতবিহ্বল হয়ে গেলো তুহা। অবাক কন্ঠে বলল,’বিচ্ছেদ?’
ইভানের চোখের দৃষ্টি করুণ। তবে চোয়ালে কাঠিন্যতা। মুখ এক কথা বললেও চোখ দুটো অন্যকথা বলছে। এজন্যই বুঝি মানুষ বলে সত্যি জানতে হলে উত্তর দাতার চোখের দিকে তাকাও। চোখ কখনো মিথ্যে বলেনা।
কঠিন স্বরে বলল,’ আমাকে বিশ্বাস করতে পারোনি বলেই তো কুমিল্লায় চলে এসেছো।
আজ তুহা একের পর এক অবাক হয়েই যাচ্ছে। স্তব্ধতা কাটিয়ে বলল,’ আমি এখানে আপনাকে অবিশ্বাস করে আসিনি। ভিডিওটা আমাদের বাসার সবাই দেখেছে। এরকম কিছু দেখে সবার ভুল বোঝাটা স্বাভাবিক নয় কি?
বাবা মাকে মানাতে না পেরে চাচ্চু আমাকে কুমিল্লায় আসতে বলেছে। এদিকে আপনাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না। তাই আমি দেরি না করেই কুমিল্লায় এসে পড়েছি।
বাবা এখনো কিছু মানতে চাইছেন না।
আমি চাই আপনি নিজেকে প্রমাণ করুন। আপনি নির্দোষ এটা সবাই জানুক। আমার পরিবার আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা নিয়ে থাকুক আমি সেটা চাইনা। মনে আছে? একদিন আপনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন সম্পর্কের মূল ভিত্তি কি?
বিশ্বাস। আমিতো আপনাকে বিশ্বাস করেই এতদূর এসেছি। যে মানুষটা নিজের স্ত্রীকে এতটা সম্মান দিতে জানে সে আর যাইহোক অন্য মেয়েকে অসম্মান করে তার দিকে খা’রাপ নজরে তাকাবেনা।
আপনি কিনা বিচ্ছেদে চলে গেলেন?
ইভান স্তব্ধ হয়ে রইলো। সে কিনা মেয়েটাকেই ভুল বুঝে গেলো।
তুহার অভিমান হলেও ইভানকে বুঝতে দিলোনা। পূনরায় প্রশ্ন করলো,’আমি কিছুই জানিনা। কি হয়েছিলো অফিসে বলুনতো?’
ইভান ফোস করে শ্বাস ফেলে বলল,’তুমি যতটুকু দেখেছো আমি ততটুকুই জানি। মেয়েটা কে? কোথা থেকে আসলো কিচ্ছু জানিনা। কাজ করতে করতে কিভাবে যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো সবার চেঁচামেচিতে। আর তখনই নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কার করি।’
তুহা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে উৎসুক হয়ে বলল,’কিছু খেয়েছিলেন তখন?’
ইভান মাথা নেড়ে বলল,’ঘন্টা খানেক আগে একটা কফি নিয়েছিলাম। এরপর আর কিছু খাইনি। কেনো বলোতো?’
তুহার যা বোঝার বুঝে গেলো। স্বাভাবিক কন্ঠে সরল স্বীকারোক্তি,’হয়তো কফিতে ঘুমের ঔষধ ছিলো। এটাতো ক্লিয়ার যে কেউ আপনাকে ফাঁসাতে চাইছে।’
এতটা ভেবে দেখেনি ইভান।
তুহা ইভানের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,’ চেহারার এই হাল কেনো আপনার?’কাল থেকে কিছু মুখে দিয়েছেন?’ নাকি নিজেকে দেবদাস প্রমাণ করতে এমন বি’চ্ছিরি হাল করেছেন নিজের?
তুহাকে বুকে টেনে নিয়ে কোমল,ঘোরলাগা কন্ঠে সুধালো ইভান,’একটু বুকে আসোতো! কাল থেকে এই বুক খরায় ভুগছিলো এক পশলা বৃষ্টির আশায়।’
ইভানের চওড়া বক্ষে মাথা রেখে ক্ষীণ হাসলো তুহা। মৃদু স্বরে বলল,’ বৃষ্টি নেমেছে?’
ইভান হেসে উঠে বলল,’ একেবারে মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে গো।’
#চলবে……