সম্পর্কের বন্ধন পর্ব ১৫

0
415

#সম্পর্কের_বন্ধন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_১৫

মসৃণ বিছানার চাদরটি টান’টান করে রান্নাঘরে পা বাড়ালো তুহা। এই মুহূর্তে চা,কফির স্বাদ নেওয়া বড্ড প্রয়োজন। মনের অবিন্যস্ত ক্ষো’ভ আরও একটুখানি আশকারা পাওয়ার আগেই তাদের শাসনে আনা দরকার। মাথার ভেতরকার শিরা-উপশিরা শিরশির করে উঠছে। মনটা আজকাল বড্ড বেপরোয়া,বেসামাল হয়ে উঠছে। ইভানের সামন্যতম দূরত্ব যেনো বিষাদের চাদরে মুড়িয়ে নেয় তাকে। বিষাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক কাপ কফি নিয়ে অন্ধকার বারান্দায় চরণ রাখলো তুহা।

পাঁচিলের উপর ধোঁয়া ওঠা কফির কাপ রেখে তাতে একহাতে চেপে ধরে রেখেছে। খানিক সময় নিয়ে টুকরো চুমুকে শান্ত করছে তেতে ওঠা মাথা ভর্তি যন্ত্রণা।
ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলোতে স্পষ্ট দৃষ্টিগোছর হচ্ছে পিচ ঢালা রাস্তা। দমকা হাওয়া ভেসে উড়িয়ে দিচ্ছে খোলা চুল। চুলের আগায় রুক্ষতা। আজ যে চুলে চিরুনি চালানো হয়নি। দূর থেকে নাম না জানা এক পাখির ডাক ভেসে আসছে। এমন নিস্তব্ধ,শিথিল পরিবেশে গা ছমছম করে উঠছে।

আজ গেস্টরুম ঝাড়ু দিতে গিয়ে আধখাওয়া সিগারেটের কয়েক অংশ কুড়িয়ে পেয়েছে তুহা। ইভানকে সিগারেটে আসক্ত হতে দেখেনি কোনোদিন। দুদিন আগেই ইভানের বন্ধুরা বউ, গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এ বাসায় এসেছে। হয়তো বন্ধুদের মধ্যে কেউ সিগারেট ফুঁকেছে। কিন্তু তুহার অশান্ত মস্তিস্ক বারবার করে বলেছে নিশ্চয়ই ইভান বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ওষ্ঠ মাঝে সিগারেট চেপে দু’একটা সুখটান দিয়েছে।
এমন ভাবনা মস্তিস্কে হানা দেওয়ার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে ইভান বিকেলে অফিস থেকে ফেরেনি। সন্ধ্যায় ফোন করে জানিয়েছে আজ একটু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিবে। বাসায় ফিরতে নয়টা পেরোবে। তুহা যাতে অপেক্ষা না করে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

সেই নয়টা গিয়ে এগারোটার ঘরে পৌঁছালো। কিন্তু ইভানের ঘড়ির কাঁটা এখনো নয়টার ঘরে গিয়ে পৌঁছাতে পারেনি। সব মিলিয়ে রা’গের পাল্লা ভারী হয়ে আছে।
দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই তুহার সম্বিত ফিরলো।

ইভান দরজা খুলে চো’রের ন্যায় ঘরে ঢুকলো। মেয়েটা বাতি নিভিয়ে অন্ধকার করে রেখেছে ঘর। কিছুই দেখতে পারছিনা। বিরক্তিভরা কন্ঠে কথাগুলো বলেই ফোনের ফ্ল্যাশ অন করলো ইভান।
সামনে তাকিয়েই চমকে উঠলো।

হাসার চেষ্টা করে বলল,’তুমি ঘুমাও নি?

‘নাহ!খাবার দিচ্ছি খেতে আসুন।’ ভয়’ঙ্কর কন্ঠের শান্ত জবাব তুহার।

ইভান আস্তে করে বলল,’আমি এখন খাবোনা। ক্ষিধে নেই।’

তুহা ধপ করে জ্বলে উঠলো। এতক্ষণের সমস্ত রা’গ,ক্ষো’ভ উগড়ে ফেলতে চাইছে ইভানের উপর।
ঝাঁঝালো কন্ঠে তেতে উঠে বলল,’ ক্ষিধে থাকবে কেনো? বাইরে থেকে পেট পূজা করে আসলে কারো ক্ষিধে থাকবে? ওহ আমিতো ভুলেই গেছি ঘড়ির কাঁটায় এখনো নয়টা বাজেনি। এত তাড়াতাড়ি কেউ রাতের খাবার খায়?’

ইভান বিরস মুখে তাকিয়ে থেকে ক্ষীণ কন্ঠে বলল,’ এরকম রা’গ করছো কেনো? একদিন একটু দেরি হলেই এমন করতে হবে?’

তুহা বিস্ময়ে চোখ কোটর থেকে বের করার উপক্রম। একে তো দেরিতে বাসায় ফিরেছে তার উপর মুখে কথার ফুলঝুরি ছুটছে। দ্বিগুণ তেতে উঠে বলল,’রাত করে বাসায় ফিরবেন, লুকিয়ে সিগারেটে সুখটান দিবেন আর আমি কিছু বললেই দোষ?’

ইভান আকাশ থেকে পড়লো এমন ভঙ্গিতে তাকিয়ে বিস্মিত সুরে বলল,’ আমি কখন সিগারেট টানলাম?’
কোথা থেকে এসব কথার জন্ম দিচ্ছো? আদৌও এসব কথার মাতা-পিতা আছে?’

তুহা ক্ষিপ্ত গলায় বলল,’আপনি যদি সিগারেট না টানেন তবে গেস্টরুমে আধখাওয়া সিগারেট কি করে?’

ইভান মাথায় হাত দিয়ে বলল,’ এই ব্যাপার? আমার বন্ধুরা যে এসেছে সেটা তুমি জানোনা? মাসুদ সিগারেট খোর। সে এভাবে ফেলেছে আর দোষ দিচ্ছো আমার?

তুহা তীক্ষ্ণ,ধারালো চক্ষু ইভানের উপর রেখে বলল,’ কে বলতে পারে সেদিন আপনি সঙ্গ’দোষে সিগারেটে ঠোঁট ছোঁয়ান নি?’

এবার ইভানের রা’গ হলো ভীষণ। আসার পর থেকে একটা না একটা কথা দিয়ে জ্বালিয়ে মা/র/ছে। এক ভ্রু উঁচিয়ে উগ্রকন্ঠে বলল,’খেয়েছি,তো? তুমি আমাকে যেমনভাবে শাসন করছো ইংরেজরা ও বাঙালিকে এমনভাবে শাসন করেনি।

তুহা চোখ বড় বড় করে বলল,’ তারমানে সত্যিই আপনি সিগারেট খেয়েছেন?’
আজ থেকে আমি আপনার বউ না,সিগারেট আপনার বউ। তাকে নিয়ে থাকেন। আমার কাছে আসলে আপনার শির’শ্ছেদ করবো আমি।

ইভান মোহিত কন্ঠে বলল,’যে হৃদয়ছেদ করতে পারে তার আর শির’শ্ছেদ করার প্রয়োজন পড়ে না।

তুহার রাগ ভাঁটা পড়লো। আবিষ্ট হলো মন। তবুও মস্তিষ্কে রা’গ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। তাকে প্রাধান্য দিতেই তুহা গেস্টরুমে ঢুকে পড়লো।সজোরে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ফোঁস করে শ্বাস ফেললো।

ইভান বাইরে থেকে চেঁচিয়ে বলছে, তুমি কিন্তু বেশি বেশি করছো তুহা! গেস্টরুমে যাওয়ার মানে কি? কি বোঝাতে চাইছো তুমি? আমি খা’রাপ লোক?’
আমি সিগারেট খেয়েছি বললেই তোমার বিশ্বাস করা লাগবে? খাইনি আমি সিগারেট।

তুহা তিক্ত কন্ঠ বলল,’ আমি বেশি বেশি করছি,না? আর আপনি কিভাবে এক মুখে পঞ্চ রকমের কথা বলতে পারেন? একবার সিগারেট খান নি,আবার খেয়েছেন এখন আবার খাননি বলছেন।
কথা না বাড়িয়ে নিজের কাজ করুন।

ইভান ধুপধাপ দরজায় বাড়ি দিচ্ছে। দরজা খোলো তুহা! গেস্টরুমে গিয়ে নিজেকে হিরোইন আর আমাকে ভি’লেন প্রমান করতে যেওনা। এখন কিন্তু আমার প্রচন্ড রা’গ হচ্ছে।

ইভানের কথায় তুহা মুখ টিপে হেসে দিলো। কিন্তু দরজা খুললোনা। ইভানকে আরেকটু জ্বা’লানোর জন্য বলল,’ তো আপনি কি চান? আমি এখন আপনার সাথে ঘুমাবো?

ইভান দাঁত কিড়মিড় করে বলল,”আমার সাথে ঘুমাতে বলিনি। তবে আমাকে ভি’লেন বানানো বন্ধ করো।

তুহার সাড়া না পেয়ে ইভান চুপ করে রইলো। রান্নাঘরে গিয়ে একটা কাঁচের গ্লাস ভেঙে আড়ালে দাঁড়িয়ে রইলো।
তুহা দরজা হালকা খুলে ইভানকে না দেখে রান্নাঘরে গেলো কি ভেঙেছে দেখতে। এই ফাঁকে ইভান গেস্টরুমের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিলো।

তুহা গ্লাসের ভাঙা টুকরোগুলো পরিষ্কার করে ঘুমাতে এসে দেখলো দরজায় তালা। ইভান টিভি ছেড়ে নির্বিকার হয়ে বসে আছে। ভাবভঙ্গি বলছে তালা ঝুলানোর ব্যাপারে সে কিছুই জানেনা।

তুহা ইভানের সাথে কথা বাড়ালোনা। বেডরুমে গিয়ে ধড়াম করে দরজা লাগিয়ে বলল,’আজ সোফার রুমেই থাকুন আপনি। ইভান বোকা বনে গেলো। কি করতে চাইলো আর হলো কি? মেয়েটা বড্ড ত্যা’ড়া স্বভাবের। অবশ্য মেয়েটাকে আশকারাটাও সে দিয়েছে। তাই না পারছে নিজের উপর দোষ চাপাতে আর না পারছে তুহার উপর।

দরজায় অনবরত করাঘাত করেই চলেছে ইভান।
ভেতর থেকে তুহার বিরক্তিভরা কন্ঠ। এরকম উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণ না করে নিজেও ঘুমান আমাকেও ঘুমাতে দিন।

ইভান গলার স্বর চওড়া করে বলল,’ তুমি বের হও রুম থেকে। আমি ঘুমাবো দরজা খোলো।

তুহা চুপ করে রইলো একটা কথাও বলছেনা। এদিকে ইভানের দরজায় ধুপধাপ আওয়াজ ও থামছেনা। ইভান বলল,’ দরজা না খুললে সারারাত এভাবেই দরজায় করাঘাত চলবে।

তুহা কটমট করে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ইভান খাটে এসে ধপ করে শুয়ে পড়েছে। তুহা অপরপাশে। দুজনেই দুদিকে রা’গে ফেটে পড়ছে।
ভোরের দিকে ঘুম ভাঙতেই তুহা নিজেকে ইভানের চওড়া বুকে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে থাকতে দেখলো।
তড়িৎ সরে আসতে নিলেই ইভানের ঘুমঘুম ঘোরলাগা কন্ঠ ভেসে আসে কানে।

‘ঘুমাচ্ছি আমি। ঘুমোতে দাও। নড়াচড়া করোনা।’
” দূরত্ব ভালোবাসা বাড়ায়।
তবে দূরত্ব এতটাও বাড়তে দিওনা, যে দূরত্ব বিচ্ছেদ বয়ে আনে।”

তুহা আর কথা বাড়ালোনা। অনেক হয়েছে মান অভিমান। ইভানের বুকে মুখ গুঁজে দিতেই হাতের বাঁধন আরও দৃঢ় হলো।

————————————————————

চার দেয়ালের মাঝে বদ্ধ এসি যুক্ত কেবিনটিতে আজ নিজেকে বড্ড বন্দি মনে হচ্ছে ইভানের। রুদ্ধশ্বাস করা অবস্থায় হাসফাস করছে মন। চোয়ালে রা’গের ঝুলি। কন্ঠে নিজেকে নি/র্দোষ প্রমাণ করার আকুতি।
চারপাশে ঘিরে ধরা মানুষগুলোর চোখেমুখে,ঠোঁটে বিদ্রু’পের হাসি। ছিঃ! ছিঃ করছে সবাই।

একটি বিশ-একুশ বছর বয়সি যুবতী পাশেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে হাসফাস করে অস্বস্তির সাগরে ডুবতে দেখে আড়াল থেকেই তৃষা চোখ রাঙালো। মেয়েটা সটান হয়ে দাঁড়ালো তৃষার দৃষ্টিতে।

অফিসের বস ইভানের উপর থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে অন্যত্র তাকালেন। ঘৃণিত কন্ঠে বললেন,

‘ছিঃ! মিস্টার ইভান। আপনাকে একজন সৎ মানুষ ভেবে এসেছি। ঘরে স্ত্রী আছে আর আপনি বাইরে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ান? আপনার সাহসের তারিফ করতে হয়। আপনি সেই মেয়েকে অফিসে নিজের কেবিনে ডেকে অপ্রীতিকর অবস্থায় ছিঃ….
আমি এমনটা আশা করিনি। দুঃখিত আপনাকে আর আমাদের কোম্পানিতে রাখতে পারছিনা। কালকের মধ্যেই আপনি রিজাইন করবেন। আমাদের কোম্পানির একটা মান সম্মান আছে।’

কেউ ইভানের পক্ষে কথা বলছেনা। ইভানের উপর সবার ঘৃ’ণিত দৃষ্টি। একবার চারপাশে সবার দিকে র’ক্তিম চেহারা নিয়ে তাকালো ইভান। সবার এমন অবিশ্বাস দেখে ইভান আর নিজেকে প্রমাণ করতে চাইলোনা।
সবার পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যেতেই সবার কানা’ঘুষা বেড়ে গেলো। ছিঃ! ছিঃ! শুরু করলো।
বিশ বছরের যুবতী ইভানের পিছু ধরতেই তৃষা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। অত্যন্ত ক্ষীণ সেই হাসি।

সবার গসিপ করার মূল টপিক এখন ইভান।

মিস্টার ইভানকে কতইনা ভালো ভেবেছিলাম। আর উনি এমন একটা কাজ করলেন? উপরে নিজেকে যতটা পরিষ্কার বোঝাতে চেয়েছেন ভেতরটা দ্বিগুণ ময়লায় ভরা।
সাথে তৃষাও তাল মেলালো।

বসের ধমকে সবাই কাজে লেগে পড়লো।

তৃষা ব্যাগ থেকে ঘুমের ঔষধের পাতা বের করে আবারও হাসলো।

ইভানের কফি নিয়ে যখন পিয়ন ওর কেবিনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলো, তখনই তৃষা উনাকে ডেকে একটা ফাইল নিয়ে বসের কেবিনে পাঠিয়ে দেয়। ট্যাবলেটের গুড়ো অংশ কফিতে মিশিয়ে নিজের কাজে মন দেয়। পিয়ন এসে কফি নিয়ে ইভানকে দিয়ে আসে।
এই ঔষধে কাজ করতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগে।

অফিসে একটি বিশ বছর বয়সি তরুনীকে দেখে অনেকেই কৌতুহল বশত চাইলো।
মিস্টার ইভানের কেবিন কোনটা জিজ্ঞেস করতেই একজন দেখিয়ে দিলো।

কেউ আর মাথা ঘামালোনা।

তুহা চুলায় ভাত বসিয়ে তরকারির জন্য কা’টা’কা’টি করতে লাগলো। পাশেই ফোন ছিলো। টুংটাং করে ফোনে মেসেজ আসতেই স্নিগ্ধ হাসলো। ইভানের মেসেজ ভেবে ফোন আনলক করলো।

তৃষার আইডি থেকে একটা ভিডিও ক্লিপ পাঠানো দেখে ভ্রু কুঞ্চিত করলো। ওপেন করতেই থরথর করে পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো। তড়াক করে উঠলো হৃৎপিন্ড। তটিনীর বুকে যেমন পানি ছলাৎছলাৎ শব্দ তোলে তেমনি তুহার বুকে কম্পন হচ্ছে। চোখেমুখে বিমর্ষতার রেশ। গা গুলিয়ে উপছে আসছে কান্না।

ইভান আর একজন যুবতী অপ্রী’তিকর অবস্থায় আছে। ইভানের মুখ দেখা যাচ্ছেনা মেয়েটার পিঠের কারণে। ইভানের একহাত মেয়েটার পিঠে অন্যহাত ঘাড়ের পাশে।
নিচে আরও একটি মেসেজ,

‘তোর জন্য সত্যিই আজ আমার আফসোস হচ্ছে। এই ভেবে আনন্দ হচ্ছে যে ইভানের মতো ছেলে আমার বর হয়নি। তবে তোর জায়গায় আজ আমি নিজে ক’ষ্ট ভোগ করতাম।’

তুহার হাত থেকে ফোন সিটকে নিচে পড়লো। আগুনের দাবানলে ভাতের দানা গুলো উৎরে উঠছে।
তুহা চুলাটা নিভিয়ে রুমে গিয়ে বসলো। অনুভূতি শুন্য হয়ে দরজা বন্ধ করে আটকে রাখা কান্নাটাকে উগলে দিলো। অঝোর ধারার বাঁধ ভাঙা কান্না।
হুট করে তুহার মনে পড়লো,’ কি করছি আমি?’ কোনো একটা ভিডিও দেখে ইভানকে অবিশ্বাস করছি? তার কথাটাও তো আমাকে শুনতে হবে। হাতের উল্টো পিঠে চোখের পানি মুছে রান্নাঘরে গিয়ে ফোন হাতে নিলো। ইভানকে ট্রাই করছে কিন্তু সে ফোন তুলছেনা। তুহা থামলোনা,অনবরত ইভানের নাম্বারে ডায়াল করে গেলো।
ইভান কেনো ফোন তুলছেনা? তবে কি সত্যিই কিছু ঘটেছে?বলতে বলতে তুহা আবারও কেঁদে উঠলো।

ছোট চাচার নাম্বার থেকে কল পেয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে কল ধরলো। ওপাশ থেকে চাচার কথা শুনেই স্থির হয়ে গেলো তুহা।

ইভানের মন বারবার অশান্ত হয়ে উঠছে। ঢোক গিলে সিএনজি ড্রাইভারকে তাড়া দিলো যাতে দ্রুত গাড়ি চালায়। আজ রাস্তা যেনো শেষ হবার নয়। কে কি ভাবলো না ভাবলো তাতে ইভানের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তবে নিজের আপন মানুষ গুলোর ঘৃ’ণিত চাহনি সে সহ্য করতে পারবেনা। ঘটনাটা অফিসে সীমাবদ্ধ নেই। স্মার্টফোনের যুগে স্মার্ট মানুষগুলো যেকোনো ঘটনা ক্যামেরা বন্দি করতে শিখে গেছে। তুহা কি ভিডিও টা দেখেছে? সে বিশ্বাস করবে তো ইভানকে? আকাশ-পাতাল ভাবনার মাঝেই বাসার সামনে এসে থামলো ইভান। দরজা হাট করে খোলা দেখেই তড়াক করে উঠলো হৃদয়।

দেহ শীতল হয়ে মৃদু কম্পন শুরু হলো। হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক শব্দ সে স্পষ্ট শুনতে পারছে। ভেতরে পা রেখে অস্ফুট স্বরে ডাকলো ইভান,

তুহা!

সাড়াশব্দ না পেয়ে আরও বারকয়েক ডাকলো তুহার নাম ধরে।
এবারও কোনো সাড়া শব্দ নেই। ইভান একে একে সব জায়গায় দেখলো। রান্নাঘরে সব এলোমেলো,ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেখে মনের ভ’য় আরেকটু দৃঢ় হলো। তুহা কোথাও নেই। তুহার ফোনটা খাটের উপর পড়ে আছে। আনলক করতেই অফিসের সেই ভিডিও স্ক্রিনে ভেসে উঠলো।

ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো ইভান। শব্দ হলো বেশ। এতটা অসহায়ত্ব তাকে কখনো আষ্টেপৃষ্টে ধরেনি। অবিন্যস্ত,বিধ্বস্ত চোয়ালে র’ক্তিমা আভা। বিতৃষ্ণায় পিষ্ট হলে বক্ষঃস্থল। শুষ্ক চোখজোড়া পানি শূন্য। চোখের সাদা চামড়া, শিরাগুলো র’ক্ত জবার ন্যায় টুকটুকে লাল। এই বুঝি জলের বিনিময়ে এক ফোঁটা র’ক্ত ঝরে পড়বে কপল বেয়ে। গতর জুড়ে হাঁড় কাঁপানো জ্বরের আভাস।

ইভান কেঁপে ওঠা গলায় ব্যথাতুর কন্ঠে শুধালো,’আমার হৃদয়ে ভীষণ করে তুমি নামক জ্বর নামুক।’
#চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here