#সম্পর্কের_বন্ধন
#লেখিকাঃজিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা
#পর্ব_০২
তুহা রিনরিন কন্ঠে জবাব দিলো,’কিন্তু আপু উনিতো তোমাকে পছন্দই করেননা।’
তৃষা রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল,’তুই যদি ইভানকে বিয়ে করিস তবে আমি আ/ত্ম/হ/ত্যা করবো।’
তৃষার কথায় আৎকে উঠে তুহা।শরীরে মৃদু কম্পন শুরু হলো তার।হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে স্তব্ধ হয়ে রইলো।
তুহাকে নিরব থাকতে দেখে তৃষা মনে মনে হেসে ওঠে।যাক মেয়েটাকে জব্দ করা গেছে।কথা না শুনে যাবে কোথায়?একটু ধমকের সুরেই বলল,’চুপ করে আছিস কেনো?’তোর কাছে কি আমার জীবনের মূল্য নেই?
তুহা নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে জবাব দিলো,’তোমার নিজের কাছে নিজের জীবনের মূল্য আছে তো?’
তৃষা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’এত বুলি ফুটছে কেনো তোর মুখে?সামনে পেলে চ/ড়ি/য়ে দাঁত ফেলে দিতাম।
তুহা নিজের জায়গায় অটুট থেকে বলল,’যার কাছে নিজের জীবনের মূল্য নেই সে আবার অন্যকে কি ভালোবাসবে?
তৃষার চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।বলল,’তুই কি সত্যিই আমার কথা শুনবিনা?এই তোর লজ্জা বলতে কিছু নাই?বড় বোনের ভালোবাসাকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছিস?
তুহার স্বাভাবিক উত্তর,’লজ্জা তোমার হওয়া উচিত।যে তোমাকে পছন্দই করেনা তার পেছনে পড়ে আছো।
তাও আবার ছোট বোনের হবু বর।
তৃষা হুঙ্কার ছেড়ে বলল,’তুই কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছিস তুহা।এর ফল ভালো হবেনা।
তুহা নিরুত্তর রইলো।কোনো জবাব দিলোনা।
তৃষা আবার ও বলল,’আমি আজকের মধ্যেই কুমিল্লায় আসছি।রেডি থাকিস।
তুহা ঈষৎ হেসে বলল,’এখনো নিজের রাগ,জেদ,ইগোকে প্রাধান্য দিবে?তোমার যখন এতই পছন্দ ইভানকে তখন পরিবারকে জানাও।আমার সাথে কেনো এত বাড়াবাড়ি করছো।পরিবারের সবাই যদি তোমাদের সম্পর্ক মেনে নেয় তবে আমি সরে যাবো মাঝখান থেকে।
আরেকটা কথা মনে রেখো জেদ ভালো কিন্তু অতিরিক্ত জেদ ভালো নয়।
তৃষা ফোন কেটে খাটে ছুঁড়ে মা/র/লো।দুই আঙ্গুলের পুচকি মেয়ে ওকে কথা শোনায়।রাগে শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।
তুহা নিজ থকে আবার কল দিলো।তৃষা ধরলোনা।কিছুক্ষণ পর ফোনে টুংটাং আওয়াজ হতেই তৃষা মেসেজ অন করে দেখে তুহার নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে,’তুমি কি ম,/র/তে যাচ্ছো?’
তৃষা বাঁকা হেসে মেসেজ টাইপ করলো,’যাচ্ছি ম/র/তে।আর এটার দায়ভার তোর উপর বর্তাবে।’
তুহার নাম্বার থেকে ফিরতি মেসেজ আসলো,’আমি ভাবলাম এতক্ষণে তোমার প্রাণপাখি উড়ে গেছে।কিন্তু দেখছি এখনো মোবাইল হাতে আছে।’
মেসেজ সেন্ড করে তুহা মৃদু হাসলো।সে ভালো করেই বুঝতে পারছে তৃষা তাকে ভয় দেখাতে এসব বলেছে।সব সময় রাগ,জেদ খাটেনা।নিজের ইগো ধরে রাখতে অন্যের জীবন তছনছ করে দিতে পারে তৃষা।
এবারের মেসেজ দেখে তৃষার ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে দুহাতে গলা টিপে মা*র*তে।দুহাতে চুল খামছে ধরে বসে রইলো তৃষা।বসকে ফোন করে ছুটি নিতে হবে।বাবা মাকে ব্যাপারটা জানালে তারা সাপোর্ট করবেনা।যা করার তাকে কৌশলে করতে হবে।যার জন্য আগে কুমিল্লা যাওয়া দরকার।
ফোন রেখে আপন মনে হাসতে হাসতেই তুহা বসার ঘরে গেলো।মা আর বড় চাচিকে রান্নাঘরে দেখা যাচ্ছে।বাড়ির কর্তৃদেরকে বেশিরভাগ সময়টাতেই রান্নাঘরে দেখা যায়।দুই জা মিলে সবার জন্য দুপুরের রান্না বসিয়েছে।রান্না প্রায় হয়েই এসেছে।তুহা পা টিপে নিঃশব্দে হেটে প্রমির কাছে গেলো।বাড়ির ছেলেরা কেউ এখন বাড়িতে নেই।তৃণা প্রমির ঘরেই বসা ছিলো।তুহা সহ তিনজনে মিলে আড্ডায় মেতে উঠলো।
প্রমি প্রশ্ন করলো,’আচ্ছা তুহা তুমি বিয়েতে কি পড়বে?শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা?’
তুহা কিঞ্চিৎ ভাবনার ভঙ্গিতে বলল,কি পড়া যায় বলোতো?
প্রমি বললো,’তোমার কি পড়তে ইচ্ছে করছে?
াতুহা বলল,’বিয়ে মানেই লাল রঙের শাড়ি।লেহেঙ্গা পরেও পড়তে পারবো।আমার কাছে বিয়ের দিন নববধূ শাড়ি না পড়লে ভালো লাগেনা।’
প্রমি হেসে উঠে বলল,’তাহলেতো ইভানকে বলে রাখতে হয় বিয়েতে তার বউয়ের লাল শাড়ি চাই।
তুহার মেদ হীন গাল দুটো রক্তিম হয়ে উঠেছে।খানিকটা লজ্জা পেয়ে প্রমিকে বলল,’তুমিও না ভাবি!সব কিছুতেই মজা নিতে ছাড়ো না।
তৃণা গালে হাত দিয়ে বলল,’কত কত শপিং করা বাকি আমার।কবে শপিং এ যাবো?আর মাত্র ছয়দিন বাকি আছে।
আয়না রুমে ঢুকতে ঢুকতেই বললেন,’বরের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে।কালই সবাই মিলে শপিং করে আসবে তোমরা।আর তৃষাও নাকি আজই আসছে।
অথচ কাল বললাম তখন আসলোনা আমাদের সাথে।
তৃষার আসার কথা শুনে তুহা আড়ালে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।তৃষা যে কেনো আসছে সেটা তুহার চেয়ে ভালো আর কে বলতে পারবে?
এবার নাহয় বড় বোনের সাথে সে ও একটু খেলবে।
সব সময় তার কোনো কিছু পছন্দ হলেও সেই জিনিসটা ছোট হয়েও বড় বোনোর জন্য ছেড়ে দিয়েছে।কিন্তু এটা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।যা হেলা করা যায়না।তুহাও দেখতে চায় তৃষা কি কি করতে পারে।
তৃণা মুখটা পানশে করে বিড়বিড় করে বলল,’আসলেই শুরু হয়ে যায় হুকুম জারি করা যত্তসব।
আয়না পূনরায় চলে গেলেন রান্নাঘরে।ওরা তিনজন আবারও আড্ডায় মেতে উঠলো।
রাত দশটার আগেই তৃষা লাগেজ হাতে নিয়ে কুমিল্লায় ফিরলো।বসের কাছ থেকে জোর করে ছুটি নিয়েছে।বস ছুটি দেবেননা বলেছেন।কয়েকদিন পর ইভান বিয়ের জন্য ছুটি নিবে আগেই বলে রেখেছে।এখন আবার ছয় সাতদিনের জন্য আরেকজনকে ছুটি দিতে চাননা।
তবুও তৃষা গাঁট হয়ে বসে রইলো।এমনিতে সে কখনো কাজে ফাঁকি দেয়না,আর না অফিস থেকে অযথা ছুটি নেয়।এরকম নানা ধরনের কথা বলে বসকে কনভিন্স করে ছুটি নিয়েছে পাঁচদিনের জন্য।বাকি দুই তিনদিন প্রয়োজন হলে যাবেনা অফিসে।
খাবার টেবিলে সবাই নিজেদের পছন্দমতো তরকারি দিয়ে খাবার খাচ্ছে।
তৃষার ছোট চাচা বলল,’কাল ভাইয়া ভাবির সাথে আসলিনা কেনো তৃষা?
তৃষা খাবার চিবুতে চিবুতে তুহার দিকে একপলক তাকিয়ে বলল,’বস কিছুতেই ছুটি দিতে চাইছিলেননা।ভাবলাম বোনটাকে আর হয়তো দেখতেও পাবোনা।তাই এক প্রকার জোর করে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি।
তুহা চুপচাপ খাবার গিলছে।তৃষার কথায় পাত্তা দিলোনা।
তৃষা আবারও বলল,’ছোট বোনটা বিয়ে করে নিচ্ছে।এবার মনে হয় লোকলজ্জার ভয়ে আমাকেও বিয়ে করে নিতে হবে।’
সবার চোখমুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো।তৃষার বাবা আফসান বললেন,’সত্যিই তুই বিয়ে করবি?’পছন্দের ছেলে থাকলে বল।আমরা কথা বলে নিয়ে তোদের দুই বোনের বিয়েই একসাথে দেবো ধুমধাম করে।
তৃষা মাথা তুললোনা।স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো,’আমার কোনো পছন্দ নেই।তবে এখনই বিয়ে করতে চাইনা।আগে বোনের বিয়েতে চিল করি।পরে না হয় নিজে বিয়ে করবো।একসাথে দুইটা বিয়ে হলে মজা করতে পারবোনা।
তুহা অবাক হলো তৃষার কথায়।সে ভেবেছিলো তৃষা ইভানের কথা বলবে।কিন্তু তৃষা সেরকম কিছুই বললোনা।তৃষার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো তৃষা তার দিকেই তাকিয়ে আছে।ঠোঁটে ঈষৎ বক্র হাসি।
কিছু না বলেই খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ায় তুহা।তুহার মা বলল,’তৃষা তোমার জন্য উপরের কোনার ঘরটা পরিষ্কার করে দিয়েছি তুমি খেয়ে সেখানেই চলে যেও।
তৃষা বাঁধা দিয়ে বলল,’নাহ চাচিমনি আমি একা থাকবোনা।একয়টা দিন তুহার সাথেই কাটাতে চাই আমি।দুবোন মিলে রাত জেগে অনেক গল্প করবো।কিরে তুহা বল সবাইকে।শেষের কথাটা একটু ন্যাকামির স্বরেই বলল তৃষা।
তুহার পা দুটি থেমে গেলো।তৃষা যে ভয়ঙ্কর খেলায় মেতে উঠতে চাইছে সেটা বুঝতে তুহার বিন্দু মাত্র কষ্ট হচ্ছে না।তৃষার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে তুহা বলল,’হ্যাঁ!দুবোন মিলে খুব গল্প করবো।
তুহা ফ্রেশ হয়ে খাটের একপাশে ওড়না রেখে বসেছে।তৃষা খাবার শেষ করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে তুহার ঘরে আসলো।তৃণাকে দিয়ে তার লাগেজ এ ঘরে নিয়ে এসেছে।লাগেজ আনতে গিয়ে তৃণা মনে মনে একগাদা গালি ছুঁড়ে মে/রে/ছে তৃষার উপর।এই মেয়ে এ বাড়িতে আসলেই সারাদিন কাজের উপর রাখে।যেনো তার ফরমায়েশ খাটাই তৃণার একমাত্র কাজ।মায়ের কাছে নালিশ করলে মা উল্টো ধমকে উঠেন।বড়দের কথা শোনা ভালো।তোর উচিত নিজ থেকে বোনের সব কাজ করে দেওয়া।
তাই এখন আর তৃণা কিছুই বলেনা।সে সুযোগের অপেক্ষায় আছে কখন সময় আসবে আর কখন তৃষাকে আচ্ছামতো সাবান ছাড়া কাঁচতে পারবে।
তৃষা ধপ করে খাটে শুয়ে পড়েছে।তুহা চুল আঁচড়ে জট ছাড়াচ্ছে।চোখ বুজে রেখে তৃষা বলল,’এখন ও নিজের সিদ্ধান্ত পাল্টাবিনা?
তুহা নিজের কাজ না থামিয়েই বলল,’আমিতো কোনো সিদ্ধান্ত নেই নি?যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা বড়রাই নিয়েছে।আমিতো শুধু সম্মতি দিয়েছি।
তৃষা ধপ করে চোখ খুলে উঠে পড়লো।দুহাতে তুহার গলা চেপে ধরে বলল,’বেশি বাড় বাড়লে মে*রে ফেলতেও দ্বিধা করবোনা।তুহা কাশতো কাশতো গলা থেকে তৃষার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,’তুমি পাগল হয়ে গেছো।একটা বদ্ধ উন্মাদ তুমি।পরিবারের কাউকে কেনো বলছোনা তুমি?এবার কিন্তু আমি সবাইকে সবটা জানাতে বাধ্য হবো।
তৃষা তুহার গালে সজোরে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল,’কেউ কিচ্ছু জানবেনা।আমাকে খারাপ বানানোর চিন্তায় আছিস?আমি ইভানকে নিজের করবো আর সব দোষ এসে তোর ঘাড়ে পড়বে।
আচ্ছা!তুই ভয় পাচ্ছিস আমার সাথে একা লড়তে?তাইতো সবাইকে সবটা জানাতে চাইছিস তাইনা?
তুহা গালে হাত দিয়ে মাথানিচু করে রইলো।চোখদুটো টকটকে লাল বর্ণ ধারন করেছে।হাত থেকে চিরুনি পড়ে মাথার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।চোখ তুলে তৃষার দিকে রোষানল দৃষ্টি দিতেই তৃষা আরেকটা চড় দিতে গেলো।তুহা তৃষার হাতের কব্জি চেপে পেছন দিকে মুচড়ে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,তুমি যেই বংশের মেয়ে আমিও সেই বংশের মেয়ে।তোমার শরীরে যেই র/ক্ত টগবগ করে ফুটছে আমার শরীরেও সেই একই র/ক্ত আছে ভুলে যেওনা।তাই আমাকে নিজের থেকে কোনো অংশে কম মনে করোনা।
তুমি আমাকে কি বলেছো?আমি তোমার সাথে একা লড়তে ভয় পাচ্ছি?এবারতো দেখতে হচ্ছে কার দম কতটুকু?দেখি তুমি কত নিচে নামতে পারো।বড় হয়েছো বলে ছাড় পেয়েছো।নয়তো আমার হাত এতক্ষণ তোমার হাত ছাড়িয়ে গালে পড়তো।কিন্তু আমি এতটাও বেয়াদব না আবার ভালো ও না।কথা গুলো মাথায় রেখো।
তুহা হাত ছেড়ে দিতেই তৃষা ব্যথায় মৃদু আর্তনাদ করে ওঠে।ফোঁসফোঁস করে শ্বাস ফেলছে।যেনো র/ক্ত/চক্ষু দিয়ে এখনি তুহাকে ভষ্ম করে দেবে।
তুহা নিচ থেকে চিরুনি তুলে গুণগুণ করে গান গেয়ে চুলে চিরুনি চালাচ্ছে।যেনো এখানে কিছুই হয়নি।
#চলবে……..