সুখ পর্ব ১৮

0
346

#সুখ
#Part_18
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিব নীলিমার মুখ দেখে বুঝেছে যে কিছু একটা হয়েছে কিন্তু কি হয়েছে সেইটা অফিস থেকে এসেই জিজ্ঞেস করবে। নীলিমা ও ঘরে এসে বসে পরে। কি শুরু করেছে ওই ইশতিয়াক। কি চাইছে ও? এরপর নীলিমা ফ্রেশ হয়ে জামাকাপড় শুকাতে বারান্দায় যায়। নিচে চোখ পরতেই দেখে বিপরীত পাশে ইশতিয়াক স্যার দাঁড়ানো আর নীলিমাকে দেখে হাই দিচ্ছে। নীলিমা এইবার চুল থেকে টাওয়েলটা টান মেরে খুলে নিচে যায়। নিচে যেতেই দারোয়ান গেইট খুলে দেয়। রাস্তা পার হয়ে ওই পাশে যেতেই নীলিমা ঠাস করে থাপ্পর মেরে দেয় স্যারকে। স্যার তো অবাক।
-লজ্জা করেনা একটা বিবাহিত মেয়ের সংসারে এইভাবে ঢুকে পরতে? আপনি চান টা কি? আমার স্বামীর সাথে আমার ক্ল্যাশ হোক এইটা নিয়া? উনি আমায় ভুল বুঝুক। এইটাই চান আপনি? (চিৎকার করে নীলিমা)
-তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে আবার থাপ্পর মারার? (রাগী চোখে ইশতিয়াক স্যার)
-শুধু থাপ্পর ই মেরেছি। পুলিশ যে ডাকিনি সেইটাই অনেক। এই এলাকায় যেন আপনাকে আর না দেখি। আর আসবেন না আমার বাসার সামনে। গেট আউট ফ্রম হেয়ার।
-কাজটা কি ঠিক করলে?
-ভুল যে কিছু করিনি সেইটা আমি জানি।
নীলিমা পেছনে ঘুরতেই নীলিমার মুখ চেপে ধরে ইশতিয়াক নীলিমাকে ওর গাড়িতে বসায়। আর সাথে সাথে নীলিমার শরীর থেকে ওড়না নিয়ে ওকে বেঁধে দেয় আর রুমাল দিয়ে নীলিমার মুখ বেঁধে দেয়। দুপুর ছিল তখন তাই রাস্তায় কোনো মানুষ ছিল না। ইশতিয়াক নীলিমাকে নিয়ে সোজা ওর ভাড়া বাড়িতে চলে যায়। নীলিমা তো কেঁদে কেঁদে অস্থির। নীলিমাকে নিয়ে ওর ভাড়া বাড়িতে আটকে রাখে ইশতিয়াক। নীলিমাকে খাটের উপর ফেলে এক নজর দেখে ওকে। এমন কিছু একটা হয়ে যাবে এইটা নীলিমা ভাবতেও পারেনি। খাটে শুয়ে গড়াগড়ি করছে নীলিমা হাত ছাড়ানোর জন্য।
-তোমায় নিয়ে এমন জায়গায় যাব যেখানে কেউ খুঁজেই পাবেনা, তোমার বর মিস্টার আহম্মেদ ও না। অনেক অপমান করেছো আমায়। এতদিন ভাল ব্যবহার করেছি তো ভাল লাগেনি। আজ থেকে দেখবা কি অত্যাচার করি তোমার উপর।
ইশতিয়াক স্যার নিজের শার্ট খুলছিলো আর চোখ থেকে চশমা। নীলিমা এইটা দেখে মুখ বাঁধা অবস্থাতেই চিৎকার করছে। কিন্তু ইশতিয়াক এগিয়েই যাচ্ছে নীলিমার দিকে। নীলিমার পাশে বসে নীলিমাকে জড়িয়ে ধরে আর হাত, মুখ খুলে দেয়। নীলিমা ধাক্কা মেরে দূরে সরে যায়।
-আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না। আমি বিবাহিত। আর কতবার বলব? দয়া করে আপনি আমার এই ক্ষতিটা করবেন না প্লিজ। (কাঁদতে কাঁদতে নীলিমা)
-বলেছিলাম না তোমাকে আমার চাই মানে চাই।
-মাফ করেন না প্লিজ। কেন আমার জীবনটা এইভাবে নষ্ট করে দিচ্ছেন? (নীলিমা কেঁদেই যাচ্ছে) আমি যদি আপনাকে ভাল নাই বাসি তাহলে আমাকে পেয়ে আপনি কি করবেন?
-মনের জ্বালা তো মেটাতে পারব?
নীলিমা এইবার খুব জোরেই চিৎকার করে কেঁদে দিল। কি করবে ও এখন? ও কেন নামতে গেল বাসা থেকে? কেন সাকিবকে আগেই জানালো না? এসব ভেবে এখন অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর। ইশতিয়াক এসে নীলিমার পিঠে হাত দিতেই নীলিমা কান্না থামায়। এক ঝটকায় সরে যায় নীলিমা সেখান থেকে।
-কোথায় যাবে সুন্দরি? এই ঘরের মধ্যেই তোমাকে থাকতে হবে তাও আমার সাথে।
ইশতিয়াক জোর করেই নীলিমাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শোয়ায়। নীলিমা তো পেরে উঠছেনা ওই পশুটার সাথে। ইশতিয়াক টান দিয়ে নীলিমার জামা ছিঁড়েই ফেলল। নীলিমা তো চিৎকার ই করছে। ইশতিয়াক যখন নীলিমার শরীরে হাত দিতে যাবে তখন ইশতিয়াকের ফোন বাজে। ইশতিয়াক নীলিমাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে যায়। প্রিন্সিপাল ম্যাম ফোন করেছে কিন্তু কেন? ইশতিয়াক ফোন নিয়ে বারান্দায় যায়।
-হ্যালো ম্যাম বলুন।
-মিস্টার ইশতিয়াক আপনি স্কুল আওয়ারে কোথায়?
-ম্যাম আসলে জরুরি একটা কাজ ছিল তাই চলে এসেছি আপনাকে না বলেই।
-এই মুহুর্তে স্কুলে আসুন। জাস্ট নাও।
ম্যাম ওই কথাটা বলেই ফোন কেটে দেয়। নীলিমা তো এখন পারছেনা নিজেকে শেষ করে দিতে। ইশতিয়াকের ঘরে আর কোনো ফোন নেই। ইশতিয়াক নতুন আরেকটা শার্ট পরে ঘর ভাল করে বন্ধ করে চলে যায় স্কুলে। এইদিকে নীলিমা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেছে। বিকেল প্রায় শেষ তখনো নীলিমাকে বাসায় কেউ খুঁজে পাচ্ছেনা। দারোয়ান জানিয়েছে দুপুরে নীলিমা রেগে বের হয়েছিলো। এরপর আর বাসায় ঢুকেনি। সবাই অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নীলিমাকে পায়নি। শেষ মেশ আয়ান বাধ্য হয়েই সাকিবকে ফোন দিলো।
-ভাইয়া তুমি কি অফিসে?
-হ্যা কেন?
-ভাইয়া ভাবিকে তো খুঁজে পাচ্ছিনা সেই দুপুর থেকে।
-মানে কি? কোথায় ও?
-জানিনা। তুমি বাসায় এসো এরপর কথা বলছি।
-আসছি আমি।
সাকিব শত কাজ ফেলেও দ্রুত বেরিয়ে আসে বসকে বলে। কিসের উপর দিয়ে যে সাকিব ড্রাইভ করে এসেছে ও নিজেই জানেনা। বাসায় ঢুকেই দেখে তিশা কাঁদছে আর বাকি সবাই মুখ গোমড়া করে ড্রইংরুমে বসে আছে। দারোয়ানকে এনে জিজ্ঞেস করলো সাকিব আসলে কি হয়েছে? দারোয়ান সব বলার পর তুলি দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলো
-বাইরে কি আপনি কাউকে দেখেছিলেন?
-না মামনি।
-আচ্ছা যান আপনি।
তুলি স্কুল থেকে বেরিয়ে আসার সময় ইশতিয়াক স্যারকে দেখে এসেছে তাই তাকে সন্দেহ করছেনা। সন্ধ্যা পর্যন্ত সব জায়গায় খুঁজলো সাকিব আর আয়ান। কিন্তু কোথাও নেই নীলিমা। নীলিমার বাবা মা ও টেনশনে কাঁদছে। সাকিব এইবার পুলিশ স্টেশনে গেলো। পুলিশ ডিরেক্ট জানতে চাইলো বিয়ের আগে এফেয়ার ছিল নাকি? এইটা শুনে সাকিবের মেজাজ গরম হয়ে যায়।
-আপনারা আপনাদের কাজ করবেন নাকি অবান্তর প্রশ্ন করবেন? বিয়ের আগে এফেয়ার থাকলে বিয়ের এতগুলো মাস পর নিশ্চই পালিয়ে যেতো না। আর আমার ওয়াইফ তেমন না।
-ভাইয়া তুমি শান্ত হও। রাগারাগি করে এখন কিছুই হবেনা। ভাবিকে খুঁজতে হবে এইটাই কথা।
তুলি সুহানাকে ইশতিয়াক স্যারের ব্যাপারে বলল সব। সুহানা তুলির কথা শুনে আয়ানকে ফোন দেয় সাথে সাথে।
-হ্যা সুহা বল
-আয়ান তুই কোথায়?
-ভাইয়ার সাথে।
-এক্ষুণি বাসায় আয়। ভাবিকে মনে হয় পেয়ে গেছি।
-কোথায়?
-আয় এরপর বলছি। ফোনে এতকিছু বলা যাবেনা।
আয়ান ই ড্রাইভ করছে। সাকিব এই মুহুর্তে ড্রাইভ করার অবস্থায় নেই। রাত হয়ে গেলো এখনো কোনো খোঁজ ই পেল না নীলিমার। বাসায় আসার পর সুহানা সাকিবকে আর আয়ানকে সব বলল। সাকিব তুলির থেকে ইশতিয়াক স্যারের নাম্বারে কল করলো। চোখে মুখে আগুনের মতো শিখা জ্বলছে সাকিবের। তিনবার কল করলো সাকিব কিন্তু ফোন ধরলো না। চারবারের বেলায় ফোন রিসিভ করেছে ইশতিয়াক।
-হ্যালো কে বলছেন?
-আমার ওয়াইফ কোথায়? (চিৎকার করেই সাকিব)
-আপনি কে বলছেন ভাই?আর আপনার ওয়াইফ কোথায় সেইটা আমি কি করে বলব?
-আমি সাকিব আহমেদ বলছি। আর আমার ওয়াইফ নীলিমা কোথায় সে?
এতক্ষণে ইশতিয়াকের টনক নড়েছে। ও তো নীলিমার পাশেই বসা। এখনো জ্ঞান ফেরেনি নীলিমার।
-সেইটা আমি কি করে বলব মিস্টার আহমেদ যে আপনার ওয়াইফ কোথায়?
-কি করে বলব মানে? তুই কি চাস তোকে আমি মারধর করি? পুলিশে দেই? যদি নিজের ভাল চাস তো বল নীলিমা কোথায়? সত্যি বললে আমি তোকে ক্ষমা করে দিব।
-আমি জানিনা।
ইশতিয়াক ফোনটা কেটেই বন্ধ করে দিল। তুলি স্কুলের পিয়নকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছে ইশতিয়াক স্যারের বাসার ঠিকানা।
-বাবাই তুমি স্যারের বাসায় যাও। এই যে এড্রেস। আমি শিউর আম্মু ওইখানেই আছে।
সাকিব এক সেকেন্ড ও দাঁড়ায়নি সেখানে। আয়ান ও দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো সাকিবের পিছু পিছু।
-ভাইয়া আমি ড্রাইভ করছি। তুমি বস।
আয়ান ওই ঠিকানায় গেলো। চারতালায় উঠেই দেখে ইশতিয়াকের ফ্ল্যাট ভেতর থেকে লক করা। লক হওয়ার ই কথা ছিল। আয়ান অনর্গল বেল বাজাতে থাকে। রাত তখন দশটার কাছাকাছি। সাকিবের ও মাথা ঠিক নেই। বাধ্য হয়েই আয়ান দরজার লক ভেঙে ফেলে। রুমে ঢুকেই দেখে খুব বাজে অবস্থায় নীলিমা খাটের পাশে পরে আছে আর ইশতিয়াক নেই ঘরে। আয়ান তাঁকালো না নীলিমার দিকে। সাকিব দৌঁড়ে যায় নীলিমার কাছে। বিছানার চাদর টান দিয়ে নীলিমাকে ঢাকে। নীলিমার জামাটা সম্পুর্ণ ছেঁড়া। একটু পরেই ইশতিয়াক ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে সাকিবকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে যায়। ইশতিয়াককে দেখে আয়ান তখনি ওকে ধরে মারতে শুরু করে। ইচ্ছেমতো লাথি মারে আয়ান ইশতিয়াক কে। নীলিমার হাফ সেন্স ছিলই না। আয়ান ইশতিয়াককে মেরে গাড়িতে নিয়ে বসায়। সাকিব নীলিমাকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসে। নানা ধরনের স্ল্যাং ইউজ করছিলো আয়ান ইশতিয়াককে মারতে গিয়ে। সাকিবকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আয়ান বলে
-ভাইয়া তুমি ভাবিকে নিয়ে ঘরে যাও আর ভাবিকে দেখো। আমি এই কুত্তার** কে পুলিশের কাছে দিয়ে আসছি।
আয়ান ইশতিয়াককে নিয়ে পুলিশ স্টেশনে যায়। ইশতিয়াকের গাল ফেটে গিয়ে রক্ত পরছিলো। পুলিশ সব শোনার পর ইশতিয়াককে এরেস্ট করলো। কিডনাপিং কেইস আর রেইপ কেইস ফাইল করলো পুলিশ ইশতিয়াকের বিরুদ্ধে। চাদর মুরানো অবস্থাতেই সাকিব নীলিমাকে নিয়ে সবার সামনে দিয়ে ওর ঘরে যায়। সুহানা ও দৌঁড়ে যায়। নীলিমার বাবা মা ও যায়। কিন্তু সাকিব কাউকেই ওর ঘরে এলাও করেনি। সাকিব নীলিমাকে খাটে শুইয়ে দিয়েই দরজা লাগিয়ে দেয়। নীলিমার শরীর থেকে চাদর সরিয়ে দেখে পুরো গলা আর পিঠে কামড়ের দাগ। সাকিবের ভেতরে যে তখন কি হচ্ছিলো সেইটা বলে বোঝানো সম্ভব না। সাকিবের ইচ্ছে করছিলো ওই ইশতিয়াক জানোয়ারটাকে কুকুর দিয়ে খাওয়াতে। নীলিমার গালে পর্যন্ত কামড়ের দাগ। সাকিব নীলিমার ছেঁড়া জামা কাপড় খুলে মলম লাগিয়ে দিচ্ছিলো পিঠে। নীলিমা চুপচাপ শুয়ে আছে। ও ফিল করতে পারছে কিন্তু মুখেই কিছু বলতে পারছেনা।
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here