#সুখ
#Part_13
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিব নীলিমাকে নিয়ে কিচেনে গেলো। কিচেনে গিয়ে সাকিব কোনো জিনিস ই খুঁজে পাচ্ছেনা। নীলিমা তো শাড়ির আচল নাচাচ্ছে আর কোনায় দাঁড়িয়ে আছে। সাকিব ব্রেকফাস্ট বানানোর কোনো কিছুই খুঁজে পাচ্ছেনা। নীলিমা ইশারা দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কোথায় কি আছে। সাকিব জুস বানালো আর পাস্তা রান্না করলো। তিশার জন্য চাওমিন বানালো। মায়ের জন্য স্যুপ বানালো। নীলিমা শুধু কেটে দিয়েছে সব। সাকিব তো ঘেমে নেয়ে অস্থির। রান্না শেষ হওয়ার পর নীলিমা সাকিবকে বলল
-আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন। আমি বাকিটা দেখছি।
-হ্যা আমি আসছি। অবস্থা পুরো খারাপ।
সাকিব চলে যাওয়ার পর নীলিমা ভাবছে দেখতে তো চমৎকার হয়েছে খেতে না জানি কেমন হবে! নীলিমা খাবার মুখে দিয়ে পুরো থ! নীলিমাও পারেনা এত ভাল করে রান্না করতে। নীলিমা মনে মনে বলল
-অলরাউন্ডার!
সাকিব ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো নীলিমা খাবার সার্ভ করে দিয়েছে টেবিলে। সুহানা আর আয়ান টেবিলে বসে ঝগড়া করছে। তিশা আর তুলি চামচ হাতে নিচ্ছে। নীলিমা আম্মুকে গিয়ে খাইয়ে দিয়ে এলো। এরপর সবাই খেতে বসলো। খাবার মুখে দিয়ে সুহানা বলে
-ভাইয়া রান্না করেছে তাইনা?
-হ্যা কিভাবে বুঝলে? (নীলিমা)
-এই রান্না আরো দুইবার খেয়েছি। সুপার্ভ হয় ভাইয়ার রান্না করা খাবার। (আয়ান)
-বাবাই চাওমিন টা অনেক মজা হয়েছে৷ (তিশা)
-বাবাই পাস্তা টাও! (তুলি)
-নীলু তুমি বললে না কেমন হয়েছে? (সাকিব)
-এত বাজে খাবার কোনোদিন খাইনি। (মজা করে নীলিমা)
-কিহ? (রেগে গিয়ে সাকিব)
-এহ আম্মু খাবারটা মজা হয়েছে। (তুলি)
-শুধু মজা না অনেক বেশি মজা হইছে। (নীলিমা)
-থ্যাংক ইউ। (হাসিমুখে সাকিব)
খাবার খাওয়া শেষ করে নীলিমা নিজের ঘরে গেলো। ঘরে গিয়ে নীলিমা শোয়ার সাথে সাথেই ঘুমিয়ে গেলো। সাকিব ও আর জাগালো না। নীলিমা সারারাত ঘুমায়নি তাই। সাকিব পাশে বসে অফিসের কাজ করছে। সবাইকে দেখাচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর নীলিমা ঘুম থেকে উঠে। সাকিব তখন ও কাজ করছিলো। সাকিবের বড় বড় চুলগুলো কপাল পর্যন্ত চলে গেছে। নীলিমা সাকিবের চুলগুলো হাত দিয়ে ধরলো আর মজা করে বলল
-তুলি নিয়ে আসি? চুলগুলো বিনুনি করব।
-মজা নিচ্ছো না?
-মজা না, আসলেই করব দাঁড়ান।
নীলিমা নিচে নেমে ওর তুলি নেয় আর চিরুনি নেয়। সাকিবের চুলগুলো আঁচড়ে নীলিমা বিনুনি বানাচ্ছে। সাকিব তো রেগে শেষ। সাকিব সাপের মত নড়ছে আর নীলিমা ধমক দিচ্ছে। সাকিবের চুলে সামনে দুইটা বিনুনি বাঁধলো নীলিমা। এমন সময় সুহানা, আয়ান আর তুলি ঘরে আসলো নক করে। ঘরে ঢুকে সাকিবের এই অবস্থা দেখে ওরা সব হাসতে হাসতে শেষ। সাকিব তো লজ্জায় শেষ। আয়ান হাসতে হাসতে ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর তুলি সাকিবের বিনুনি ধরে বলছে
-আম্মু এইখানে একটা ক্লিপ দিলে ভাল লাগত। হাহাহাহা।
-দাঁড়াও ভাইয়া আগে একটা পিক তো তুলি। (সুহানা)
এরপর সুহানা সাকিবের ছবি তুলল। সাকিব টান মেরে চুলগুলো খুলে ফেলল। নীলিমাকে বলল
-তোমার খবর আছে এখন।
-ওই ভাইয়া ভাবির কি খবর করবা তুমি? (আয়ান)
-তোর ও খবর আছে ইডিয়েট। দাঁড়া তুই। (উঠে গিয়ে সাকিব)
আয়ান আর সুহানা দৌঁড়ে পালালো। তুলিও হাসতে হাসতে চলে গেল। সাকিব এইবার নীলিমার দিকে তাঁকালো। নীলিমা পেছাচ্ছে সাকিবের ভয়ে আর সাকিব দরজা টা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। নীলিমা পেছাতে পেছাতে খাটের উপর ধপাস করে পরে যায়। সাকিব চুল ঠিক করে নীলিমার সামনে যায়। নীলিমার মুখের সামনে মুখ নিয়ে বলে
-আমার চুলে বিনুনি করা?
-থাক মাফ করে দিন না! কি এমন করেছি! একটু মজা ই তো করেছি। (সাকিবকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নীলিমা)
-আসো মজা করাচ্ছি আরো।
সাকিব নীলিমাকে খাট থেকে তুলে নীলিমাকে নিয়ে নাচ করে। নীলিমাকে হাত দিয়ে ঘুরাচ্ছে আর নীলিমার চুল সব খুলে ফেলেছে।
-এই কি করছেন আপনি? (ঘুরতে ঘুরতে নীলিমা)
-আমি ছুটির দিনে তানহার সাথে এইভাবে নাচ করতাম তাই তোমার সাথেও করছি। (নীলিমার পেটে হাত দিয়ে)
-বয়স হয়েছে সেই খেয়াল আছে আপনার?
-আমি যথেষ্ট ইয়াং আছি বরং তুমিই কুড়িতে বুড়ি হয়ে গেছো। (হাসতে হাসতে সাকিব)
-আমি মোটেও বুড়ি নই। যথেষ্ট সুন্দরি। (মুখ ভেঙচিয়ে নীলিমা)
-আহারে! পেটে ভাঁজ, ম্যাচিউরিটি ভাব এসব তো বুড়ির লক্ষণ ই।
-এই বুইড়া ভাল হচ্ছেনা কিন্তু।
-এই বুড়ি রেগো না কিন্তু। (চোখ মেরে সাকিব)
– বুইড়া ?
-বুড়ি??
-হ আমি বুড়ি ঠিক আছে? ছাড়ুন এখন আমাকে। যত্তসব।
নীলিমা রাগ করে সুহানার ঘরে চলে গেল। সাকিব তো হাসতে হাসতে শেষ। সাকিব বাইরে ঘুরতে চলে যায়। ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিতে যায় সাকিব। আর নীলিমা সারাদিন সুহানা আর আয়ানের সাথে গল্প করে কাটায়। সাকিব দুইবার কল করেছে নীলিমাকে। সাকিব বলেছে আসতে লেইট হবে। নীলিমা সবাইকে ডিনার করিয়ে নিজের ঘরে আসে। সাকিব বলেছে রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে আসবে তাই নীলিমাও খেয়ে দেয়ে ঘরে চলে যায়। ঘরের দরজা বন্ধ করে নীলিমা নতুন একটা শাড়ি বের করে যেইটা সাকিব ওকে কিনে দিয়েছে। নীলিমা শাড়িটা পালটে সাজতে বসে। খোপায় একটা ফুল হলে ভাল হত। কিন্তু ফুল পাবে কোথায়? এরপর বুদ্ধি করে বারান্দার ফুলের গাছ থেকে একটা সাদা গোলাপ ছিঁড়ে খোপায় পরে নীলিমা। অনেক সুন্দর করে সাজে নীলিমা। হাতে চুড়ি আর কানের দুলে অনেক বেশি ভাল লাগছে নীলিমাকে। সাজা শেষ হলে নীলিমা বলে
-আমি নাকি বুড়ি! দেখব নে আজ কি বলে।
নীলিমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। রাত সাড়ে এগারো টায় সাকিব বাসায় ঢুকে বাইক নিয়ে। আয়ানের বাইক। নীলিমা বারান্দার পর্দা টেনে ঘরে চলে আসে। ঘরের লাইট অফ করে আবার বারান্দায় চলে যায়। বারান্দায় বেগুনী রঙের বাতি জ্বলছিলো। সাকিব ঘরে ঢুকে দেখে ঘর অন্ধকার। শার্টের বোতাম খুলে লাইট অন করলো কিন্তু নীলিমা নেই। সাকিব ভেবেছে নীলিমা ঘুমিয়ে গেছে। বারান্দার দিকে চোখ যেতেই সাকিব বারান্দায় গেলো।
-ওই এই জায়গায় কি কর এত রাতে? (সাকিব)
-তারা গুনি। (পেছনে ফিরে নীলিমা)
নীলিমাকে দেখে দুই মিনিট হা করে তাঁকিয়ে ছিল সাকিব। নীলিমার হাত ধরে ধুম করে ঘরে আনলো। নীলিমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে সাকিব সোফায় বসে পরে আর বলে
-কাকে আমি বুড়ি বলেছিলাম? আল্লাহ! (হা করে তাঁকিয়ে আছে সাকিব)
-কেন এখন বুড়ি লাগছে না? (মুখ বাঁকিয়ে নীলিমা)
সাকিব উঠে দাঁড়িয়ে নীলিমাকে পেছনে ঘুরালো আর পিঠে একবার হাত বুলালো।
-এইভাবে কি দেখছেন? (সাকিবের চোখের দিকে তাঁকিয়ে নীলিমা)
-জানিনা কি দেখছি কিন্তু যা দেখছি তা এর আগে কখনো দেখিনি। (নীলিমাকে ওর কাছে টেনে নিয়ে)
-কি দেখছেন বলবেন তো?
-আজকে যদি আমি কিছু ভুল করি তুমি মেনে নিবে? (নীলিমার হাত ধরে সাকিব)
-কি ভুল?
-জানিনা কিন্তু ভীষণ ইচ্ছে করছে কিছু ভুল করতে!
-কি ভুল বলেন?
-বললাম তো জানিনা।
সাকিব নীলিমাকে লিপ কিস করলো যা এর আগে কখনই করেনি। নীলিমাও আটকায় নি। সাকিব নীলিমাকে কোলে নিলো আর ও খাটে বসলো। নীলিমাকে ওর পায়ের উপর বসালো।
-তুমি কি আমায় পাগল বানিয়ে ফেলবা নীলু? (নীলিমার চোখের দিকে তাঁকিয়ে সাকিব)
-পাগল আমি বানিয়েছি? পাগল তো একজন অনেক আগেই বানিয়ে রেখেছে।
-হ্যা রেখেছে। কিন্তু এইভাবে কেন সেজেছো তুমি? (নীলিমার গলায় হাত দিয়ে সাকিব)
-জানিনা। ইচ্ছে করেছে তাই সেজেছি।
-আমার যে এখন অন্যকিছু ইচ্ছে করছে! (নীলিমাকে খাটে বসিয়ে সাকিব)
-কি?
আর বলতে পারব না আমি??
চলবে