সুখ পর্ব ৯

0
416

#সুখ
#Part_9
#Written_By_Nilima_Zabin_Tanmona
সাকিব আয়ান আর নীলিমাকে নিয়ে ভার্সিটি তে গেলো admission test এর জন্য। নীলিমা ফুরফুরে মেজাজে আছে। সাকিব ড্রাইভ করছিলো আর পাশে নীলিমা আর পেছনে আয়ান।
-ভাইয়া ভয় লাগছে। (আয়ান)
-জাস্ট চিল। টেনশন নিস না তাহলেই টেনশন হবেনা। ভালভাবে এক্সাম দিস। (সাকিব)
-ভাবি তোমার কি খবর? (আয়ান)
-পড়াশুনা করিনি তো তাই বলতে পারছিনা কি খবর। (নীলিমা)
আয়ান আর কিছু বলল না। সাকিব ওদের হলে প্রবেশ করিয়ে বাইরে ওয়েট করছিলো। আয়ানের চান্স পাওয়া নিয়ে সাকিবের টেনশন নেই বাট নীলিমার জন্যও যে ভাবছে তাও নয়। ওরা এক্সাম দিয়ে বেরিয়ে আসলো। নীলিমার মন ভীষণ খারাপ ছিল।
-এক্সাম কেমন দিলা? (সাকিব নীলিমাকে প্রশ্ন করলো)
-কেমন দিয়েছি জানিনা বাট আমি আর পড়াশুনা করবনা। চলুন বাসায় যাই।
-আরে ভাবী কি বলছো এসব? (আয়ান)
-ঠিক ই বলছি ভাই।
-আচ্ছা নেক্সট ভার্সিটি তে নিশ্চই হবে। চলো একটু মার্কেটে যাব৷ আয়ান তুই গাড়ি নিয়ে যা। আমরা আসছি। (সাকিব)
-না ভাইয়া তুমি গাড়ি নিয়ে যাও। আমি এমনিতেই চলে যেতে পারবো। (আয়ান)
-আচ্ছা তাহলে যা আর সাবধানে যাবি। (পকেট থেকে আয়ানকে টাকা বের করে দিয়ে)
-আচ্ছা ভাইয়া৷
আয়ান একা একা চলে যায় আর সাকিব নীলিমাকে নিয়ে শপিং মলে যায়।
-আজকে থেকে ভাল করে পড়াশুনা করবা আর নেক্সট এডমিশন টেস্ট টা ভাল হওয়া চাই। (সাকিব)
-আর পড়াশুনা ই করব না। বিরক্ত হয়ে গেছি একদম।
-আজকে থেকে আর বিরক্ত হতে হবেনা। (এক হাত নীলিমার হাতের উপর রেখে সাকিব)
সাকিব নীলিমার হাতের উপর হাত রাখার পর নীলিমা অবাকই হলো তবে কিছু বলল না।
-শপিং এ কেন যাচ্ছেন? (নীলিমা)
-দেখি!
-তিশা আর তুলি বাসায় এসেছে?
-হুম।
সাকিব নীলিমাকে নিয়ে শপিং এ ঢুকলো। নীলিমার শাড়ি পরে ঘুমাতে কষ্ট হয় সেইটা সাকিব দেখেছে। তাই সাকিব নীলিমাকে শাড়ি কিনে দিল আর সাথে কয়েকটা শর্টস ড্রেস কিনে দিলো। নীলিমা জিজ্ঞেস করলো
-তুলির জন্য? এই রঙে তুলিকে মানাবেনা।
-জানি। যাকে মানাবে তাকেই কিনে দিচ্ছি।
-কাকে?
-তোমার জন্য।
-আমি এই ধরণের ড্রেস পরিনা। এইসব খুবই বাজে লাগে। (নীলিমা)
-ঘুমানোর সময় পরবা। তখন তো আর আমি ছাড়া কেউ পাশে থাকবেনা তাই সমস্যা ও হবেনা।
সাকিবের এই কথা শুনে নীলিমা লজ্জা পেয়ে গেলো। নীলিমা মনে মনে বলল
-শ্যুগারের ওষুধ মনে হয় ওভার ডোজ হয়ে গেছে তাই দুইদিন ধরে উলটা পালটা কথা বলছে। ??
নীলিমাকে কিছু কসমেটিকস ও সাকিব কিনে দিল।
-নীলু তোমার কি আর কিছু লাগবে? (সাকিব) আসলে আমি তো জানিনা মেয়েদের আর কি কি লাগে! তানহা নিজেই কিনতো আমি দিতাম না কিনে তাই জানিনা আর কি। (সাকিব)
-না আর কিছু লাগবেনা। (একটা হাসি দিয়ে নীলিমা)
সাকিব শপিং মল থেকে বেরিয়ে গেল। সাকিব যখন ড্রাইভ করছিলো তখন নীলিমা সাকিবকে বলল
-আপনি তখন আমাকে কি নামে ডাকলেন?
-কি?
-নীলু বললেন যে!
-কারো নাম ছোট করা আমার স্বভাব?
-তানহা কে তানহু, সুহানা কে সুহা, আবার আমাকে নীলু। আমি যদি আপনাকে সাকু ডাকি তাতে কি সমস্যা আছে? (হেসে দিয়ে নীলিমা)
-হাহাহাহা না নেই।
সাকিব নীলিমাকে নিয়ে সন্ধ্যাবেলা বাসায় আসলো। সাকিবের আম্মু নীলিমাকে বলল
-বউমা আসছো?
-হ্যা মা। আপনি দুপুরে ওষুধ খেয়েছিলেন?
-হ্যা৷ তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। সাকিব তুমিও যাও।
-আচ্ছা আম্মু।
নীলিমা শপিং ব্যাগগুলো ড্রইংরুমে রেখে উপরে যায়। ফ্রেশ হয়ে শাড়িই পরে নীলিমা। সাকিব ড্রেস চেঞ্জ করে নীলিমাকে বলে
-কফি দিয়ে যেয়ো তো আমাকে।
-আচ্ছা দিচ্ছি। (নীলিমা চুল বেধে নিচে চলে গেলো)
আয়ান আর সুহানা ঝগড়া করতে করতে নিচে নামে।
-আয়ান আমার ফোন দে! আয়ানের বাচ্চা আমার ফোন দিয়ে যা হারামি! (সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সুহানা)
-তুই আজ থেকে ফোন পাবিনা। চ্যাটিং ছুটাবো তোকে দাঁড়া তুই!
-ভাবি? ওকে বলো আমার ফোন দিয়ে দিতে নয়ত কিন্তু খারাপ হবে এখন।
-কি তোমাদের সমস্যা কি? কি নিয়ে লাগছো আবার? (মাঝখানে দাঁড়িয়ে নীলিমা)
-আমি ফেইসবুকিং করছিলাম আর ও আমার ফোন নিয়ে আসে। ভাবি প্লিজ ওকে বলো আমার ফোন দিতে। (কান্নার এক্টিং করে সুহানা)
-আয়ান ওর ফোন দাও ওকে। (নীলিমা)
-ইম্পসিবল ভাবি। ও একটা সস্তা ছেলের সাথে প্রেম করে। ভাইয়া শুনলে ওর পা ঝুলিয়ে রাখব কেটে। সাবধান করছি ওকে। (আয়ান)
-খাটাস আমার ফোন দে তুই। আমি কারো সাথেই প্রেম করিনা। মিথ্যে কেন বলছিস? তুই যে তূর্নাকে ভালবাসিস সেইটা কি আমি কাউকে বলেছি? (রেগে গিয়ে সুহানা)
-নাউজুবিল্লাহ! এইটা ও কি বলল! (মাথা নিচু করে আয়ান)
-আয়ান? (ভ্রু উঁচু করে নীলিমা)
-বিশ্বাস কর ভাবি ও মিথ্যে বলছে নিজে বাঁচার জন্য। আমি তো এই নামে কোনো মেয়েকেই চিনি না। (কেঁদে দেওয়ার মত অবস্থা আয়ানের)
-কি হয়েছে? এইভাবে চেঁচাচ্ছিস কেন তোরা? (নিচে এসে সাকিব)
-যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়। (সাকিবকে দেখে মনে মনে আয়ান)
-ভাইয়া তুমি তূর্নাকে চিনো না? আমাদের পাশের বাড়ির মেয়ে? (সুহানা সাকিবকে জিজ্ঞেস করলো)
-হ্যা চিনি কেন? (সাকিব)
-বাদ দিন ওদের কথা! সেই কখন থেকে ঝগড়া করছে। আয়ান তুমি সুহার ফোন দিয়ে দাও। আর যে যার ঘরে যাও। স্ন্যাকস এ কি খাবা তোমরা?
-লাভ ইউ ভাবি। তুমি যা বানাবা তাই খাবো। (আয়ান)
-লাভ ইউ টু (হাসতে হাসতে নীলিমা)
-ফকিন্নি কোথাকারের! (সুহানাকে থাপ্পর মেরে আয়ান চলে যায়)
-ভাইয়া তুমি কি আয়ানকে কিছু বলবা? সারাক্ষণ আমার সাথে লেগে থাকে! (সুহানা)
-আচ্ছা থাক! (সুহানাকে জড়িয়ে ধরে সাকিব)
-২০ মিনিট পর সবাই নিচে নামবা। (নীলিমা)
-কেন ভাবি? (সুহানা)
-স্ন্যাকস বানাচ্ছি। তিশা আর তুলি কে বল এসে এখানে বসতে।
-আচ্ছা ভাবি আসছি। এসে তোমাকে আমি হেল্প করছি। (সুহানা চলে গেল তিশা আর তুলিকে ডাকতে)
তিশা আর তুলি নীলিমাকে আন্টি বলে ডাকে। এইটা সাকিব শুনে ওদের বলে
-আম্মুকে কেউ আন্টি ডাকে? আম্মু ডাকবা ঠিক আছে?
-আমাদের আম্মু তানহা আহম্মেদ। উনি আমাদের আন্টি ই হন। (তুলি)
-না মা ওইসব বলবানা। তানহা ও তোমাদের আম্মু আর এইটা ও তোমাদের আম্মু। Call her mother.
-sorry baba i Can’t. (তুলি)
-প্লিজ আম্মু। (সাকিব)
-ওকে just for you বাবা ওনাকে আম্মু বলেই ডাকবো।
-গুড গার্ল। (তুলিকে চুমু দিয়ে সাকিব)
নীলিমা,,সুহানা মিলে মজা করছে আর রান্না করছে। সাকিব, আয়ান, তিশা, তুলি আর সাকিবের মা ড্রইংরুমে বসে ফাইজলামি করছে আর টিভি দেখছে। অনেকদিন পর সবাই এত মজা করছে। সবাইকে স্ন্যাকস সার্ভ করে দিয়ে নীলিমা তুলির পাশে বসলো। তুলি নীলিমাকে বলল
-আম্মু তোমার গালের তিলটা অনেক সুন্দর।
-তাই? থ্যাংক ইউ। (নীলিমা)
-তুমি তো আপডেট মা। মেয়েকে থ্যাংক ইউ বলছো??। (সাকিব মজা করে)
-ভাইয়া আমিও বিয়ে করব???(আয়ান)
-ঘর থেকে বেরিয়ে যা এরপর কর। (সাকিব)
-একদম ঠিক বলেছো ভাইয়া। ও বেশি বেড়ে গেছে। (রেগে গিয়ে সুহানা)
-না ভাইয়া আমি তো মজা করছিলাম। একা আছি ভালো আছি। (আয়ান)
-ফাজিল কোথাকারের! (সুহানা)
-চুন্নি তুই থাম। (আয়ান)
-থামবি তোরা? (ধমক দিয়ে সাকিব)
-চাচ্চু? ফুপ্পি? তোমরা না আমাদের বড়? আমাদের চেয়েও বেশি ঝগড়া কেন কর তোমরা? (তিশা)
-ওরে আমার পাকা বুড়িটা! (তিশাকে আয়ান কোলে নিলো)
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here