#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_চব্বিশ
#তারা_ইসলাম
পিনপতন নিরবতা চলছে চারি’পাশে।আম্মুর বাসার ডাইনিং রুমে বসে আছি আমি,রুদ্র,আর আম্মু।আর রুদ্রর সাথে আসা সবাই বাসার বাহিরে।রুদ্রই তাদের সেখানে অপেক্ষা করতে বলেছেন।আর নিজে একায় ভেতরে ডুকে এসেছেন।
“উনাকে দেখে যখন আমি কাঁপছিলাম।তখন উনি আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন।
“আম্মু উনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলেছিলেন- কে তুমি?
“আম্মুর কথায় রুদ্র মুচকি হেসে বলেছিলেন- আপনার মেয়ের জামাই।
“রুদ্রর কথা শুনে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো।
“রুদ্রর কথা শুনে আম্মু আমার দিকে তাকালেন।আর আমি চোখের ইশারায় বুঝালাম উনি যা বলছেন তা সত্য।
তাই আম্মু হাসি-মুখে উনাকে বসতে বললেন।
“তখন থেকেই তিনজনই বসে আছি সোফায়।
~ রুদ্র নিরবতা ভেঙ্গে বললেন- নূর এখানে এসে যে তোমাকে পেয়ে যাবো তা’ভাবি’নি।যায় হোক তোমার অতীতের ব্যাপারে সব আমি অনেক থেকেই জানতাম।কিভাবে জেনেছি সেটা না জানলেও চলবে তোমার।তারপর আম্মুর দিকে তাকিয়ে কাট-কাট গলায় বললেন- মিসেস শায়লা খাতুন আমি আপনাকে এ’রে’স্ট ক’রার জন্য এখানে এসেছি।জামাই আদর খাওয়ার জন্য নয়।আমি এ’সি’পি রুদ্র মির্জা।
“রুদ্রর কথা শুনে আমি বসা থেকে ভয়ে উঠে পরলাম।যা ভেবেছিলাম একদম তাই।রুদ্র কখনো আম্মুকে ছাড়বেন না এই জন্যই আম্মুকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে চেয়েছিলাম।
“তবে রুদ্রর কথায় আম্মু খিলখিল করে হেসে উঠে বললেন- শাশুড়ির বাসায় যখন প্রথম এসেছো তখন নিশ্চয় জামাই আদর পাবে।আগে তোমার সেবা করে’নি তারপর না-হয় এ*রে*স্ট করবে।বলেই রান্না ঘরের দিকে চলে গেলেন আম্মু।
“সোফায় বসা রুদ্র এবার আমার দিকে রাগি চোখে তাকালেন।আমি উনার রাগকে পাত্তা না দিয়ে বললাম- আপনি আম্মুকে কোথাও নিয়ে যেতে পারবেন না।দরকার হলে আম্মুকে নিয়ে আমি অনেক দূরে চলে যাবো।প্লিজ তবুও আপনি আম্মুকে এ*রে’স্ট করবেন না প্লিজ।
“উনি আমার কথা শুনে আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন আর বললেন- তোমাকে তো আমি পরে দেখে নিবো।তুমি জানো তোমার মায়ের জন্য কত মেয়ের জীবন ন*ষ্ট হয়েছে?এমন মহিলার জন্য তুমি দরদ দেখাচ্ছো?
“আমি কিছু না বলে কাঁদতে লাগলাম।আর উনি নিচের দিকে তাকিয়ে আছেন।
“আম্মু উনার জন্য চা আর অল্প নাস্তা এনে উনার সামনে রেখে বললেন- বাবা এইগুলা তোমার জন্য এই প্রথম মেয়ের জামাই বাসায় এসেছে খালি মুখে কিভাবে যেতে দি বলেই মুচকি হাসলেন।
“উনি কিছু না বলে এক নজর আম্মুর দিকে তাকালেন।
“আমি উনাদের কথার মাঝে শ*ক্ত করে আম্মুর হাত ধরে বললাম- আম্মু তুমি কোথাও যাবে না।এত গুলা বছর পর আমি তোমাকে খুঁজে পেয়েছি।তোমাকে এবার কোথাও যেতে দিবো না।
“আমার কথা শুনে রুদ্র কিছু না খেয়ে উঠে দাঁড়ালেন তারপর রাগ দিয়ে বললেন- আমার এত সময় নেই মিসেস শায়লা খাতুন।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- নূর বাহিরে গিয়ে আমার গাড়িতে উঠে বস।আমরা আজকেই বাসায় ফিরছি।তারপর উনি বাহিরে গিয়ে একটা লেডি কন*স্টে*বল ডেকে এনে আমার আম্মুকে নিয়ে যেতে বললেন।
“আম্মু হাসি মুখে যেতে রাজি হলেও আমি একপ্রকার কান্না করতে লাগলাম।রুদ্রর পায়েও পরে বললাম যাতে আম্মুকে ছেড়ে দেন।কিন্তু উনার পাষাণ মন নরম হলো না।
“আম্মু আমাকে শ*ক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন- আমি ভীষণ খুশি এমন সৎ ছেলে তোর স্বামী।তারপর আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন- আমার জন্য চিন্তা করিস না আমি যা করেছি তার শাস্তিই পাচ্ছি।আর শুন অনেক অনেক ভালো থাকবি নিজের খেয়াল রাখবি।মন দিয়ে সংসার করবি।আর যখন বেশি আমাকে মনে পরবে তখন না-হয় আমার সাথে দেখা করতে যাবি।কথা শেষ হতেই সে লেডি কন*স্টে*বল উনাকে নিয়ে চলে গেলেন।
“আর এইদিকে আমি কাঁদতে কাঁদতে নিচে বসে পরলাম।আমার ভাগ্য কেন এমন তা জানা নেই আমার।আজকেই আম্মুর সাথে দেখা হলো আর আজকেই সব শেষ।
—————————
আমি মন-মরা হয়ে বসে আছি রুদ্রর রুমের জানালার পাশে।আজ দুইদিন ধরে এই রুমে বন্দি করে রেখেছি নিজেকে।বাহিরে বের হওয়ার আগ্রহ আমার বিন্দুমাত্র নেই। আমি এমন বিহেভ কেন করছি?তা বাড়ির সবাই একে একে জিজ্ঞাস করলেও আমি জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করি’নি।মারিয়া এখন সব জানে তাই অভিমানকে দূর করে আমাকে শান্তনা দিতে ব্যস্ত সে।
“রুদ্র আমার সাথে এখনো একটা কথাও বলেন’নি।উনি এমন বিহেভ করছেন যেন এই রুমে আমার অস্তিত্ব নেই।আমিও সেদিকে বিশেষ পাত্তা দিতাম না।কিন্তু সকাল থেকেই আমার শরীরটা একটু অসুস্থ অনুভব হচ্ছিলো।বার বার গা ঘুলিয়ে আসছিলো।তাই না চাইতেই রুম থেকে বের হতে হলো।
“রুম থেকে বের হতেই শাশুড়ি মার মুখোমুখি হয়ে গেলাম।উনি আমাকে দেখে বললেন- নূর মা কি হয়েছে?অসুস্থ নাকি তুমি?চোখ মুখ কেমন জানি শুকিয়ে গেছে।
“আমি উনার দিকে তাকিয়ে জোর-পূর্বক হেসে বললাম- না আমি ভালোই আছি শুধু একটু মাথা ঘুরছিলো আর গা ঘুলিয়ে উঠছিলো।
“উনি হেসে বললেন- এতদিন ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া কর’নি তাই হয়তো এমন লাগছে।আসো খেয়ে নিবে।
“আমার খিদা লাগছিলো তাই আর না করি’নি।
“খাওয়ার এক পর্যায় আমার গা ঘুলিয়ে উঠলে আমি তাড়াতাড়ি বেসিনে চলে গেলাম।আর গড়-গড় করে বমি করতে লাগলাম।আমার অবস্থা খারাপ দেখে শাশুড়ি মা আমার কাছে এসে পিঠে আর মাথায় হাত বুলাতে লাগলেন।
“আমার বমি বন্ধ হলে আমি স্বাভাবিক হয়ে চোখে মুখে পানির ছিটা দিলাম।উনি আমাকে সামধানে ধরে সোফায় বসালেন।
“আমি চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলাম।
“শাশুড়ি মা বললেন- এই জন্যই বলি ঠিক মতো খাওয়া-দাওয়া কর।আমার কথা তো তোমরা শুনো না।তারপর উনি আমার জন্য এক গ্লাস লেবুর শরবত করে আনলেন।সেগুলা খেয়েই আমার একটু ভালো লেগেছিলো।
————————
রাত ১২ টার দিকে রুদ্র বাসায় ফিরেছেন।তখন আমি শুয়েছিলাম অবশ্য কিন্তু ঘুমাই’নি!অসুস্থ থাকায় ঘুমও আসছিলো না।উনি রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন।
“ফ্রেশ হয়ে যখন আমার পাশে উল্ট দিকে শুয়ে পরলেন।তখন আমি উনার দিকে ফিরে শান্ত গলায় বললাম- আমি আম্মুর সাথে দেখা করতে চাই।
“উনি আমার দিকে না ফিরে সে অবস্থায় রাগি গলায় বললেন- মাঝ-রাতে মাথা খেতে আসিও না নূর।
“এবার আমি তেজী গলায় বললাম- আমি কালকেই আম্মুর সাথে দেখা করতে চাই মানে চাই।আপনি কোথায় রেখেছেন আম্মুকে?
“উনি এবার আমার দিকে দ্রুত ফিরে তাকালেন তারপর হালকা চিল্লিয়ে বললেন- ওমন কু*ৎসি*ত মহিলার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক থাকুক সেটা আমি চাই’না।
“উনার কথায় রেগে উনার গলার ধরে বললাম- উনি যেমনই হোক উনি আমার মা।
“রুদ্র রেগে আমার হাত ঝাড়া দিয়ে বললেন- উনার সাথে তোমার দেখার করার কোনো দরকার নেই।যেভাবে আছো সেভাবে থাকো।নাহলে আমার জীবনেও জায়গায় হবে না তোমার বলে রাখলাম।
“উনার কথায় রাগে আমার সারা-শরীর কাঁপতে লাগলো তাই চিল্লিয়ে বলে উঠলাম- চাই’না থাকতে আপনার জীবনে।সব সময় আপনার অপমান,রাগ ছাড়া তো আর কিছু পাই’নি।কেন থাকবো?আমার কথার কোনোদিন কি মূল্য দিয়েছেন আপনি বলতে বলতে কেঁদে উঠলাম।আমার কান্নার মাঝে হটাৎ গা ঘুলিয়ে উঠলো তাই দ্রুত ওয়াশ-রুমে চলে গেলাম।বমি করতে করতে যখন আমি অ’তিষ্ট তখন রুদ্র এসে আমাকে সামনালোর চেষ্টা করলেন।
“আমি ক্লান্ত হয়ে উনার বুকে মাথা এলিয়ে দিলাম।উনি আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলেন।
“উনি আমাকে রাগি গলায় বললেন- নূর তুমি খাওয়া-দাওয়ায় বড্ড অনিয়ম করতেছ।আর বেশি টেনশনও নিচ্ছো।যদি বেশি অসুস্থ হয়ে যাও তখন কিন্তু আমার রুমেও তোমার জায়গা হবেনা।বলেই আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
“আমি উনার দিকে দূর্বল গলায় বললাম- আমি একবার আম্মুকে দেখতে চাই মির্জা সাহেব।কথা দিচ্ছি আবার আপনার সাথে চলে আসবো।
“উনি আমার কপালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললেন- ঠিক আছে কাল নিয়ে যাবো।তবে বেশিক্ষণ কিন্তু কথা বলতে পারবে না।
“আমি আর কিছু না বলে উনাকে জড়িয়ে ধরে রইলাম।
“উনি হটাৎ বলে উঠলেন- নূর ভালোবাসি………
————–
(চলবে)