#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_বাইশ
#তারা ইসলাম
আহান চৌধুরি আজ ফিরে যাচ্ছেন লন্ডনে।উনি বাংলাদেশে এসেছিলেন উনার ওয়াইফ আর একমাত্র মেয়ে ফায়জা উফরে নূরকে খুঁজতে।কিন্তু উনি ব্যর্থ খুঁজে পান’নি তাদের।তাই তো মুখে হাজারো কষ্ট অনু’তপ্ত নিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছেন উনার সে একাকি জীবনে।যেখানে উনার বড় বিজনেস,অটেল টাকা আছে কিন্তু নেই শুধু আপন বলতে কেউ।উনি যেমনই ছিলেন মন থেকে শায়লা খাতুনকেই ভালোবাসতেন তাই কখনো আর কাউকে বিয়ে করেন’নি।
“ফারিয়ার বিয়ে হয়েছে রোহান আহমেদের সাথে যে একজন পেশায় ডাক্তার।রোহানের বাবা রেয়ানের বিজনেস পার্টানার ছিলেন সেখান থেকেই তাদের আলাপ।ফারিয়া আর রোহান একে-অপরকে পছন্দ করেই বিয়েটা করেছে।আর ফারিয়া ও তার অতীতের ব্যাপারে সব বলেছিলো রোহান কে তবে রোহান হাসি মুখে সব মেনে নিয়েছিলো।
“আর রেয়ান ও ভীষণ খুশি তার বোন ভালো আছে।আহান চৌধুরিকে এয়ারপোর্টে ছেড়ে এসে সে নিজের বাড়িতে ফিরলো।তার একদম একা একা লাগছে!এবার তার ও বিয়ে করে পেলা উচিত ভেবেই মুচকি হাসলো।
———————————-
আসলে কি ভাবে কথাটা বলবো বুঝতে পারছি না তবে এতটুক বলবো তোমার জন্য আমি কিছু ফিল করি আর সেটা হলো ভালোবাসা।
“আমি তোমাকে ভালোবাসি এলিজা।
“আমি আম্মুর ঠিকানায় যাওয়ার জন্য সওদাগর বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলাম ঠিক তখনই আহনাফ হাতে ফুল নিয়ে আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে প্রপোজ করলেন।উনার কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।এখন উনাকে কি বলা উচিত ঠিক বুঝতে উঠতে পারলাম না।
“তবুও আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললাম- আহনাফ ভাইয়া আমি বিবাহিত।আপনি বিশ্বাস করুন কিংবা না করুন আমি বিবাহিত।
“আমার কথা শুনে উনি যেন চমকে উঠলেন।তবুও নিজেকে সামলিয়ে বললেন- দেখো এলিজা একদম আমার সাথে মজা করবে না।আমি তোমাকে ভালোবাসি আর বিয়েও করতে চাই।
“উনার এমন বাড়াবাড়ি কথায় আমি রেগে চিল্লিয়ে বললাম- আপনি আমাকে বিরক্ত করছেন।আমি আগে ও বলেছি এখনও বলছি আমি বিবাহিত আর আমি আমার হাসবেন্ডকেই ভালোবাসি।ব্যস এতটুক বলেই আমি হনহন করে গেইট দিয়ে সে বাসা ত্যাগ করলাম।উনার রিয়েকশন দেখার মতো টাইম আমার ছিলো না।
————–
আমি জেসমিনের দেওয়া আম্মুর সে ঠিকানার কাছে কিছুদূর আসতেই পিছন থেকে কেউ বলে উঠলেন- কোথায় যাচ্ছো..?
“আমি হাটা থামিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম আমার ঠিক পিছনে রুদ্র দাঁড়িয়ে আছেন পকেটে হাত ডুকিয়ে।আর আমার দিকে তাকিয়ে আছেন তাও আবার ভ্রু কুঁচকে।
“উনাকে দেখে গত-কালকের সব কথা মনে পরতেই মেজাজ আমার খারাপ হয়ে গেলো তাই রাগ নিয়ে বললাম- যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাবো তোকে বলতে যাবো কেন?
“আমার কথায় উনার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তারপর খানিক’টা রাগ নিয়েই বললেন- ভদ্র ভাবে কথা বলো নাহলে দাঁত একটা থাকবে না।
“উনার কথায় এবার রাগ করার বদলে ভয় পেয়ে গেলাম।বুঝতে পারলাম বেশি বাড়াবাড়ি করে ফে’লছি তাই একটু স্বাভাবিক গলায় বললাম- আমার যেখানে ইচ্ছা যাবো তাতে আপনার কি?বলেই হাটতে শুরু করে দিলাম।
“আমার কথায় হয়তো উনি অপমানবোধ করলেন তাই এক-প্রকার রেগে জোরে জোরে হেটে আমার সামনে এসে আমার এক হাত শক্ত করে ধরে বললেন- একদম ঠু*কে দিবো নূর।আমার সাথে ত্যা*ড়ামি করতে আসবে না।
“উনার কথায় হালকা ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও দমে না গিয়ে অভিমানি গলায় বললাম- খুব তো সেদিন একা ফেলে গিয়েছিলেন।এখন কেন এত দরদ দেখাচ্ছেন?
“আমার কথায় উনি আশে-পাশে তাকালেন তারপর হুট করে আমার গালে নিজের ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললেন- আমার সাথে ত্যা*ড়ামি করেছিলে না?তার জন্যই সেদিন শিক্ষা’টা দিয়েছিলাম!বলেই মুচকি হাসলেন।
“উনার এমন কাজে আমি চমকে উঠলাম তবে উনায় কথা শুনে বিরক্তি গলায় বললাম- হয়েছে আপনার শিক্ষা দেওয়া?এবার নিজের রাস্তা মাপেন।
“আমার কথা শুনে উনি স্বাভাবিক গলায় বললেন- কোথায় যাচ্ছিলে একা একা?
“উনার এমন বার বার প্রশ্ন করায় আমার রাগ হলো তাই রাগি গলায় বললাম- সেটা আপনাকে বলতে বাধ্য নয় আমি বলেই মুখ কালো করে ফে’ললাম।
“আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন তারপর স্বাভাবিক গলায় বললেন- আমার সাথে চলো।
“উনার কথা শুনে হা হয়ে গেলাম কালকে না একা ফেলে চলে গেলো?আর আজকে আবার ন্যাকামো করছেন সেটা ভেবেই মাথা গরম হয়ে গেলো।তাই নাক-মুখ ফুলিয়ে বললাম- আপনার সাথে যাবো মানে?আমি জীবনে আর আপনার সাথে যাচ্ছি না।আমাকে যে অপমান করেছেন সেটা আমি ভুলি’নি বলেই ভেংচি কা’টলাম।
“আমার কথা শুনে উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন- নূর আর ঢং না করে চলো আমার সাথে।তোমার আর কোনো বিপদ হোক তা আমি চাই’না।তাড়াতাড়ি আসো তারপর আরও কিছু বলতে যাবেন তার আগেই আমি চালাকি করে জোরে দৌড় লাগালাম।এবার আর বোকামি করি’নি দৌড়ে গিয়ে একটা জায়গায় লুকিয়ে পরলাম যাতে উনার চোখে না পরি।অনেক দেরি এমনেও করে ফেলেছি আর উনার সামনে থাকলে অবশ্যই আমাকে উনার সাথে ফিরে যেতে হবে তাই পালিয়েছিলাম।
“নূরের কাজে রুদ্র বোকা বনে গেলো।যখন বুঝতে পারলো কি হলো তখন অনেক দেরি হয়ে গেলো নূরকে আর দেখা যাচ্ছে না।সে এদিক ওদিক খুঁজলো কিন্তু না নূর নেই।রুদ্র মনে মনে এক বস্তা রাগ নিয়ে যে জায়গা ত্যাগ করলো।
——————————-
আমি ফাইনালি সে জায়গায় পোঁছে গেছি।আশে-পাশে অনেক গুলা ঘর+বিল্ডিং।কিন্তু আম্মুর যে বাসাটা বলেছিলো জেসমিন সেটা সম্পূর্ণ বাউন্ডারি করা।এই জায়গায়টা অবশ্য আমি চিনি’না।কিন্তু কিছু লোক থেকে জিজ্ঞাস করেই এখানে আসা।
“ছোটখাটো বাউন্ডারি করা ঘর হয়তো ঠিক ভাবে বুঝা যাচ্ছে না বাসায়া।গেইটের কাছে দারোয়ান বসা অনেকটা ইয়াং টাইপের দারোয়ান।এমন দারোয়ান আগে দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না।আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে সে দারোয়ানের কাছে গিয়ে বললাম- ভাইয়া মিসেস শায়লা খাতুন কি বাসায় আছেন?
“আমার কথায় সে ছেলে”টি দ্রুত বসা থেকে উঠে পরলো।তারপর আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো- আপনি কে?আপনাকে ও আগে দেখি’নি?আর শায়লা খাতুন কে?
“ছেলেটার কথায় মনে পরলো আম্মু শিলা নামেই এখানে পরিচিত তাই আমি নিজের চেহেরা স্বাভাবিক রেখে বললাম- আমি এলিজা।আসলে আমাকে শিলা ম্যাডাম এখানে আসতে বলেছেন।
“আমার কথায় ছেলেটার ভ্রু কুঁচকে এলো।তারপর সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো- আপনি এখানে দাঁড়ান আমি ম্যাডামের সাথে কথা বলে আসি।
“আমি জিব্বা দিয়ে শুকনো ঠোঁট ভিজিয়ে বললাম- ঠিক আছে।
“আমার কথা শুনে কোনো জবাব না দিয়ে ছেলেটা গেইটের ভিতরে চলে গেলো।
“আর এইদিকে আমি মনে মনে ভাবছি কি করবো তাই হুট করে গেইটের ভিতর ডুকে পরলাম কেউ না দেখে মতো।বাড়িটা একতলা বিশিষ্ট ছোট-খাটো একটা ঘর চার-পাঁচ রুমের বেশি হবে না হয়তো।আশে পাশে বড় বড় গাছ তবে কোনো ফুল গাছ নেই।এমন বাড়ি গুলাতে প্রায় ফুল গাছ থাকলেও এখানে ব্যাপারটা ভিন্ন।আমি বড় একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পরলাম।কিছুক্ষণ পর দেখলাম ছেলে’টা ওই বাসা থেকে বের হয়ে গেইটের দিকে হেটে যাচ্ছে।আমি এটা দেখতেই সে বাসার ভিতরে ডুকার জন্য দৌড় লাগালাম।আর দরজার কাছে এসে দেখলাম দরজা লাগানো তবে লক করা নয় তাই আমি দরজা হাত দিয়ে ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতেই”দেখলাম কোন এক মহিলা ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন হাতে চায়ের কাপ তবে চেহেরা ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না।
“আমি নিজেকে শান্ত রেখে সামনে এগিয়ে যেতেই ওই মহিলাটি হটাৎ আমার দিকে তাকালেন।উনার এমন হুট করে তাকানো দেখে আমি চমকে উঠলাম।কারণ মহিলাটার চেহেরা দেখতে একদম আমার মতো আমি মনে মনে ভাবলাম উনিই কি তাহলে আমার মা?
“উনি এখন আমার দিকে অবাক+ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন।এই চোখ দ্বারা যেন আমাকে অনেক কিছু বলতে চাচ্ছেন।উনাকে দেখে আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে কেঁদে উঠে নিচে বসে পরলাম।আর উনার দিকে তাকিয়ে কাদঁতে কাঁদতে বলে উঠলাম- আম্মু……
————————
(চলব)
(