অবশেষে তোমাকে পাওয়া ১০+১১

0
519

#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া
#পর্ব_দশ
#তারা ইসলাম
——————————————————————-
“সকাল নয়’টা আমি গোসল করে ভালো একটা লাল বেনারসি শাড়ি পরলাম।কারণ আজ তানিয়া ভাবির আম্মু আর বোন আর খালামনি আসবেন।তাই এত সকাল সকাল রেডি হওয়া।মির্জা সাহেব অনেক আগেই নিজের কাজের জন্য বের হয়ে গেছেন।উনার সাথে আমার মান-অভিমানটা কমে’নি বরং আরও বেড়েগেছে।আজব ব্যাপার হলো আমাদের প্রতিদিন কোনো না কোনো ভাবে ঝগড়া হয়।এর কারণ এখনো আমি খুঁজে বের করতে পারি’নি।উনিও আগের থেকে কেমন জানি রসিক হয়ে গেছেন।পায়ের ওপর পা দিয়ে আমার সাথে ঝগড়া করেন।যখন-তখন আমাকে ডিস্টার্ব করেন।উনার চরিএ থেকে আলাদা বিহেভ করেন আমার সাথে।সেসব কথা আমি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে রান্না ঘরের দিকে চলে আসলাম।

“রান্না ঘরে শাশুড়ি মা আমাকে দেখে বললেন- প্রতিদিন শাড়ি পর তবে আজকে একদম বউ বউ লাগছে।এই জন্যই বলি সব সময় একটু সেজে-গুজে থাকবা পুতুল পুতুল লাগে বলে ললাটে হাসলেন।

“উনার কথা শুনে আমি খিলখিল করে হেসে উঠে বললাম- এখন থেকে না-হয় সেজে-গুজে থাকবো প্রতিদিন।আমার কথা শুনে শাশুড়ি মা হাসলেন।তবে কিছু বললেন না।

“এরই মধ্যে দাদি এসে বললেন- মেজো নাতবউ?(এখন উনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন।উনার সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।তাই উনি আমাকে মেজো নাতবউ বলেই সম্মোধন করেন)

“আমি দাদির দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম- বলুন দাদি?

“দাদি আশে-পাশে তাকিয়ে আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন- তোমারে অনেক মোটা লাগিতেছে আগের থেইক্কা।পে’টে বা’চ্চা আইছে’নি?

“দাদি কথায় আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো সাথে সাথে সেখানে তাকা একটা আয়নায় নিজেকে দেখে নিলাম হ্যা আগের থেকে একটু স্বাস্থ্যবান হয়েছি।তাই বলে দাদি এভাবে বলবেন।

“আমি কোমড়ে হাত দিয়ে দাদির দিকে মুখ কালো করে তাকিয়ে বললাম- এত শখ নাতীন ঘরের পু’তিন পা’লার?

“দাদি দাঁত বের করে হেসে বললেন- ওই আরকি তোমাগো পোলা-মাইয়া তো আমরাই পালমু।তাই কইতাছি কি বেশি দেরি কইরো না বা*চ্চা একটা লইয়া নাও!

“আমি উনার কথা শুনে এবার খিলখিল করে হেসে উঠে উনার গাল টেনে বললাম- আপাতত মোটা হয়েছি দাদি।বা*চ্চা টা’চ্চা কিছু হয়’নি।আর যদিও হয় আগে তোমারে কমু বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলাম।

“আমার কথা শুনে দাদিও হাসলেন।তারপর কাজ করার পাশা-পাশি আমরা অনেক গল্প করলাম।
————————
“সন্ধ্যার দিকে তানিয়া ভাবির আম্মুরা চলে গেলেন।তানিয়া ভাবি যেমন ভালো উনার পরিবার ও ঠিক ততটা ভালো।উনার আম্মুকে দেখে আমার নিজের আম্মুর কথাও বেশ মনে পরে গেলে।

“আমি অনেক কান্না করলাম।আম্মু আব্বু ছোট ভাইকে খুব মনে পরছে।তাদের দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু তার সাধ্য আমার নেই।আমি ফোন ও করেছিলাম কিন্তু আমার নাম্বার ব্লক করা।ভাবতেই আবার কেঁদে উঠলাম।

“আমি গহনা গাঁটি খুলে ভালোভাবে ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম।আজকে মারিয়া এখানে নেই তার চাচা মানে শশুড় বাড়িতেই আছে।

“আমি সন্ধ্যায় পড়তে বসলেও রাত নয়’টার দিকে উঠে গেছি।আর উঠে সারা-ঘর টো টো করে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

“কিন্তু কলিংবেলের শব্দ পেয়ে আমি রিনি ভাবির আগেই দরজা খুলে দিলাম!আর দরজা খুলতেই দেখলাম শশুড় বাবা,রুদ্র,আর বড় ভাইয়া আমি হেসে উনাদের ঠুকতে দিলাম।সবাই ভালোভাবে ভেতরে আসলেও রুদ্র আমার মাথায় হালকা ঠোকা দিলো যাতে আমি প্রচুর বিরক্ত অনুভব করলাম।উনার এখন এমন হুট-হাট করা কাজে আমি তাজ্জব বনে যায়।তাই রেগে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে ঠোঁট দিয়ে চুমু দেখালেন।যাতে করে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো।উনি দিন দিন চরম-অ’সভ্য হয়ে যাচ্ছেন।

“রাতের খাওয়া দাওয়া করে রুমে ডুকতেই দেখলাম উনি ফাইল নিয়ে বসে আছেন।আমি ফ্রেশ হওয়ার জন্য আলমারি থেকে কাপড় নিতে গেলে হটাৎ মাথায় দুষ্টুমি খেলো গেলো।আর মনে পরে গেলো দাদির সে কথাগুলা।উনি এখন আমাকে প্রচুর জ্বা’লান!তাই আমিও ভাবলাম একটু জ্বা’লাবো।আর জ্বা’লালেও বা কি?মে’রে’তো আর ফে’লবেন না?

“তাই মনে মনে অনেক সাহস করে উনার পাশে বিছানায় ঘুমানোর জন্য রাখা কাপড় গুলা রাখলাম।আর শাড়ি পালটাতে শুরু করলাম।উনি আমাকে প্রথমে খেয়াল করেন’নি!কিন্তু পরে খেয়াল করতেই বিছানা থেকে উঠে পরলেন!আর চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রেগে চিল্লিয়ে বললেন- এখানে কাপড় চেঞ্জ করার মানে কি?

“আমি উনার কথার উত্তর না নিয়ে পুরোপুরি ভাবে শাড়িটা খুলতেই উনি পিছনে ফিরে গেলেন।উনার এমন কাজে মনে মনে বললাম- ঢং দেখে আর বাঁচি না।আসছে সাধু মিয়া!বলেই ভেংচি কেটে মুখে বললাম- আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে চেঞ্জ করবো আপনার অসুবিধা হলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন।বলেই আমি কাপড় বদলানোতে মন দিলাম।কিন্তু আচমকা উনার আক্রমণে আমি থমথম খেয়ে গেলাম।
~~~~~~~~~
“অগ্নি চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি।আর উনি আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছেন।আমি রেগে বললাম- বলেছিলাম না আমার কাছে না আসার জন্য?

“আমার কথা শেষ হতেই উনি দ্রুত আমার কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বললেন- হ*রি*ণ যদি নিজেই হেটে বা*ঘে’র কাছে আসে বা*ঘ তো কা’মড় দিবেই।

“উনার এমন অশ্লীলতাপূর্ন কথা শুনে আমার চোখ ছলছল করে উঠলো।আর আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম- আপনার মতো অ’সভ্য আর নেই।

“উনি আমার চেহেরা গভীর ভাবে দেখে নিয়ে হাহাহা করে হেসে উঠলেন।তারপর আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে মুখোমুখি হয়ে বললেন- অ’সভ্য কেন হতে যাবো।যা করেছি জামালেময় বিয়ে করা নিজের বউের সাথে করেছি।

“আমি রেগে উনার থেকে ছাড়া পেতে চাইলে উনি আরও শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন- ঘুমন্ত বা*ঘ*কে যখন জাগিয়ে দিয়েছো তখন তার সেবাও তুমি করবে।বলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন।

“আমি রেগে উনার বুকে ঘু’ষি মে’রে বললাম- কখনো না আজ আমি আর ধরা দিচ্ছি না!বলেই উনার থেকে ছুটার চেষ্টা করলাম।তবে ব্যর্থ হয়ে উনার বুকের সাথে মিশে রইলাম।

“উনি হটাৎ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- যাও আজকে ছাড় দিলাম তোমায়।তবে চলো আজকে আকাশ-বিলাস করি?

“আমি উনার বুক থেকে মাথা তুলে বললাম- আকাশ-বিলাস মানে?

“উনি মেয়েদের মতো করে খিলখিল করে হেসে উঠে বললেন- সবাই তো জোৎস্না-বিলাস বলে তাই আমি ভিন্ন ভাবে আকাশ-বিলাস বলছি।

“উনার কথায় আমি হাসলাম তারপর আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।ফ্রেশ হয়ে আসতেই দুইজন মিলেই বারান্দাতে আসলাম।আমরা অনেকক্ষণ নানান ধরনের গল্প করতে লাগলাম।কিন্তু আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে না পারায় নিচে বসে পরলাম।আমার দেখা-দেখি উনিও বসে পরলেন।তবে উনি বসতেই উনাকে অবাক করে দিয়ে উনার কোলে মাথা রাখলাম।উনি প্রথমে চমকে গেলেন তবে পরে নিজেকে সামলে আমাকে আগলে নিলেন।

“উনি বললেন- কালকে তো ছুটির দিন ঘুরতে যাবা কোথাও?

“উনার কথা শুনে আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম- যাবো!কোথায় নিয়ে যাবেন?

“উনি বললেন- চলো কালকে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।

“আমি হেসে বললাম- ঠিক আছে।

“উনি আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন- কালকে দিনটা শুধু তোমার-আমার।

“উনার কথা শুনে লাজুক হাসলাম।

“উনি হটাৎ বললেন- তোমার জীবনে কি আগে কোনো পুরুষ ছিলো?

“আমি হেসে বললান- না!

“উনি বললেন- কেন?

“কারণ আমি এসব একদম পছন্দ করতাম না।তারপর হেসে মজা করে বললাম- ক্লাস সেভেন থেকে তো আপনিই আমার ছোট-খাটো ক্রাশ ছিলেন।আমার কথা শুনে উনি শব্দ করে হেসে উঠলেন।

“তারপর আবার আমি উনাকে জিজ্ঞাস করলাম-আপনার জীবনে কি আগে কোনো মেয়ে ছিলো?

“উনি আলতো হেসে বললেন- হুম ছিলো একটা-দুটোর উপরে!লাস্ট রিলেশন ছিলো তিন-বছর আগে।এরপর আমি আর রিলেশনে যাওয়ার আগ্রহ পাই’নি।

“উনার কথা শুনে চোখ আমার ছলছল করে উঠলো।ভাবতেই কষ্ট হলো উনার জীবনে আগেও কেউ ছিলো।আমি অভিমান করে উনার কোল থেকে মাথা তুলে চলে আসতে নিলে উনি আমাকে পিছন থেকে ঝাপটে ধরলেন আর বললেন- তখন তো বউ ছিলো না!তাই ওরা আমার জীবনে আসতে পেরেছিলো।কিন্তু এখন তো বউ আছে!তাই দুনিয়া এদিক-ওদিক হলেও তারা আমার জীবনে আর জায়গা পাবে না।

“উনার কথায় শব্দ করে কেঁদে উঠলাম।উনি আমাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে কপালে ঠোঁট ছুয়ে দিয়ে বললেন- কিছু বলতে নেই তোমরা মেয়ে জাতিকে।কিছু বলতেই প্যাচ-প্যাচ করে কান্না শুরু করে দাও।

“উনার কথায় পাত্তা না দিয়ে হুট করে আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম- আমি সব সহ্য করতে পারবো।কিন্তু অন্য-মেয়ের সঙ্গে আপনাকে কখনো সহ্য করতে পারবো না।আপনি আমার হাসবেন্ড আপনার ভাগ আমি কাউকে দিতে পারবো না।জানেন কেন আপনি আমার কাছে সুপুরুষ কারণ আপনি এখনো আমার সাথে ছলনা করেন’নি।আমাদের মাঝে হাসবেন্ড ওয়াইফের মতো সম্পর্ক চলতেও’কখনো ভালোবাসি বলে মিথ্যা নাটক করেন’নি।এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।

“উনি আমার কাজে প্রথমে থমকে গেলেন।কিন্তু মুচকি হেসে আমাকে জরিয়ে ধরে বললেন- আমি শুধুমাত্র তোমার।

“আর আমাকে হালকা টিজ করে বললেন- এই না হলো বাঙালী নারী।

“কিন্তু তারপর আবারও সিরিয়াস হয়ে বললেন- হয়তো এখনো তোমাকে ভালোবাসতে পারি’নি।কিন্তু একদিন না একদিন ভালোতোবাসতেই হবে।

~ সে রাতটা আমরা আকাশ-বিলাস করেই পার করলাম।
””'”””””””””””””””””””””
সকাল বেলা রুদ্রর ঘুম ভাঙ্গতেই পাশে নূরকে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফে’ললো।কারণ আজকে ছুটির দিন সব বন্ধ না হলে নূরকে কখনোই ঘুম থেকে উঠে তার পাশে পাইনা।যাতে করে সে প্রচুর রেগে যায়!রুদ্র নূরকে স্কেন করতে লাগলো~তার হাতের কাছে নূরের মাথা আর পা দুটো বিছানার বাহিরে।কাপড়ের যাতা-অবস্থা!রুদ্র মনে মনে হাসলো এমন এলোমেলো বউ তার কপালেই ছিলো।কিন্তু আগে সেটা নিয়ে আফসোস করলেও এখন তার অভ্যাস হয়েগেছে।তার বউের জায়গায় একমাত্র সে নূরকেই ভাবতে পারে।বাকি কাউকে এক্কিবারের জন্যই ভাবতে পারে না।

“রুদ্র নূরকে ঠিক ভাবে শুয়ে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমাতে চেষ্টা করলো…….
—————————
(চলবে)

#অবশেষে_তোমাকে_পাওয়া(স্পেশাল পর্ব-তিন)
#পর্ব_এগারো
#তারা ইসলাম
————————————————————————
আশে-পাশে প্রচুর গাড়ি চলাচল করছে পে-পু পে-পু শব্দ করে।সব-জায়গায় যেনো মানুষের গিজগিজ।কেউ কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে খাবার খাচ্ছে।আবার কেউ কেউ ব্যস্ততা নিয়ে হেটে চলছে।আবার কেউ কেউ ফোনে কথা বলছে।কিন্তু আমি আর রুদ্র রিকশায় বসে আছি।আমার ভালো লাগলেও রুদ্র চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছেন।আমি অবশ্য সেদিকে বিশেষ পাত্তা দিলাম না।সকালেই উনি বললেন- রেডি হয়ে নাও একটু বের হবো!তবে বোরকা পরবা।

“আমিও খুশি মনে উনার কথা মতো রেডি হয়ে গেলাম
বিয়ের এতদিন পর উনার সাথে একটু আলাদা সময় কাটাবো ভাবতেই মন একদম ফুরফুরে হয়ে গেলো।খুশির কারণে জিজ্ঞাসও করা’নি কোথায় নিয়ে যাবেন।

“কিন্তু যাওয়ার সময় আমি উনাকে বলে দিয়েছিলাম আমি গাড়ি-টাড়ি করে ঘুরবো না।রিকশা করেই ঘুরবো আমার কতদিনের স্বপ্ন জামাই নিয়ে রিকশা করে ঘুরে-বেড়াবো।উনি প্রথমে রাজি হন’নি তবে আমার এক-প্রকার জোরাজুরিতেই উনি বাধ্য হয়ে রিকশায় উঠে বসলেন।

“উনার কথা মতো রিকশা-মামা একটা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা আমি জানি না।

“রিকশা চলা শুরু করে দিয়েছে।আর আমি আশ-পাশ দেখছি।

“কিছুক্ষণ নিরবতার পর আমি উনাকে জিজ্ঞাস করলাম- আজকে না কি একটা সারপ্রাইজ দিবেন বলেছেন?

“উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকানো দৃষ্টিতে তাকালেন তারপর বললেন- সেটা সন্ধ্যায় পেয়ে যাবে।আর আজ তোমার শশুড় বাসায় ফিরছি না।

“আমি অবাক হলাম উনার কথায় তাই বললাম- বাসায় ফিরবেন না মানে?

“উনি এবার আরও বিরক্তি নিয়ে বললেন- সেটাও সারপ্রাইজ।

“আমি উনার কথা শুনে আর কিছু বললাম না।কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার বললাম- আপনি কি আমার ওপর রেগে আছেন?না মানে রিকশা করে যাচ্ছি যে তাই?

“উনি এবার আমার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালেন তারপর বললেন- না।ব্যস আর কিছু বললেন না।

“কেন জানি আমার খারাপ লাগলো।সব সময় আমি কেন কথা বলবো?উনিও তো বলতে পারেন।তাই আমিও অভিমান করে উনার দিকে আর খেয়াল না দিয়ে আবারও আশ-পাশ দেখায় মন দিলাম।

~ কিছুক্ষণ পর একটা বড় পার্কের মতো জায়গায় আসতেই রিকশা-মামা রিকশা দাঁড় করালেন।রিকশা থামতেই রুদ্র নেমে পরলেন।সাথে আমাকেও নামতে বললেন।উনার কথা মতো আমি নেমে পরলাম।ভাড়া মিঠিয়ে আমার হাত ধরে সামনে এগিয়ে চললেন।জায়গাটা ভীষণ সুন্দর!আশে-পাশে নাম না জানা ফুল দ্বারা ভরপুর।মাঝখানের রাস্তাটা ভীষণ সুন্দর!চারপাশে চড়ুইপাখির মতো ভালোবাসার যুগল।আমি সেদিকে তাকিয়ে হাসলাম।

“উনি হটাৎ আমাকে জিজ্ঞাস করলেন- জায়গাটা কেমন লাগছে?

“উনার আওয়াজ শুনে কিছুক্ষণ আগের অভিমানটা আমাকে আবার আকরে ধরলো তাই মুখ কালো করে বললাম- হুম সুন্দর।

“আমার কথা শুনে উনি বললেন- কি হয়ছে তোমার?

“আমি এবার হালকা বিরক্তি নিয়ে বললাম- কিছু না!

“উনি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন- যদি আজকে আমার মুড খারাপ করে দাও!তখন সত্যি সত্যি আমি তোমাকে ঠু*কে দি’বো বলে রাখলাম।

“উনার কথায় মৃদু চমকে উঠলাম!তাও নিজেকে সামলিয়ে বললাম- আমি কি কিছু বলেছি?আপনি এমন বিহেভ করছেন কেন?তারপর হালকা অভিমান নিয়ে বললাম-নাকি আমি কিছু বললেও দোষ না বললেও দোষ?

“উনি রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন- তোমার মতো ‘ইস্টুপিটকে’ নিয়ে বের হওয়ায় আমার ভুল হয়েছে।

“উনার কথায় অপমানে আমার সারা-শরীর মৃদু কাঁপতে লাগলো তাই রেগে বললাম- তাহলে আমার সাথে ঘুরার কোনো প্রয়োজন নেই বলে সেখান থেকে চলে আসতে নিলে উনি শক্ত করে হাত চেপে ধরে আমাকে আটকালেন।তারপর আশে-পাশে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন- পাব্লিক প্লেসে তামাশা করবে না বলে দিলাম।

“আমি কিছু বললাম না!বলতে ইচ্ছেও হলো না।

“উনি আমার হাত ধরে মনো-মুগ্ধকর একটা জায়গায় নিয়ে-গিয়ে বসালেন।তারপর আমার হাত ধরে বললেন- আমি বেশি কথা বলা পছন্দ করি’না সেটা তুমি ভালো করেই জানো।আর এখন যা বলি তা তোমার জন্যই বলা হয়।তাই শুধু শুধু আমার কাছে এত আশা রাখিও না।রুদ্র কখনো পুরোপুরি ভাবে বদলাতে পারবে না।রিকশাতে বসে তোমার হাত ধরবো,কোমড় জড়িয়ে ধরবো,হাজারো গল্প করবো,সেসব ভাবা তোমার বোকামি।আমি কোনো সিনেমার হিরো নয় নূর!আর না এইগুলা আমাকে দিয়ে হবে রিকশা আমার কাছে বিরক্তিকর লাগে বুঝেছো আর কখনো এমন আবদার করবে না।আর শুনো এখানে ঘুরাঘুরির পর আমার গাড়ি আসবে।

“উনার সব কথা শুনে আমি মুখ কালো করে ফেললাম।তবে এটা ভেবে মনে মনে খুশি হলাম উনি আমার মনের কথা বুঝেছেন।আমি ফুরফুরে চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম- সব বাদ তবে আপনি যে আমার মনের কথা বুঝেছেন সেটাই অনেক।তবে আপনাকে আমি চেলেঞ্জ করছি এই যে আজকে আমার শখ গুলা পূরণ করেন’নি।একদিন দেখবেন এই শখ গুলা আপনার মনেও জাগবে কিন্তু বলে দিচ্ছি সেদিন আমিও পূরণ করতে দিবো না বলেই ভেংচি কাটলাম।

“আমার কথায় উনি উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন তবে কিছু বললেন না।

~ আমরা বিকেল পযর্ন্ত এখানে-সেখানে ঘুরাঘুরি করেছি।সব-সময়ের মতো আমিই বেশি বকবক করেছি আর উনি শুনেছেন।কিন্তু সন্ধ্যার দিকে উনি আমাকে কোথায় যেন নিয়ে যাবেন বলেছেন।
~~~~~~~~~~~~~
উনার গাড়ি এসে থামলো একটা ৬-৭ তলা বিল্ডিং এর সামনে।উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার হাত ধরে সে বিল্ডিং এর দিকে হাটতে লাগলেন।

“আমি বললাম- এখানে কে থাকে?আর এখানে আনলেন কেন?ও আল্লাহ এতদূর জার্নি করে আমি ক্লান্ত।

“আমার কথায় উনি হাসলেন তারপর লিফটটে ডুকতে ডুকতে বললেন- এই বিল্ডিংটা আমার বাবার বন্ধুর। তবে পাচঁতলায় যে ডানপাশের ফ্ল্যাটটা আছে ওটা বাবা আমাকে গিফট করেছিলেন আমার তেইশতম জন্ম দিনে।

“উনার কথায় আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তাই অবাক হলে বললাম- আপনি এখানেই থাকতেন নাকি?তাও আবার একা?

“উনি আমার কথায় দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে বললেন- কে বললো একা থাকতাম।আমার হাজার-খানেক বউ ছিলো তাদের সাথেই থাকতাম।

“উনার কথা শুনে রেগে উনার দিকে তাকাতে উনি উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন।তারপর লিফট থেকে বের হয়ে ফ্ল্যাট এর কাছাকাছি যেতে উনি দরজা খুলতে লাগলেন আর খুলতে খুলতে বললেন- আমি এখানেই ছিলাম প্রায় দুই-বছর।তোমার শশুড় বাড়িতে তেমন একটা যাওয়া হতো না তখন।এখনও যেতাম না কিন্তু তোমার কারণেই প্রতিদিন যাওয়া হয়।তারপর দরজা খুলতেই আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম উনি সারা-ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিলেন আর বললেন- মিসেস নূর জামান সারপ্রাইজ।

“উনার কথায় হেসে বললাম- সারপ্রাইজটা আমার ধারুণ লেগেছে।তারপর ফ্ল্যাটটা আমি ভালোভাবে দেখতে লাগলাম~ মোট পাঁচটে রুম,একটা কিচেন রুম,আরেকটা ডাইনিং রুম,একটা রুমে তালা দেওয়া,আর বাকি দুইটা বেডরুম।

‘উনি আমাকে বললেন- নূর ঘরটা কেমন?

“আমি মুচকি হেসে বললাম- অনেক অনেক সুন্দর।কিন্তু ওই রুমে তালা দেওয়া কেন?

“উনি মুখটা গম্ভীর করে বললেন- সেটা তোমার না জানলেও চলবে(সেখানে আছে রুদ্রর সব কেসের ফাইল,ইউনিফর্ম,আরও যাবতীয় জিনিস,সে নূরকে আনবে তাই সব তার রুম থেকে বের করে নিয়ে ওই রুমে রেখে তালা দিয়ে রেখেছে)

“উনার কথা শুনে অপমানবোধ করলাম তাই হালকা রাগ নিয়ে বললাম- ভুল হয়েছে জানতে চেয়ে আমি ক্লান্ত বিশ্রাম নিবো।

“উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন- একটা মানুষের এত মুড সুয়িং হয় কিভাবে?এত-সময় তো ঠিক ছিলে!কিছু যেনো বলায় যায়’না ওমনি মুখ ভার করে ফেলো।ওই রুমটা ইউজ করা যায়’না ধুলোবালি দিয়ে ভরপুর তাই তালা দেওয়া।

“আমি মুখ কালো করে বললাম- আগে বলেন’নি কেন?শুধু শুধু অপমান করলেন।

“উনি আমার কথা শুনে নিজের কপালে চা*প*ড় দিয়ে বললেন- এত অভিমানী কেন তুমি?তোমাকে নিয়ে হয়েছে আমার মহা-জ্বালা।

“আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।আমরা বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।তাই উনি আর আমি ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পরলাম।ক্লান্ত শরীর তাই অল্প সময়ে আমরা ঘুমিয়ে পরলাম।
———————————–
ঘুম ভাঙ্গলো আমার কারোর ডাকা-ডাকিতে।কেউ যেন মুখের সামনে এসে আদুরে গলায় নূর উঠে যাও বলে বলে ডাকছে।আমি অলসতার জন্য চোখ খুলতে পারছিলাম না।তবে খুব কষ্টে চোখটা খুলে দেখলাম রুদ্র!আর আমার একদম কাছাকাছি ভাবে ঝুঁকে আছেন।তাই আমি ধড়পড় করে উঠে বসলাম।আর আশ-পাশ তাকিয়ে মনে করার চেষ্টা করলাম কোথায় আছি সেটা।মনে পরতেই উনার দিকে তাকালাম।উনি মনে হয় মাত্র গোসল করে বের হয়েছেন চুল ভেজা,শুভ্র চেহেরা।

“উনি আমার তাকানো দেখে বললেন রাত আট’টা বাজে ম্যাডাম আপনি এখনো ঘুমাচ্ছেন যান ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি খাবার অর্ডার করছি।

“উনার দিকে আমি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম- আমারও প্রচুর গরম লাগছে গোসল করা প্রয়োজন কিন্তু এখানে তো আমার কোনো জামা-কাপড় নেই।

“আমার কথা শুনে উনি হেসে বললেন- তোমার বরকে বোকা মনে হয় নাকি।ওই যে তোমার পাশে শপিং ব্যাগ রাখা আছে সেখানে শাড়ি,ব্লাউজ,ইত্যাদি সব রাখা আছে যেটা ইচ্ছা পরে নাও বলে উনি রুম ত্যাগ করলেন।

“আমি খুশি মনে শপিং ব্যাগ গুলা থেকে কাপড় বের করতেই চোখ আমার ছানাবড়া হয়ে গেলো।দুটো শাড়ি তাও এইগুলাকে শাড়ি বলা চলবে কি’না বুঝতেছি না।এত পাতলা”আর ব্লাউজ গুলা হাত কাটা”মনে মনে বললাম- ছিঃ উনি ইচ্ছে করেই এমন শাড়ি এনেছেন।যাতে আমাকে শায়েস্তা করতে পারেন।সব প্রতিশোধ নিচ্ছেন উনাকে জ্বালানোর জন্য।এসব ভেবেই চোখ আমার ছলছল করে উঠলো।রাগে-দুঃখে সেখানে থাকা জানালা দিয়ে লাফ দিতে মন চাইলো।কিন্তু মা’রা যাবো তাই দি’নাই।কিছুক্ষণ পর একটা আইডিটা মাথায় আসতেই আমি উনার আলমারি খুলে উনার একটা টি-শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।আর মনে মনে বললাম- আমার সাথে পাঙ্গা নিতে এসেছেন মির্জা সাহেব জ্ঞান হারানো মেয়ে হতে পারি তবে বোকা না।

“গোসল শেষে আমার খিমা বোরকার নিচের পার্টটা পরে আর উনার টি-শার্ট পরে বের হলাম চুল ঝাড়তে ঝাড়তে।

“উনি তখনো রুমে আসেন’নি।আমি ভালোভাবে নিজেকে গুছিয়ে রুম থেকে বের হতে দেখলাম উনি টিভি দেখছেন।আমি উনার কাছে যেতেই উনি আমার দিকে তাকালেন আমাকে স্কেন করে রাগি গলায় বললেন- এসব পরার মানে কি?শাড়ি গুলা পর’নি কেন?

“আমি উনার পাশে বসতে বসতে বললাম- ওগুলা শাড়ি ছিলো?আমার তো মনে হয়’নি ছিঃ এমন শাড়ি আপনি কিভাবে আনলেন?

“উনি রেগে আমার কাধ শক্ত করে চেপে ধরে বললেন- এক্ষুণি তুমি শাড়ি গুলা পরে আসবে যাও।

“আমি উনার হাত দুটো কাধ থেকে সরিয়ে বললাম- বাজে কথা বলবেন না সে-সব শাড়ি জীবনেও আমি আপনার সামনে পরবো না।আপনি যে ছোক ছোক টাইপের আগে জানতাম না।

“আমার কথা শুনে উনি আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন- আমাকে কি তোমার পর-পুরুষ মনে হয়।আর একটাও আজাইরা কথা বলবে না।আর কি বললে ছোক ছোক তাই তো বলেই আচমকা আমার ঠোঁট উনার ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলেন।এমন হওয়াতে আমি শকড!যখন বুঝলাম কি হচ্ছে তখন আমি উনার থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করলাম তবে ব্যর্থ হলাম।কিছুক্ষণ পর উনি নিজেই ছেড়ে দিলেন।উনি ছেড়ে দিতেই আমি ঠোঁটে হাত দিয়ে কেঁদে উঠলাম।আর বলতে লাগলাম- আপনার মতো বাজে অস’ভ্য,লু’চু আর নেই।

“আমার কান্না”আর কথা শুনে উনি হাসতে হাসতে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছেন এক-প্রকার।

তারপর বললেন- ন্যাকারানী পরে কান্না করিও আগে খেয়ে নাও।তারপর দেখবা কি করি তোমার।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খেয়ে-দেয়ে উনার রুমে আসতে উনি বললেন- শাড়ি পরে নাও আরেকটা সারপ্রাইজ আছে?

“আমি রেগে বললাম- আমার সারপ্রাইজ পাওয়ার কোনো আগ্রহ নেই তাই আমি শাড়ি গুলা পরছি না।

“উনি এবার চিল্লিয়ে উঠে বললেন- হয় তুমি শাড়ি নিজে পরবে।নাহলে কিন্তু আমিই পরিয়ে দিবো বলে দিলাম।

“উনার ধমকে আমি চমকে উঠে খানেক’টা পিছিয়ে গেলাম।এক-প্রকার বাধ্য হয়ে শাড়ি গুলা আমার পরতেই হলো ছিঃ মার্কা শাড়ি গুলা পরলেও যেমন না পরলেও তেমন।শাড়ি পরার পর ওয়াশ থেকে বের না হওয়ায় উনার আরেক ধমক খেলাম।তারপর মাথা নিচু করে বের হলাম!তবে উনার থেকে দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ালাম।লজ্জার কারণে উনার দিকে তাকালাম না তবে বুঝতে পারলাম উনি ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।কিছুক্ষণ পর উনি আমার কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে উনার সাথে মিশিয়ে বললেন- আমার দিকে তাকাও নূর!আমি তাকালাম না তারপর আবার বললেন- তাকাতে বলেছি আমি!এবার আমি লজ্জা মাখা চোখে উনার দিকে তাকাতেই থমকে গেলাম।উনার চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকানোর সাহস পেলাম না তাই দ্রুত চোখ ফেরালাম।

“উনি হটাৎ আমাকে দুষ্টুমি গলায় বললেন- আজকে কিন্তু তোমার কোনো ছাড়া-ছাড়ি নেই।

“উনার কথা শুনে লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম।আমার লজ্জা পাওয়া দেখে উনি শব্দ করে হেসে উঠে বললেন- ম্যাডাম লজ্জা পাওয়ার অনেক সময় আছে।আগে আমার সাথে আসুন বলেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন।

“উনার কাজে আমি ভূমিকম্পের নায় মৃদু কেঁপে উঠলাম তবে লজ্জায় উনার দিকে আর তাকালাম না।আমি সে অবস্থায় উনার বুকে মাথা রেখে উনাকে গভীর ভাবে অনুভব করতে লাগলাম।উনাকে বলতে ইচ্ছা হলো আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি মির্জা সাহেব।কিন্তু নিজের কথায় নিজেই চমকে উঠলাম ভালোবাসি মানে?হ্যা ভালোবাসাই তো”উনার প্রতি আমার মনে যে গাঢ় অনুভূতি আছে তার নাম ভালোবাসা!ভেবেই মুচকি হেসে উনাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।

“উনি উনার আরেকটা রুমের কাছা-কাছি এসে আমাকে নামিয়ে দিয়ে আমার চোখে হাত দিয়ে বললেন- চোখ বন্ধ করো চিটিং করবা না।

“আমি মুচকি হেসে বললাম ঠিক আছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার চোখ থেকে উনি হাত সরাতেই আমি চোখ খুলে সামনে তাকালাম।আর তাকাতেই চমকে উঠলাম।উনার সে রুমটা উনি ছোট ছোট স্টার,চাঁদ বেলুন দিয়ে সাজানো আর বিছানায় ফুল দিয়ে লাভ আকা।আর সব চাইতে বেশি চমকে গেছি আমার শত-খানেক ছবি দেখে।সব বিয়ের পরের ছবি!ছবি গুলাতে কখনো আমি রেগে নাক ফুলিয়ে আছি কখনো বা কান্নারত অবস্থায় আছি আর কখনো বা উনার সাথে মিশে আছি।এগুলা উনি কখন ক্লিক করেছেন কে জানে।

“আমার ফুরফুরে চেহেরা দেখে বললেন- মিসেস আজকে আমাদের বিয়ের দুই মাস হয়ে গেছে!তাই এই ছোট উপহার তোমার জন্য।

“উনার কথায় আমি মুচকি হাসলাম তবে কিছু বললাম না।

“উনি পিছন থেকে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন- কেমন লাগলো বললে না’তো?

“উনার এমন কাজে আমি কেঁপে উঠলাম তবে বললাম- অনেক অনেক ভালো লেগেছে।ধন্যবাদ এমন উপহার দেওয়ার জন্য।আর রুমটাও অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছেন।

“উনি আমাকে আরও গভীরভাবে ছুঁয়ে দিয়ে বললেন- ধন্যবাদ দিলে কিন্তু হবে না।

“উনার কথার মানে বুঝতে পেরে রাগি চোখে উনার দিকে তাকালাম।

“উনি আমার তাকানো দেখে হেসে উঠলেন।তারপর আমার দিকে একহাত বাড়িয়ে বললেন- চলো ডান্স করি?

“উনার কথায় আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো তারপর অবাক হয়ে বললাম- আপনি ডান্সও করতে পারেন।

“উনি নিজেই আমার হাত ধরে উনার কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন- করলেই দেখবে পারি কিনা বলেই একটা গান ছেড়ে দিলেন।

~ তাকে অল্প কাছে ডাকছি
~ আর
~আগলে আগলে রাখছি”
~~~~ তবু অল্পেই হারাচ্ছি আবার
~ তাকে ছোঁবো ছোঁবো ভাবছি
~ আর ছুঁয়েই পালাচ্ছি”
~ ফের তাকে ছুঁতে যাচ্ছি আবার…..(বাকিটা আপনারা শুনে নিবেন)

~~~ গানের তালে তালে আমরা একে ওপরের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ডান্স করছি।কিন্তু উনি হুট করে আমার ঠোঁট আকরে ধরলেন।উনার ছুঁয়া গাঢ় থেকে গাঢ় হতেই আমার মাথায় এলো- এ ছুঁয়া গুলা ভালোবাসাবিহীন!আর এমন ছুঁয়া আমার প্রয়োজন নেই।তাই আমি উনাকে নিজের সর্ব-শক্তি দিয়ে ধা*ক্কা দিলাম।এতে উনি খানেকটা পিছিয়ে গেলেন আর আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন- নূর?

“আমি রেগে বললাম- কি নূর?হ্যা কি নূর?ভালোবাসেন আমায়?আপনার উত্তর অবশ্যই~ না!তারপর চিল্লিয়ে উঠে বললাম- তো তাহলে কাছে আসার মানে কি?আমি উনার কাছে গিয়ে উনার চোখের দিকে চোখ রেখে বললাম- মির্জা সাহেব ভালোবাসাবিহীন ছুঁয়া আমি চাইনা।যেদিন ভালোবাসবেন সেদিন নাহয় ভালোবেসে নিজের করে নিবেন।এর আগে ভালোবাসাবিহীন আমাকে ছুতে আসলে আপনার পি*স্ত*ল দিয়ে আপনাকেই ঠু*কে দিবো…….
———————————-
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here