হঠাৎ এক বৃষ্টির দিনে,পর্ব:১৬

0
627

#গল্পের_নাম #হটাৎ_এক_বৃষ্টির_দিনে
#পর্বঃ১৬ #ভালোবাসায়_দূরত্ব
#নবনী_নীলা
“উঠো এবার নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নেও।”অভির কথায় আমি বিস্ময় নিয়ে তাকালাম।”আমি কেনো ব্যাগ গোছাবো? ব্যাগ গুছিয়ে আমি করবোটা কি? ওদের দিকে তাকিয়ে থাকবো?”,ভ্রু কুঁচকে বললাম আমি।

“তোমাকে তোমার মার কাছে রেখে আসবো। আমি না আসা পর্যন্ত তুমি সেখানেই থাকবে।”

একটুর জন্য ভেবেছিলাম আমাকে সঙ্গে নিয়ে
যাবে তাই ব্যাগ গুছাতে বললো কিন্তু না আমাকে নাকি মার কাছে রেখে আসবে।
আমি কেনো মার কাছে থাকতে যাবো?আমি কি বাচ্চা একা একা থাকতে পারবো না।

” না আমি মার কাছে যাবো না। “, হাত ছাড়িয়ে বললাম।

” ঠিক আছে তাহলে আমি মাকে বলে দিচ্ছি মা এসে এ কয়েকদিন তোমার সাথে থাকবে।”,বলে অভি নিজের সুটকেসের দিকে গেলো।

” আম্মুকে কেনো বলবেন ? উনি অসুস্থ হয়ে পড়েন জার্নি করলে। আমি একা থাকতে পারবো আপনার এতো ভাবতে হবে না।”, অভি কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

আমি দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলে দেখি ইমন এসে হাজির। এখন সকাল ১১ বাজে এমন সময় ইমনের এখানে আসার কারণ কি? আমি ইমনকে ভিতরে আসতে বললাম। ইমন এসে সোফায় বসলো। কে এসেছে সেটা দেখতে রুমের বাহিরে এসে ইমনকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।

আমি অভির দিকে তাকিয়ে বললাম,” আমার ফ্রেন্ড ইমন।”

অভির মুখ গম্ভীর হয়ে গেছে, এখানে গোমড়া মুখ বানানোর কারণ ঠিক বুঝলাম না। ইমন উঠে গিয়ে অভির সাথে হ্যান্ডশেক করলো।অভি থমথমে গলায় কথা বলে রুমে চলে গেল। আমার ফ্রেন্ড কোথায় ভালো করে কথা বলবে তা না উনি ঢং করছেন। আমি ইমনের সামনের সোফায় বসলাম।

” তুই আমার বাসার ঠিকানা পেলি কোথায়?”, আমি বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলাম।

– “অবাক হয়েছিস তাই না? তোকে আমি অনেকবার ফোন করলাম কিন্তু তুই তো মঙ্গল গ্রহে ফোন ফেলে রাখিস।”

-” আমি জানি না! ফোনের কথা মাঝে মাঝে ভুলেই যাই।”

–” আচ্ছা যে কারণে আসা। আজকে কতো তারিখ আজকে অ্যাসাইনমেন্টের ডেট। আজকেও নিশ্চয় তোর মনে নেই। ”

–” আয় হায় ! আমার কি হবে ?আমি এবার কি করবো? আমি কিচ্ছু লিখি নাই। একটা পেজ লিখেছিলাম শুধু। এবার কি হবে আমার ইমন?”

–” তুই এটা করবি আমার জানা ছিলো তাই রচনার কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে এসেছি। দেরি করিস না যতোটুকু লিখেছিস আমাকে দিয়ে দে।”

-” ওই টুকু দিয়ে তুই কি করবি?”

-” আমি বাকিটা কমপ্লিট করে জমা দিবো।”

-” কিন্তু হাতের লেখা?”

-” তোর হাতের লেখা আমার চেনা আমি পারবো। তাড়াতাড়ি কর যা।”

-” তুই এত ভালো কেনো?”

-” নওরীন যা নিয়ে আয় আমার আবার ভার্সিটিতে গিয়ে এইগুলো লিখে জমা দিতে হবে। টাইম waste করিস না।”

আমি দৌড়ে রুমে গিয়ে সব নিয়ে আসলাম। আসার সময় অভির রুমের সামনে ছায়া দেখতে পাই অভি কি আড়ালে দাড়িয়ে কথা শুনছে আমাদের? ধুরো শুনক, আমি গিয়ে ইমনকে লেখাগুলো দিয়েই সে উঠে চলে যেতে চাইলো। আমি জোর করলাম কিন্তু তার ক্লাস আছে অন্যদিন এসে গল্প করবে বলে চলে গেলো।আমি দরজা লাগিয়ে পিছনে ফিরে দেখি অভি হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে।

মুখ গম্ভীর করে বললো,” নওরীন তোমাকে না আমি বললাম ব্যাগ গুছিয়ে নিতে।”

” আমি না বললাম, আমি যাবো না। যন্ত্রণা করবেন না।”, বিরক্ত হয়ে বললাম।

” তোমার কি মনে হয় এরপরও আমি তোমাকে একা এ ফ্ল্যাটে রেখে যাবো। তুমি তোমার মায়ের কাছে যাবে এটাই ফাইনাল।”

” আমি যাবো না, মা খালি পতিসেবা মুকুল বাণী দেয় আমার ভালো লাগে না। আমি যাবো না।”,বলে চুপ করে সোফায় বসে পড়লাম।

অভি ভ্রু কুচকে বললো,” কি সেবা?”

” পতিসেবা, স্বামীকে কিভাবে যত্ন করতে হয়, হেন তেন হাবি জাবি কথা।”ঠোঁট উল্টে বললাম।

” ঐগুলা শেখার জন্য আরো আগে সেখানে যাওয়া উচিৎ। “,বলে নিজেই আমার ব্যাগ গুছাতে লাগলেন।

আমার মা কি যে বলে উফফ। সেইগুলো শুনলে ইচ্ছে করে কান দুইটা খুলে হাতে নিয়ে বসে থাকি। এই লোকটাকে আমাকে নিয়েই যাবে বলে মনে হচ্ছে।

আমি গোসল করে বের হয়ে দেখি অভি আমার ব্যাগ পুরো গুছিয়ে ফেলেছে। নিজে যাচ্ছে যাবে আমাকে পাঠানোর কি দরকার। আমি অভির সামনে গিয়ে চুলের পানি ঝরাচ্চি ইচ্ছে করে তার গায়ে পানি ছিটিয়ে দিলাম। অভি আড় চোখে তাকিয়ে গায়ের পানি মুছে শাওয়ার এ চলে গেলো। দুপুরে খাবার সময়ে আমাকে একগাদা উপদেশ দিয়ে দিলেন। বৃষ্টিতে ভেজা যাবে না, উল্টা পাল্টা কিছু করবে না।

অবশেষে বিরক্তিকর ভাষণ শেষ হয়েছে। এখন বিকেল আমি বারান্দায় বসে আছি একটুপর আমাকে মায়ের বাসায় রেখে আসবে অভি। মন খারাপ লাগছে।

আমি গাড়ীতে এসে বসেছি, অভি ব্যাগগুলো গাড়ীতে ভরে ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো। সবসময়ের মতন আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে দিলো।

তারপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল,” আমি ড্রাইভারকে বলে দিবো সে তোমায় ভার্সিটিতে আনা নেওয়া করবে, রিক্সা করে যাওয়ার প্রয়োজন নেই তোমার।”

” ড্রাইভার এই নামক পদে চাকরিপ্রাপ্ত কাউকে আমি তো দেখলাম না। গাড়িতো আপনি চালান।”, বিস্ময় নিয়ে বললাম।

” তা বাকি গাড়িগুলো কে দেখে?”

” ও আচ্ছা।”,বলে আমি জানালার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভাল্লাগছে না কিছুই না। ওনার সাথে এই ব্যাপারে ঝগড়া করা দরকার কিন্তু করতে ইচ্ছে করছে না কিছুক্ষণ পরই চলে যাবে।

আমাকে নামিয়ে দিয়েই অভি এয়ারপোর্টের দিকে রওনা হবে। অফিসের গাড়িকে আসতে না করেছে অভি। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই বুকের ভিতরটা ধক করে উঠলো। গাড়ী গ্যারেজে ঢুকিয়ে অভি আমার দিকে তাকালো। আমি সাবলীল ভাবে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।

অভি গাড়ী থেকে নেমে আমার ব্যাগ দারওয়ানের কাছে দিলো। দারোয়ান ওপরে নিয়ে গেলো ব্যাগ। আমি অভির দিকে তাকিয়ে আছি কি বলবো বুঝতে পারছি না অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে।

আমি বললাম,” মায়ের সাথে দেখা করবেন না?”

অভি আমার দিকে তাকিয়ে থেকেই বললো,” না, আমার ৮টার ভিতরে পৌঁছাতে হবে। এখন না গেলে দেরি হয়ে যাবে।”

আমি কিছু বললাম না তাকিয়ে রইলাম কিছক্ষন তারপর চোখ নামিয়ে নিলাম।
অভি আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার কপালে একটু ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বললো,
” take care, হুম? আমি কল করবো গিয়ে।”

আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে গাড়ীতে উঠলেন।আমি ঠোঁট কামড়ে চোখের পানি আটকালাম।

[চলবে]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here