হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ২৪

0
856

#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ২৪
#জামিয়া_পারভীন_তানি

সজীব সুপ্তির বেবি কে কোলে নিয়ে আইসিইউতে এসেছে বাচ্চা কে খাওয়ানোর জন্য । নার্স এর হাতেও বাচ্চাটা কে দেয় না , যদি বাচ্চার ক্ষতি হয় এই ভয়ে। উল্টো দিকে ঘুরে নার্সের মাধ্যমে বাচ্চাকে খাবার খাইয়ে আবারও নিয়ে আসে কেবিনে। বাচ্চা টা ও নিউমোনিয়া তে ভুগছে। অপুষ্ট বেবি বলে কথা। তবে এতটুকু ক্লান্তি বোধ করেনি বাচ্চার যত্নে। সজীবের মেয়ে স্নেহা কে সুপ্তি যেমন বড্ড আদরে আগলে রাখতো ঠিক তেমন করে আগলে রাখছে সজীব। নিজের ছেলেমেয়ে দুটোকে সাইমার দায়িত্বে রেখে বোনের সেবায় নিয়োজিত ভাই। একমাত্র বোনের কোনো রকম ক্ষতি হোক কখনোই চায়না সে।

বিকেলে খুব ঝড় শুরু হয়, দমকা হাওয়ায় যেনো চারিদিক উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়। এমন সময় আলিফ আসে বাচ্চাকে আদর করতে। সজীব একবারের জন্য ও বাচ্চাটাকে দেয়নি। সোজা জবাব দেয়,
“ তোমার কাছে বোনকে দিয়েছিলাম সুস্থ করার জন্য। অথচ তুমি আমার বোন টা কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছো৷ কী ভেবেছিলে? বোন কে সরিয়ে বাচ্চা টাকে নিয়ে তোমরা স্বামী স্ত্রী সুখে থাকবে! তা আর কখনো ই হবেনা। ”
“ এসব কী বলছেন আপনি? শিম্মি যদি ভুল করে, তার দায় কেনো আমি নিবো? তাছাড়া সুপ্তি কে কখনো কোন কষ্ট দিই নি আমি। ওর অমর্যাদা ও করিনি কখনো। আপনারা জেনে শুনে সুপ্তি কে আমার হাতে তুলে দিয়েছেন, ইচ্ছে করে সুপ্তিকে সতীনের ঘরে পাঠিয়েছেন। আর শিম্মি যখন হিংসাত্মক কাজ করলো, তখন তার দায়ভার কেনো আমাকে নিতে হবে?”
“ তোমার বউ সব স্বীকার করে নিয়েছে, এখন জেলেই পঁচে মরুক। ”
“ একটা উপকার করবেন? ”
“কী?”
“ শিম্মি নিজের ভুল স্বীকার করে আফসোস করছে, সারাটা জীবন মেয়েটা কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি। ওর শাস্তি কী কমানো যায় না?”
“ সুপ্তি যদি চায়! ”
“ ওকে ওর বাচ্চার জন্য হলেও বাঁচতে হবে। ”
“ ওর কিছু হলে তোমাকেও ছাড়বো না আলিফ।”
“ পালিয়ে যাচ্ছি না। যাবোও না। ”

°°°

আলিফ বাইরে থাকা বেঞ্চে অপেক্ষা করছে কখন সুপ্তির জ্ঞান ফিরে আসে। বাইরে বয়ে চলা ঝড়ের মতো তার জীবন টা কেমন জানি তচনচ হয়ে গেছে । কাউকে মন থেকে ভালোবাসার পর তাকে হারানো, এক্সিডেন্ট, দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে আবারো বেঁচে উঠা, ভালোবাসা কে হারিয়ে নতুন করে যে মেয়েটার হাত ধরে বাঁচতে চেয়েছিলো সে-ই কিনা খুনের অপরাধী। আর নতুন করে আশার আলো দেখানো মেয়েটা কি-না আইসিইউতে। কিভাবে সম্ভব এতো কিছু সহ্য করা একটা মানুষের পক্ষে! আল্লাহ আর কতো ধৈর্য পরীক্ষা নিবেন? কোন উত্তর জানা নেই আলিফের। শুধু ইচ্ছে সুপ্তি যেনো সুস্থ হয়ে উঠে। তাহলে যেনো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে সে।

সাইমা কতক্ষণ আলিফ কে ফলো করে এবার ডাক দিলো,
“ এ-ই আলিফ, এতো চিন্তা করোনা। দেখিও সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। ”
“ ঠিক হবে ইনশাআল্লাহ। ”
“ একটা প্রশ্ন করবো?”
“ হ্যাঁ, বলো। ”
“ সুপ্তি কে তুমি ভালোবাসো?”
আলিফ বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে সাইমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ ভালোবাসা বলতে কী বুঝো? ”
“ বলো প্লিজ। ”
• “ আমি আমার সন্তানের মা কে ভালোবাসি। অবশ্যই বাসি, কেননা ওর মতো ভালো মেয়ে হয় না। ও প্রথম প্রথম আমাকে মেনে নিতে চায়নি। বারবার মরতে চাইতো। আচ্ছা! মেয়েরা এমন কেনো! একটু কিছু হলেই আমরতে চায়। ওর পাগলামি থামাতে গিয়ে ওর কাছাকাছি গিয়েছি। তখনও ওকে ভালো না বাসলেও ওর যত্ন নিতাম। শিম্মি সব সময় হিংসা করতো, আর সুপ্তি ইচ্ছে করে শিম্মি কে জ্বালাতো। সুপ্তি নিজেও আমার প্রতি দুর্বল ছিলো বলে শিম্মি কে ছোট করে কথা বলতো। দুজনের অত্যাচারে যখন পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম তখন থেকে দুজন কেই শাসন করা শুরু করি। এটাই বুঝি কাল, শিম্মি নিজেকে ছোট ভাবা শুরু করে। ও কখনো সন্তান জন্ম দিতে পারবেনা বলে কষ্ট পাওয়া শুরু করে, একাকী কাঁদত। আর সুপ্তি ওকে অপয়া বলেও কষ্ট দিত মাঝেমধ্যে। খুব কষ্ট দিত এই দুটি মেয়ে, শিম্মি ও কম যেতো না, ও সুপ্তি কে বলতো তোমার দোষেই তোমার স্বামী মরেছে, তাই আমার স্বামী কে দখল করে বসে আছো। সুপ্তি নিজেও গাল ফুলিয়ে বসে থাকতো। যখন জানতে পারলাম সুপ্তি মা হবে। একটু হলেও ওর প্রতি আকর্ষণ বাড়ে, আমরা পুরুষেরা কতটা ভালো! নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝিনা! শিম্মির প্রতি একটু হলেও অবহেলা বেড়ে গিয়েছিলো। বেশিরভাগ কারণ সুপ্তি একা একা ভয় পেতো আর চিৎকার করতো। সুপ্তির দেখাশোনা করতে গিয়ে শিম্মির দিকে অনেক দিন খেয়াল করা হয়নি। শিম্মি ভেতর ভেতর অনেক কষ্ট পেয়েছে, আর আমি স্বার্থপর এর মতো সুপ্তি কে আশা দিয়েছি। এটা ভালোবাসা কিনা সন্তান পাবার লোভ জানিনা, সুপ্তি কে ছাড়া থাকতে খুব খারাপ লাগে। ”
“ আসলেই প্রতিটি মানুষ স্বার্থপর, নতুন কাউকে পেলে পুরনো অতীত ভুলে যায়। ”
“ তা ঠিক নয়, কষ্ট ময় অতীত ভেবে মানুষ দুঃখ পেতে চায় না। সুখময় বর্তমান নিয়ে বাঁচতে চায়। ”
“ তাহলে শিম্মির কী হবে?”
“ ওর জামিনের ব্যবস্থা করবো। হাজার লড়াই করে সুপ্তি কে মারার চেষ্টা করলেও, ওই কিন্তু সুপ্তিকে হসপিটাল নিয়ে এসেছে। ঠিক সময় ওর মাথার পোকা না গেলে সুপ্তি মারা যেতে পারতো। ”
“ জীবন মরণ আল্লাহর হাতে। ”
“ হুম, আল্লাহ ভরসা। ”

°°°

সাইমা সজীবের পাশে এসে বসে। আলতো করে কাঁধে হাত রাখাতে সজীব চমকে উঠে। সাইমা মৃদু হেসে বললো,
“ ভয় পেলে যে, আমি কি বাঘ না-কি ভাল্লুক!”
সজীব ও হেসে বললো,
“ ভয় পাওয়ার ই সময়। বোন টা কে কি সত্যিই হারিয়ে ফেলবো!”
“ দেখো, ও সুস্থ হয়ে যাবে। তবে ওকে আমাদের সাথে রাখবে। ”
“ কেন?”
“ আলিফ শিম্মি কে নিয়েই থাকুক।”
“ যদি সুপ্তি ফিরে যেতে চায়!”
“ না-ও যেতে পারে। সুপ্তি হয়তো রেহান কে ভুলতে পারেনি। ”
“ ভুলে যেতেও পারে। ”
“ আচ্ছা বাদ দাও, সুপ্তির জ্ঞান ফিরে আসলে তখন দেখা যাবে। ”
“ যার সংসার তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে দাও ।”
“ হুম, সুপ্তির মতামত ছাড়া কিছুই করবোনা। ”

°°°
শিম্মি ঘরে বসে খুব কাঁদছে। ও তো নিজেই চেয়েছিলো আলিফ বিয়ে করুক, সন্তানের মুখ দেখুক৷ অনিচ্ছায় সুপ্তিকে ঘরে আনার পর শিম্মির এমন করা কি উচিৎ হয়েছে ! আসলেই হয়নি, ভুল হয়ে গেছে বড্ড। ভুলের সাজা পেতেই হবে, পরকালে তো পেতেই হবে, ইহকালে ও পেতে হবে। এর কি আদৌও ক্ষমা হবে! সুপ্তি ক্ষমা করলে আলিফ ও তাকে ক্ষমা করে দিবে। কিন্তু সুপ্তি!

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here