#হৃদস্পর্শ ( সিজন ২) পর্ব ১৯
জামিয়া পারভীন তানি
নয় মাস পর,
সুপ্তির মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা, সব সময় মুখ ভার করে রাখে। মুখের হাসি তো হারিয়ে গেছে, যেনো পাথর হয়ে গেছে মেয়েটা। নয়টা মাস পেরিয়ে গেছে মাঝখানে । কিন্তু সুপ্তির শোক যেনো কাটেনি কোনোভাবেই। সজীব, সাইমা অনেক চেষ্টা করছে সুপ্তি কে ভুলিয়ে রাখার। কোনো কিছুই কাজ করে না।
সাইমার ছেলে হয়েছে, এক মেয়ের পরে এক ছেলে। সুখী পরিবার হবার কথা ছিলো! কিন্তু ভাগ্যের লিখন, সুপ্তির জন্য কেউ শান্তির ঘুম ঘুমাতে পারে না। সজীবের সাথে দুরত্ব বেড়েই যাচ্ছে দিন দিন। সংসারে মানসিক অশান্তি তে আর কতো ভালোবাসা ই থাকবে! সংসারের ঝামেলা, বিজনেস নিয়েই সজীব ব্যস্ত, আর সাইমা ব্যস্ত তার দুই বাচ্চার দেখাশোনা করা নিয়ে।
শিম্মি সুস্থ হয়ে উঠলে বিয়ে করে আলিফ কে, কিন্তু শিম্মির মনে শান্তি নেই কোনোভাবে ই। সব সময় অপরাধ বোধ এ ভোগে । সে যে মা হতে পারবেনা! কিভাবে ই বা সুখে থাকবে আলিফের সাথে। তবে আলিফের ভালোবাসার কমতি নেই, শিম্মি কে যত প্রকার সারপ্রাইজ পারে দেয়। যাতে মেয়েটা সব ভুলে থাকে। কিন্তু মাতৃত্ব এমন একটা বিষয়, কোনো মেয়ে মা হতে পারবেনা এটা মেনে নিতে পারবেনা। শিম্মি ও পারেনি মেনে নিতে। আলিফের সামনে হাসিখুশি থাকলেও আলিফের আড়ালে ডুকরে কাঁদে।
আফিয়া বেশ ভালো আছে হাজবেন্ড এর সাথে, তবুও সে অপরাধ বোধ এ ভোগে। কারণ তার জন্যই রেহান মারা গেছে। তার জন্যই রেহানের এক্সিডেন্ট, আলিফের চেহেরা দেওয়া, ইনফেকশন হওয়া, মারা যাওয়া। সবই হয়েছে তার দোষে। কিন্তু সব কিছু স্বীকার করার সৎ সাহস তার মাঝে নেই, এটাই অপরাধ বোধ। তার প্রতিশোধ নেশা তে সাইমার কাছে রেহান কে পাঠানো, সুপ্তির সাথে বিয়ে, মেয়েটা বিধবা হয়ে যাওয়া, সুপ্তির পাথর হয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকেই দায়ী ভাবে আফিয়া। তবে সাইমার বাবার পালিত ছেলে সুমন আর ওর বউয়ের বিচার হয়েছে বলে মনে মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এক ছেলের মা হয়েছে যদিও, তবুও মন খুলে আনন্দ প্রকাশ করতে পারে না।
°°°
সজীব ফোন কানে নিয়ে ঘরে ঢুকে। সাইমা সজীবকে চিন্তিত দেখে জিজ্ঞেস করে,
“ কোনো প্রব্লেম হয়েছে? ”
“ না।”
“ তাহলে এতো পেরেশান হয়ে আছো কেনো?”
“ কাজের জন্য অষ্ট্রেলিয়া যেতে হবে। কিন্তু তোমাদের রেখে যাওয়া কি সম্ভব? ”
“ কাজের জন্য হলে যেতে পারো। সুপ্তি কে আমি সামলাতে পারবো। ”
“ কার ভরসায় রেখে যাবো শুনি?”
“ আল্লাহর ভরসায়। ”
“ কিভাবে ভরসা করি বলো! একের পর এক বিপদ দিচ্ছে আমাদের। ”
“ কি নাস্তিকের মতো কথা বলছো? আল্লাহ বলেছেন, আমি অবশ্যই তোমাদেরকে কিছু না কিছু দিয়ে পরীক্ষায় ফেলবোই: মাঝে মধ্যে তোমাদেরকে বিপদের আতঙ্ক, ক্ষুধার কষ্ট দিয়ে, সম্পদ, জীবন, পণ্য-ফল-ফসল হারানোর মধ্য দিয়ে। আর যারা কষ্টের মধ্যেও ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে, তাদেরকে সুখবর দাও। [আল-বাক্বারাহ ১৫৫]
“আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোন বিপদ আসে না। আর যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে তিনি তাঁর অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন।” [সূরা তাগাবুনঃ ১১]
“আল্লাহ তায়ালা ‘যার অন্তরকে সঠিক পথের সন্ধান দেন’ সে হল ঐ ব্যক্তি যে বিপদে পড়লে বিশ্বাস করে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। ফলে বিপদে পড়েও সে খুশি থাকে এবং সহজভাবে তাকে গ্রহণ করে।”
“যে ব্যক্তি বিপদে পড়লে বিশ্বাস রাখে যে এটা আল্লাহর ফায়সালা মোতাবেক এসেছে। ফলে সে সবর করার পাশাপাশি পরকালে এর প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখে এবং আল্লাহর ফয়সালার নিকট আত্মসমর্পণ করে আল্লাহ তায়ালা তার অন্তরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন, আর দুনিয়ার যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তার বিনিময়ে তিনি তার অন্তরে হেদায়াত এবং সত্যিকার মজবুত একীন দান করেন। যা নিয়েছেন তার বিনিময় দান করবেন।”
সজীব এর অন্তর কেঁপে উঠলেও রাগ থেকে বললো,
“ উফফফ সাইমা, সব কথাতেই জ্ঞান দাও কিসের জন্য? ”
“ এটা জ্ঞান দেওয়া বলে না সজীব। ”
“ চুপ থাকো, তোমার দায়িত্ব তুমি পালন করো। আমাকে শিখাতে আসিও না। ”
“ সজীব…….. ”
সজীব ফোন কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে আবার বেরিয়ে যায়।
সাইমা সব মেনে নিতে পারলেও সজীবের সাথে এতো দুরত্ব মেনে নিতে পারছেনা। একই ছাদের নিচে থেকে দুইজন যেনো দুই গ্রহের প্রাণী।
°°°
শিম্মির চোখ পিছন থেকে ধরে আলিফ। শিম্মি হটাৎ ভয় পেয়ে যায়, আলিফ ভয়েস চেঞ্জ করে বলে,
“ তুই এতো বাচ্চা বাচ্চা করে টেনশন করিস কেনো? তুই কি জানিস! পৃথিবী তে অনেক এতিম বাচ্চা আছে। তুই তো চাইলেই ওদের মা হতে পারিস। ”
শিম্মির বুঝতে বাকি নেই আলিফ এমন করছে। তাই শিম্মিও বলে,
“ হ্যাঁ জানি, পৃথিবীতে এতিম বাচ্চাও যেমন আছে, তেমন বিধবা মহিলা ও আছে। তাদের একজন কে বিয়ে করলেও তো তোমার বাচ্চা আসবে। ”
“ আমি কি দানশীল হয়ে গেছি, যে বাজে কথা বলো তুমি। ” আলিফ কিছুটা রাগে বলে।
“ বিয়ে করতে বলেছি, পরকিয়া না। বিয়ে করা নাজায়েজ না।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“বিবাহ কর নারীদের মধ্য হতে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই ,তিন আথবা চারটি। আর যদি আশঙ্কা কর যে (স্ত্রীদের মাঝে) সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে (মাত্র) একটি (বিবাহ কর)….”
(সুরা নিসা ০৩:০৩)”
“ আমি দুইজন কে রাখতে পারবোনা, সুবিচার ও করতে পারবোনা। ”
“ তুমি চাইলে ই পারবে।”
“ তোমার মাথায় এইসব ভুত কে ঢুকাচ্ছে? আপু???”
“ আজব তো, সব কিছু তে আপুর দোষ কেনো দেখো? ”
“ আপু যে ধোয়া তুলসীপাতা এমন টা নয়!”
“ আপু এসব কখনো ই বলবেনা। ”
“ তবে কি সাইমা?”
“ উনার সাথে দেখা বা কথা কিছু ই হয়না। ”
“ আর বিয়ে বিয়ে করলে তোমাকে দেখে নিবো। আর এসব নিয়ে কথা প্যাচাবে না৷ ”
“ আমার বাচ্চা চাই…”
“ আমি বিয়ে করলে বুঝি বাচ্চা তুমি পাবে! কি ভেবেছো! সতীন আসলে সে তোমাকে বাচ্চা দিবে? ”
“ হ্যাঁ দিবে। ”
“ কিভাবে? ”
“ সাইমা আপুর ননদ পাগল হয়ে গেছে, ওকে বিয়ে করো। ও কখনো ই বাচ্চার দাবী করবেনা। ”
“ আর ইউ ম্যাড? যখনই বাড়িতে আসি, কিছু না কিছু উপায়ে ঝগড়া করো। আর কতো সহ্য করবো আমি? সাইমা এইসব পোকা তোমার মাথায় ঢুকাচ্ছে তাইনা! ওর সাথে শেষ বোঝাপড়া করবো এবার। ”
“ উনি কিচ্ছু বলেনি…..”
শেষ কথা না শুনে ই আলিফ বেরিয়ে পড়ে রুম থেকে। বাইক স্টার্ট দেয়, উদ্দেশ্য সাইমার বাড়ি।
চলবে….