#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ১৬
জামিয়া পারভীন তানি
“ দুটো মানুষ একে অপরের কাছাকাছি থাকলে একে অপরের প্রতি মুগ্ধ হয়ে ও ভালোবাসার জন্ম নেয়। আর সম্পর্ক টা দীর্ঘদিন হয়ে গেলে একে অপরের প্রতি বিরক্তি চলে আসে। সুন্দর সম্পর্ক গুলোর অবসান ঘটে তিক্ততা থেকেই। ”
সুপ্তির কথায় রেহান ওর দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
“ তাহলে কি তুমি মুক্তি চাও?”
“ না।”
“ যদি মুক্তি চাও তাহলে দিয়ে দিবো, আর যদি সহ্য করতে পারো তাহলে চুপ থাকো।”
“ তুমি এমন কেনো হয়ে গেলে রেহান? কি দোষ আমার বলো সেটা!”
রেহান কিছু না বলে চলে যেতে চাইলে সুপ্তি রেহান কে জড়িয়ে ধরে। কান্না করে রেহানের শার্ট ভিজিয়ে দেয়। রেহানের কাঁধে হাত রেখে কিছু ফিল করে সুপ্তি। মনের ভেতর সন্দেহ জাগে, সাথে রেহানের শার্ট খুলতে শুরু করে। সুপ্তি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে রেহানের দিকে, কি হয়েছে সেটা জানার জন্য।
°°°
শিম্মিকে হসপিটালে ভর্তি করিয়ে আলিফ বাইরে পায়চারী করতে থাকে। অস্থিরতা বিরাজ করছে মনের ভিতর, কখন কি হয়ে যায়! ঘন্টা খানিক পরে ডক্টর আসেন, এতক্ষণ নার্স রা দেখছিলো। আরও এক ঘন্টা পর একজন নার্স আলিফ কে ডাক দেয়। আলিফ কাছে যেতেই নার্স বলে,
“ বাচ্চা টা ইম্যাচিউর ছিলো, তাই নষ্ট হয়ে গেছে। আর আপনার স্ত্রী কে সেফ রাখার জন্য উনার জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। নইলে উনাকে বাঁচানো সম্ভব হবে না। উনি আর কখনো মা হতে পারবেনা। ”
আলিফ যেনো শক খায়, যাকে রক্ষার জন্য এতো কিছু, আর আজ তার জীবন টাই বৃথা। মাতৃত্ব না পেলে একটা মেয়ের জীবনে আর থাকেই বা কি?
মাথা নীচু করে বললো,
“ মেয়েটা কে বাঁচানোর জন্য যা করার করুন।”
°°°
সাইমা বাইরে থেকে ফিরে এসে রুমে ঢুকে, সজীবের মুখে মিষ্টি ঢুকিয়ে দেয়। সজীব অবাক হয়ে সাইমার দিকে দেখে, আর মন খারাপ করে বলে,
“ সুপ্তি ভালো নেই, আর তুমি মিষ্টি খাওয়াচ্ছো?”
“ কেনো! সুপ্তির আবার কি হয়েছে? ”
“ রেহান এর জন্য। ”
“ কি হয়েছে রেহানের? আমি কেনো মিষ্টি খাওয়ালাম সেটা জিজ্ঞেস ও করলে না?”
“ কিসের মিষ্টি? ”
“ বলবো না। যেদিন বুঝতে পারবে সেদিন আসিও।”
সাইমা বেরিয়ে সুপ্তির রুমে আসে। সুপ্তি মেঝেতে বসে আছে দেখে সাইমা জিজ্ঞেস করে,
“ কি হয়েছে তোমার? ”
“ ভাবী, কেনো এমন হলো বলোতো? আমি কি ক্ষতি করেছি যে ভাগ্য আমাকে নিয়ে খেলছে।”
“ না বললে বুঝবো কিভাবে? ”
“ ভাবীইইই! রেহান ভালো নেই! হয়তো মরেও যেতে পারে। ”
“ মানে?”
“ ও এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলো আমার থেকে। ওর পুরো শরীরে ব্লাড জমে যাচ্ছে। ওই জন্য সে কখনো শার্ট খুলতো না। এটা নাকি ওর প্লাস্টিক সার্জারির কম্পলিকেশন। ওর কিছু হয়ে গেলে আমার কি হবে ভাবী?”
“ মানে কি? কিভাবে হলো এসব? ”
“ ও সব সময় আমাকে এভয়েড করতো, আর জোর করে কাছে যেতেই বুঝতে পারি সব টা। ওর জামা খুলার পর ও স্বীকার করে।”
“ ভাবী, আমার সারাজীবন ওষুধ খেতে হতো, আর সুপ্তি কে বিয়ের পর কিছুদিন বিভিন্ন ঝামেলায় ওষুধ খেতে ভুলে গেছিলাম। পরে আবার খাওয়া শুরু করি, কিন্তু যা হবার তাইই হয়েই গেছে। ইনফেকশন আর ব্লাড জমে গেছে পুরো শরীরে। চাইলেও সুপ্তিকে নিজের সাথে জড়াতে পারবোনা। ” রেহান পাশ থেকে বলে সাইমা কে।
“ এসব কি বলছো তুমি, উন্নত চিকিৎসা আছে, চাইলেই সুস্থ হবে তুমি।”
“ নাহহহ, এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে ভাবী।”
“ তুমি অল্প কয়েকদিন এর মাঝে সুইজারল্যান্ড যাবে, যে ডক্টর এর চিকিৎসাধীন ছিলে তাকে দেখাবে। ”
সজীব পিছনে থেকে বলে,
“ আমি অলরেডি ব্যবস্থা শুরু করে দিয়েছি। আমার বোনের জন্য হলেও তোমাকে সুস্থ হতে হবে। ”
১০ দিন পর,
রেহানের কোনো খোঁজ পাচ্ছেনা সুপ্তি, সজীব ও ফোন রিসিভ করছেনা। খুব চিন্তিত হয়ে যায় সুপ্তি আর সাইমা। ওদের কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছেনা ওরা।
সাইমা বাধ্য হয়ে আলিফ কে ফোন করে,
আলিফ ফোন রিসিভ করতেই সাইমা বলে,
“ প্লিজ তোমার বোনের ফোন নাম্বার টা দাও। খুব জরুরী দরকার আমার। ”
“ কি হয়েছে? ”
“ পরে বলবো, আগে নাম্বার টা দাও। ”
“ দিচ্ছি মেসেজ এ।”
আলিফ কথা না বাড়িয়ে ফোন কেটে দেয়, নাম্বার টা মেসেজ করে দেয়। আর মনে মনে বলে,
“ নিজের প্রয়োজন টাই বুঝলে, কেমন অবস্থায় আছি জানতেও চাইলেনা। ”
সাইমা আফিয়া কে ফোন করে সব খুলে বলে, আফিয়া প্রতিউত্তরে বলে,
“ আমি তো এখন ঐ দেশে নেই। তবে আমার হাজবেন্ড কে দিয়ে খোঁজ নিতে পারি মাত্র। আলিফের অবস্থা ভালো নেই, তাই ওকেই সময় দিচ্ছি। ”
“ কি হয়েছে আলিফের? ”
চলবে……