#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ১৫
জামিয়া পারভীন তানি
শিম্মি রাগ কন্ট্রোল করতে পারছেনা, দরজা লাগিয়ে বসে আছে। আলিফ তো এমন ছিলো না, তাহলে কেনো এমন করছে সে! একজনের সন্তান পেটে ধরে অন্যজনের সাথে কিভাবে সংসার করবে সে! কিছুতেই পারবেনা সে, আলিফ তার কেয়ার নিচ্ছে, সুস্থ ও হয়ে যাবে বুঝতে পারছে। কেননা এখন অনেক টা হাটতে পারছে, অন্তত ১০ ধাপ তো হাটতে পারে সে। সব কিছু ই সম্ভব হচ্ছে আলিফের করানো ব্যায়াম এর জন্য। যেভাবে নিয়ম করে তিন বেলা ব্যায়াম করায় তাতে আলিফের উপর চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবে সে কিন্তু আলিফ যা বলেছে তাকে সেটা তো কিছুতেই মেনে নিতে পারবেনা সে।
দরজা তে নক শুনে শিম্মি দরজা খুলে দেয়, আলিফ মাত্রই অফিস থেকে ফিরেছে। শিম্মি রুমে এসে আবার দরজা লাগাতে যাবে তখন আলিফ বাধা দেয়। আর বলে,
• “ সারাদিন পর বাড়িতে আসলাম, কোথায় খেতে দিবে। তা নয়, আমাকে দেখে লুকিয়ে যাচ্ছো যে! ”
• “ না মানে, ঘুমাবো তাই। ”
• “ সারাদিন কি ঘুমালে নাকি?”
• “ হ্যাঁ। ”
• “ একটা কিল দিবো। এতো বেশী ঘুমালে তোমার ক্ষতি হবে, তুমি কি সেটা বোঝো?”
• “ হ্যাঁ বুঝি, কিন্তু ঘুমাবো। তাতে আপনার কি? ”
• “ আমার অনেক কিছু। তোমাকে যা বলি সেটা না শুনলে তোমার কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।”
• “ দেখা যাবে। ”
• “ কি কি করতে বলেছিলাম করেছো?”
• “ না।”
আলিফ রাগে দরজা তে আঘাত করে বেরিয়ে যায় শিম্মির ঘর থেকে। শিম্মি বুঝতে পারে আলিফের রাগের তীব্রতা, কিন্তু চুপ করে ঘরে বসে থাকে ।
রাগ করলে করুক তাতে ওর কি এমন একটা ভাব শিম্মির।
কিন্তু আলিফ এর ভাব দেখে বুঝতে পারে, আলিফ ওকে ভালোবাসে। তাই এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা ই সে করছে।
ভালোবাসার এমনি শক্তি তাকে এড়িয়ে যাবার সাধ্য কারোর ই নাই। শিম্মি কিভাবে আলিফ কে এড়িয়ে যাবে সেটাই বুঝতে পারছেনা এখন৷
°°°
সাইমা চোখে কাজল দিয়েছে, চুলগুলো খোলা রেখে মাথার একপাশে গোলাপ দিয়ে রেখেছে। খয়েরী রঙের শাড়ির সাথে সোনালী ব্লাউজ পড়ে সেজেছে আজ৷ সজীব সাইমার দিকে এক পলক তাকিয়ে যেনো নতুন করে প্রেমে পড়েছে।
• “ তা মহারাণী, কার উদ্দেশ্যে আজ সেজেছেন? ”
• “ যার জন্য আমি জন্মেছি, আমার পূর্নতা যার জন্য, তার মন জয়ের জন্যই সেজেছি।”
• “ সেই মহাপুরুষ টা কি আমি? ”
• “ হলে হতেও পারো!”
সাইমার মাথায় টোকা দিয়ে সজীব বলে,
• “ চলো ঘুরে আসি। ”
• “ কোথায়? ”
• “ ছাদ থেকে। ”
• “ না যাবোনা, বেলকনিতে চলো। ওখানে বসে বসে চাঁদ দেখবো আর তোমার গল্প শুনবো।”
• “ ছাদে গেলেও তো চাঁদ দেখা, গল্প শোনা হয়ে যাবে। ”
• “ না আমার রাতে ছাদে ভয় করে।”
• “ আমি আছি কি করতে? ভয় লাগবেনা, কথা দিলাম। ”
• “ আমি এই সাজে সবার সামনে দিয়ে ছাদে যাবোনা। শুধু তোমার জন্য সেজেছি, সেটা কি তুমি বোঝো না? ”
• “ সরি ডার্লিং, বেলকনিতে ই বসবো আমরা।” সাইমার গাল টেনে কথা টা বলে সজীব।
সাইমা বারান্দায় রাখা চেয়ারে বসে আর সজীব ওর সামনে হাটু গেঁড়ে বসে। একে অপরকে দুইচোখ ভরে দেখা শুরু করে। যেন অনন্তকাল দেখলেও দেখার সাধ মিটবে না।
স্বামী স্ত্রীর বাঁধন এমনি বাঁধন, ভালোবাসা তৈরী হবেই। সাইমা ও এখন শুধু সজীব কেই ভালোবাসে। আর সজীব তো পারলে সাইমার জন্য নিজের সব সুখ ত্যাগ করতেও প্রস্তুত এখন।
°°°
• “ বড় ভাইয়ার মেয়েটা কত্তো বড় হয়ে গেলো আর ছোট ভাইয়ার ও একটা পিচ্চি হয়েছে এখন। তুমি কি কখনো ই বাচ্চা চাও না? ” রেহান এর সামনে মনের দুঃখ প্রকাশ করে সুপ্তি।
• “ যদি বাচ্চা না হয় তাহলে আমি কি করবো বলোতো? ”
• “ তুমি তো খুঁজে খুঁজে সেফ পিরিয়ড এ আমাকে কাছে টানো, তাহলে কিভাবে হবে? ”
• “ এতো কিসের শখ বাচ্চার? সারাদিন প্যা প্যা করবে। আমার ইচ্ছে করেনা ওইসব। ”
• “ রেহান!”
• “ এতো বিরক্ত করোনা এখন , ঘুম আসছে খুব। ”
সুপ্তি অন্য দিকে ঘুরে চোখের পানি ফেলতে শুরু করে। অথচ রেহান পাশে থেকেও বুঝতে পারে না সুপ্তির মনের দুঃখ। হয়তো বুঝেও না বোঝার ভান করে থাকে । কিন্তু কেনো এমন পাষাণ হয়ে গেলো রেহান সেটাই বুঝতে পারছেনা সুপ্তি।
°°°
শিম্মির আর্তনাদ শুনে দৌড়ে আসে আলিফ। শিম্মি মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আর চিৎকার করছে। আলিফ তাড়াতাড়ি শিম্মি কে আঁকড়ে ধরে, শিম্মি কেঁদে কেঁদে বলে,
• “ ব্যায়াম করতে গিয়ে পড়ে গেছি, এখন খুব পেইন করছে৷ সহ্য করতে পারছিনা আমি।”
• “ সিড়ির কাছে তোকে ব্যায়াম করতে কে বলেছে? তোর যদি কিছু হয়, তাহলে আমার কি হবে?”
ততক্ষণে শিম্মি জ্ঞান হারায়, আলিফ কিছুক্ষণ পর খেয়াল করে রক্তে ঘর ভেসে যাচ্ছে। তাহলে কি ওর বাচ্চার কিছু হয়ে গেলো নাকি! ভয়ে ভয়ে শিম্মি কে কোলে করে হসপিটালের উদ্দেশ্য ছুটে আলিফ।
চলবে….