হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ১৪

0
662

#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ১৪

জামিয়া পারভীন তানি

সাইমা শিম্মির মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে বলে,
• “এই সুমন এমন এক কালপিট যে কিনা সম্পত্তির জন্য আমার লাইফ টা তছনছ করে দিয়েছে। ভালোবাসার মানুষ কে তো হত্যা করতে চেয়েও পারেনি , যদিও দীর্ঘদিন কমায় থেকে ফিরে এসেছে। কিন্তু আমার জীবনে অনেক ঝড় বয়ে যায় তারপর থেকে। খুব কষ্টে বাড়ি পালিয়ে পড়াশোনা শেষ করা, চাকুরী পাওয়া, সজীবের সাথে বিয়ে সবই অনাকাঙ্ক্ষিত হলেও এখন সজীব কে ই ভালোবাসি। তবুও প্রথম ভালোবাসা কে কেও ভুলতে পারেনা, মনের এক কোণে তার স্মৃতি রয়েই যায়। তবে সেটা কে কাটিয়ে উঠার ক্ষমতা আমার হয়ে গেছে। সজীব কে আর আমার মেয়ে কে নিয়ে আজ আমি খুব সুখী। তবে এই সুমন কালপিট কে কখনো ই ক্ষমা করবো না, কারণ ওই ই আমার মা বাবার খুনী। ”

সাইমার চোখেও পানি এসে যায়, সজীব সাইমার অন্য হাত শক্ত ভাবে ধরে রাখে। এরপর থেকে সাইমা আলিফের দিকে তাকিয়ে বলে,
• “ তোমার কাছ থেকে সেদিন পালিয়ে গিয়েছিলাম তার কারণ তখন সজীব কেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম, আর আমার মেয়ে আমাদের বাঁধন আরোও মজবুত করে রেখেছে। আমি পারতাম না ওদের ছেড়ে তোমার সাথে সুখী হতে। অতীত কে ভুলে যাওয়া ই ভালো আলিফ।”

আলিফ সাইমার উদ্দেশ্যে বলে,
• “ তোমাকে ফিরিয়ে দিতেই চেয়েছিলাম, পালিয়ে না গেলে নিজ দায়িত্বে ফিরিয়ে দিতাম। যাউ হোক আমার বোন ভুল করেছে, তাই তাকে ক্ষমা করে দিও। আমার বোন টা যতই অন্যায় করুক, সে তো আমার ভালো ই চাই। তাই তাকে কখনো দোষ দিতে পারিনা আমি। ”
• “ না আপু অন্যায় করেনি, সে তার দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। ”

সজীব তখন আলিফ কে বলে,
• “ সাইমা ফিরে আসার কথা তোমাকে বলিনি, তার কারণ ওকে নিয়ে ভয় হতো, যদি তুমি ওকে কেড়ে নাও। আজ সব সংশয় দূর হয়ে গেলো সাইমার কথায়। ”
• “ মানুষ কে অতীত ভোলার ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের দিয়েছে, তাই খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছি। তার আগে এই শয়তান টার বিচার করেই ছাড়বো। ”
• “ তখন বিদেশ যাওয়ার সুযোগ নিয়ে পালিয়েছিলো, আর সেই সুযোগ সে পাবে না। ”
স্নেহার কান্না শুনে সাইমা মেয়ে কে কোলে নেয়, সুপ্তি কে বলে চলে যাওয়ার জন্য। রেহান সুপ্তি কে সাথে নিয়ে সাইমা বেরিয়ে পড়ে। বেশীক্ষণ থাকার ইচ্ছে নেই, দম বন্ধ হয়ে আসে পুরনো কিছু মনে পড়লে।

সাইমা চলে যাবার পর সজীব আলিফ কে বলে,
• “ ভেবেছিলাম আপনি মারা গেছেন, তাই ওকে সুন্দর জীবন দিতে চেয়েছিলাম। জানতাম না এর জন্য এতো ত্যাগ করতে হবে। আমিও অনেক হারিয়েছি, নিজের মা কেও হারিয়েছি ওর আর নিজের দোষে। শুধু ওর দোষ দেখেছি কিন্তু নিজের দোষ দেখিনি কখনো ই। কোর্টে কেস চলাকালীন দেখা হবে বার বার, আজ তাহলে আসি। ”

শিম্মির দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে আলিফের কানে কানে বলে,
• “ মেয়েটা কিন্তু খারাপ না, চোখ দুটো পুরো সাইমার মতো। ”

আলিফ শিম্মির দিকে তাকিয়ে দেখে, সত্যিই কি ওর চোখ সাইমার মতো! নাকি সজীব ফান করছে ওর সাথে।

°°°
আফিয়া বাসায় এসে ভাইকে বলে,
• “ তুই থাক, আমি একটু বাইরে কাজে যাবো।”
• “ কোথায়? ”
• “ এসেই বলবো। ”
আফিয়া বেরিয়ে যেতেই শিম্মি হুইলচেয়ার টেনে সামনে আসে। এসেই আলিফ কে বললো,
• “ আমি আজই চলে যাবো, প্লিজ না করবেন না। ”
• “ কোথায়? ”
• “ আমার একটা খালা আছে, উনার বাসায়। ”
• “ আচ্ছা যেও। ”
বলেই শিম্মির কোমর ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে দেয়। শিম্মি টাল সামলাতে না পেরে আলিফ কে শক্ত করে ধরে রাখে। শিম্মির কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বলে,
• “ একটা মেয়ে একটা ছেলের সাথে এতোদিন থাকলো, অথচ ছেলেটা মেয়েটাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে? একটু ও কি আপন করে নিবে না!”
• “ না, আপনি এতো খারাপ না। ”
• “ খারাপ কি না দেখবে! ”
• “ না।”

শিম্মির কোমরে থেকে পেটের দিকে হাত দিয়ে শিম্মিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। শিম্মির গলায় আলতো করে চুমু দেয় আলিফ। শিম্মি আলিফের থেকে নিজেকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে ১০ থেকে ১৫ ধাপ দৌড় দেয়। লাস্ট এ পড়ে যেতে লাগলে আলিফ ধরে ফেলে।
• “ ভয় পেয়ো না, পড়তে দিবোনা কখনো। ”
• “ আপনি আমাকে ছোঁবেন না। ”

এক হাত শিম্মির গলার কাছে দিয়ে আরেক হাত দিয়ে পেটে আলতো চাপ দেয়।
• “ ছুঁয়ে দিলাম, এখন কি করবে?”
শিম্মি কোনো কথা বলছেনা, কেঁপে ওঠে আলিফের অত্যাচার এ। ঠোঁট দুটো অসম্ভব রকমের কাঁপছে। এক সময় কেঁদে দেয় শিম্মি। আলিফের হাতে পানি পড়তেই আলিফ শিম্মি কে কোলে তুলে সোফায় বসিয়ে দেয়। শিম্মির দুই চোখে দুইটা চুমু দেয়।
• “ তোমাকে ভালোবাসি কি না জানিনা, তুমি আমার নেশায় পরিণত হয়ে গেছো। আর তোমার নেশা কাটানো সম্ভব না। তাই তুমি আমার থেকে পালিয়ে যাবেনা প্লিজ।”
• “ আর আপনার সাইমা? ”
• “ ওটা তো গার্লফ্রেন্ড আর তুমি হচ্ছো বেড পার্টনার। ”
• “ কিহহহহহ!”

শিম্মি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়, আলিফ কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।
• “ অসভ্য ছেলে, আর একবার বাজে কথা বললে খুন করে ফেলবো। ”
শিম্মির চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে গেছে, আর আলিফ দূরে দাঁড়িয়ে হাসছে।

°°°

• “ তুমি কি সত্যিই আলিফ কে ভুলে গেছো?”
সাইমা যেইইনা সজীবের বুকে মাথা দিয়ে শুয়েছে তখনই সজীবের প্রশ্নে রেগে উঠে বসে।
• “ না ভুলিনি, তাই তোর বুকে মাথা দিয়ে ঘুমাচ্ছি। ”
বলেই সজীবের বুকের লোম গুলোর উপর হামলা করে সাইমা। বেশ কতো গুলো তুলেও ফেলে, আর সজীবের চিল্লানি তে পুরো ঘরের সব লোক দরজা তে এসে ডাকাডাকি শুরু করে। সাইমা দরজা খুলে দিতেই রেহান জিজ্ঞেস করে,
• “ কি হয়েছে ভাবী? ভাইয়া এতো চিৎকার করে যে!”
• “ তোমার ভাইয়ের মৃগী ব্যারাম উঠেছে তাই! ”
• “ মানে!”
• “ ঘুমাতে যাও, আজ ওকে ডান্ডা পিটা করবো। অনেক জ্বালিয়েছে আমাকে, তার শাস্তি আজ দিবো। ”

রেহান কিছু না বুঝে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে, সুপ্তি রেহান কে টেনে নিয়ে যায়। রেহান আর সুপ্তি যাওয়া মাত্রই সাইমা একটা সুই হাতে নেয় সজীবের অগোচরে । গোটা ঘর ময় ছুটে সজীবের পিছনে পিছনে। ক্লান্ত হয়ে সাইমা বসতেই সজীব সাইমা কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
• “ এতো রাগো কেনো? একটু রাগাচ্ছিলাম ই তো!”
সাইমা হাতের সুই টা সজীবের হাতে খোঁচা দিয়ে বলে,
• “ তুইমি রাগাচ্ছিলেই তো, তাইতো রেগেছি। মজা লাগলো তাই না!”

এদিকে সজীব হাত ধরে জোরে জোরে নাড়াচ্ছে আর বলছে,
• “দাজ্জাল মেয়ে, আমার আরামের ঘুম হারাম করে দিলো। ”
চলবে…..

আর কিছু কাহিনী বাকি, তারপর শেষ হয়ে যাবে এই গল্প।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here