হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ৫

0
704

#হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ৫

জামিয়া পারভীন তানি

সাইমা গালে হাত দিয়ে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। যে ছেলে কথায় কথায় সন্দেহ করে তার সাথে কথা বলার কোনোই ইচ্ছে নেই তার। এটা দেখে সজীব আরোও রেগে যায়। সাইমা কে বলে,

• “ এবার যদি যেতে চাস তাহলে বলে দে। প্রয়োজন হলে স্নেহা কে নিজের কাছে রাখবো। আর একাও থাকবো না, পারলে আরেকটা বিয়েও করবো। ”

সাইমা সজীবের দিকে তাকিয়ে বললো,
• “ বিয়ে করতে চাইলে আগে ডিভোর্স দিয়ে দিও। ” কথাটা বলে সাইমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
• “ ন্যাকা কান্নায় তো আর ভুলবো না আমি। অনেক ভালোবাসতাম , তাই বলে আর না! আলিফের সাথে আজই যোগাযোগ করবো, এক্ষুণি। ”
• “ না! তাকে কিছুই বলার দরকার নেই। তার ম্যারিড লাইফ আমার জন্য নষ্ট করে দিও না। ”
• “ মানে! সে বিয়ে করলো কবে! দুদিন আগেও তো আনম্যারেড ছিলো। ”
• “ যখন থাপ্পড় টা মারলে , তখন রস্তার পাশের গাড়িতে আলিফ তার বউ কে নিয়ে গেলো। এটা দেখেই ওর নাম উচ্চারণ করেছি। ওরে ভালোবেসে না!”

সজীবের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। একটা অপরাধ বোধ জেগে ওঠে। ভুল বুঝে আবারও ভুল করে ফেললো সে! আলিফের প্রতি চাপা রাগ আলিফের প্রতি ঘৃণা তৈরি করেছে। আলিফের নাম টাও সহ্য করতে পারেনা সজীব। তড়িৎ গতিতে সাইমার হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে নেয়। এরপর বলে,
• “ I’m sorry saima. Please forgive me. ”
• “ আর কতো অভিনয় করবে সজীব? ”
• “ অভিনয় নয়, সত্যিই ভুল হয়ে গেছে আমার। ”
• “ তোমার জেদ টাই জেদ আর আমার অপমান টা কিছুই না!”
• “ মনে করো তোমার কপাল টাই খারাপ, তোমার স্বামী খারাপ, সহ্য করে নাও না! ”
• “ হ্যাঁ, সহ্যই তো করি, মেয়েটা আছে তাই, নইলে পিছু ফিরে তাকাতাম না!”
• “ আমার রাগ টা কন্ট্রোল করতে পারিনা। এটাই আমার প্রব্লেম। একটু মানিয়ে নিতে চেষ্টা করো প্লিজ। ”
• “ আল্লাহ বলেন: ‘তাদের সাথে তোমরা সদ্ভাবে আচরণ কর।’ [নিসা : ১৮]
তাহলে তুমি কি করেছো আমার সাথে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘তোমাদের মাঝে যে নিজের পরিবারের কাছে ভাল, সেই সর্বোত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে ভাল।’ [ইবনে মাজাহ : ১৯৬৭]
কখনো চেষ্টা করেছো আমাকে বোঝার? সব সময় ধোঁকা দিয়েছো। বিয়েটা ও তো ধোঁকা ই ছিলো। তারপর ও জোর করে আদায় করেছো সব কিছু। রাগ আমার ও ছিলো, শুধু রাগারাগি করে দুজনের দূরত্ব বেড়ে গেছে। আর কাছেও যেতে চাইনা। সব কিছুর লিমিট আছে সজীব। তুমি আসলেই লিমিট ক্রশ করে গেছো। হ্যাঁ আমি চলেই যাবো তোমার জীবন থেকে। বিয়ে করবে বলেছো তাইনা! করিও বিয়ে। আমার সব শেষ করাই উচিৎ ।
• “ সাইমা!”
• “ তুমি নিজেই শেষ করতে চেয়েছো সজীব। ”

এরপর সাইমা ড্রাইভার এর উদ্দেশ্যে বললো,
• “ গাড়ি ঘুরান, বাসায় নিয়ে চলেন। ”
ড্রাইভার সজীবের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সাইমা আরোও রাগ করে চিল্লিয়ে উঠে।
• “ কি বললাম শুনতে পান নি? ”

সজীব নিরুপায় হয়ে সাইমার হাত ধরে। সাইমা রাগ করে সজীব কে ধাক্কা দেয়।
• “ টাচ করবে না আমাকে। ভণ্ড কোথাকার। আই হেট ইউ। ”

°°°
শিম্মি কে কোলে করে গাড়ি থেকে নামিয়ে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দেয়। গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিয়ে, হুইলচেয়ার এর পিছনে গিয়ে আস্তে আস্তে ঠেলে হসপিটালের ভিতরে নিয়ে যায়। সিরিয়াল আগে থেকে নেওয়া ছিলো। শিম্মি আলিফের টেক কেয়ার গুলো উপভোগ করতে থাকে। আর আফসোস ও করে, ওর হাজবেন্ড বিয়ের আগে কি না করেছে ওর জন্য। অথচ ওকে কতটা যন্ত্রণা দিয়েছে ও ই জানে। তখন না হয় ওর সম্পত্তি ছিলো, সম্পত্তির জন্য প্রেম করেছে। কিন্তু এখন তো কিছুই নেই! তাহলে ছেলেটা এতো কিছু কেনো করছে! শুধুই কি মানবিকতা! হতেও পারে!

শিম্মি কে ডক্টর কিছু টেষ্ট দেয়, সেগুলো করাতে করাতে প্রায়ই ১২ টা বেজে যায়। রিপোর্ট রাত্রে দিবে। আলিফ শিম্মি কে বলে,
• “ আপনি যদি কিছু মনে না করেন, লাঞ্চ টা রেষ্টুরেন্ট এ করতে চাই।”
• “ প্লিজ না! আপনি খাবার কিনে নিন। ”
• “ গেলে কি প্রব্লেম? ”
• “ আমি হাটতে পারিনা! এটাই প্রব্লেম সব চেয়ে বেশী। তাছাড়া আমার লজ্জা লাগে, আপনি হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে যাবার সময়। ”
• “ সরি, কিনেই নিয়ে আসছি তাহলে।”

আলিফ গাড়ি থেকে নেমে যায়। খাবার নিয়ে ফিরে আসে আবার। এসে দেখে শিম্মি সিটের নিচে মুখ লুকিয়ে আছে। আলিফ কিছু বুঝতে না পেরে শিম্মির মাথায় হাত দেয়। মেয়েটা ভয়ে চিৎকার করে উঠে।

°°°

সাইমা বাসায় এসে ড্রইংরুমে ঢুকে যায়, স্নেহা কে সুপ্তির কাছে দিয়ে সজীব সাইমার রুমে ঢুকে। দেখে সাইমা শুধু নিজের কাপড় গুলো ই নিচ্ছে। বুঝতে পারে সাইমা আবার চলে যেতে চাচ্ছে। দরজা টা জোরে বন্ধ করে সজীব । সাইমা বুঝতে পারে সজীব এসেছে, তবুও নিজের মতো করে কাজ করেই চলেছে। সজীব সাইমার কোমরে হাত দিয়ে বাহুডোরে আঁকড়ে ধরে । সাইমা ছুটানোর চেষ্টা করলে সজীব আরোও জোরে চেপে ধরে। সাইমা সরানোর চেষ্টা করছে, সজীব তখন সাইমার ঠোঁট দুটো নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়।

সাইমা সজীবের পিঠে, অনেক জোরে খামচিয়ে দেয়, তবুও সজীব ছাড়ে না সাইমা কে। প্রায়ই ১৫ মিনিট পরে সাইমার ঠোঁট গুলো ছেড়ে দেয়। সাইমা সাথে সাথে বলে,

• “ এখন কি স্বামীর অধিকার ফলাবে আমার উপর? জোর করে আদায় করে নিবে তো। নিতেই পারো! কাপুরুষের কাছে এর চেয়ে কি আশা করা যায়? ”
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here