হৃদস্পর্শ সিজন ২ পর্ব ২

0
767

#হৃদস্পর্শ ( সিজন ২) পর্ব ২
জামিয়া পারভীন তানি

সজীব নিচে এসে দেখে একটা পিচ্চি মেয়ে সারা বাড়িময় গুটি গুটি পায়ে হাঁটছে আর এটা সেটা নাড়ছে, একা একা ই খিলখিল করে হাসছে। নিজের মেয়েকে চিনতে অসুবিধা হয় না সজীব এর। দৌড়ে এসে মেয়েকে কোলে তুলে মেয়ের কপালে চুমু দেয় । হটাৎ মনে হয় মা ছাড়া এখানে মেয়ে আসলো কিভাবে! চোখ জোড়া আসেপাশে সাইমা কে খুঁজতে থাকে।
• “ তুমি যাকে খুঁজছো সে ওয়াশরুমে গেছে। ভাইয়া ”
• “ কখন এলো সে! ”
• “ এইতো এখুনি আসলো, বললো অফিস থেকে ফিরে হসপিটালে গিয়েছিলো। তাই ফ্রেশ হতে গেছে। ”
• “ এতদিন পরে ও সত্যিই ফিরে এসেছে তো! জানিস বিশ্বাস হচ্ছে না। সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।”
• “ স্বপ্ন নয় সত্যি। ” সাইমা পিছন থেকে বলে।
সজীব চেনা স্বর শুনে পিছনের দিকে ঘুরে তাকায়। সেই আগের মতো নেই মেয়েটা। চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। হয়তো দীর্ঘদিন শান্তিতে ঘুমায় নি সে! স্নেহা কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে সাইমার দিকে এগিয়ে যায় সজীব। আবেগে সাইমা কে জড়িয়ে ধরার আগেই সাইমা দুই পা পিছনে সরে যায়। এরপর বলে,
• “ আমি তোমার জন্য আসিনি। খবরদার আমায় ছুঁবে না!”
• “এমন করছো কেনো? এতো দিন তোমাকে কতো খুঁজেছি তা জানো!”
• “ হ্যাঁ জানি, তাতে আমার কি! তুমি তো আমায় ভালোবাসো না! যদি ভালোবাসতে তাহলে বোনের হাসবেন্ড এর বদলে আমাকে পরপুরুষ এর কাছে ফেলে আসতে না!”
• “ সাইমা, আমার ভুল হয়ে গেছিলো। তাছাড়া আমি বুঝতে পারিনি, ভেবেছিলাম আলিফকে তুমি ভালোবাসতে! তাকে পেয়ে তুমি সুখী থাকবে।”
• “ চুপ করো তুমি। আর একটা ও বাজে কথা বলবে না। মেয়ের তার পিতার পরিচয় দরকার তাই ফিরে এসেছি। নইলে তোমার কাছে আসার চেষ্টা ও করতাম না! আর আমি নিচে ড্রইং রুমে থাকবো। মেয়েকে আদর করার দরকার হলে করিও কিন্তু আমার সাথে কথা বলতে আসবে না। আর একটা কথা, আমি নিজের খরচ নিজেই বহন করবো। ”

এটা বলে সাইমা নিজের থাকার রুমে হনহন করে হেটে চলে যায়। সজীব সাইমার রাগের কারণ বেশ বুঝতে পারে। রাগ করা টাই স্বাভাবিক ওর জন্য। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ে কে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে যায়। আর সুপ্তি দাঁড়িয়ে থেকে দুজনের দুইদিকে চলে যাওয়া দেখে।

°°°

• “ আপনি এতো দিন প্রেম করার পর ও তাকে চিনতে পারেন নি। এটাই আপনার কষ্টের কারণ । আচ্ছা আপনার মা এখন কোথায়? ”
• “ আমার বিয়ের পর মা হার্ট এটাক হয়। এখন আর নেই উনি।”
• “ তার মানে এখন থাকার জায়গা ও নেই আপনার? ”
• “ নাহহ।”
• “ আপনার মায়ের বাসা! ”
• “ মায়ের বাসা! ” বলে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে শিম্মি।
• “ হাসছেন কেনো? ”
• “ মা মারা যাবার পর সব কিছু আমার নামে হয়ে যায়। আর আমার এক্সিডেন্ট এর পর আমার স্বামী তা নিজের হস্তগত করে নেয়।”
• “ সব কিছু লিখে চাইলো আর দিয়ে দিলেন? ”
• “ আমি বুঝতেই পারিনি কিসের কাগজে সাইন করছি। সে যে ঠক, ব্যাবসার কাগজ বলে সম্পত্তি লিখিয়ে নিচ্ছে বুঝতেই পারিনি!”

আলিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার। মেয়েটা ঠিক মতো হাটতেও পারে না! কিভাবে চলে যেতে বলবে সে!মানবিকতা তো আছেই কিন্তু এভাবে একটা মেয়ে কে বাড়িতে রাখলে তো সমাজ তাকে খারাপ বলবে। হটাৎ দেখে শিম্মি উঠে দাঁড়াচ্ছে। আলিফ ও উঠে দাঁড়ায়। শিম্মি দাঁড়িয়ে ই টলমল পা এ হাটা শুরু করে। তখন ব্যালেন্স হারিয়ে আবার পড়ে যেতে শুরু করে। আলিফ মেয়েটা র পিছন দিক দিয়ে ধরে ফেলে । আলিফ একটু রাগ দেখিয়ে বলে,

• “ কোথায় যাচ্ছিলেন? ”
• “ আপনার বাসায় এভাবে থাকা টা ঠিক নয়। আপনি তো আমায় চিনেন না। ”
• “ আপনাকে এইভাবে অসুস্থ অবস্থায় আমি ছেড়ে দিতে পারিনা! আপনি এখানে ই থাকবেন। ”
• “ কিন্তু… ”
• “ কোনো কিন্তু নেই। থাকতে বলেছি থাকবেন। ”

এটা বলে আলিফ রান্নাঘরে চলে আসে। কিছু বানাতে হবে, নইলে খাবে কি মেয়েটা। আলিফ চুলায় ভাত বসিয়ে দেয়, আর মাংস বের করে রেখে পেঁয়াজ কাটছে। তখন শিম্মি জোরে করে ডাকছে,,,

• “ এইযে শুনছেন……”
• “ হ্যাঁ বলেন। ” রান্নাঘর থেকে ই বলে আলিফ।
• “ একটু এইদিকে আসবেন? ”

আলিফ এগিয়ে যেতেই শিম্মি বলে,
• “ ওয়াশরুমে যাবো। না মানে… যেতে পারছিনা তাই।”

আলিফ বাধ্য হয়ে শিম্মির হাত নিজের কাঁধের উপর নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। মনে মনে খুব লজ্জা পেলেও দায়িত্ব হিসেবে বলে,
• “ কাজ শেষ হলে ডাকবেন। ” বলে শিম্মি কে রেখে দ্রুত রান্নাঘরে চলে আসে।

°°°

সাইমা বিছানায় শুয়ে কান্না করছে। এতো দিন পর সজীব কে দেখলো সে! অথচ মনে পুষে রাখা রাগের বশে ভালো ভাবে কথা পর্যন্ত বলেনি সে। ছেলেটা ঠিক নেই, চিন্তায় চিন্তায় খারাপ হয়ে গেছে তা বুঝতেই পারছে সাইমা। কিন্তু কি করে এতো সহজে ক্ষমা করে দিবে সে! সজীব তো বোনের হাসবেন্ড এর বদলে এক প্রকার তাকে ত্যাগ করতেই চেয়েছিলো। ক্ষমা পাওয়া কি এতো ই সহজ! যে কি না নিজ স্ত্রীকে অন্য পুরুষের হাতে তুলে দেয় সে স্বামী কে ক্ষমা করা সহজ নয়।

এমন সময় সুপ্তি দরজায় নক করে। সাইমা চোখ মুছে উঠে বসে। সুপ্তি রুমে এসে সাইমার কাছে বসে।
• “ ভাবী যা হয়েছে অন্যায় হয়েছে তোমার সাথে। কিন্তু এখন সব ভুলে নতুন করে সব কিছু শুরু করো না আবার ।”
• “ তুমি যা জানো না, তা নিয়ে কথা বলো না!”
• “ প্লিজ ভাবী। ”
• “ এখন যাও প্লিজ। একা থাকতে চাই একটু।”
• “ খেয়ে নিবে এসো।”
• “ পরে খাবো, নিজে বানিয়ে খাবো। ”
• “ বানাতে হবে না। চলো তো। খুব ক্ষুদার্থ আমি।”
• “ যাও প্লিজ। ”

সুপ্তি মন খারাপ করে বেরিয়ে আসে। কি আর করবে সে! সব টা শুনেছিলো সে। রেহান এর জন্য ভাবী কে রেখে চলে এসেছিলো ওর ভাই। ওর ভাই ওকে ভালোবাসে ঠিক আছে। তাই বলে ভাবীর সাথে অনেক অন্যায় করেছে ওর ভাই। নিজের ভাইয়ের ঘরের দিকে এগিয়ে যায় সুপ্তি।

সজীব মেয়েকে বুকের উপর বসিয়ে মেয়ের সাথে কথা বলছে । মেয়েটাও হয়েছে বাবার মতো! বাবার প্রতিটি কথার সাড়া দিচ্ছে। সজীব একবার বলছে আম্মু পঁচা আরেকবার বলছে দুষ্টু তোমার আম্মুটা ! প্রতি কথায় মেয়ে হু হু বলে সাড়া দিচ্ছে। সুপ্তি বাইরে থেকে শুনে হাসতে শুরু করে। সুপ্তির হাসি শুনে সজীব ওর দিকে তাকায়। সুপ্তি বলে,
• “ বাপ মেয়ের কথা শুনে হাসি আসলো। ”
• “ ও কি করছে রে!”
• “ লুকিয়ে কাঁদতে দেখেছি। তোমাকে ভালোবাসে অনেক, অভিমান করেছে একটু। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো।”
• “ ঠিক হলেই ভালো। ফিরে যে এসেছে এটাই এখন অনেক। ওর ভালোবাসা আদায় করেই ছাড়বো থাম।”
• “ আচ্ছা, খেতে এসো এখন। ”
• “ তুই যা! আমি আসছি। ” বলতে বলতে সজীব এর গায়ে স্নেহা হিসু করে দেয়। সজীব মেয়েকে তাড়াতাড়ি নিচে বসিয়ে দেয়। আর বলে,
• “ আম্মু পঁচা, তুমিও পঁচা। হিসু করবে তো বলতে হয় না! ওওও তুমি তো আবার কথাই বলতে পারো না!”
সুপ্তি সজীবের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। সুপ্তি স্নেহাকে পরিষ্কার করিয়ে দেয়। আর সজীব নিজেও ফ্রেশ হয়ে নেয়।

°°°
আলিফ কিছুক্ষণ পর গিয়ে দেখে মেয়েটা ওয়াশরুমে ই আছে। আলিফের সন্দেহ হয়, বাইরে থেকে ডাকে বেশ কিছুক্ষণ। সাড়া না পেয়ে দরজা খুলে দেখে শিম্মি মেঝেতে পড়ে আছে। আলিফ তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে শিম্মিকে তোলে। ড্রেস ভিজে গেছে দেখে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়। শিম্মির মুখে পানি পড়াতে শিম্মি জেগে ওঠে। একটা ছেলের বাহুডোরে সে ভিজে চুপসে আছে। লজ্জায় চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নেয়।

সুন্দরী মেয়েরা লজ্জা পেলে তাকে আরোও বেশী সুন্দর লাগে। আলিফ ওর দিকে তাকিয়ে আছে বেশ কিছুক্ষণ। শিম্মি নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,
• “ আসলে মাথা ঘুরে গেছিলো। তাই বুঝতে পারিনি কি হয়েছিলো। ”
• “ সরি, ভিজে গেছিলেন। এই অবস্থায় ঘরে নিতে পারিনা বলেই পানি ছেড়ে দিয়েছি।”

শিম্মি নিজের হাত দিয়ে পানি মগে করে নিয়ে ভালো করে ভিজে । আর বলে,
• “ খুব খারাপ লাগছিলো, গোসল করে এখন ফ্রেশ লাগছে ”

আলিফ শুধু তাকিয়ে দেখে, মানুষ পরনির্ভরশীল হলে কতটা অসহায়! লজ্জা ও ত্যাগ করতে হয় অক্ষম দের। আলিফ মুখে কিছু বলে না, একটা টাওয়েল দিয়ে শিম্মির মাথা মুছিয়ে দেয়। এরপর ঘরের মেঝেতে বসিয়ে দিয়ে নিজের শার্ট প্যান্ট এগিয়ে দেয়।
• “ ঘরে এখন অন্য পোশাক নেই। এগুলো এখন পড়ে নিন। বসে বসে তো চেঞ্জ করতে পারবেন। না পারলেও করবেন। আমি করে দিতে পারবো না! আমি গোসল করে আসছি। ”
বলে আলিফ ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। শিম্মি কোনরকম ভাবে চেঞ্জ করে আস্তে আস্তে বিছানায় উঠে বসে।

চলবে…..

ঈদের বেড়ানোর জন্য দুইদিন সময় পাইনি। আজ যথেষ্ট বড়ো করেই লিখলাম। নতুন কাহিনী কেমন হচ্ছে অবশ্যই জানাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here