#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ২০)
লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
সজীবের ঘনঘন নিঃশ্বাস সাইমার গলার উপর উপছে, সাইমার ঘুম ভেঙে যায়। সজীবের গলা জড়িয়ে ধরে নাক বরাবর আলতো করে কামড়ে দেয়। সজীব ঘুম ভেঙে সাইমার দুষ্টুমি হাসি দেখে নিজেও মুচকি হাসে । সজীব নিজেও সাইমার নাক চেপে ধরে। এরপর বলে,
• “ এতো খুশি কেনো ম্যাম?”
• “ মোটেও খুশি না, তোমার ঘুম ভাঙালাম মাত্র। আচ্ছা যাই হোক, রেহানের কোনো খবর পেলে?”
• “ নাহহহ! খুব চিন্তা হচ্ছে সুপ্তির জন্য। হুট করে বিয়েটা দিলাম, অথচ মেয়েটা শান্তি করে সংসার ও করতে পারলোনা! ”
• “ ও কোন দেশে যেনো থাকে?”
• “ সেদিন যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিল সুইজারল্যান্ডে যাবে! ”
• “ তো তুমি কাগজ ঠিক করো, সজলের বিয়ের ঝামেলা মিটে গেলে তুমি আমি আর স্নেহা সুপ্তি কে নিয়ে সুইজারল্যান্ড থেকে বেড়িয়ে আসি। ”
• “ বুদ্ধি তো ভালোই বের করেছো তুমি। এই না হলে আমার ওয়াইফ! ” বলেই সাইমাকে বুকে টেনে নেয় সজীব।
• “ যাও, সরো!”
• “ ছাড়বোনা, অনেক অনেক আদর করবো আজ। প্রাণ খুলে তোমার সাথে সময় কাটাবো। ”
সজীব সাইমাকে বুকের মাঝে নিয়ে নেয়, আদরে আদরে ভরিয়ে দিতে থাকে। স্নেহা কান্না শুরু করে দেয়, সাইমা বাধ্য হয়ে সজীব কে সরিয়ে দেয়। স্নেহাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে থাকে। সজীব একটু গম্ভীরমুখে বাইরে চলে আসে। সাইমা বুঝতে পারে সজীব রাগ করেছে তার ব্যবহারের জন্য। স্নেহা কে ফ্রেশ করিয়ে দেয়, এরপর রাহেলার কাছে দিয়ে আসে, ওকে খাইয়ে দিতে বলে।
সাইমা বাইরের দরজা খোলা দেখে বুঝতে পারে সজীব বাগানে আছে, সাইমাও বেরিয়ে আসে। সকালের ফুরফুরে বাতাস মেজাজ ভালো করে দেয়। বাগানে হাটতে খুব ভালো লাগছে সাইমার। আশেপাশে তাকিয়ে সজীব কে খুঁজতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে দেখে একটা বেঞ্চে বসে আছে সজীব। সাইমা সজীব কে পিছন দিক থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বুঝতে পারছে সজীব খুব রাগী হওয়ায় একটুতেই রেগে গেছে। সজীব হাত সরিয়ে দেয়,
• “ বাইরে এমন ন্যাকামি না করলেই নয়?”
• “ তোমার ঘরের বউ ই তো, অন্য কেউ তো নয়। ”
• “ যাওনা, তোমার মেয়ের কাছে যাও। আমার কাছে কি মনে করে? ”
• “ মেয়ে মনে হচ্ছে আমার একার, আমি একা একা ওকে নিয়ে এসেছি! ”
• “ যখনই তোমাকে কাছে টানি তখনই তোমাকে ওর কাছে যেতে হয় তাইনা?”
• “ নিজের মেয়েকে হিংসা করো নাকি? ”
এবার সজীব উঠে দাঁড়ায়, সাইমাকে বুকের ভেতর টেনে ধরে। সাইমার কানে কানে বলে,
• “ সরি, আসলে যখন যা চাই! বোঝো ই তো ছেলে মানুষ, না পেলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। মাফ করে দিও প্লিজ, সুমু পাখি। ”
• “ নতুন নাম টাও খুব সুন্দর লাগলো। ” সজীবের বুকের বা পাশে একটা চুমু দিয়ে দেয় সাইমা।
°°°
সজলের বিয়ের বরযাত্রী, রিসিপশন সব অনুষ্ঠান শেষ করে সাইমা সজীব । সুপ্তির দিকে তাকিয়ে এই অনুষ্ঠান গুলো এতো বেশী এনজয় করতে পারেনি। সুপ্তি মন খারাপ করে বসে ছিলো, তখন সুপ্তির সামনে কিছু কাগজ রাখে সজীব।
• “ কি এগুলো! ” একটু চমকে উঠে সুপ্তি।
• “ খুলে দেখ! ”
সুপ্তি একটু অবাক হয় ভিসার কাগজ দেখে! সাইমা তখন সুপ্তি কে জড়িয়ে ধরে বলে,
• “ মন খারাপ করার দিন শেষ ননদিনী, আমরা দুইদিন পর ই যাচ্ছি তোমার বরের কাছে!”
• “ সত্যিইইই!”
• “ আমরা দুইদিন পর ই যেতে পারবো, তখন রেহান কেও খুঁজে এনে দিবো তোমার কাছে। ”
সুপ্তি সাইমার কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে দেয়, এরপর বলে,
• “ আমি সত্যিই খুব খুশি হবো ভাবী। খুব মিস করছিলাম ওকে আমি। ”
°°°
• “কাল আমাদের রিসিপশন হলো আর আজই কিনা অফিসের দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে সজল! আমরা কিছুদিন নিজের মতো করে কাটানোর সময় ও পেলামনা! ” সজলের দিকে রাগী দৃষ্টি তে তাকিয়ে বলে মাহিরা।
• “ ১৮ দিন আগে বিয়ে হয়েছে, আর কতো সময় চায় তোমার? দেখতেই তো পাচ্ছো, রেহানের জন্য মন খারাপ সুপ্তির, তা কি দেখতে পাচ্ছোনা!” সজল ও মাহিরাকে কথা শুনিয়ে দেয়।
• “ সুপ্তির এতো কষ্ট হলে আমাদের সাথে ই তো যেতে পারতো! আমাদের ও ঘুরে আসা হতো!”
• “ ভাইয়া বিয়ের পর থেকেও কোথাও ঘুরতে যায়নি, আর তারা এইবার ঘুরতেও যাচ্ছেনা। যাচ্ছে তো রেহান কে খুঁজতে। ”
• “ খুঁজার নামে ঘুরতেই যাচ্ছে ওরা। ”
• “ তুমি এবাড়িতে আসতে না আসতেই কি ভাই ভাবীর নামে আমার কান ভারী করতে চাচ্ছো মাহিরা! তাহলে শুনে রাখো, আমার বাবা মারা যাবার পর থেকে ভাই যেভাবে বিজনেস এর হাল ধরে রেখেছে, ভাইয়া না থাকলে আমরা হারিয়েই যেতাম। যে ভাবী তোমাকে মেনে নিয়েছে, ভাইকে রাজী করিয়ে তোমাকে এই বাড়িতে এনেছে তাকেও তুমি ছোট করছো। ওরা বিয়ের পর থেকেও কাজের মাঝে ব্যস্ত থেকেছে ।নিজেদের ঠিক মতো সময় দিতে পারেনি। এরপর এতো ঝড় বয়ে গেলো ওদের উপর দিয়ে। ওরা যদি একটু ঘুরেও দোষের কিছু তো দেখছিনা আমি মাহিরা। ”
• “ আই এম সরি সজল, বুঝতে পারিনি তুমি এভাবে রিয়্যাক্ট করবে। ”
সজল আর কথা না বাড়িয়ে অফিসের দিকে রওনা হয়।
°°°
সুইজারল্যান্ডের একটা লজে উঠে ওরা চারজন, দুইটা রুম নেয় সজীব। একটা স্নেহার জন্য, অন্যটাতে ওরা তিনজন থাকবে।
আসার সময় সজীব আলিফের আম্মার কাছে রেহানের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে এসেছিলো, খুঁজে পেতে বেশী কষ্ট করতে হবেনা অবশ্য।
সজীব পৌঁছে ই সজলকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয় তারা ঠিক ভাবে পৌঁছে গেছে। কিন্তু সজল যা বললো তাতে সজীবের মাথা ধরে গেছে। ফোন টা ফেলে দিয়ে বেডের উপর বসে পড়ে।
সাইমা জিজ্ঞেস করতেই সজীব রেগে বলে,
• “ কি আবার হবে, তোমার গুণধর ভাইয়ের বউ মিলা জেল থেকে পালিয়ে গেছে। এইসব অসভ্য দের বিরুদ্ধে সব প্রমাণ থাকার পরও কিভাবে যে পালালো। কিছুই বুঝলাম না, নিশ্চিত চক্রান্ত করছে। ”
• “ টেনশন যেনো চারিদিক দিয়ে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। পুলিশের কাজ পুলিশ করবে, নিশ্চিত ওদের ধরে আনবে। চিন্তা করোনা আর। ”
সাইমা সজীব কে শান্তনা দিলেও মনের ভিতর খচখচ করতে থাকে, সজল আর মাহিরার জন্য ।
°°°
সুপ্তি হটাৎ ঘুম থেকে জেগে উঠে, রেহান সামনে বসে আছে। সুপ্তি কোন কিছু না ভেবে রেহান কে জড়িয়ে ধরে। কেঁদে কেঁদে বলে,
• “ এতোদিন কোথায় ছিলে? ফোন কেনো দাওনি! ”
• “ জরুরী কাজে আটকা পড়ে গেছিলাম। সরি মিষ্টি সুপ্তি। ”
• “ কতো কষ্ট পেয়েছি তোমার জন্য তুমি জানো!”
• “ আমি এসে গেছি তো, এখন যা ইচ্ছে তাই করো। ”
সুপ্তি রেহানের বুকে কয়েকটা আঘাত করে, এরপর পুরো মুখে অজস্র চুমু দিতে থাকে।
চলবে…..