#হৃদস্পর্শ ( পর্ব ৯)
#লিখাঃ জামিয়া পারভীন তানি
সাইমা প্রথমেই ইন্টারনেট এ কিছু চাকুরীর বিজ্ঞাপন দেখে, কয়েক জায়গায় সিভি ইমেইল এ পাঠিয়ে দেয়। স্নেহা কে মাহিরা আর কাজের বুয়া রাহিলার দায়িত্বে রেখে বেরিয়ে পড়ে। অনেকদিন পর বাইরে এসেছে, নিজের কাছেও অস্বস্তি লাগছিলো সাইমার।
দুপুর ২ টা,
সাইমা ফিরে এসে শাওয়ার নিয়ে ক্লান্তি দূর করে। সুপ্তি এসেই ভাবীকে জড়িয়ে ধরে,
• “ ভাবীইইইই! জানো মাহিরার ফ্যামিলি রাজি হয়ে গিয়েছে। আসলে ছোট ভাইয়া ই গাধা, তাই মাহিরার এমন স্টেপ নিতে হয়েছে। ”
• “ সত্যিই! কবে বিয়ের ডেট ফাইনাল করলে?”
• “ এক মাস পর! আজ মাহিরা ওর বাসাতে চলে যাবে। একেবারে বিয়ের পর আসবে। ”
মাহিরাও সাইমার রুমে আসে, সাইমার গলা জড়িয়ে বলে,
• “ তোমার জন্যই সব সম্ভব হলো ভাবী! না না আজ থেকে আপু ডাকবো। বড় আপু! ”
• “ আমিও খুব হ্যাপি মাহিরা, বাসায় খুব বোরিং ফিল করতাম একা একা। এখন থেকে একজন সঙ্গী পাবো। ”
• “ আচ্ছা আপু! তুমি কোথায় গিয়েছিলে? ”
• “ ও একটা কাজে! বাদ দাও। ”
সুপ্তির একটু সন্দেহ লাগে, সাইমা তো কখনো কোথাও যায়না। যেতেই পারে, কাজ তো থাকতেই পারে। মন কে শান্তনা দিয়ে মাহিরার সাথে গল্প করতে শুরু করে। সাইমা স্নেহাকে গোসল করিয়ে খাইয়ে দেয়। পরম মমতায় গান বলে স্নেহাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
“ভালোবাসতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পারিনি!
প্রেম শুরু হবার আগেই দূরে চলে গেলে।
পুরনো প্রেমের স্মৃতি ভুলতে চেয়েছিলাম,
বুঝতে পারিনি হায়! তুমি যে নিজেই অতীত হলে।
আমার কোল জুড়ে যখন এলো আমাদের সন্তান,
কখনো দিতে চাইনি তাকে এতিমের পরিচয়।
কিন্তু হায়! আর কতোদিন এতো অবহেলা সহ্য হয়?
ভুলেই গিয়েছিলাম আমি! পৃথবীটা মেয়েদের নয়।
হয়তো থাকবোনা আমি চিরকাল , আর!
আমার কন্যাকে দেখে রেখো এই একটাই আবদার। ” লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
ডায়েরিতে কবিতা টা লিখে রাখে সাইমা, খুব মন খারাপ করছিলো তার সেই জন্য।
রাতে ডিনার শেষ করে সজীব ঘরে এসে ক্লান্ত শরীর বিছানায় এলিয়ে দেয়, সাইমা বারান্দায় স্নেহা কে নিয়ে গান করে করে ঘুম পাড়াচ্ছিলো। সজীবের মনে হচ্ছে সারাদিন কাজ শেষ করে একটু ও কি শান্তি পাবেনা সে। বাচ্চার কান্না আবার বউয়ের গান সব কিছু বিরক্ত লাগছিলো তার। বারান্দায় উঠে আসে সজীব।
• “ ওকে নিয়ে নিচে যাবে প্লিজ! খুব ক্লান্ত লাগছে। ”
• “ নিজের মেয়েকে ও সহ্য করতে পারছোনা দেখছি। ”
• “ আমার মেয়েকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু মাথাটা খুব ধরেছে। যদি তোমার দয়া হয় কথাটা শুনো! ”
সাইমা আর কথা না বলেই নিচে চলে আসে। ড্রইং রুমের বেডে বসে পড়ে, স্নেহা কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে নিজেও শুয়ে যায়। নিজের জন্য না হোক সন্তানের জন্য তাকে বাঁচতেই হবে।
সাইমা এখন থেকে প্রতিদিন ই সজীব চলে যাওয়ার পর বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। অবশ্য স্নেহা কে সাথে নিয়েই যায়, তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসে। সুপ্তিকেও বলে না নিজে থেকে কিছুই, সুপ্তির সন্দেহ বেড়ে যেতে থাকে। সজীব কেও কিছু বলতে পারেনা সুপ্তি।
ইতিমধ্যে সজলের বিয়ের কেনাকাটা করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সবাই। সুপ্তি সজল রোজই বাজারে যায় এটা সেটা কেনাকাটা করে, আর সাইমা বিকেলে ঘরে বসেই থাকে। প্রতিদিন ইমেইল চেক করে, ফোন চেক করে।
সাইমা আজ খুব খুব খুশি, একটা চাকুরীর ইন্টারভিউ দিতে হবে ওকে। বাসার কাউকে না বলেই স্নেহাকে সাথে নিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে আসে। সুপ্তি অবশ্য তখন ভার্সিটি তে ছিলো।
ভার্সিটি তে নতুন লেকচারার এসেছে, যাকে দেখলে সবাই ক্রাশ খাবে। সবার মতো সুপ্তিও হা হয়ে ক্রাশের পানে চেয়ে বসে থাকে।
• “ এক্সকিউজ মি ম্যাম! ”
সুপ্তি যেনো স্বপ্নে বিভোর হয়ে আছে , কখন যে প্রফেসর সামনে এসে ডাক দিচ্ছে সেটা শোনার অবস্থায় সে নাই। সুপ্তির পাশে থাকা ওয়াটার পট থেকে পানি নিয়ে সুপ্তির মুখে ছুড়ে প্রফেসর।
সুপ্তি ধড়ফড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়,
• “ জ্বী স্যার, কিছু বলছিলেন? ”
• “ ক্লাসের মধ্যে কি দিবা স্বপ্ন দেখো নাকি? ”
• “ না মা মা নে নে “
• “ আমার রুলস, কেউ আমার ক্লাসে অমনোযোগী হলে তাকে ক্লাস থেকে বের করে দিই। এটা ওয়ার্নিং দিলাম। ”
• “ জ্বী স্যার! ”
প্রফেসর আবারোও ক্লাস শুরু করে, এক ঘন্টার ক্লাস শেষে বেরিয়ে যেতে নিতে সুপ্তি দৌড়ে প্রফেসর এর সামনে যায়।
• “ এ কেমন অসভ্য মেয়ে তুমি? ”
• “ সরি প্রফেসর, আসলে আপনার নাম জানতে চাচ্ছিলাম। ”
• “ ক্লাসে ঢুকেই পরিচয় দিয়েছিলাম! তখন কি ঘুমাচ্ছিলে?”
• “ সরি প্রফেসর! ”
প্রফেসর নাম না বলেই সুপ্তির হৃদয় হরণ করে চলে গেলো। সুপ্তি বাসায় ফিরে আসলো ঠিকই কিন্তু সারাদিন খুব উদাসীন। কিছুক্ষণ পর পর একা একা হাসছে। প্রেমে পড়লে মন অনেক ভালো থাকে। তাই হয়তো এতো খুশি সে।
সাইমা সুপ্তির দিকে খেয়াল করে সুপ্তিকে জিজ্ঞেস করে,
• “ ননদিনীর আজ কি মন অনেক ভালো? প্রেমে পড়ে গেলে নাকি! ”
• “ ভাবী তুমিও না! যা ইচ্ছে তাই। ”
হাসতে হাসতে চলে আসে সুপ্তি। সাইমা ঠিক করেই নেয় সুপ্তি হয়তো কারোও প্রেমে পড়েছে। সুপ্তির কথা ভেবে হাসতে হাসতে নিচে আসে। স্নেহাকে সাথে নিয়ে সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে বসে থাকে। মা মেয়েতে গল্প করতে থাকে। সাইমার যত একাকীত্ব স্নেহার সাথে কথা বলেই মিটে যায়। সজীবের সামনে খুব একটা যায় না সাইমা।
সজীব কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছে সাইমা তার আশেপাশে আসেনা, রাতেও পাশে থাকেনা। সজীব ইদানিং খুব মিস করছে সাইমাকে। রাতেও যে কখন খেয়ে রুমে চলে যায় সজীব টের ও পায়না। সুপ্তির ঘরে যায় সজীব , সুপ্তি একা একা হাসছে।
• “ কিরে বোকার মতো একাই হাসছিস কিসের জন্য? ”
সুপ্তি চমকে উঠে,
• “ এই সময় তুমি এখানে? ”
• “ উম্মম্ম, ব্যস্ততায় আর আগের মতো আসা হয়না তোদের কাছে। ”
• “ হুম, সবার ই ব্যস্ততা। হুহহহ ”
• “ সাইমা কোথায় রে!”
• “ পুলের দিকে আছে মনে হয়, কিন্তু!”
• “ কয়েকটা দিন থেকে ওকে দেখতে পাচ্ছিনা। ওকে যাচ্ছি!”
• “ ভাইয়া! ভাবীর বিষয়ে কথা ছিলো। ”
• বল
• “ ভাবী রোজ তুমি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে কোথায় যেনো যায়, বলে না জিজ্ঞেস করলে কোথায় যায় না যায়। ”
• “ আগে বলিস নি কেনো?”
সজীব তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসে সুপ্তির রুম থেকে। সাইমা কি ওকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে। কোথায় যাবে ও।
সাইমা পুলের ধারে বসে গান গাইছে, সজীব মুগ্ধ হয়ে শুনতে থাকে।
“ জানো! বড়ো ইচ্ছে হয়, তোমায় নিয়ে হারিয়ে যেতে ঐ দূর অজানায়।
যেখানে পাখিদের কলরবে ঘুম ভেঙে যায়।
দিন টা যেথায় শুরু হয়, অসীম ভালোবাসায়।
ফুলের সৌরভ যেনো আমাদের সুখের সাগরে ভাসায়।
সুখের সংসার হবে, থাকবে না কোন কোলাহল,
তোমার আমার ভালোবাসার ঢেউ যেনো বয়ে যাবে অনর্গল।
সুখ পাখীরা এসে নাড়া দিয়ে যাবে দুটি হৃদয়,
দুজনের মধ্যে শুরু হবে নতুন গল্পের অভ্যুদয়।
তোমার মাঝেই খুঁজে পাবো আমার অস্তিত্ব ।
তুমি ছাড়া আমি যে চরম নিভৃত।
জানো! এই স্বপ্ন কখনোই সত্য হবার নয়!
ভালোবাসা যে হারিয়ে যায়, নদীর মোহনায়। ” লিখা : জামিয়া পারভীন তানি
চলবে……