উড়ো পাতার ঢেউ পর্ব ৫২

0
351

#উড়ো_পাতার_ঢেউ
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৫২
_________________

ইরতিজা, জুহি, রিশন তিনজনই ভয় পেয়ে গিয়েছিল পুলিশের গাড়ি দেখে। ওদের ধারণা বলছিল ক্যাফেতে বসে ঝগড়া করার জন্য পুলিশ ওদেরকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে। কিন্তু না, ক্যাফেতে একজন অপরাধীকে ধরতে এসেছিল তারা। মার্ডার কেসের আসামি লোকটা। ক্যাফের মালিকই খবরটা দিয়েছিল পুলিশের কাছে। চেহারা গোপন করার চেষ্টা করেও নিজেকে লুকাতে পারেনি অপরাধী। ক্যাফের ভিতর আসামির সাথে পুলিশের হালকা এক দৌড় ঝাঁপ হয়ে গেছে। ক্ষণিকের ভিতরেই ক্যাফেতে এসে ভিড় করেছে সাংবাদিকরা। শোরগোলের সৃষ্টি হয়েছে। রিশন সময় নষ্ট করেনি। দ্রুত সে নিজের মোবাইলে ভিডিয়ো করতে শুরু করলো এখানের পরিবেশ। জুহিও উৎসুক হয়ে দেখতে থাকে ঘটনাটা। ক্যাফের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্ন আগুনের ফুলকির মতো ফুঁটছে। পুলিশ উত্তর দিচ্ছে। অনেক ক্যামেরা, মাইক্রোফোন দেখা যাচ্ছে। বড়ো একটা কেস বোঝাই যাচ্ছে। ইরতিজার অবশ্য এসবে কোনো আগ্রহ নেই। তার চিন্তা মি. হেনরির থেকে পাওয়া ফোন কলটা নিয়ে। তাকে এখনই একবার হাসপাতালে যেতে হবে।
জুহি উৎসুক হয়ে সামনের সাংবাদিক দলটাকে দেখছে। ইরতিজা ডাকলো,
“জুহি!”

অনেক কোলাহল। কোলাহলের শব্দ পেরিয়ে ডাকটা জুহির কানে পৌঁছাতে সমস্যা হলো। ইরতিজা আবার ডাকলো,
“জুহি!”

শুনতে পেল জুহি এবার। জিজ্ঞেস করলো,
“কী?”

“আমাকে একটা জায়গায় যেতে হবে। আমি চলে যাচ্ছি। সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে যাব।”

জুহির ধ্যান এখন অন্যদিকে, তাই সে ইরতিজার কথাকে তেমন গ্রাহ্য করলো না। শুধু বললো,
“ঠিক আছে যাও।”

ইরতিজা ভিড় ঠেলে ক্যাফে থেকে দূরে সরে এলো। তারপর একটা ট্যাক্সি নিয়ে সোজা চলে এলো হাসপাতালে।
মি. হেনরির বলা রুম নাম্বারে এসে দেখলো বেলা লিমাস বেডে শুয়ে আছেন। ইরতিজাকে দেখে হাসলেন তিনি। বললেন,
“আমাকে দেখতে এভাবে ছুটে এসেছো কেন?”
বলতে বলতে উঠে বসলেন হেলান দিয়ে।

“আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!”

ইরতিজা বেলা লিমাসের কাছে এগিয়ে এলো।
বেলা লিমাস ইরতিজাকে নিজের পাশে বসতে বললেন। ইরতিজার মুখখানিতে স্নেহের পরশ বুলিয়ে বললেন,
“তুমি মেয়েটা এত আদুরে কেন? এত আদুরে, মায়াবী বলেই কি আমার ছেলে মায়ায় পড়লো এই মায়াবতীর?”
বেলা লিমাস ইরতিজার কপালে চুমু খেলেন।
এমন স্নেহের চুম্বন পেয়ে ইরতিজার চোখে অশ্রুর ঢল নামলো।

“কী হয়েছিল? হঠাৎ করে…”

“এটা ছোটো-খাটো একটা হার্ট অ্যাটাক! চিন্তা করো না তুমি।”

ইরতিজা ছলছল চোখে তাকিয়ে রইল। বেলা লিমাস বললেন,
“গতকাল দেখা করতে গিয়েছিলাম ক্যানিয়লের সাথে। আবদার করেছিলাম ওর কাছে, যাতে ও আমাকে একবার জড়িয়ে ধরে। কিন্তু জড়িয়ে ধরলো না। নিজ থেকেই জড়িয়ে ধরলাম ওকে। আমার ছেলেটা আমাকে এত ভালোবাসে কেন বলো তো ইরটিজা?”

ইরতিজার দু চোখ দিয়ে ধারা নামে। ভিতরটা কেঁদে ওঠে হু হু করে। বললো,
“ক্যানিয়লের কাছ থেকে এটা গোপন রাখা কি উচিত হচ্ছে?”

“হচ্ছে। আমার মৃত্যুর পর তুমি যখন ওকে দেখবে তখন বুঝতে পারবে এটা করা ঠিক ছিল।”

________________

আজাদ চৌধুরী গতকাল থেকে চিন্তায় আছেন। চিন্তিত মুখ নিয়ে বসে থাকছেন। নওরিনের মুখ থেকে সমস্তটা শোনার পর সে কল করেছিল হামাদকে। হামাদ তাকেও এক কথা বলেছে, এই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল, এই ভুলকে আর সামনে এগিয়ে নেওয়া উচিত হবে না। আজাদ চৌধুরী বুঝতে পারছেন না তিনি কী করবেন! চিন্তার যন্ত্রণায় মনে হচ্ছে তার রগ ছিড়ে যাবে। তিনি অবশ্য এই সিন্ধান্ত ভেঙে দেওয়া ছাড়া উপায় দেখছেন না। যেখানে ছেলে চাইছে না তার মেয়েকে বিয়ে করতে, সেখানে সে জোর করে মেয়েকে বিয়ে দিলে তার মেয়ের জীবনটা নষ্ট হবে শুধু। হামাদের কী হবে? ওর তো কিছু হবে না। বিয়ের পরও গার্লফ্রেন্ড নিয়ে সে স্বাধীন চেতনায় বাঁচতে পারবে। এতে তার কোনো সমস্যা হবে না। কারণ সে তো নওরিনকে বিয়েটা করবে চাপে পড়ে, মন থেকে না। আর নওরিন এসব সহ্য করতে না পেরে মনস্তাপ অনলে পুড়বে।

নওরিন পিছনের লনে এসে দেখলো বাবা চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বুজে আছেন। বাবা যে হামাদের ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করছেন সেটা বোঝা গেল সহজেই। নওরিনের খারাপ লাগলো এটা দেখে। বাবার এমন চিন্তিত মুখ তাকে কষ্ট দিচ্ছে। সে এগিয়ে এসে বাবাকে বললো,
“এত কী চিন্তা করছো আব্বু? আমি ওই বদমাইশটাকে বিয়ে করবো না। ও নিজ থেকেও যদি এখন আমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যায় তারপরও বিয়ে করবো না আমি। এই সম্পর্ক ভেঙে দাও। এটা ভাঙা তো তেমন কঠিন কিছু না।”

আজাদ চৌধুরী চোখ খুলে চাইলেন। বললেন,
“তুমি শিওর?”

“হ্যাঁ। আমার খারাপ লাগছে না বিশ্বাস করো। ওর সাথে সম্পর্ক চূর্ণ হলে কষ্ট লাগবে না আমার। কারণ যে মানুষটা আমায় ভালোবাসেনি সেই মানুষটার জন্য কষ্ট কেন পাবো?”

আজাদ চৌধুরী উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“কষ্ট হয়তো পেতে, যদি তুমি ওকে সেরকমভাবে ভালোবাসতে। তোমার ভালোবাসার মাঝেও হয়তো ত্রুটি ছিল বলে আমার ধারণা। যেখানে দুজন মানুষের ভালোবাসাই ত্রুটিপূর্ণ সেখানে এই বিয়ের সিদ্ধান্ত আসলেই ভুল ছিল।”
আজাদ চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললেন,
“এটা কোনো ব্যাপার না। মানুষ ভুল থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে। এই ভুল সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই তোমার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে বলে আমার বিশ্বাস।”

আজাদ চৌধুরী ঘরের ভিতরে চলে গেলেন। নওরিন দরজায় তাকিয়ে দেখতে পেল ওখানে শারমিন আহমেদ দাঁড়িয়ে আছেন। নওরিন এগিয়ে এলো। শারমিন আহমেদের দুই হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ইতস্তত করে বললো,
“স্যরি মা! তুমি যখন বলেছিলে হামাদ বিদেশি ছেলে, লাইফ পার্টনার হিসেবে কেমন না কেমন হবে, আরও কিছুটা সময় নিয়ে ওকে পরখ করে দেখতে, তোমার কাছে ওকে একটু কেমন যেন মনে হয়েছে, তখন আমি তোমাকে যা নয় তাই বলেছিলাম! সেজন্য আমি একান্ত দুঃখিত!”

শারমিন মৃদু হেসে বললেন,
“মা-মেয়ের মধ্যে কেন এই ‘দুঃখিত’ শব্দটা আসবে?”
সে জড়িয়ে ধরলো নওরিনকে।
“আমার মেয়ের দুঃখিত বলার দরকার নেই আমাকে।”

ইরতিজা দূরে দাঁড়িয়ে মা-বোনের আলিঙ্গনের দৃশ্যপটটি দেখতে পেল। তার কাছে খুব মিষ্টি লাগলো দৃশ্যটা। সেই সাথে কষ্টে বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। ভিজে গেল চোখের কোণ!
মা তাকে শেষ কবে এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছিল? সময়টা মনে নেই ইরতিজার। সে অস্ফুট স্বরে বিড়বিড় করতে লাগলো,
“কেন ঘৃণা করো মা? আমার তো কোনো দোষ নেই! বিনা দোষে এমন ঘৃণা করা অনুচিত।”

ইরতিজা মাথায় হঠাৎ কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো। একটা ভরসার হাত যেন তার মাথার উপর। তাকিয়ে দেখলো আজাদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। আজাদ চৌধুরী বললেন,
“তুমি কি তোমার আব্বুকে কষ্ট দিতে চাও?”

“অবশ্যই না। তাকে কষ্ট দেওয়ার কথা চিন্তা করলেও কষ্ট হবে আমার।”

“তাহলে কান্না থামাও। তোমার চোখের এক ফোঁটা অশ্রুও আমাকে কষ্ট দেয়। অথচ তুমি কত অশ্রু ফেলো এই চোখ দিয়ে।”

ইরতিজার দু চোখ বেয়ে আরও অশ্রু নামতে থাকে। ভাবে এই মানুষটা এমন না হলে তার জীবন কেমন থাকতো আজ? এমন মানুষটা যদি এমন ভালো না হতো? যদি তাকে ভালো না বাসতো? পুরো শরীর ঝিমঝিম করে ওঠে ইরতিজার।

_________________

জোনাসের কী খবর জানা নেই। ইরতিজা একবারও খোঁজ নেয়নি কোনো। খোঁজ নেওয়ার মন নেই তার। সে নিজেকে বোঝাচ্ছে, জোনাসের সাথে অমনটাই হওয়ার ছিল। জোনাস যা যা করেছে তাতে ওই সামান্য একটা ঘু’সি কিছুই না।
আজ ওয়েদার সকাল থেকে রোদ্রজ্জ্বল ছিল। কিন্তু দুপুরের শেষ ভাগ থেকে মেঘলা করেছে। ওয়েদার ফোরকাস্ট জানিয়েছে বিকেলে হালকা তুষারপাত হবে। এ সপ্তাহে এত তুষারপাত হচ্ছে কেন? আগের তুষারপাতের চিহ্নই তো এখনও মুছেনি। আজ আবারও তুষারপাত হবে! ইরতিজা এখন ‘ldylwood Park’এ যাচ্ছে। ঘোরাঘুরির কোনো প্ল্যান আজকে ছিল না। কিন্তু ক্যানিয়ল হঠাৎ কল দিয়ে বললো পার্কে আসতে। পার্কটা বাসা থেকে কাছেই। ইরতিজা এর আগে দুইবার এসেছিল। পার্কের ভিতর লেকও আছে। লেকটা ঠিক কতটা বড়ো সে সম্পর্কে ধারণা নেই ইরতিজার। শুনেছে অনেকগুলো এরিয়ার ভিতর পড়েছে লেকটা। এই পার্ক থেকে যতটা দেখা যায় লেকটা আসলে ততটুকু না। বিশাল বড়ো লেকের কেবল একটা অংশ দেখতে পাওয়া যায় পার্ক থেকে। এই পার্কের ভিতর আছে ওপেন প্লেস। ফ্যামিলি পিকনিকের জন্য ভালো একটা জায়গা। গ্রীষ্মকালে এখানটায় মানুষজন বেশি আসে। উইন্টারে তেমন কেউ আসে না বললেই চলে। তবে ক্যানিয়লের মতো হলে আবার আসতেও পারে। গ্রীষ্মে এখানে বসে মানুষজন বারবিকিউ করে। বারবিকিউয়ের ঘ্রাণ প্রবেশপথ থেকেই নাকে এসে লাগে। এই পার্কে আছে ড্রেস চেঞ্জ করার ব্যবস্থা। অর্থাৎ লেকে সুইমিং করার পর চাইলে ভেজা কাপড় পাল্টে শুকনো কাপড় পরে নিতে পারবে। তার জন্য নির্দিষ্ট কক্ষ আছে। ওয়াশরুমও আছে এখানে। কিছু হাসও দেখা যায় লেকের জলে সাঁতার কাটতে। কেউ কেউ আসে মাছ ধরতে। ওসব গ্রীষ্মে হয়। ইরতিজা এসব জুহির মুখ থেকে শুনেছে। গ্রীষ্ম এসে গেলে সে নিজ চোখে এই পার্কের আসল সৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করতে পারবে। সামারে সে একবার এই লেকে সুইমিং করারও চিন্তা করেছে। স্বচ্ছ টলমল জলে সাঁতার কাটবে।
লেকের ওপারে দেখা যায় পাহাড়ের ভ্যালি। অপরূপ সৌন্দর্যের এক মহিমা এখানে। সন্ধ্যায় যখন আকাশ লাল হয়ে যায় একেবারে, ওই সৌন্দর্য তো আরও ঘায়েল করার মতো।
পার্কটার ভিতর একমাত্র মানুষ বলতে ক্যানিয়ল ছিল শুধু, ইরতিজা আসাতে দুজন হলো। ইরতিজা আসার পথেই স্নো ফল শুরু হয়েছে। ড্রেস চেঞ্জের কক্ষের যে ছোটো বিল্ডিংটা আছে, ওটার সামনে দাঁড়িয়ে আছে ক্যানিয়ল। মাথার উপর ছাউনি থাকায় তুষারপাত থেকে সুরক্ষিত সে। ইরতিজাও এসে ক্যানিয়লের কাছে দাঁড়ালো। জলাশয়ের কাছে থেকে তুষারপাত দেখার অভিজ্ঞতা তার জীবনে নতুন। বরফ কণাগুলো উড়ে উড়ে লেকের জলে পড়ছে। পার্কটা সাদা হয়ে উঠছে ক্রমশ।
ইরতিজা বললো,
“এখানে কেন ডেকেছো?”

“সব কিছুর কি কারণ থাকতে হবে?”

“হ্যাঁ, অবশ্যই। সকল কাজের পিছনেই একটা কারণ থাকতে হবে।”

“আমার কাজ করতে গেলে কারণ লাগে না। আমি বিনা কারণেও অনেক কাজ করতে পারি।”

“তাহলে আমাকে ডেকে আনার কোনো কারণ নেই?”

“আমি কি সেটা বলেছি? অবশ্যই কারণ আছে। আমি তো একটা অ্যানাকোন্ডা! তোমাকে টুপ করে মুখে পুরে কপ করে গিলে খা’বো বলে ডেকে এনেছি।”

“তুমি চটাং চটাং করে কথা বলছো কেন?”

ক্যানিয়ল সচকিত হয়ে উঠলো,
“চটাং চটাং করে কথা বলছি না কি?”

ইরতিজা জবাব না দিয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালো। ক্যানিয়ল পাশের বেঞ্চিটায় বসতে বসতে বললো,
“তোমাকে এখানে ডাকার একটা কারণ আছে।”

ইরতিজা তেমন প্রতিক্রিয়া করলো না কথাটা শুনে। শুধু একবার তাকালো ক্যানিয়লের দিকে, তারপর আবার চোখ সরিয়ে নিলো। গভীর দৃষ্টি দিলো প্রকৃতির বুকে। আর অন্য এক জোড়া গভীর দৃষ্টি তাকে দেখতে লাগলো যত্ন করে। অনেকক্ষণ চুপচাপ কাটলো। ক্যানিয়ল এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিল ইরতিজার দিকে। ক্যানিয়লের ওই এক দৃষ্ট চাহনিতে চোখ পড়লেই লজ্জা পাচ্ছিল ইরতিজা। হঠাৎ শুনতে পেল তাকে গভীর দৃষ্টিতে দেখা মানুষটি গভীর কণ্ঠে বলছে,
“তুমি উড়ো পাতার ঢেউ ইজা!”

কথাটা শুনে ইরতিজার মুখ দিয়ে বিস্ময়ের ধ্বনি বেরিয়ে এলো,
“হু?”

ইরতিজার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি জোড়ার কাছে এসে দাঁড়ালো ক্যানিয়ল।
“আমার জীবনের বারোটা মাসেই কনকনে শীত চলে আর তুষারপাত ঝরে। কিন্তু এবারের মাসগুলোর কী যেন একটা হয়েছে। কনকনে শীত আর অনুভব হয় না, তুষারপাতের সাদা রংও আর অবলোকন করে না নেত্রদ্বয়। এই যে আজ প্রকৃতিতেও তুষারপাত ঝরছে, অথচ আমার দু চোখ দেখছে রঙিন পাতার উড়ো ঢেউ। তুমি ঝরছো আমার জীবনে উড়ো পাতার ঢেউয়ের ন্যায়। এটা তো আসলে উড়ো পাতার ঢেউ নয়, এটা তো ঢেউ নামক আমার হৃদয়ে থাকা অনুভূতির দল। যা হৃদয়কে রাঙিয়েছে শরতের রঙে আর দৃষ্টি করেছে ভ্রম!”

ক্যানিয়ল নেমে গেল তুষারপাতের মাঝে। ফ্লোরের উপর কয়েক খণ্ড কাঠের দণ্ড ছিল। ক্যানিয়ল একটা নিয়ে লেকের দিকে এগোতে থাকলো। বালুকণার উপরে জমা তুষারপাতের আস্তরণের উপর দণ্ড দিয়ে লাভের অর্ধ অংশ আঁকলো, এবং নিজে তার শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে তাকালো ইরতিজার দিকে। বললো,
“আমি চাই না আমার জীবনে আর তুষারপাত নামুক। এটা সর্বদা রাঙা থাকুক শরতের রঙে। হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট? ইজ ইট স্নোয়িং? অর শুড ইট বি কালারফুল ইন অটাম?”

ইরতিজা নির্নিমেষ তাকিয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত। তারপর ফ্লোর থেকে সেও একটা কাঠের দণ্ড তুলে নিয়ে ক্যানিয়লের কাছে এলো। ক্যানিয়লের আঁকা অর্ধ লাভের চিত্রটি সে পূরণ করলো। যখন এটি পূর্ণ হলো তখন হাসলো ক্যানিয়ল।
ইরতিজার নেত্রপটে ভিড় করলো স্বচ্ছ বারি। সে ক্যানিয়লের বুকের বাঁ পাশে হাত রেখে বললো,
“এখানটা থেকে যদি আমার জন্য অনুভূতি বিন্দু পরিমাণও কমে যায়, তাহলে তোমাকে খু’ন করে ফেলবো বিদেশি পাজি!”

ক্যানিয়ল আরও প্রসন্ন হেসে ফেললো। বললো,
“তেমনটা হলে তুমি খু’ন করার আগেই মৃত্যু হবে।”

ক্যানিয়ল ইরতিজার অনামিকায় রিং পরিয়ে দিয়ে হাতে অধর ছোঁয়ালো।
তারপর হাতটা ধরে সহসা এক টান মেরে ইরতিজাকে আরও কাছে এনে বললো,
“তো পাকিস্টানি গার্ল, কবে বিয়ে করতে চাও এই পাজাইইকে? আজ? না কাল?”

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here