#তোর_নামের_রোদ্দুর-২
#লেখনিতে:মিথিলা মাশরেকা
পর্বঃ২৮
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।একদম হালকা!ইলশেগুড়ি যাকে বলে!দুপুরের এ সময়টার বৃষ্টি মানেই মন ভালো হয়ে যাওয়া।কিন্তু মন ভালো নেই আমার।ভিজতে ইচ্ছে করছে।এই এটুকো বৃষ্টিতে ভেজা সম্ভব না।কোনোমতে শুধু চোখেমুখে একটুআধটু ছিটেফোটা লাগছে।বেডের দিকে তাকালাম।শুদ্ধ উপুর হয়ে শুয়ে।ঘুমিয়েছেন হয়তো।রাতটা তার বাহুডোরেই কেটেছে আমার,দিনটাও কপালে তার ঠোটের স্পর্শেই শুরু হয়েছে।সকালবেলায় শেহনাজ মন্জিলের সবার সাথে কথা বলেছি।আব্বু ব্যতিত।এ নিয়ে একটু অন্যমনস্ক থাকতে চাইলেও থাকতে দেননি শুদ্ধ।ব্যালকনিতে পিছন থেকে জরিয়ে দাড়িয়ে ছিলেন অনেকক্ষন।চোখ বন্ধ করে তার বুকে পিঠ ঠেকিয়ে ওভাবেই ছিলাম।এতেই শান্তি!এতেই বাকিসব ভুলতে বসি আমি!এটুকোতেই চলবে আমার!
আস্তেধীরে এগিয়ে গিয়ে উকি দিলাম।শুদ্ধ সত্যিই ঘুমিয়েছেন।কেমন যেনো অদ্ভুতভাবে রাগ উঠলো।এখন ঘুমোনোর কি দরকার?বসে বসে আমার সাথে দু একটা কথা বললেও তো পারে!তাপসী আপু,ইশান ভাইয়ারা তো তাই করে।দুজনেই কতো রোমান্টিক।একসাথে ভেজে বৃষ্টিতে।যীনাত আপু,মাহির রুমে দরজা লক।ওরা নয় ঘুমালোই,মানলাম।এসময় আপনার ঘুম আমি মানতে পারছি না শুদ্ধ।হয় বৃষ্টিতে ভিজবো,নয় আপনার সাথে গল্প করবো!কোনোকিছু না ভেবে পাশের পানির গ্লাস থেকে আঙুলের ডগায় পানি নিয়ে ছুড়ে মারলাম তার মুখে।
শুদ্ধ তৎক্ষনাৎ চোখমুখ কুচকে তাকালেন আমার দিকে।কি হলো তার জানি না,ঝড়ের বেগে উঠে দাড়িয়ে সোজা কোলে তুলে নিলেন আমাকে।সোজা ওয়াশরুমে নামিয়ে দিলেন উনি।হা করে তাকিয়ে রইলাম তারদিক।এক পর্যায়ে শাওয়ার অন করে দুহাত দেওয়ালে চেপে ধরলেন শুদ্ধ আমার।অত্যন্ত রাগী গলায় বললেন,
-হোয়াট?
চোখ খিচে বন্ধ করে নিলাম আমি।পানি লাগছে চোখেমুখে।ভিজে যাচ্ছি পুরোটাই।হাত দেয়ালে চেপে ধরেই শুদ্ধ সামনে এসে দাড়ালেন আমার।আটকে দিয়েছেন ঝর্নার পানি।পুরোটাই তার পিঠে বাধা পেয়ে ঝরে যাচ্ছে।ঝাপসা চোখে দেখলাম উনিও পুরোপুরি ভিজে গেছেন।নেভি ব্লু টি শার্টটা ভিজে লেগে আছে গায়ের সাথে একদম।সামনের চুলগুলো থেকে পানি পরছে।রাগে নাকটা হালকা লাল দেখাচ্ছে।এই ঘুম থেকে তুলে দেওয়ার জন্য এতো রাগ?এতোবড় শাস্তি?এবার আমিও বাজখাই গলায় বললাম,
-হোয়াট?এভাবে কেনো….
-এতো শখ কেনো বৃষ্টিতে ভেজার?জ্বর হলে?
ও!মিস্টার বর একারনে ক্ষেপেছেন।টের পেয়েছেন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করছিলো আমার।ঠোট টিপে হাসি আটকিয়ে বললাম,
-হ্যাঁ।খুব শখ!তো কি করবেন আপনি?আমার তো….
শুদ্ধ সামনে থেকে সরে গিয়ে আবারো ভিজিয়ে দিচ্ছেন আমাকে।পিটপিট করে কোনোমতে তাকাতে যাবো,উনি দ্বিতীয়বারের মতো সামনে দাড়ালেন।
-শখ মিটেছে?
হাত খানিকটা ঝাড়া মেরে বললাম,
-না!
শুদ্ধ হাত ছেড়ে কোমড় জরিয়ে ধরলেন এবার আমার।পানির ফোটাগুলো তার চোখমুখ ছুইয়ে এসে আমাকেও ছুইয়ে দিয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম ওই সিক্ত চেহারার দিকে।উনি বললেন,
-নাও?
-উহুম!
-জ্বর বাধানোর ইচ্ছা হয়েছে?
-হুম।ইনফ্যাক্ট আরো অনেক রোগে আক্রান্ত হওয়ার ইচ্ছে করছে।
একটু আটকে থেকে আমাকে ছেড়ে দিলেন শুদ্ধ।চোখ বন্ধ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়ালেন।তার চোখের কোনা বেয়ে পানি গরাতে দেখলাম।মন বললো,ঝর্নার পানি ছিলো না ওটা।তার চোখের পানিই ছিলো।ভেতরটা ধক করে উঠলো আমার।কি হলো ওনার?এই অসুস্থতার কথায় কষ্ট পেয়েছেন উনি?নাকি আমি যা বুঝাতে চেয়েছিলাম তা মানতে কষ্ট হচ্ছে ওনার?নিশব্দে তার বুকে গিয়ে মাথা রাখলাম।একহাতে জরিয়ে আরেকহাতে উনি মুঠো করে ধরলেন আমার চুল।আবার ছেড়ে দিয়ে শান্তভাবে বললেন,
-মাথা মুছে ফেল!
পিছিয়ে দাড়ালাম।শুদ্ধ এক পা দেয়ালে ঠেকিয়ে নিচদিক তাকিয়ে বললেন,
-তোয়ালে নিয়ে আয়!মাথা মোছ!
কিছু না বলে চুপচাপ শাওয়ারটা অফ করে দিতে যাচ্ছিলাম।শুদ্ধ ঠান্ডা গলায় বললেন,
-থাক ওটা!
বেরিয়ে এলাম ওয়াশরুম থেকে।তোয়ালে নিয়ে দেখি শুদ্ধও বেরিয়েছেন ভেজা শরীরেই।আমি দাড়িয়ে শুদ্ধর দিকে এগোতে যাবো,উনি বললেন,
-চেন্জ করে আয়!
এবারও কথা না বাড়িয়ে তাই করলাম।এগোচ্ছিলাম তার দিক।উনি পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন।অনেকটা সময় পর চেন্জ করে বেরিয়ে এলেন।ব্যালকনির দিকে যাচ্ছিলেন উনি।আমিই হাত ধরে ফেললাম তার।ছলছল চোখে সামনে দাড়িয়ে বললাম,
-কি হলো আপনার?
….
-সরি।ভুল হয়ে গেছে!আর ভিজতে চাইবো না বৃষ্টিতে।
….
-সরি বললাম তো!
….
-আর কোনোদিন অসুস্থ্যতার কথা বলবো না!সত্যি বলছি!
বলতে বলতেই কান্না করে দিলাম আমি।এবারে শুদ্ধ জরিয়ে ধরলেন আমাকে।বললেন,
-তোকে তো বলেছি,তোর কান্নায় আমার ভেতরটা চুরমার হয়ে যায়।পাগল হয়ে যাই আমি।তোর আর্তনাতের কথা ভাবতেও পারি না,তাতে তো আমার পৃথিবীই ধ্বংস হয়ে যাবে।তোর কষ্টের কথা শুনলেও আমার মৃত্যুযন্ত্রনা হয় সিয়া।শুনতে পারি না তোর কোনো কষ্টের কথা।কেনো বুঝিস না তুই?কেনো?কতোভাবে বোঝাবো তোকে?আর কতোভাবে?
চুপ করে রইলাম।শুদ্ধও চুপ।কিছুটা সময় পর হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখ মুছে নিলাম।একটু কাদোকাদো মুখ করে বললাম,
-আমার চোখদুটো কাপছে শুদ্ধ!
উনি বুক থেকে সরিয়ে চোখের দিক তাকালেন আমার।ভালো করে দেখে বললেন,
-কই?কাপছে না তো!
-চোখের কি মাথা খেয়ে নিয়েছেন?
-হোয়াট?
-কিসের হোয়াট?হ্যাঁ?কিসের হোয়াট?কাপছে না?আমার চোখ সত্যিই কাপছে!দেখুন ঠিকমতো!কাপছে আমার চোখ!দেখুন!
-ঠিকমতোই দেখলাম তো।নাহ্!কাপছে না তোর চোখ!
-ভালো করে দেখুন না!
-হ্যাঁ,ভালো করেই….
এবার আমি তার বুকের কাছের শার্ট মুঠো করে নিলাম।রাগ নিয়ে বললাম,
-ভুলোমন লোক একটা!এই বর?মনে নেই আপনার?আমার চোখ কাপলে আপনার কি করতে ইচ্ছে করে?সে রাতে পদ্মপুকুরে তো এতোএতো….
আর বলতে পারলাম না।ওনার শার্ট ছেড়ে নিচদিক তাকিয়ে নিজের জামাই খামচে ধরলাম।চোখ বন্ধ করে জিভ কাটলাম।এটা কি করলাম আমি?চেয়েছিলাম ওনাকে মনে করিয়ে দিতে।আর রেগে গিয়ে নিজেই এভাবে মুখফুটে…ছিঃ ছিঃশুদ্ধ কি ভাবছেন?কিভাবে তাকিয়ে আছেন উনি এখন আমার দিকে?তাকাতে পারবো তারদিক?একটু চুপ থেকে শুদ্ধ দুগাল ধরলেন আমার।মাথা উচু করে ধরে আলতোভাবে আমার দু চোখে ঠোট ছুইয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।দুহাতে মুখ ঢেকে নিলাম আমি।যেটুকো ছিলো,অনেক ছিলো।উনি বলতে শুরু করলে সেটা সহ্য করা দুর্বিসহ আমার।এলোমেলো হয়ে যাওয়ার ভয়টা শুরু হয়ে যায় হঠাৎ করেই।আর বেশিক্ষন হয়তো সম্ভব ছিলো না তার মুখোমুখি থাকা!একদমই না!
_______________
তাপসী আপু,ইশান ভাইয়া,তায়্যিব,ইমরোজ ভাইয়া,রিফাত ভাইয়া ওরা বিকেলেই চলে গেছে।শুদ্ধও ইমরোজ ভাইয়ার সাথেই গেলেন কোথাও।তামিম ভাইয়ার নাকি কিছু কাজ আছে ঢাকায়,ও রয়ে গেছে।যীনাত আপুকে যেতে দেইনি।আমি মাহি আর যীনাত আপু মাহির ঘরে বসেছিলাম।মুলত টিপার্টি ছিলো তিনজনের।একথা সেকথা বলতে বলতে মাহি বললো,
-প্রেম জিনিসটা কেমন গো যীনাত আপু?
-আমায় কেনো বলছো?এই যে বিখ্যাত লাভারের বিখ্যাত বউ,একে বলো!
-ও আমার বোঝা শেষ!ইনসিয়া ভাবি তো আমার চেয়েও এ বিষয়ে মাথামোটা!নইলে এসময় বরকে ছেড়ে কেউ আমাদের সাথে বসে আড্ডা দেয়?
কপাল কুচকে তাকিয়ে রইলাম শুধু।যীনাত আপু বললো,
-লাইফে সিক্রেট লাভার মিলা,তো লাইফ জিঙ্গালালা!এদের ভালোবাসাটা একপাক্ষিক হয় তো,অপেক্ষার ফল তো,তাই এরা পাগলের মতো ভালোবাসতে জানে।শুদ্ধকেই দেখো না,ও তো….
-এসেছে লাভগুরু!তোকে কে বলছে শুধু সিক্রেট লাভাররাই এতোঅতো ভালোবাসে?জেনারেল লাভাররাও অনেক ভালোবাসে।বফ তার গফকে,বর তার বউকে!
তামিম ভাইয়ার গলা শুনে দরজায় তাকালাম।ভাইয়া এগিয়ে এসে আমার মাথায় চাটি মেরে বললো,
-বেছে বেছে এটাকেই বক্তা হিসেবে বসিয়েছিস?তোদের কমন সেন্স তো গ্যায়া!যেটুকো জানতি,সেটুকোও কথার মারপ্যাচে ফেলে উল্টেপাল্টে দেবে যীনাত।আগেই বলেছি,ওর ভোলাভালা চেহারার ফাদে পা দিবি না!
যীনাত আপু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,
-শোনো ভাইয়া,পুরো শেহনাজ মন্জিল জানে যীনাত কেমন মেয়ে!এইসব ফালতু কথায় আমাদের বোনদের মধ্যেকার সম্পর্ক নষ্ট করতে আসবা না একদম!
-ওওওলে!যীনাত কেমন মেয়ে!জানে তো সবাই।ইনসুও জানে।বল ইনসু?যীনাত কেমন মেয়ে?বল তো বোনু,যীনাত ভিজে বেড়াল কি না!বল তো!
-কিহ্?আমি ভিজে বেড়াল?তুমি তাহলে শকুনি!
আমি আর মাহি রোবটের মতো ঘাড় নেড়ে একবার এরদিক,একবার ওরদিক তাকাচ্ছি।এর আগেও এদের ঝগড়া দেখেছি,তবে ইদানিং একটু বেশিই বেড়ে গেছে।আর প্রতিবার তামিম ভাইয়াই আগেআগে ঝগড়া বাধাতে চলে আসে।এভাবে চলতে থাকলে পরে যীনাত আপুই আমাকে ধোলাই দেবে,ওর হয়ে কিছু বলি নি কেনো!তাড়াতাড়ি মাঝখানে দাড়িয়ে গিয়ে বললাম,
-এই তামিম ভাইয়া শোনো,খবরদার আজেবাজে কথা বলবে না আপুকে!
-ওমা!এই ইনসু?তুই আমার বাসায় থাকতি দুদিন আগে।আমার নুন খেতি।ব্যাংকে কতোসময় এসি বন্ধ থাকতো।ঘামে ভিজানো টাকায় খাইয়ে পরিয়ে মানুষ করেছি তোকে।আর আজ কিনা তুই এই যীনাতের পক্ষে?
যীনাত আপু বললো,
-নাটকের জায়গা পাও না?শেহনাজ মন্জিল ইনসুর দাদুবাসা,ও তোমারটা খেয়ে না,মামাদেরটা খেয়ে মানুষ।আর আমি কি জানি না,জয়েন্ট ফ্যামিলি হলে কি হবে,মামীর হাতে কয়েকটা টাকা ছাড়া বাজার করার জন্যএক কানাকড়িও দাওনা তুমি!মামা সবসময় আমাদের বাসায় গিয়ে আফসোস করে!
চোখ বন্ধ করে হতাশার শ্বাসত্যাগ করলাম।মাহি উৎসাহ নিয়ে বললো,
-এ দুটোর ঝগড়া বেশ লাগছে!তাইনা ইনসিয়া ভাবি?
বিরক্তি নিয়ে তাকালাম ওর দিক।দাত কেলানি থামালো ও।এরমধ্যে সেজোমা এসে বললো,
-কি শুরু করেছিস তামিম?বাসা ঝনঝন করছে তোর আওয়াজে!
তামিম ভাইয়া বললো,
-ও!খালি আমার গলাটাই শুনলে?আর এই যে সাধুবেশী কাকগলার মেয়েটা,এর গলা পাওনি?
যীনাত আপু বললো,
-এমনভাবে বলছে যেনো তার কোকিল কন্ঠস্বরে আজাদ ম্যানশন মোহিত!হুহ!
সেজোমা বললো,
-উফ!থাম তোরা!ইনসু?শুদ্ধ দেখলাম তোর বইখাতা সব এনেছে।রুমে গিয়ে দেখ তো মা!
চোখ চকচক করে উঠলো আমার।একছুটে রুমে এসে দেখি সত্যিই সব বই আনা হয়েছে।শুদ্ধ পরখ করে করে টেবিল আর শেলফে সাজাচ্ছেন ওগুলো।খুশিতে একছুটে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম তাকে।শুধু বই আনার খুশি নয়,শুদ্ধ শেহনাজ মন্জিল গিয়েছিলেন এই খুশিতে।উনি আমাকে না জরিয়ে ধরেই বললেন,
-আম্মু বলে দিয়েছে তোকে?ভাবলাম একদম সাজিয়ে তারপর ডাক লাগাবো!কিন্তু….
-থ্যাংক ইউ!থ্যাংক ইউ সো মাচ!
উনি বুক থেকে সরিয়ে দাড় করালেন আমাকে।বললেন,
-আলাদাভাবে থ্যাংকস্ কেনো বলছিস?আমি তো চাই তুই পড়াশোনা কর।তোকে তো বলেছিলামও যে বইখাতা,সার্টিফিকেটস্ সবকিছু আনাবো ও বাসা থেকে।
খুশিতে হাপাচ্ছি আমি।কোনোভাবে জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বললাম,
-আপনি শেহনাজ মন্জিল গিয়েছিলেন তাইনা?আব্বু…আব্বু কেমন আছেন?উনি আমার কথা কি কি বলেছেন আপনাকে?আমাকে নিয়ে যাননি বলে রাগ করলেন বুঝি খুব?বইগুলো এনেছেন বলে উনি খুব মন খারাপ করেছেন তাইনা?বলুন না!
শুদ্ধ মুখ কালো করে ফেললেন।হাত মুঠো করে চোখ অন্যদিকে সরিয়ে নিলেন উনি।আমার হাসিটাও কমে আসছিলো।আবারো জোর করে হেসে তার সামনে দাড়িয়ে বললাম,
-আব্বু প্রথমে খুব বকেছেন আপনাকে তাইনা?এমনটাই তো হবে বলুন শুদ্ধ!ওভাবে বিয়ে…তার উপর আজ আমাকেও নিয়ে যাননি আপনি।আর তো….
-আমি শেহনাজ মন্জিল যাইনি সিয়া!
সবটা থমকে গেলো আমার।চুপ হয়ে গেলাম আমি।একমুহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিলো সবটা ভুলে শুদ্ধ গিয়েছিলেন আব্বুর কাছে।মিটিয়ে এসেছেন সবটা।কিন্তু উনি যান নি।শুদ্ধ আমার দু গাল ধরে বললেন,
-সবটা ইমরোজ করেছে।যাইনি ও বাসায় আমি।শ্যামাপাখি,একটু বোঝ আমাকে।আমি…আমি শতচেষ্টা করেও ছোটকাকুর রাগ মেটাতে পারবো না!পারবো না!
চোখ তুলে তারদিক তাকালাম।শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে থেকে বললাম,
-কেনো?কিসের এতো রাগ ওনার আপনার উপর শুদ্ধ?বলতে পারেন?কিসের এতো ক্ষোভ,অভিমান ওনার?
একটু থেমে ঝাড়া মেরে ছেড়ে দিলেন উনি আমাকে।আবারো এগিয়ে দুহাত সর্বশক্তিতে চেপে ধরে বললেন,
-অকারন।কোনো কারন নেই!শুধু এটুকো জেনে রাখ সিয়া,আমার বেচে থাকার কারন তুই!তোকে লাগবে আমার!তাই অন্যকোথাও যেতে দেবো না তোকে আমি!পরিস্থিতি সবটা ঠিক করে দেবে একসময় দেখিস।আর ঠিক সে কারনেই এরপর থেকে তুইও কোনো কারন জানতে চাইবি না সিয়া!কোনো কারন না!
হাত ছেড়ে দিয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে গেলেন উনি।টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো আমার।বসে পরলাম মেঝেতে।নিজেকে প্রচন্ড অসহায় লাগছে।শুদ্ধ না নিজে সবটা ঠিক করছেন,না আমাকে কিছু করতে দিচ্ছেন।চোখ বন্ধ করে তার কাছে,তার পাশে থাকার যে অটুট ভাবনায় বেধেছিলাম নিজেকে,তাতে কিছুটা হলেও চিড় ধরছে।বারবার মনে হচ্ছে,এভাবে পরিস্থিতির উপর সবটা ছাড়লে কিছুই কোনোদিনও ঠিক হবে না।আমাকেই কিছু করতে হবে।জানতে হবে সবটা।ঠিক করতে হবে সবটা!সবটাই!
#চলবে…..