মনের মহারাণী পর্ব ১৯+২০

0
686

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#Sohani_Simu
পর্ব:-১৯+২০

আমার শরীর মোটেই ভাল লাগছেনা।নিঃশ্বাস নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে।শুয়ে থেকে স্বস্তি পাচ্ছি না কিন্তু উঠে বসলেই উমান দুই বাহু ধরে শক্ত করে বিছানায় চেপে ধরে রাখছেন।উনার এক কথা ইউ নিড সাউন্ড স্লিপ।তাই অসহ্য লাগলেও শুয়ে আছি।চোখে ঘুম নেই।আতংকে হাত-পা এখনও কাঁপছে।আঘাতের পরিমাণ কম হলেও বেশি লোক দেখে আজকে প্রচুর ভয় পেয়েছি।এখন মধ্যরাত তাই ভয়ের পরিমাণ আরও তীব্র হয়েছে।রুমে আলো জ্বলছে।আলো চোখে লাগছে,ভাল লাগছে না এই আলো কিন্তু ভয়ের জন্য বন্ধ করতেও ইচ্ছে করছে না।উমান আমার পাশেই আধশোয়া হয়ে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।কত কথা বলতে ইচ্ছে করছে উনাকে কিন্তু কিছু বলতে পারছিনা।হাজার অস্বস্তি নিয়েই চোখ বন্ধ করে থাকলাম।

সকালে ঘুম ভাঙলে নিজেকে উমানের বুকের মধ্যে আবিষ্কার করলাম।দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছি উনাকে।উনিও একহাতে আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছেন।বন্ধ চোখ আর এলোমেলো চুলে উনাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকতেই উনি নড়ে চড়ে উঠে আমাকে আরও কাছে টেনে নিলেন।আমার গালে গাল ঠেকিয়ে ঘুমঘুৃম কন্ঠে বললেন,

‘গুড মর্নিং মহারাণী।’

দুদিন আগেই ক্লিন শেভ নিয়েছিলেন তাই আজকে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো কাঁটার মতো লাগছে।উনাকে ঠেলে মুখ কুচকে গাল সরিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে বললাম,

‘সরুন,ঘুমোতে দিন।’

উনি আমার পায়ের উপর উনার একশো মণ ওজনের পা আর পেটের উপর ৫০ মণ ওজনের হাত তুলে দিলেন।উন্মুক্ত পেটে হাতের ছোঁয়া পেতেই ফট করে চোখ খুললাম।দুজন এক চাদর গায়ে দিয়ে আছি।চাদরের ভেতরে উঁকি দিতেই চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হল।এ আমি কেমন অদ্ভুত পোষাক পড়ে আছি!!শাড়ি কোথায় গেল আমার!উনাকে ঠেলে সরিয়ে উঠে বসে চাদর গায়ে জড়িয়ে নিয়ে দেখি শাড়ি সোফার উপর পরে আছে।উমানের টিশার্ট ধরে টানতে টানতে বললাম,

‘উম আমার শাড়ি ওখানে কেন?এনে দিন।’

উমান কপালের উপার হাত দিয়ে ঘুমঘুম কন্ঠে বললেন,

‘হুম আনছি।’

পাঁচমিনিট পরও উনি শাড়ি এনে দিলেন না।আমি উনাকে ঘুম থেকে টেনে তুললাম।উনি শুয়ে থেকেই চোখ ডলতে ডলতে বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘শাড়ি পড়তে হবেনা অন্য ড্রেস পর।’

আমি ভীত চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ওয়াশরুমে যাব।’

উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললেন,

‘তো যা না,কে ধরে আছে?’

‘আপনিও চলুন।’

উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে উঠে বসলেন।আমার গলা থেকে চাদর সরিয়ে কাটা জায়গায় হাত দিয়ে দেখে বললেন,

‘ব্যথা করছে?’

আমি মুখ মলিন করে বললাম,

‘একটু একটু।’

তারপর উনি কিছু বলার আগেই চোখ বড় বড় করে বললাম,

‘ওই লোকগুলোর কি হয়েছিল?আপনি দুটো হয়ে গিয়েছিলেন কিভাবে?ওরা কে ছিল?ভয় লাগছে আমার।’

উনি বিরক্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে জানালার কাচ খুলতে খুলতে বললেন,

‘কিসের এত ভয় তোর?আমি আছি তো।ওরা আর আসবেনা,ওদের বেঁধে রেখেছি।’

আমি বিছানার উপর হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘কোথায় বেঁধে রেখেছেন?বলুন না কারা ওরা?আপনার পেছনে কেন পরে আছে?’

উনি জানালা খুলে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।আমার দুই গালে হাত রেখে বললেন,

‘পরে বলব আগে ফ্রেশ হয়ে খাবি তারপর মেডিসিন আছে।’

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে উমানের হাত ধরে পুরো বাসা আমি নিজে সার্চ করে দেখলাম।কোথাও কাউকে লুকিয়ে থাকতে না দেখে ভয়টা একটু কমলো।এখন উমানকে নিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসেছি সব ঘটনা শোনার জন্য।উমান কিছুতেই মুখ খুলছেন না।উল্টো রেগে গিয়ে আমাকে ধমক দিচ্ছেন।আমি উনার হাত ঝাকিয়ে জেদ ধরে বললাম,

‘বলুন না,কাউকে বলব না আমি।’

উনি ঝারা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে রেগে বললেন,

‘এই সর তো এখান থেকে,খেলা দেখতে দে।’

টিভিতে নিউজিল্যান্ড বনাম সাউথ আফ্রিকার ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছে।পাঁচ বলে দুই রান করলেই সাউথ আফ্রিকা জিতে যাবে।খেলায় টান টান উত্তেজনা।সবার ধারণা আর এক বলেই খেলা শেষ হয়ে যাবে।উমান আগ্রহ নিয়ে টিভির দিকে তাকিয়ে আছেন।বোলার বল করতে দৌঁড় দিয়েছেন আর আমি টিভির স্ক্রিনে রিমোট ছুড়ে মেরেছি।টিভি যে ভেঙ্গে যাবে আমি বুঝতে পারিনি।ভীত চোখে উমানের দিকে তাকালাম।উনি রাগ কন্ট্রোল করার জন্য বড় বড় দুটো নিঃশ্বাস ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে চেঁচিয়ে বললেন,

‘আর কি কি ভাঙবি বল তো তুই?তোর হাত টায় ভেঙে দেওয়া উচিত।’

বলেই উনি আমার হাত চেপে ধরলেন।আমি ভয়ে কান্না মুখ করে বললাম,

‘না।আমার হাত ভাঙবেন না।আমি আর কিছু ভাঙবো না।ওই লোকগুলোর কথা বললে আর কোন কিছু ভাঙবোনা।’

উমান আমার হাত মোচার দিলেন।আমি একটুও ব্যথা পাইনি কিন্তু ভয়ে এক চিৎকারে বাসা কাঁপিয়ে ফেলেছি।উমান চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করেছেন আর আমি এখন খুক খুক করে কাশছি।তখনই পেছন থেকে কেউ বললেন,

‘এই কি হয়েছে তোদের?উম?কি করেছিস ওকে?’

বাসায় তো আমি আর উমান ছাড়া কেউ নেই তাহলে কে কথা বলল?ওই লোকগুলো আবার আসলো নাকি!!ভয় পেয়ে উমানকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দিয়ে বললাম,

‘উম!!!””ওরা আবার এসেছে!!!’

এবারের চিৎকারে মনে হয় গলা ফেঁটে গিয়েছে।উমান আমার কাঁধে হাত দিয়ে বললেন,

‘উফ্ কান মনে হয় নষ্টই হয়ে গেল।তুই ও আসার আর টাইম পেলিনা।’

আমি উমানকে জড়িয়ে ধরেই কাশতে লাগলাম।উমান বললেন,

‘দাঁড়িয়ে দেখছিস কি পানি নিয়ে আয় একটু।’

তারপর উমান আমার মাথার পেছনে হাত রেখে বললেন,

‘কাম ডাউন।সাদ এসেছে।ভাই হয় তোর।কিছু বলবেনা।’

উনার কথা শুনে পেছনে তাকালাম।ডাইনিংয়ে উল্টোদিক ঘুরে একটা ছেলে গ্লাসে পানি ঢালছে।পেছন থেকে ছেলেটাকে উমানের মতোই দেখাচ্ছে।উমানের মতোই কালো টিশার্ট আর প্যান্ট পরে আছেন।এটাই তাহলে সাদ ভাইয়া?উনি কোথায় থেকে আসলেন?ভাবতেই সাদ ভাইয়া পানির গ্লাস নিয়ে আমার দিকে ঘুরলেন।অহ মাই গড!এ আমি কি দেখছি।সাদ ভাইয়াকে দেখে মনে হচ্ছে উমানের যমজ ভাই।মুখের গড়ন অনেকটা একই রকম।দুজনারই লম্বাটে মুখ,তরতরে নাক,চুলের স্টাইলও এক শুধু উনি একটু উমানের থেকে কম ফর্সা আর মুখে একটু কাটা ছেড়ার দাগ।আমি মনে হয় কাল রাতে দুটো উমান নয়,একটা উমান আর একটা সাদ দেখেছি।এখন প্রশ্ন হল উমান আর সাদ ভাইয়া তো মামাতো ফুফাতো ভাই তাহলে চেহারায় এত মিল কিভাবে?উমানকে ছেড়ে দিয়ে উনার একবাহু জড়িয়ে ধরে বললাম,

‘এই উম,সাদ ভাইয়া আপনার মতো দেখতে কি করে হল?’

উমান মৃদু হেসে বললেন,

‘আমি হয়েছি বাবার মতো দেখতে আর ও হয়েছে ফুপির মতো দেখতে।বাবা,চাচ্চু আর ফুপি যে একই রকম দেখতে।কিন্তু তুই চাচ্চুর মতো না হয়ে ডাইনি বুড়ি আনারকলির মতো দেখতে হয়েছিস।মিনিটা আমাদের মতো হয়েছে,অনেক সুন্দর।’

উনি বলতে বলতে সাদ ভাইয়া আমার পাশে বসে আমার দিকে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বললেন,

‘মামা যখন বলেছিল তুই ওই ডাইনিটার মতো হয়েছিস উম আমাকে এক কেজি মিষ্টি ট্রিট দিয়েছিল।’

উমান চোখ রাঙিয়ে বললেন,

‘ওই শাট আপ।’

সাদ ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন,

‘কিসের শাট আপ?তুই বলিসনি ডাইনিটাকে তোর ভাল লাগে।ওটার সেম কপি চাই।’

আমি পানি খাচ্ছি আর সাদ ভাইয়াকে দেখছি।ফুপিকে আমি দেখেছি আর বড়াব্বুকেও দেখেছি।এরা সবাই প্রায় একরকম!এত মিল!আমি যে কেন বাবার মত সুন্দর হলাম না!!মিনিটা বাবার মতো সুন্দর হয়েছে।কিন্তু আমি ওই ডাইনি আর খচ্চরনি বুড়ির মত কোনদিন হইনি হু।আমি আম্মুর মতো হয়েছি।আমার আম্মু সবার থেকে সুন্দর।কিন্তু সাদ ভাইয়ার মুখে এত কাটা ছেড়া দাগ কেন?ভেবেই আমি সাদ ভাইয়াকে বললাম,

‘ভাইয়া আপনার মুখে এসব কিসের দাগ?’

উনি মুখে হাত দিয়ে বললেন,

‘কিছুদিন আগে এক্সিডেন্ট হয়েছিল সেজন্য।’

কিসের এক্সিডেন্ট!ওয়ান মিনিট,উমান তো বলেছিলেন সাদ ভাইয়া মারা গেছে তাহলে ফিরে আসলো কিভাবে!আমার ভাবনার মাঝেই সাদ ভাইয়া উমানের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘মামা জানে তুই ওকে বিয়ে করেছিস?’

উমান ভাব নিয়ে বললেন,

‘না।’

আমি সাদ ভাইয়ার মারা যাওয়ার প্রসঙ্গটা তুলবো কিন্তু দুজনার কথার ভিরে কথা ঢুকাতে পারছিনা।উনার কথা শুনে সাদ ভাইয়া অবাক হয়ে বললেন,

‘না?এখন কি হবে?’

উমান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললেন,

‘যা হওয়ার হবে।চাচ্চু কিছু বলবেনা।’

সাদ ভাইয়া অসন্তুষ্ট হয়ে বললেন,

‘এটা তুই ঠিক করিসনি।মিতির তো বিয়ের বয়সই হয়নি।এখনই এসব,মামা একদম ভালভাবে নিবে না।তুই কি আর মিতি কি।দশ-বারো বছরের ডিফারেন্স না?’

আমি অবাক হয়ে মনে মনে বললাম দশ-বারো বছর!!আমার তো মাত্র ষোল।শেষে কিনা সাতাস-আঠাশ বছরের বুড়োর সাথে বিয়ে হল?উমান কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে সাদ ভাইয়াকে বললেন,

‘ওর বয়স হয়নি সেটা ওকে বল।আমার বিয়ের বয়স হয়েছে আমি বিয়ে করে নিয়েছি।’

উমানের কথা শুনে আমি গলা ঝেরে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম,

‘সাদ ভাইয়া জানেন?উম আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে।দড়ি দিয়ে হাত পা বেঁধে মাথায় রিভলভার ঠেকিয়ে বলেছিল বিয়ে না করলে মাথা ফুটো করে দিবে।’

উমান ধপ করে আমার পিঠে থাবা দিয়ে বললেন,

‘ওই ডাইনি আনারকলিটাও আমার নামে এভাবেই নালিশ করে আর তুইও করছিস?তোকে তো আমি ফু দিয়ে উড়িয়ে দিব।’

সাদ ভাইয়া ভ্রু কুচকে বললেন,

‘মামা শুনলে কিছু বলবেনা?’

উমান পায়ের উপর পা তুলে বললেন,

‘কি বলবে?এই পেত্নীর জন্য আমার চেয়ে ভাল জামাই পাবে কোথাও?আমি বিয়ে না করলে তো এর বিয়েই হবেনা।মুুখের যা শ্রী তার নাম আবার দ্যা প্রিন্সেস।’

আমি নাক মুখ ফুলিয়ে বললাম,

‘আপনি একবারও নিজের মুখ আয়নাতে দেখেছেন?এই কালো টিশার্টে আপনাকে একদম ভাল্লুকের মতো দেখাচ্ছে।এই যে দেখুন এখানে লিখাও আছে ‘বিয়ার আ হ্যান্ড’।আপনি জানেন বিয়ার মানে ভাল্লুক।আপনি একটা ভাল্লুক সেজন্য আপনার টিশার্টেও ভাল্লুক লিখা আছে।’

উমান আমার গাল টিপে ধরে বললেন,

‘ইদানীং খুব বেশি কথা বলছিস।তুই জানিস বিয়ার আ হ্যান্ড মানে সাহায্য করা?অশিক্ষিত একটা!!’

সাদ ভাইয়া উমানকে ঝারি দিয়ে বললেন,

‘উম!কি করছিস,ছাড় ওকে।’

উমান আমার গাল ছেড়ে দিতেই আমি সাদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আপনি খুব ভাল সাদ ভাইয়া।আর উনি খুব খারাপ।আমাকে অনেক মারেন।সেদিনই চড় মেরেছিলেন,
এখনও গাল ব্যথা করে।’

সাদ ভাইয়া উমানের কাছে এমনটা আশা করেননি সেটা উনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।সাদ ভাইয়া রেগে উমানকে বকা দিতেই উমান বললেন,

‘আর ও কি করেছে সেটাও শোন।সারাদিন আমার সাথে কথা বলেনি,খায়ওনি কিছু।স্বপ্নের মধ্যে কি বলে জানিস?নিষাদের সাথে পালিয়ে যাবে।থাপ্পড় দিব নাতো কি করব?একে তো খুন করা উচিত।’

নিষাদ ভাইয়ার কথা সাদ ভাইয়াকে কেন বলতে হবে?আমি কিঞ্চিত রেগে উনার হাতে খামচি দিলাম।উমান আমার গাল টেনে ধরলেন।আমি উনার চুল ধরতেই উনি আমার গালে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলেন।

চলবে………………….

গল্প:-#মনের_মহারাণী
লেখিকা:-#sohani_simu
পর্ব:২০

সাদ ভাইয়ার সামনে উমানের হাতে থাপ্পড় খেয়ে খুব অপমানিত হলাম।গালে হাত দিয়ে দৌঁড়ে রুমে এসে বিছানায় উপুর হয়ে বালিশে মুখ গুজে ফিস ফিস করে কান্না করতে লাগলাম।প্রায় দশ মিনিট পর উমান রুমে আসলেন।আমি মনমরা হয়ে একপাশ হয়ে শুয়ে আছি।উমান এসে আমার উপর গা এলিয়ে দিয়ে বললেন,

‘আমার মহারাণীটা কি করছে?’

আমি উনাকে ঠেলতে ঠেলতে বললাম,

‘সরুন, চলে যান আমার রুম থেকে।একদম কথা বলতে আসবেন না।’

উমান সোজা হয়ে বসে বললেন,

‘তোর ভয় করছেনা একা একা রুমে থাকতে?ওই লোকগুলোকে তো বেঁধে রেখেছি কিন্তু ওদের অনেক বড় গাং আছে।ওদের লোক যেকোন সময় আবার আমাদের এ্যাটাক করবে।আমারই অনেক ভয় করছে আর তোর ভয় করছেনা?’

উঠে বসলাম।উমানের দিকে তাকিয়ে ভীত কন্ঠে বললাম,

‘ওরা আবার আসবে?’

উমান পকেট থেকে ফোন নিয়ে বললেন,

‘হুম যেকোন সময় আসবে।দিনেও আসতে পারে রাতেও আসতে পারে।ওরা মনে হয় তোকে নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত থামবেই না,আসতেই থাকবে।তুই এক কাজ করিস ওরা আসলে আমাকে একটু নক দিস,আমি পাশের রুমে আছি ওকে?’

আমি চোখ বড় বড় উনার একবাহু চেপে ধরে বললাম,

‘না,আপনি কোথাও যাবেন না।এখানে থাকুন।’

উমান আমার হাত ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হয়ে বললেন,

‘না এটা তো তোর রুম,তুই তো আমাকে এখানে থাকতে দিবিনা বললি।আমি বরং পাশের রুমে গিয়ে একটু শুয়ে থাকি।’

উনি সত্যি সত্যি পাশের রুমে চলে গেলেন।আমিও ভয়ে এক দৌঁড়ে পাশের রুমে চলে আসলাম।উমান আর সাদ ভাইয়া বিছানায় বসে থেকে গল্প করছেন আর হাসছেন।আমাকে দেখেই হাসি থামিয়ে দিলেন।সাদ ভাইয়া বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিলেন এখন পিঠের নিচ থেকে বালিশ টান দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে বললেন,

‘তোরা এখন যা আমার একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে।’

উমানও উনার পাশের বালিশে মাথা দিয়ে সটান হয়ে শুয়ে বললেন,

‘আমারও একটু ঘুম ঘুম পাচ্ছে,সারারাত ঘুম হয়নি।এখন একটু ঘুমিয়ে নিই।’

উনারা দুজনই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলেন।আমি মুখ মলিন করে সোফায় বসলাম।আমার রুমে যাওয়ার আর সাহস পাচ্ছি না।উনারা দুজন তো ঘুমোচ্ছেন।এই সুযোগে খারাপ লোকগুলো যদি আমাকে নিয়ে চলে যায়?মুখ চেপে ধরলে তো একটা আওয়াজ ও বের হয়না।আমাকে নিয়ে গেলে উনারা বুঝতেই পারবেন না।ভেবেই আমার মুখ শুকিয়ে গেল।

কিছুক্ষণ পর সাদ ভাইয়া ঘুমিয়ে গেলেন আর উমান এপাশ-ওপাশ করছেন।আর আমি সোফায় পা তুলে বসে পায়ের নখ খুলাচ্ছি।উমান এপাশ-ওপাশ করতে করতে উঠে বসলেন।বিছানা থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,

‘চল।’

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘কোথায়?’

উনি আমার একহাত ধরে আমার রুমে নিয়ে আসলেন।দরজা বন্ধ করে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে বুকের উপর ফোন নিয়ে টিপতে লাগলেন।আমি গিয়ে সোফায় বসবো তখনই উনি বললেন,

‘ওই শোন,এখানে আয়।’

আমি গুটি গুটি পায়ে বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম।উনি একটু সরে গিয়ে আমাকে বসতে বললেন।আমি বসতেই উনি আমাকে টেনে উনার পাশে শুয়ে দিলেন।আমার মাথা উনার হাতের উপর নিয়ে আমার গালে কিস করে আমার হাতে উনার ফোন ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

‘তোর ফেসবুক আইডিতে লগ ইন কর।রাহী কি কি মেসেজ করেছে দেখতে ইচ্ছে করছে।’

এটা কিছুতেই করা যাবেনা।রাহী আমার গুড ফ্রেন্ড ও ভালই মেসেজ করবে কিন্তু ওই তৌসিফ আর আরমান একদম ভাল মেসেজ করবেনা।ওরা নিশ্চয় লাভ ইউ টাভ ইউ বলে কনভারসেশন ভরিয়ে ফেলেছে।আমি শুকনো ঢোক গিলে উমানের দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘লললগ ইন করতে পপপারিনা।’

উমান আমার গালে হাত বুলিয়ে বললেন,

‘তোতলাচ্ছিস কেন?এমনি বল পারিসনা।আমি শিখিয়ে দিব।’

কান্না মুখ করে বললাম,

‘পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি।’

উমান আমার ঠোঁটে হাত দিয়ে মুচকি হেসে বললেন,

‘এটা খেয়ে নিই তাহলেই মনে পড়বে।’

মুখ থেকে উনার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

‘সসসত্যি ভুলে গেছি।’

উনি মুচকি হেসে উনার পা আমার উপর তুলে দিলেন।আমি শুকনো ঢোক গিলে অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম,

‘বাইরে যাব।টিভিতে… ‘

উমান আমার জামার মধ্যে দিয়ে পেটে হাত রাখতেই আমার কথা বন্ধ হয়ে গেল।উনার হাত চেপে ধরে বললাম,

‘ককরছি,লগ ইন করছি।’

উনি পেটে চিমটি দিয়ে ধরে রেখে বললেন,

‘কর,করলেই ছেড়ে দিব।’

মুখ কুচকে তাড়াতাড়ি লগ ইন করলাম।উমান পেট ছেড়ে দিলেন।আমার মাথা বালিশে রেখে উনি কনুইয়ে ভর দিয়ে হাতের তালুতে মাথা রেখে কৌতূহলী হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘দেখি কেমন আইডি তোর।দেখা একটু আমাকে।’

আমি শুকনো ঢোক গিলে প্রোফাইলে ঢুকলাম।আমার অসংখ্য ছবি দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া আছে।উমান ভ্রু কুচকে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘এতগুলো পিকচার দিয়েছিস!!!এটা কি লেখেছিস?সৌন্দর্য চোখকে নয় হৃদয়কে স্পর্শ করে??এক থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত খুলে নিব বেয়াদব।ডিলিট কর সব।’

উনি রেগে উঠে বসলেন।আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ভ্রু কুচকে আমার সব ছবি গুলো ট্রাশ বক্সে ফেলে দিলেন।আমিও উঠে বসে উঁকি দিয়ে দেখছি সব।সবগুলো ছবিতে হাজার হাজার লাইক কমেন্ট আর উনি সবগুলো ডিলিট করে দিচ্ছেন।আমার ভার্চুয়াল লাইফকে আমার সামনে খুন করছেন।এদিকে আমাকে এ্যাক্টিভ দেখেই সবাই এত বেশি মেসেজ দিচ্ছে যে উনার ফোনে টুং টুং করতেই আছে।এতে উনি আরও বেশি রেগে যাচ্ছেন।একটু পর উনি ফোন সামনে ধরে রেগে বললেন,

‘ও কে?’

আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে বললাম,

‘ফ্রেন্ড।’

উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

‘গার্ল স্কুলে পড়িসনা তুই?তাহলে এত হাজার হাজার ছেলে ফ্রেন্ড কোথায় থেকে আসলো?আই লাভ ইউ মেসেজ কেন পাঠাবে???’

শেষের কথাটা উনি চিল্লিয়ে বললেন।আমি কেঁপে উঠে মাথা নিচু করে গাল ফোলাতেই উনি আমার গাল টিপে ধরে মাথা তুলে বললেন,

‘তুই ও ওদের আই লাভ ইউ বলেছিস?’

আমি মাথা নাড়ালাম।উনি আমার গাল ছেড়ে দিয়ে গালে কিস করে আবার ফোন ঘাটতে শুরু করে বললেন,

‘ভেরি গুড।আমি তোকে নিউ আইডি দিব ওটা ইউস করবি।এটা ডিলিট।আর এই আই লাভ ইউ আর কিস পাঠানো ছেলেদের সাথে যদি আর একবারও কথা বলেছিস তোকে কিন্তু খুন করে ফেলব।’

আমি মাথা নিচু করে মিনমিন করে বললাম,

‘আপনারও তো অনেক গুলো ফ্রেন্ড আছে।কিস করে কাল দেখলাম সামিরাকে।’

উনি ফোন রেখে সটান হয়ে শুয়ে মাথার নিচে দুই হাত রেখে মুচকি হেসে বললেন,

‘সেজন্য কষ্ট লাগছে তোর?’

আমি মাথা নাড়ালাম।উনি ফোন হাতে নিয়ে বললেন,

‘লাগছেনা?ওয়েট এখনই তোর ব্যবস্থা করছি।’

বলেই উনি ফোন কানে ধরে বললেন,

‘স্যাম?খুব মিস করছি তোমাকে।বাসায় আসবা?……….ওকে ওকে চলে আসো।’

তারপর উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘স্যাম আসবে।শী ইজ মাই গার্লফ্রেন্ড।’

ধপ করে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে অন্য পাশ ফিরে মনে মনে বললাম বা* ফ্রেন্ড।সব আমাকে রাগানোর জন্য।উমান বিছানা থেকে নামতে নামতে বললেন,

‘বারোটা বেঁজে গিয়েছে রান্না করব কখন?শীট!! তোর জন্য দেরি হয়ে গেল।’

উনি কিচেনে চলে আসলেন।রুমে একা থাকতে ভয় লাগবে তাই আমিও উনার সাথে আসলাম।উনি ফ্রিজ খুলে মাছ আর মুরগীর মাংস বের করে পানিতে ভিজিয়ে রাখলেন।চাল ধুয়ে রাইস কুকারে ভাত দিলেন।পেঁয়াজ কুচি করতে করতে বললেন,

‘এভাবে পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করছিস কেন?কি চাই?’

আমি উনার পাশে দাঁড়িয়ে বললাম,

‘আমিও রান্না করব।’

উনি আমাকে উনার জায়গায় দাঁড় করিয়ে পেঁয়াজ কুচি করতে দিলেন।পেঁয়াজের দিকে তাকিয়েই আমার নাকে চোখে পানি চলে আসলো।সরে এসে বললাম,

‘এটা করতে পারবোনা।’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘ইট’স ওকে আমিই করছি।’

এরপর আমি স্টোভের কাছে এসে বললাম,

‘আপনি সব কেঁটে দিন আমি রান্না করব।’

উনি পেঁয়াজ কুচি করা থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘স্টোভে হাত দিবিনা।চুপচাপ বসে থাক।’

স্টোভ ছেড়ে আমি মসলার কৌট গুলো তাক থেকে নামাতে লাগলাম।উমান মাংসগুলোতে সব মসলা দিয়ে প্রেশার কুকারে করে স্টোভে বসিয়ে দিলেন তারপর রুপচাঁদা মাছগুলোতে মসলা লাগিয়ে আরেকটা স্টোভ জ্বালিয়ে প্যান বসিয়ে দিলেন।আমি স্প্যাচুলা হাতে নিয়ে উনার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।মাছগুলো আমি ভাজি করব।উমান প্যানে তেল দিয়ে বললেন,

‘নে মাছগুলো এবার তেলে ছাড়।’

একটা মাছ ছেড়েই ভয় পেয়ে গেলাম কারন হাতে তেল ছিটকে পড়ছে।উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘আমি এটা করতে পারবনা।’

উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘ইট’স ওকে আমিই করছি।’

আমার কেন যেন ভাল লাগলোনা।উনি যেটায় করতে দিচ্ছেন সেটায় পারছিনা।উনি কি ইচ্ছে করে এমন করছেন?মনে মনে ভেবেই আমি বাকি মাছগুলো তেলে ছাড়তে চাইলাম কিন্তু উনি আমাকে কিছুতেই মাছ ধরতে দিলেন না।জোর করেও পারলাম না।উনি আমাকে ধমক দিয়ে কিচেন থেকে বের করে দিলেন আর সাদ ভাইয়াকে ঘুম থেকে ডেকে দিতে বললেন।উমান কিচেনের দরজায় থাকতেই আমি এক দৌঁড়ে সাদ ভাইয়ার রুমে চলে এসেছি।

এসে দেখি সাদ ভাইয়া জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন।উনাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ঘুমোননি উনি।আমাকে দেখে সাদ ভাইয়া বিছানায় এসে বসলেন,কোলের উপর সাদা বালিশ নিয়ে খাটে হেলান দিলেন।আমি এসে খাটের এক কোনায় পা তুলে বসলাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,

‘উম কি করছে?’

উমানের কথা শুনে আমি থমথমে মুখ করে বললাম,

‘উনি কিচেনে,দুপুরের খাবার রান্না করছেন।’

সাদ ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন,

‘তোরা কি কথায় কথায় এভাবে মারামারি করিস?’

আমি ভ্রু কুচকে বললাম,

‘আমি মারামারি করি??উনিই তো আমাকে মারেন।আমি কখনও উনাকে মারিনি,একদিনও নয়।’

‘আজকেই তো মারলি।খামচি দিলি আর চুলও টানলি।’

আমি মুখ কাচুমাচু করে বললাম,

‘ওগুলো তো এমনি কিন্তু উনি যে আমাকে থাপ্পড় মারেন সেটা?আর আপনি জানেন উনি কত খারাপ?আপনাকে বললে বুঝবেননা। আপনিও তো খারাপ।আমাকে কিভাবে চাকু দিয়ে মেরেছিলেন সেদিন!!’

বলেই আমি বিছানা থেকে নেমে এক প্রকার দৌঁড়ে কিচেনে আসলাম।উমানের সামনে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই কিন্তু একা থাকতে ভয় লাগছে জন্য থাকতে হচ্ছে।আড় চোখে উমানের দিকে তাকিয়ে ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বক্স নিয়ে কেবিনেটের উপর বসলাম।উমান মাছ ভাজি উল্টে দিতে দিতে বললেন,

‘সাদ উঠেছে?’

আমি কিছু না বলে আইসক্রিম খেতে লাগলাম।একটু আগেই উনি আমাকে এক প্রকার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে কিচেন থেকে বের করে দিয়েছিলেন।কথায় বলব না হু। সেদিন সাদ ভাইয়া আমাকে অত নির্মমভাবে চাকু দিয়ে মেরেছিলেন মনে হতেই এখানে চলে আসলাম না এই বজ্জাতটার কাছে আসতামই না।এক ঘন্টা পর সব রান্না শেষ করে উমান স্টোভ অফ করে কিচেন থেকে যেতে যেতে বললেন,

‘শাওয়ার নিব আমি এখন।’

আমিও উনার পেছন পেছন রুমে আসলাম।উমান টিশার্ট খুলে ঘাড়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে যাচ্ছিলেন আমাকে বিছানায় বসতে দেখেই ভ্রু কুচকে বললেন,

‘তুই শাওয়ার নিবি না।’

আমি একটা চকলেট মুখে দিয়ে বললাম,

‘পরে,আপনি আগে করুন তারপর আমার বেলায় একটু দরজার বাহিরে পাঁচমিনিট দাঁড়িয়ে থাকলেই হবে।

আমার এত ভয় দেখে উনি বিরক্ত হয়ে ওয়াশরুমে যেতে যেতে বললেন,

‘পারবোনা আমি দাঁড়িয়ে থাকতে।’

বলেই উনি ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিলেন।আমি ভ্রু কুচকে দরজার দিকে তাকিয়ে আছি তখনই সাদ ভাইয়া রুমের দরজায় টোকা দিলেন।উনার দিকে তাকিয়েই আমি চোখ বড় বড় করলাম কারন উনার হাতে ফল কাটা চাকু।উনি কি আমাকে মারতে এসেছেন?উমান তো ওয়াশরুমে।এখন কি হবে!!

চলবে………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here