#প্রেমময়নেশা(The story of a psycho lover)
#পর্ব-৫৬+৫৭(অয়ন-রিমির শুভ পরিনয়)
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
বিয়ের মতো ?? প্রবিত্র বন্ধনে বাঁধবো আজ!! ভালোবাসার নতুন সমীকরনে ? সাঁজাবো সংসার ?!!!—–রিমি
—————————–,?
।।।।।।। ???অন্তিম পর্ব ???।।।।।।
আজ অয়ন রিমির বিয়ে। হ্যা আজ সেই দিন যেই দিনের জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলো। অনেক বাঁধা-বিপত্তি আজ রিমি অয়ন এক হবে বিয়ের মতো একটি প্রবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হবে আজ দুটি হ্রদয়।
চৌধুরী বাড়িতে সবকিছু মিসেস কলিকেই সাম্লাতে হচ্ছে। বিয়ের মতো এতো বড় আয়োজন কি আর মিসেস কলি সাম্লাতে পারে? নিদ্র ও ইশান ও যোগ দিয়েছে বিয়ের প্রস্তুতিতে।
টকোপি বাড়িতে এদিক থেকে অইদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
অয়ন এখনো ঘুমে। আমান টকোপিকে নিজের কোলে নিয়ে বলে উঠে–
টকোপি তুই এই বাড়িতে কেন?
তোর তো রিমিপাখির বাড়িতে থাকার কথা।
টকোপি এমনভাবে ইশারা করে যার মানে–
আমি ইচ্ছে করে আসেনি অই বজ্জাত সাইকো টা আমাকে এখানে এনেছে ?রিমির কাছ থেকে।
আমান বলে উঠে–
আরে টকোপি তুই কীভাবে কথা বলছিস?
এইযে আমি বলছি আমাকে কি চোখে পড়েনা।
আমান তাঁকিয়ে দেখে ইশান।
আমান ফিক করে হেঁসে দেয়।
আমানঃ সত্যি তুইও নাহ।
ইশানঃ দেখ রিমি থুরি আমাদের ভাবির ভাষাই বললাম।
ভাবি থাকলে এই ডায়লগ টাই দিতো।
বাবা রে কি মার টাই দিয়েছিলো অয়ন বেটা এখনো মনে আছে।
(ঠাট্টার সুরে)
আমান বলে উঠে–
বেশ হয়েছে।
ইশানঃ আচ্ছা আমরা যার বিয়েতে এতো কাজ করছি সে কই তার তো কোনো খবর নেই।
তখনি কলি বলে উঠে–
দেখো গিয়ে ঘুমোচ্ছে।
ইশান বলে উঠে–।দেখেছো আমরা এতো কাজ করছি বেটার বিয়েতে আর বেটা আরামছে ঘুমাচ্ছে।
পায়েল শাড়ির ডালা উপরে নিয়ে যেতে যেতে বলে উঠল–
এইটাকেই বলে যার বিয়ে তার হুশ নেই পাড়া-পড়শির ঘুম নেই।
আমানঃ একটা কাজ করি আমরা বরং এখন যাই।
অয়নকে ঘুম থেকে ডেকে তুলি।
সুপ্তি বলে উঠে–
তাড়াতাড়ি অয়নকে ডেকে আন।
কিছুক্ষন এর মধ্যেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
(রুশনি বিয়ের সময় আসবে)
ইশানঃ আমান চল আমরা গিয়ে ডেকে তুলি।
আমান টকোপিকে নিয়ে কোলে নিয়ে বলে উঠে-
আমানঃ ঠিক আছে চল।
অয়ন ঘুমিয়ে আছে।
ইশান ও আমান অয়নকে ঘুম থেকে একেবারে টেনে
ঘুম তুলে
অয়নঃ কি হয়েছে আমাকে একটু শান্তিতে কি ঘুমাতেও দিবি না তোরা?
ইশানঃ ঢং টা দেখো এই ছেলের এমন একটা ভাব নিচ্ছে মনে হয় তার নাহ আমাদের বিয়ে
সবকিছু আমাদের উপর ছেড়ে দিয়ে উনি ঘুমাচ্ছেন
অয়ন কোনোরকম চোখ খুলে বলে উঠে–
দেখ এম্নি এমনি
করছিস? বিয়েতে পেট পুরে দুই বেলা খেতে ও পারবি।
দেখ আমার বিয়েতে তো আর তোদের ফ্রি ফ্রি খাওয়াতে পারবো নাহ।
আমানঃ তবে রে
এই বলে ইশান ও আমান অয়নকে মারতে গেলে
অয়ন দৌড়ে উঠে যায়।
ফারহান তখুনি ঢুকে।
আমান ঃ এইযে আরেকজন এলেন এতোক্ষন আপনার সময় হলো??
ফারহানঃ আরে বাবা।
আমার শ্বালীর বিয়ে বলে কথা।
আমি একটু বিজি আরকি। বুঝতে পারছিস আমার শুশ্বড়কে আবার হেল্প করতে হচ্ছে। বিয়ের তো আবার কম ঝামালা নাহ।
( দাঁত কেলিয়ে)
অয়নঃ হুম এখন শ্বালী ই সব।
আর এই বেস্ট ফ্রেন্ড কিছুই নাহ।
ফারহানঃ আমার শ্বালীকে হিংসা করছিস??
দাঁড়া এখুনি ফোন করতাছি।
ওহ আচ্ছা মনে পড়েছে
তুই নাকি টকোপিকে নিয়ে এসেছিস? আমার শ্বালী সারা বাড়ি খুজে পাচ্ছেনা
চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া কান জ্বালা পালা কইরা দিলো।
অয়ন আমানের থেকে টকোপিকে নিজের কোলে নিয়ে বলে উঠলো–
আরে আজকের পর তো সেই আমাদের বাড়িতেই চলে আসবে
তাই ভাবলাম আমি আগে আগেই নিয়ে আসি
টকোপিকে। কিউট অনেক।!!
ফারহানঃ হুম আর এদিকে তোমার বউ চিল্লিয়ে বাড়ি মাথায় করছে তাড়াতাড়ি দে টকোপিকে নিয়ে যেতে হবে রিমির কাছে।
এদিকে,,,
আমাকে হলুদের জন্য কিছু মেয়ে রেডি করে চলে গেলো।
কাব্য আমার কোলে।।
কি সুন্দর খেলা করে যাচ্ছে। তখুনি সুমু এসে বলে উঠে—
তুই এখানে? এখুনি হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
আমি বলে উঠলাম-
আমি এখুনি যাচ্ছি।
সুমু আমার থেকে কাব্য কে নিয়ে বলে উঠে–
ঠিক আছে আয়!
তখুনি আমার ফোনে উনার ভিডিও কল আসে ওয়াটসঅ্যাপ এ
আমি রিসিভ করি।
আমি হেঁসে দেই।
কারন উনি আমার দিকে মুগ্ধ হয়ে তাঁকিয়ে আছেন।
আমিও উনার চোখে আমার জন্য মুগ্ধতাই দেখতে পারছি।
উনি আমার দিকে কিছুক্ষন তাঁকিয়ে বলে উঠে–
আমার হলুদ রিমিপরী!
আজ রিমিপরী থেকে একেবারে হলুদ রিমিপরী লাগছে!
আমি বলে উঠলাম–
আপনার গাঁয়েও হলুদ শেরওয়ানী মানিয়েছে কিন্তু হ্যান্ডসাম লাগছে।
অয়ন কিছুটা ভাব নিয়ে বলে উঠে–
আমাকে তো সমসময় হ্যান্ডসাম লাগে ইউ নো!
সবার ক্রাশ বলে কথা।
আমি বলে উঠলাম– হুম কিছু লুচু মেয়েদের!!
অয়নঃ কিহ ?
আমি হেঁসে দিলাম।
অয়ন আবারও আমার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে–
রিমিপরী!
রিমিঃ হুম!
অয়নঃ আজকে আবারও সেই দিন টি চলে আসলো।
আমাদের বিয়ের দিন।
তুমি আবারও আমার দেওয়া সেই গোলাপি বেনারসি টা পড়বে! আর আমি তোমাকে দেখতে থাকবো।
আমি বলে উঠলাম–
আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা।
আমার ভাগ্যেও কি এতো সুখ ছিলো?।এই দিনটা আমার জীবনে আসবে কখনো ভাবিনি কিন্তু আপনি ঠিক আসবেন আমার জীবনে এইটা বিশ্বাস ছিলো।
অয়নঃ এইযে রিমিপরী! শুনো বধু বেশে আমার জন্যে কিন্তু অপেক্ষা করবে তোমার সাইকো তোমাকে তার ঘরের বউ করে নিয়ে যাবে !
একেবারে টুকটুকে বউ করে.।
আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি।
উনি আমার দিকে মোহময় দৃস্টিতে তাঁকিয়ে আছেন।
অয়নঃ অপেক্ষা করো তোমার সাইকো আসবে।
এইবার তোমাকে সে নিরাশ করবেনা ??
।
।
।
।,,
????
বধুবেশে বসে আছি গাঁয়ে সেই গোলাপি বেনারশি।
টকোপি আমার কোলে একেবারে লেপ্টে আছে।
মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবো।
আমি আমার সব বান্ধুবিরা আমাকে নিয়ে ফাজলামো করে যাচ্ছে সত্যি এদের নিয়ে পারিনা।
আমাদের বিয়ে শহরের থেকে দূরে গ্রামের একটি সুন্দর পার্টি সেন্টরে হবে।
মুলত এইটা ভালোমা দের নিজেদের পার্টি সেন্টার।
মা আমার দিকে তাঁকিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
বাবাও দূরে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলছে।
সুমুঃ বাবা -মা রিমি আর অয়ন ভাইয়া কত দিনের প্রতিক্ষার পরে আজকে এক হবে
আজকের দিনে প্লুিয কেঁদো নাহ।
ফারহান ভাইয়া ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠে–
আর কিছুক্ষন এর মধ্যেই কিন্তু বরযাত্রি চলে আসবে।
নিদ্র আংকেল ফোন করেছিলো।
আশরাফ সাহেব(রিমির বাবা)
বলে উঠে-।হ্যা হ্যা চলো।
বিরাট আয়োজন করা হয়েছে সেন্টারে।
চারদিকে বিয়ের আমেজ। ডক্টর অয়ন চৌধুরীর বিয়ে বলে কথা!
বরযাত্রি এসে গেছে।
সজ্ঞে সজ্ঞে আকাশে বড় বড় আতশবাজি ফুটতে থাকে।
আকাশে এতো আতশবাড়ির শব্দে আমি বুঝতে পেরে যাই উনি এসেছেন।
আমার সাইকো তার কথা রেখেছে।
।
আমি টকোপিকে বলে উঠলাম–
কিরে উনি তো চলে এসেছে
দেখ তো বাইরে কি হচ্ছে।
আমার কথা শুনে টকোপি দৌড়ে চলে যায়।
অয়ন এইবার গাড়িতে করে নামে।
সেন্টারের আগে একটি বড় পুল আছে।
সেখানে ফুল দিয়ে সাঁজানো নৌকার মতো বড় বোর্ড আছে
তারপর বর যাত্রি অন্য নৌকায় চরে যায়।
অয়ন একাই নিজের তলোয়ার টা নিয়ে
নিজের বড় বোর্ড এ উঠে যায়।
বড় বড় আতশবাজি ফুটছে চারদিকে,,,,
চারিদিকে আলোয় জলমল করছে।
মিউজিক বক্সে জোড়ে জোড়ে বেজে উঠছে।
?Sun mere sehajadi
main hu tera sehajada ?
bahooon main leike tuje
mein karta hu waaada ?
সত্যি আজ লাল ডাসমন্ড স্টোন
শেরওয়ানীতে হাতে তলোয়ার নিয়ে আর রাজাদের মতো এন্ট্রিতে অয়নকে আজ শেহজাদা লাগছে।
যে আজ তার শেহজাদীকে বিয়ে করে নিয়ে যাবে।
গ্রেন্ড এন্ট্রির সাথে
বরযাত্রি হোলে প্রবেশ করলো।
সবার সামনে হাঁসিমুখে থাকার নাটক করলেও
বিয়ের এতো আনন্দ এতো আয়োজন আমানের বুক টাকে ছুড়ি দিয়ে যেনো বার বার আঘাত করছে।
তা ছোয়ার চোখ এড়ালো নাহ!
আদিও বুঝতে পারছে আমানের অবস্হা।
আদি ও ছোয়াও বিয়েতে এসেছে।
আদি ও ছোয়ার রিলেশন আমান মেনে নিয়েছে।
সাম্নেই তাদের বিয়ে!
ছোয়াঃ ভাইয়া ও কি মানুষ?
নাহলে নিজের ভালোবাসার মানুষটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর ভাইয়া হাঁসিমুখে থাকার নাটক করে যাচ্ছে।
আদিঃ হয়তো এইটাকেই বলে একতরফা ভালোবাসা!
যার নেই কোনো চাহিদা!
ছোয়াঃ কিন্তু আমার ভাইয়ার মতো মানুষের সাথেই কেন এমন হয় বলতে পারো?
সবাই নিজের লাইফ নিয়ে হ্যাপি
আর ভাইয়া?
তখুনি আমি উপরের থেকে নামছি।
উপর থেকে
আমার উপর দিয়ে গোলাপ ফুলের পাপড়ির বর্ষন হচ্ছে।
অয়ন রিমির দিকে তাঁকিয়ে যেনো চোখ সরাতে পারছেনা।
রিমিকে এই সাঁজেই দেখার জন্যই তো সে এতোদিন অপেক্ষা করছিলো।
আজ সেই দিনটি চলে আসলো।
রিমি তার সামনে বধু রুপে।
অয়ন বিড়বিড় করে বলে উঠে–
আমার রিমিপরী! আজ আমাকে মেরেই ফেলবে মনে হয়!
আমানও মুগ্ধ হয়ে রিমির দিকে তাঁকিয়ে আছে।
রিমিকে এই বধু রুপেই দেখেই সে
রিমির প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো।
আজকে আবারও সে বধু রুপে তার রিমিপাখি তার সামনে।
কিন্তু আজ সে অন্যকারো বউ হবে। ভাবতেই কান্নাগুলো গলায় ধলা পাকিয়ে আসছে আমানের।
।।।।
আমাকে উনার পাশে বসানো হলো।
কাজি সাহেব আমাদের বিয়ে পড়ানো শুরু করলো।
কাজি সাহেব অয়নকে সে ফটফট করে কবুল বলে দেয়।
এই নিয়ে ইশান ও ফারহান কম মজা করেনি।
আমাকে কবুল বলতে নিলে।
আমি আস্তে আস্তে তিনবার বলে দেই।
তৃতীয় বার বলার সময় অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে।
হ্যা আমি পেয়েছি আমার সাইকো।
এতো কস্টের পরে এতোটা সাধনার পরে।
উনি আমার অবস্হা বুঝতে পেরে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে।
হ্যা এই হাত উনি কোনোদিন ছেড়ে যাবেনা।
আমানের চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ে।
সে সবার অজান্তে তা তাড়াতাড়ি মুছে নেয়।
উপস্হিত সকালের সামনে আমার বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হোলাম ?।।।
এখন সবাই নাঁচগানের আয়োজন করেছে।
আমান স্যার আমাদের কাছে এসে বলে উঠে–
এখন তো তুমি ভাবি হয়ে গেলে তা রিমিপাখি এখন থেকে কি আর ভাবি বলে ডাকা যাবেনা?
রিমিঃ সমস্যা নেই আমান স্যার!
আমানঃ তোমার যা সাইকো হাজবেন্ড পরে দেখবে আমাকে আবার কি না করে দেয়(মজা করে)
অয়ন বলে উঠলো-
তোর স্টুডেন্ট ডাকতেই পারিস।
সুমুঃ শুনেছি আমাদের আমান ভাই অনেক সুন্দর গান গায়?
কি গো আমান ভাই একটা গান হবে নাকি?
অয়নঃ হ্যা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা গাইবি তো?
আমানঃ বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে বলে কথা!
আমান রিমির দিকে তাঁকিয়ে গেঁয়ে উঠে—
?Taaron Ka Chamakta Gehna Ho,
Taron Ka Chamakta Gehna Ho,
Phulon Ki Mehakti Vaadi Ho,
Us Ghar Mein Khushhaali Aaye,
Jis Ghar Mein Tumhari Shaadi Ho,
Taaron Ka Chamakta Gehna Ho,
Phoolon Ki Mehakti Vaadi Ho,
Uss Ghar Mein Khushali Aaye,
Jis Ghar Mein Tumhaari Shadi Ho ?Ho
Har Ayina Tumko Dekho,
Tum Toh Aisi Shehzadi Ho ?
Us Ghar Mein Khushali Aaye,
Jis Ghar Mein Tumhari Shaadi Ho. ??
Khushiyon Ke Mehlon Mein Baitho,
Koi Gham Na Tumhare Paas Aaye,
Na Umr Ka Pehra Ho Tumpe,
Mere Dil Ki Dua Ye Rang Laaye,. ??
???
Rab Hasta Hua Rakhe Tumko,
Tum Toh Hasne Ki Aadi Ho,
Uss Ghar Mein Khushali Aaye,
Jis Ghar Mein Tumhaari Shadi Ho,
গাইতে গাইতে আমানের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে।
সবাই জোড়ে জোড়ে হাত তালি দেয়।
এখন বিদায়ের পালা বাবা-মাকে জড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছি আমি।!
বাবা আমার হাত উনার হাতে রেখে বলে উঠে–
বাবা আমার মেয়েটাকে খেয়াল রেখো আজ থেকে ওর দ্বায়িত্ব আমি তোমার হাতে দিলাম।
অয়নঃ আপনি চিন্তামুক্ত থাকুন!!
সবাইকে বিদায় দিয়ে আমাদের গাড়ি চৌধুরী বাড়ির দিকে চলল।
বাসরঘরে বসে আছি আমি।
চারদিকে ফুল আর ফুল। উনার ঘরটা একেবারে ফুলের বাগানের মতো লাগছে।
বেডের পাশেই ফুলের একটা দোলনা।
ছোট্র একটি পুল সেখানে বিভিন্ন গোলাপ ফুলের সমাহার!
ভাবতেই অবাক লাগছে আজকে থেকে
আমি উনার বউ। উনার উপর শুধুমাত্র আমার অধিকার।
দরজা খুলার শব্দে আমি নিজের ভাবনা থেকে বের হই।
উনি এসেছেন।
অয়ন ঃ একি
রিমিপরী তুমি এখনো চেঞ্জা করোনি।
এই নাও এইটা এখুনি পড়ে আসো
( আমার হাতে একটি গোলাপী সিল্কের শাড়ি ধরিয়ে)
আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বলে উঠেন–
কোনো কথা না যাও গো নাও ফাস্ট।
শাড়ি টা বেশ সুন্দর। কি জানি উনার মাথায় কি চলে? আমি পড়ে নিলাম
ওয়াশরুমে থেকে বের হতেই দেখি উনি আসনায় দাঁড়িয়ে চুল সেট করছেন। হাতে ব্রেন্ড্রেড ওয়াচ।
উনার গাঁয়ে গোলাপি পাঞ্জাবি।
ইসস কত্ত হ্যান্ডসাম লাগছে আমার সাইকো টাকে।
বাতাসে উনার সিল্ক চুলগুলে উড়ছে।
উনি আয়নায় আমার দিকে তাঁকিয়ে আছে মোহময় দৃস্টিতে।
অয়ন বলে উঠে—
এইভাবে তাঁকিয়ো নাহ রিমিপরী
এইখানে লাগে(বুকের দিকে ইশারা করে)
আমি হেঁসে দিলাম।
অয়ন আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠে–
সত্যি রিমিপরী নেশায় ধরিয়ে দিচ্ছো।
তোমার এই হাঁসিতে যে আমি কতবার ঘায়েল হই জানো কি তুমি?
উনি এগোচ্ছেন আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি।
উনি আমার একেবারে কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নেয়–
আমি বলে উঠলাম–
আরে কি করছেন??
(লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি)
অয়ন বলে উঠে–
আজকের এই দিনে আমার রিমিপরীকে আমি নিজের মতো করে নিজের হাতে সাঁজাবো।
যেখানে থাকবে না কোনো ম্যাকাপের প্রলেপ।
অয়ন আমাকে একটি আয়নার সামনে বসিয়ে দেয়।
পাশেই রয়েছে সাদা কাঠগোলাপের সব সুন্দর সুন্দর গহনা।
উনি আমাকে নিজের হাতে সব পড়িয়ে দিচ্ছেন।
উনার প্রতিটায় স্পর্শে বার বার কেঁপে উঠছে।
সাঁজানো শেষ হলে উনি আমার গাড়ে নিজের থুতনি রেখে বলে উঠে–
দেখো তো আমার রিমিপরী মায়াবতী লাগছে নাকি?
কত সুন্দর নাহ আমার মায়াবতী?
আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলি।
উনি আমাকে দিকে তাঁকিয়ে গেঁয়ে উঠেন–
?তুই হাঁসলি যখন
তোর ই হলো এ মন ?
আমিও গেঁয়ে উঠলাম—
?তুই ছুলি যখন
তোরই হলো এই মন ?
উনি আমাকে আবারও কোলে তুলে নেয়।
আমি কিছু বলবো তার আগেই উনি বলে উঠেন–
হুসসস রিমিপরী!!
উনি আমাকে বারান্দায় নিয়ে যায়।
আমি তো পুরোই অবাক!
বারান্দায় চারিদিকে জোনাকি পোকা উড়ে বেড়াচ্ছে তাদের আলোয় চারদিকে আলোকিত হয়ে আছে চারদিকে অন্ধকার। শুধুই জোনাকি পোকার আলো।
বারান্দা টা বেশ বড়। বারান্দার এক পাশে ছোট্ট একটি ফুলের বেড।
চারদিকে মৃুদ্যু বাতাশ বইছে। অনেক সুন্দর।
অয়ন বলে উঠে–
রিমিপরী তোমার পছন্দ হয়েছে??
আমি বলে উঠলাম–
অনেক ইনেক পছন্দ হয়েছে খুশিতে আত্বহারা হয়ে।
অয়নঃ আজকের দিন টা শুধু তোমার আর আমার।এই দুই বছর অনেক কস্ট সহ্য করে আমরা এক হয়েছি। আজকে থেকে শুরু হবে আমাদের এক নতুন অধ্যায়। আল্লাহ ছাড়া এই পৃথিবীতে আমাদের আর কেউ আলাদা করতে পারবেনা।
আমি বলে উঠলাম– হ্যা আমাদের ছোট্ট একটি সংসার!
অয়ন এইবার নেশাক্ত দৃস্টিতে আমার দিকে তাঁকিয়ে বলে উঠে–
রিমিপরী!
আমি বলে উঠলাম– হুম
অয়নঃ আজকে কি তোমাকে আপন করে নিতে পারি?
তোমার #প্রেমময়নেশায় ডুব দিতে পারি??
আমি উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি।
অয়ন তার উত্তর পেয়ে
যায়। সে রিমির কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দেয়।
অয়নঃ ভালোবাসি!
রিমি ঃ আমি ভালোবাসি। নিজের থেকেও বেশি।
উনি আমাকে কোলে করে বিছানায় শুয়িয়ে দিলেন।
কিছুক্ষন আমার দিকে নেশাক্ত দৃস্টিতে তাঁকিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দিলেন।
আমায় আমি লজ্জায় অন্যদিকে ঘুড়ে যাই।
অয়ন আমার দিকে তাঁকিয়ে মুচকি হেঁসে
আমার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে–
মিসেস এখন তো আমার #প্রেমময়নেশার সমুদ্রে কেবল পা রেখেছো এখনো তো সাঁতার কাটা বাকি।
হোক নাহ আজ রাত টা নেশাময় দোষ কি তাতে।
??????????
এদিকে আমান ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে আজ সে আমেরিকা চলে যাবে।
অয়ন বা রিমি জানেনা। আজ রাতে তার ফ্লাইট
ছোয়াঃ ভাইয়া তুই পালিয়ে যাচ্ছিস?
আমানঃ নাহ রে পাগলি আসলে
আমারও কিছু সময় প্রয়োজন। এইখানে থাকলে শুধু কস্টই বাড়বে।
রিমিপাখি আর অয়ন সুখে থাকুক। আমি নিজেকে ঠিক করে আবারও দেশে ফিরবো দেখিস।
ছোয়ার বড্ড অভিমান হচ্ছে।
আমান মুচকি হাঁসে।
তখুনি টকোপি দৌড়ে চলে আসে।
আমানঃ টকোপি এখানে?।
ছোয়াঃ৷ তুই চলে যাচ্ছিস।
তাই আমিই নিয়ে এসেছি ওকে এখানে নিয়ে এসেছি।
শেষবারের মতো ওর সাথে একটু দেখা করে যাহ।
আমান টকোপিকে কোলে নিয়ে বলে উঠে–
এইযে আমার টকোপি রিমিপাখির খেয়াল রাখবি।
তুইও নিজের খেয়াল রাখবি।
টকোপি কি বুঝলো কে জানে সে মাথা নাড়ালো।
ছোয়া কেঁদে দেয়।
????
আমান প্লেনের সিটে বসে
রিমির সাথে কাটানো মুহুর্ত মনে করছে সত্যি
এই মুহুর্ত সে কোনোদিন ভুলবেনা।
তখুনি একটা মেয়েলি কন্ঠ বলে উঠে–
হেই মিঃ!
আমান তাঁকিয়ে দেখে
একটা মেয়ে।
মেয়েটা বেশ হাঁসিখুশি।
আমানঃ জ্বী বলুন!
মেয়েটি ঃ আপনার পাশের সিটটি আমার।
সো
আমান সাইড দেয় মেয়েটি বসে পড়ে।
মেয়েটি বলে উঠলো-হ্যালো আমি মেঘলা রাহমান।
আপনজনেরা মেঘ বলেই ডাকে।
আমানঃ আমি ডক্টর আমান শিকদার!
মেঘঃ ওহ আমান!
আমানঃ সরি?
মেঘঃ নাহ মানে আপনি অনেক হ্যান্ডসাম আই লাইক ইট।
আমান বিষম খেলো মেয়েটা দেখি গাঁয়ে পড়া।
মেঘঃ জানেন আমার বাপির ডক্টর ছেলে বেশ পছন্দ।
আপনি চাইলে আমার হাজবেন্ড হতে পারেন।
আমানঃ ওয়াট???(চিল্লিয়ে)
মেঘঃ দেখুন আমি সোজা কথা সোজা বলতেই পছন্দ করি।
প্রথম দেখাতেই
আপ্নাকে আমার পছন্দ হয়েছে
আরে বাবা আমেরিকায় আমার বাবার বিরাট ব্যবসা আছে।
আমানঃ আপনার মাথায় প্রব্লেম আছে।
(রেগে)
মেঘঃ আরে দেখুন না আমি কত্ত কিউট হি হি হি।
আমান মেঘ এর হাঁসি দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়।
মেয়েটার হাঁসি
একেবারে রিমির মতো।
মেয়েটার চোখ ও একেবারে রিমির মতো মায়াবী।
এইটা কী করে সম্ভব?
মেঘঃ কি মিস্টার আমি সুন্দর নাহ?
আমান মুচকি হেঁসে অন্য দিকে ঘুড়ে যায় মেয়েটার মাথায় সত্যি প্রব্লেম আছে।
কিন্তু মেয়েটার হাঁসি ও চোখ একেবারে রিমির কপি।
মেঘঃ এই মেঘ এর যখন এই ছেলেকে পছন্দ হয়েছে একেই বিয়ে করবে হি হি হি( মনে মনে)
।।।।।।????
কিছুদিন পরে,,,,
আমি টকোপিকে কোলে নিয়ে মুখ ঘুমড়া করে বসে আছি।
অয়ন আমাকে এইভাবে দেখে বলে উঠে–
আমার রিমিপরীর আজ হঠাৎ মন খারাপ?
(ভ্রু কুচকে)
রিমিঃ কিছুনা
শুনলাম আমান স্যার নাকি
আমেরিকায় চলে গেছে।
আমানঃ হ্যা অইখানে গিয়ে ও আরো কিছু শিখতে পারবে তাই।
রিমিঃ যাই বলুন আমান স্যার আমাকে যেভাবে সবকাজে সাপোর্ট করেছে আমি উনাকে কখনো ভুলবো নাহ।
অয়নঃ আমানের প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার উপস্হিতিতে ও তোমাকে যেভাবে খেয়াল রেখেছে! সত্যি আমি অনেক গ্রেটফুল।
আমি ছোট্ট করে হুম বললাম।
অয়নঃ আচ্ছা রিমিপরী তোমার কি হয়েছে বলোতো?
অয়ন আমার থেকে টকোপিকে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকে।
আমি বলে উঠলাম–
লন্ডন থেকে পায়েল আপু ফোন করেছিলো।
আপু প্রেগনেন্ট!
অয়ন খুশি হয়ে বলে উঠে–
এতো অনেক খুশির খবর তাহলে মন খারাপ কেন??
রিমিঃ আচ্ছা আমরাও তো বেবি নিতে পারিনা?
ভালো মা কত্ত খুশি হবে তাইনা।
অয়ন মুচকি হেঁসে বলে উঠলো–
হুম কিন্তু এখন নাহ
রিমিঃ কেন? (মন খারাপ করে)
অয়ন ঃ তুমি এখন ছোট রিমিপরী!
রিমিঃ ইসস আমার ২১ বছর তাও ছোট?
উনি আমাকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে
ডক্টর এর এপ্রোন টা আমার গাঁয়ে জড়িয়ে বলে উঠে–
আমি চাই আমার রিমিপরী একদিন আমার থেকেও
একজন বড় ডক্টর হোক! তাই এখন তোমাকে বেশি বেশি পড়তে হবে এইসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। সামনে পরীক্ষা!
আমি বলে উঠলাম–
আমি তো পড়বো আর একজন বড় ডক্টর ও হবো আপনার মতো কিন্তু কাব্যের জন্য তো একটা খেলার সাথি দরকার তাইনা??
অয়ন বলে উঠে–
কাব্যের জন্য তোমাকে চিন্তা করতে হবে ঠিকসময় আমাদের ঘরে ঠিকই একটা প্রিন্স বা প্রিন্সেস চলে আসবে আল্লাহ চাইলে।
আমি মুখ ঘুমড়া করে ফেললাম।
রিমিঃ কথা বলবো নাহ যান।
অয়নঃ ঠিক আছে নাহয় সুন্দরী ডক্টরদের সাথে কথা বলবো
রিমিঃ কিহ
অয়নঃ কিহ নয় জ্বী!
রিমিঃ দুর
উনি হেঁসে আমাকে নিজের কোলের মধ্যে নিয়ে বলে উঠে–
আমার সাথে চালাকি করে লাভ নেই৷ রিমিপরী তোমারই লস।
ভুলে যেওনা তুমি যে মেডিকালের স্টুডেন্ট আমি সেই মেডিকালের প্রফেসর।
রিমিঃ হুম আমার সাইকো প্রফেসর।
টকোপি ও আমাদের সাথে মাথা নাড়ালো ।
আমরা দুজনেই হেঁসে দিলাম।
এইভাবেই ভালো থাকুক সাইকো আর তার রিমিপরীর ভালোবাসা। সুখে শান্তিতে কাটুক তাদের ছোট্ট সংসার।
।
।
।
।
।।।।।।। সমাপ্ত।।।।।। ?
(সবাই যাতে শেষ হয়ে গেছে বলে আফসোস না করে তাই অনেক বড় করে শেষটা দিয়েছি কিন্তু)
(অবশেষে শেষ হলো #প্রেমময়নেশা গল্পটি। সত্যি বলতে এই গল্পতে আপনাদের অনেক সাপোর্ট পেয়েছি ২ মাসের বেশি সময় নিয়ে গল্পটি শেষ হলো। আল্লাহর রহমতে অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। অনেক গুলো পর্ব হয়ে গেলো এই গল্পটির।
অনেকেই হয়তো রাগ করবে আমার উপর যে কেন শেষ করে দিলাম। আসলে এর থেকে বেশি বড় করলে সবাই বিরক্ত হয়ে যাবে আমি চাইনা রিমি-অয়নের জুটির প্রতি কেউ বিরক্ত ফিল করুক।
আমি অনেক ভালোবাসা দিয়ে প্রেমময়নেশা গল্পটি লিখেছিলাম যাতে কিছুটা হলেও সবাই ভিন্নতা পায়।
শেষ দুটো পর্ব লিখতে গিয়ে আমার এতো কান্না পেয়েছে। কারন অনেক সময় হয়ে গেলো গল্পটির অনেক মিস করবো চরিত্রগুলোও মিস করবো। মনে হচ্ছে চরিত্র গুলো আমার বাসায় বেড়াতে এসেছিলো আজ চলে যাচ্ছে। কিছু পাঠকদের কথা না বললেই নয় এতো গুলো পর্ব হয়ে তারা কখনোই বিরক্তি ফিল করেনি। সত্যি আমি অনেক গ্রেটফুল। আর শেষ পর্ব আমি অনেক টাইম নিয়ে লিখেছি যাতে শেষটুকু মানুষের হ্রদয় ছুতে পারে আমি জানিনা আমি পেরেছি কিনা । আশা করি সবাই রিমি-অয়নের জুটিটাকে মনে রাখবে। এবং আজকে গল্পটা শেষ হয়ে গেলো আমি চাই সবাই তাদের মন্তব্য আজকে দিক। আমি আশা করি আমার সাম্নের গল্পেতেও সবার ভালোবাসা পাবো ?। সবাই ভালো থাকবেন সুস্হ থাকবেন।
এতোদিন ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ
মিস ইউ অল ? লাউ ইউ অল)
আল্লাহ হাফেজ ?☺️!!
আমি যাইগা অক্কে বাই!!!
লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি ?