#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_48
এক সাথে এতো গুলো অচেনা মুখের সামনে দাড়িয়ে আছে ঝিল। কয়েক মিনিটের দেখাতে কি চেনা হয় ?
প্রতি টি মানুষ কে এক বার কিংবা দুবার দেখেছে। কারো সাথেই কথা হয় নি। সবার মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে কার্টুন মনে হচ্ছে। কোন স্থানে ছিলো আর আজ কোন স্থানে আসতে হয়েছে। ভেতর থেকে ভয় যেন গলা টিপে ধরেছে। শুকনো ঢোক নেওয়া টা ও দুষ্কর হয়ে পরেছে। প্রতি টা সদস্য ই তাঁর থেকে বড় শুধুমাত্র ফুল রূপা আর দানেশ ছাড়া।
বার বার ফুলের দিকে তাকাচ্ছে ঝিল। এক হাতের পাঁচটি আঙুল ই মুখে পুরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটা। যেন গভীর মনোযোগে দেখছে সে। ঝিল বিষয় টা আরক্ত করতে পারলো না। ইহরিমা ভাইয়ের দিকে করুন চোখে তাকালেন। মেয়েটা কে সাহস দিবে যে তাঁর ও যো নেই। ইববান ঝিলের দিকে তাকালেন না। মেয়েটার মুখ দেখে ভেতর থেকে মায়া আসে। তবু ও গলে গেলে চলবে না। তাই কঠোর কন্ঠে বললেন
_ ওকে বুঝিয়ে দাও , পরিপূর্ন বউ হতে গেলে যা যা করতে হবে। আর একটা কথা এটা শিকদার বাড়ি তাই মির্জা বাড়ির মতো যা ইচ্ছে করবে বা এক মাত্র রাজকন্যা হলে চলবে না।
কথা গুলো বলেই গটগট করে চলে গেলেন ইববান। বড় মামুনির মায়া হলো তবে স্বামীর নির্দেশ আছে ঝিল কে কেউ সাহায্য করতে পারবে না। ঝিল কে গেস্ট রুমে নিয়ে যাওয়া হলো। ঝিল মাথা টা নিচু করে নিয়ে মিনমিনে কন্ঠে বলল
_বড় মামুনি আমি কি অভিনবর ঘরে থাকতে পারি ?
ভারী অবাক হলেন ওনি। ঝিলের মায়া ভরা মুখের দিকে তাকাতেই চোখ ভরে উঠলো। বিনাবাক্য ইশারা করে অভিনবর ঘর টা দেখিয়ে দিলেন। ঝিল অদ্ভুত ভাবে হাসলো। অভিনবর ঘরের দিকে ছুটে গেল। প্রতি টা স্থানে অভিনবর ছোঁয়া রয়েছে।
বাচ্চাদের মতো আচারন করছে ঝিল। ঘরের এক কোনে দাঁড়িয়ে ফুল সেটাই দেখছিলো। এখনো মুখে আঙুল পুরে রেখেছে। এক পর্যায়ে ঝিলের চোখ যায় ফুলের দিকে। লজ্জা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠে
_ তুমি এখানে ?
ফুল লজ্জায় পরে যায়। মাত্র কিছুক্ষণের মধ্যে ই ফুলের সাথে ভাব জমে যায় ঝিলের। ফুলের সাথে হাসি ঠাট্টা করছিলো তখনি রুমে আসেন ইহরিমা। ফুল কে ইশারায় চলে যেতে বলে ঝিলের কাছে আসেন।
মাথা নত করে রাখে ঝিল। মনের ভেতর উসখুস করতে থাকে। ইহরিমা মৃদু স্বরে বলেন
_ তোকে আমার মেয়ে হতে হবে পারবি না ?
প্রচন্ড অবাকের সহিত তাকায় ঝিল। অবিশ্বাসের চোখে বলে
_ আমি !
_ হুমম। আমার তো মেয়ে নেই পারবি না কিছু পরীক্ষা দিয়ে আমার মেয়ে হতে ?
_ আন্টি
_ আম্মু বলতে হবে।
ঝরঝরে কেঁদে উঠে ঝিল। ইহরিমার চোখে পানি চিক চিক করছে। মেয়েটাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরেন। পর পর কয়েকটা চুমু খেয়ে বললেন
_ আমরা কেউ তোকে সাহায্য করতে পারবো না। তবে দোয়া তো থাকছেই , আমার মেয়ে হতে হলে একটু পরীক্ষা যে দিতেই হবে।
_ আমি পরীক্ষা দিতে পারবো আম্মু। শুধু ভরসা রাখবেন। মামাদের সমস্ত পরীক্ষায় আমি উত্তীর্ণ হবোই।
প্রাপ্তির হাসি হাসেন ওনি। অভিনব কথা বলবে তাই ঝিল কে ফোন অন করতে বলে চলে যান।
ফোন অন করতেই কল চলে আসে। নাক টেনে ঝিল বলে
_ হ্যালো
_ কেঁদেছো তুমি ?
_ না তেমন কিছুই না। কি করছো ?
_ মশার কামড় খাচ্ছি।
_ মানে ?
_ আগে বলো মামা রা কি শর্ত দিয়েছে তোমায় ?
_ পরিপূর্ন সংসারী হতে হবে। বাড়ির অন্য বউ রা যেভাবে কাজ করে ঠিক সেভাবেই কাজ করতে হবে ।
_ হোয়াট ! তুমি পারবে তো ঝিল ? ঘর কন্যার কাজে তুমি তো একদম ই কাঁচা। ইসস
_ আমি চেষ্টা করবো অভিনব। তোমাকে পাপা রা
ঝিলের কথা শেষ করতে দিলো না অভিনব । কথার সুর পাল্টে নিয়ে বললো
_ তোমার পাপা রা আস্ত এক পাষান। গেস্ট রুম তো দূরে থাক সার্ভেন্ট রুমে ও আমার জায়গা হয় নি।
স্টোর রুমে থাকতে দিয়েছেন। যেখানে মশার চাষ করা হয়। বাট আই ক্যান ম্যানেজ।
ঝিলের মন খারাপ হয়ে গেল। স্টোর রুমে থাকতে হচ্ছে। পাপাদের এমন আচারনের কারন বুঝে নিলো ঝিল। এরা অভিনবর ভালোবাসার পরীক্ষা নিচ্ছে। বিদেশে বড় হওয়া অভিনব কি করে থাকবে ?
_ ঝিল কথা বলছো না কেন ?
_ তুমি কি করে থাকবে ?
_ উফফ তুমি আস্ত এক গাঁধা। আমি ট্রাভেলার আমার সব ধাঁচের সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা আছে।
ট্রাস্ট মি তোমার পাপাদের এমন টাইট দিবো ।
আচ্ছা যাই হোক খেয়ে নিও। দেখি তোমার প্রিয় পাপা রা আমার জন্য কোন আদরের ব্যবস্থা করেছেন। এসে থেকে যা জামাই আদর করছেন।
ঝিল ফোন রেখে দেয়। মনে তিক্ততা চলে আসলো । এমন বিদঘুটে পরীক্ষা নেওয়ার আইডিয়া কার মাথা থেকে এসেছে?
নিশ্চয়ই সেই ব্যক্তি প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়েছে। নিজ ভাবনায় থতমত খেয়ে যায়। প্রচুর ক্লান্ত থাকায় ডিবাইনেই ঘুমিয়ে পরে।
দুই হাতে কপাল চাপকে ধরে নেয় অভিনব। পায়ের আঙুল গুলো উঠা নামা করে মেঝে তে ছন্দের সৃষ্টি করতেই ডাক আসে ছেলেটার। এক রাশ বিরক্তি ফুটে উঠে। মশার কামড় খেয়ে শরীর যেন ফুলে উঠেছে। স্টোর রুম টাকে জঙ্গলের থেকে ও বিদঘুটে মনে হচ্ছে।
মনে মনে দু চার টে গালি দিতে লাগলো। রাফাতের কাঁধে হাত রেখে রসিকতার স্বরে বলল
_ তোমার গ্রেট বাবা কাকারা আমার কল্লা কাঁটার জন্য ডেকেছে বুঝি ?
_ খানিক টা তেমনি ভেবে নিন। হাঁসের খামারে পাঠাবে আপনাকে। তা ও হেঁটে যেতে হবে কয়েক মাইল। মির্জা পুরের শেষ মাথাতে আমাদের বিশাল খামার।
_ হেঁটে কেন ?
_ আরামের কথা ভুলে যান ভাই। আমি নিজে ও বুঝলাম না এমন শাস্তি কেন দিচ্ছে।
ঝিলের জন্য মন খারাপ হচ্ছে বেচারি জানতে পারলে কেঁদে ভাসাতো।
গা দুলিয়ে হাসে অভিনব। হাঁসের খামারে যাওয়া হয় নি কখনো। ভালো ই হবে নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স হবে। রাফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ আমার বোন টা খুব লাকি তাই না অভিনব ভাই ?
_ লাকি তো আমি , তোমার বোন আমার জীবনে আসায় আমি নতুন কে জানতে পেরেছি । রঙিন আকাশে ধূসর রঙের প্রজাপতি টা খুব মানায় বুঝেছো । তোমার বোন টা ও তেমনি, আমার মন আকাশের ধূসর রঙের প্রজাপতি।
রাফাত হাসলো। দু চোখ ভরে দেখলো অভিনব কে। ভালোবাসলে এমন ভাবে বাসো যাকে ছাড়া প্রতি টা মুহুর্ত হবে মৃত্যুসম।
*
বোনাস পার্ট
সাত দিন ধরে কাহিল অবস্থা অভিনবর। হাঁসের খামারের মতো বিশ্রী জায়গায় রোজ যাওয়া আসা করতে হচ্ছে। তা ও পায়ে হেঁটে সাথে হাঁসের ময়লা পরিষ্কার করতে হয়। গন্ধে বমি চলে আসে তাঁর । অন্য দিকে প্রথম দিন চা বানাতে গিয়ে হাত পুরিয়ে ফেলেছে ঝিল। অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে পুরো বাসা ঝারু দিতে হয়েছে। দুজনের এক জন ও এ বিষয়ে একে অপরকে অভিযোগ করে নি । হাসি মুখে সহ্য করে নিয়েছে।
হায়রে ভালোবাসা , দু পরিবার থেকেই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে । প্রতিযোগিতা চলছে কে বেশি শাস্তি দিতে পারে। সারা দিন গরুর মতো খেটে রাত এগারোটায় স্বস্তি পেয়েছে অভিনব। ফোনে চার্জ নেই , দ্রুত চার্জ দিয়ে কল লাগালো।
দু বার রিং হতেই ফোন রিসিভ করলো ঝিল।
_ কেমন আছো ঝিল ?
_ ভালো তুমি ?
_ আমি ও ভালো আছি। রান্না করতে হয়েছে আজ ?
_ হ্যাঁ । ইউটিউব এর সাহায্য নিয়েছিলাম। তুমি যা যা বলেছিলে ভুলে গিয়েছি।
_ সমস্যা নেই। আমি আবার বুঝিয়ে দিবো। সহজ ভাবে সব কিছু করবে বুঝলে। আর আগুন থেকে একটু সাবধান ঝিল।
ঝিল উত্তর দিলো না। পোরা হাতের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো। বেশ খানিকটা চামড়া উঠে গেছে। ঝিলের মনে ভয় জাগলো তখনি অভিনব বলল
_ ভিডিও কল দেই ভালো লাগছে না কতো দিন ধরে তোমায় দেখি না।
ঝিল নাকোচ করে দিলো। নানান বাহনা দিলে ও অভিনবর খটকা লাগলো। ঝিলের কথার মূল্য দিলো অভিনব। শ্বাস নিয়ে বলল
_ চাঁদ দেখবে ঝিল?
_ তুমি পাশে না থাকলে চাঁদ টা ও যে বিষাক্ত লাগে।
_ আমি আছি তো। এই যে ফোনের এপাশ থেকে আমরা একে অপরকে অনুভব করবো।
যদি তুমি ক্লান্ত না থাকো তো আমি তোমার মাঝেই স্বস্তি নিতে চাই ঝিল। আমি খুব ক্লান্ত।
অশ্রু ভেজা নয়নে পাপড়ি গুলো মেলে দিলো। হাতের যন্ত্রনা টা বেড়ে গেছে। কোনো মতে গাঁয়ের সাথে চেপে রেখে বলল
_ এতো ভালোবাসো কেন ? আমি তো মরেই যাবো।
_ তাহলে এক সাথে মরে যাই চলো ?
ভেজা পাপড়ি মেলে দিয়ে পিট পিট করে তাকিয়ে ঝিল হাসলো। অভিনবর বুকে মাথা রাখতে পারলে দারুন শান্তি মিলতো।
চার্জ শেষ না হওয়া অব্দি কথোপকথন চললো।
প্রেম এমনি এক অনুভূতি যার কাছে ব্যথা বলতে কিছুই নেই। সব টাই সুখ।
মাঝে কেঁটে গেছে অনেক গুলো মাস। এরি মাঝে ঘটেছে দারুন কিছু ঘটনা। একদিন সকালে বাগানে পানি দিচ্ছিলো অভিনব। জাফর নিয়মিত ব্যায়াম করেন। অসতর্কতার কারনে পা পিছলে যায়। সে দৃশ্য দেখে ঝিলের পাঁচ ভাই আর বড় দু কাকা গগন কাঁপিয়ে হাসেন।
অভিনব হাসতে চেয়ে ও হাসে নি। উল্টো জাফর কে সাহায্য করেছে। হাজার হোক শশুর তো । অন্য দিকে আগুনের তাপে হাত মুখে কালি জমে গেছে ঝিলের। প্রতি টা কাজে আজ সে দক্ষ । যার সম্পূর্ন ক্রেডিট অভিনবর। প্রতি টা কাজ কে সহজ করে দিয়েছে সে। মোট কথা দূরে থেকে ও যেন দূরে নেই। নিজ হাতে গড়ে তুলেছে ঝিল কে। ভালোবাসার ক্ষমতা বুঝিয়ে দিয়েছে। কয়েক মাসে চলেছে মিষ্টি প্রেম। সময় পেলেই কথোপকথন। রাতে চন্দ্রবিলাশ এমনকি তাঁরা ও গুনেছে দুজনে।
নতুন এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিয়ে একে অপরের নিশ্বাস শুনে। ভালোবাসা বেড়েছে বই কমে নি।
উল্টো একে অপরের কঠিন সময় গুলো তে সাপোর্ট করেছে। অভিনবর একটু বেশি ই কষ্ট হয়েছে। কারন যে সব কাজ কর্ম তাঁকে দেওয়া হয়েছে সেগুলো এক প্রকার টর্চার যা ঝিলের ক্ষেত্রে সহজ করা হয়েছে।
পর পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইকবাল। অভিনব কে কিছুতেই হার মানানো গেল না। কঠিন কাজ গুলো খুব সহজেই করে নিচ্ছে অভিনব।
এক দিকে যেমন বিরক্ত হচ্ছে অন্য দিকে সুখ ও লাগছে।
তাঁদের মেয়েটা কে ভালোবাসার জন্য যোগ্য এক হাত পেয়েছে।
যদি ও অভিনবর পরীক্ষা এখনো শেষ হয় নি।
জাফর আর মনিরুল কে ডেকে পাঠান ইকবাল । গভীর সমাবেশ বসান।
_ অভিনব সম্পর্কে তোমাদের কি মতামত ?
_ আমার কাছে তেমন আহামরি মন্তব্য নেই ভাই। কারন ছেলেটা দেখতে বিদেশি দের মতো হলে ও মনের দিক থেকে সৎ।
কারো প্রতি গভীর ভালোবাসা না থাকলে এতো টা টর্চার সহ্য করতে পারতো না।
_ আমি ও মনিরুলের সাথে এক মত। জাফর কিছু বলবি ?
_ আমি জানি অভিনব ছেলেটা যথেষ্ট ভালো তবে এতো সহজে আমি ছাড়ছি না। ওর বিশেষ পরীক্ষা নিবো। ঝিলের জন্য প্রান দেওয়ার মনোবল আছে নাকি সেটাই দেখার অপেক্ষা।
শিকদার পরিবার কে খবর পাঠাও বিশেষ অনুষ্ঠান হবে।
*
দু হাতে মেহেদী লাগিয়েছে ঝিল। রূপা জোড় করে পরিয়েছে। ঝিলের হাতে মেহেদীর রঙ টা বেশ ভালোই লাগছে। অভিনবর নাম টা লিখতে পারলে ভালো হতো।
কালো চুল গুলোতে কেমন জটলা বেঁধেছে। প্রায় বছর খানেক হতে চললো এ বাড়ি তে।
মির্জা বাড়ির সাথে তেমন যোগাযোগ হয় না।
ইচ্ছে করেই কথা বলে না। প্রচুর রেগে আছে যদি ও সে রাগের পাত্তা কেউ দেয় না।
পর পর তিন বার বুক ভরে শ্বাস নেয়। কতো দিন পর অভিনবর সাথে দেখা হবে। নিজের বাসায় পা রাখা হবে ভাবতেই খুশি অনুভব হচ্ছে।
_ ভাবি হয়েছে তোমার ?
_ আসছি রূপা।
দ্রুত চুল বেঁধে নেয় ঝিল। রূপার কাছে গিয়ে বলে
_ ধীরে বলো তোমার বাবা কাকারা শুনতে পেলে আমার আর তোমার ভাইয়ার গর্দান যাবে।
ঠোঁট টিপে হাসে রূপা। ফুল কে গাড়ি তে বসিয়ে এসেছে।
শাড়ি তে বেশ পরিপাটি লাগছে ঝিল কে। বউ বউ ভাব এসেছে। মুখের জৌলুস টা যেন মুহুর্তেই বেড়ে গেছে। নিচ থেকে মুজাহীদের কন্ঠস্বর ভেসে আসে। ঝিল দ্রুত হাঁটা লাগায়।
অভিনবর কাঁধে অনেক কাজ। পুরো পার্টির আয়োজন একা হাতে সামলাচ্ছে সে। লাইটিং নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে সেগুলো ই সামলাতে দফা রফা।
আশে পাশে তাকিয়ে মাহিন কে দেখতে পেল। একা সামলানো সম্ভব হচ্ছে না। ইশারায় মাহিন এর সাহায্য চাইলো। অতি সর্তক হয়ে মাহিন সম্মতি জানালো। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাগানে আসতেই পেছন থেকে চিরচেনা সেই কন্ঠস্বর ভেসে আসলো। বুকের ভেতর ধীম ধীম আওয়াজ হচ্ছে। অভিনবর রক্তে যেন শীতলতা নেমে গেল। আশ্চর্য হলে ও সত্য পেছন ঘোরার শক্তি টুকু পাচ্ছে না সে।
হঠাৎ করেই ঝিলের আর্তনাদ ভেসে উঠে। অভিনবর অন্তর কেঁপে উঠে। পেছন ফিরে ঝিল বলে চিৎকার করে উঠে।
ঝিলের চারপাশে আগুন জ্বলে উঠেছে। মূলত ডিজাইনের জন্য আগুনের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। বিদুৎ সংযোগ দেওয়া লাইনে ঝিলের পা লাগায় ধাউ ধাউ করে আগুন উঠে যায়। সব থেকে করুন বিষয় আগুন টা ক্রমশ এক ধাপ করে আগাচ্ছে। আর সঠিক লাইন অভিনবর জানা নেই। পাগলের মতো করে উঠে অভিনব। ঝিলের ভয় লাগছে তবে অভিনবর আচরনে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠছে। হাত দিয়ে ইশারা করছে যাতে অভিনব না আসে। তবে সে দিকে খেয়াল নেই তাঁর। আগুনের তাপে ঝিলের অবস্থা কাহিল। মাথা ঘুরিয়ে পরে যায় সে। তৎক্ষনাৎ বাচ্চাদের মতো আচারন করে ফেলে অভিনব। আগুনের মাঝেই ঝাঁপ দিয়ে যায় ঝিলের কাছে । যার কারনে গায়ে থাকা শার্টে আগুন ধরে যায়। শরীরের বেশ কিছু অংশে পুরে যায়।
শার্ট টা খুলে ফেলায় বেঁচে যায় । আশ্চর্য হলে ও সত্য সবাই তখন চলে আসে আর আগুন ও থেমে যায়।
জাফর হুমড়ি খেয়ে পরেন। ঝিলের ক্ষতি হয় নি দেখে নিশ্বাস ফেলেন। মেয়েটাকে সর্বোচ্চ কষ্ট দিলেন আজ।
চোখ দুটো ভিজে যায় অভিনব দু হাতে জড়িয়ে আছে ঝিল কে। আগুন নিভে গেছে সে দিকে খেয়াল নেই।
রোহন দ্রুত বেগে অভিনবর পাশে এসে বসে।
_ আব্বু অভিনব ভাইয়ের শরীরের বেশ কিছু অংশে চামড়া জ্বলে গেছে।
সবাই অভিনবর উন্মুক্ত পিঠের দিকে তাকায়। ফর্সা পিঠে ভয়ঙ্কর ছাপ। জাফর অনুশোচনায় ভোগেন তবে অভিনবর ভালোবাসা আজ তাঁকে মুগ্ধ করেছে। নিজের মেয়ের জন্য এর থেকে ভালো কাউ কে সত্যি ই পাবেন না ওনি। দ্রুত ডাক্তার কে ফোন লাগান।
অভিনবর মাথার কাছে বসে আছে ঝিল। সবাই কে রুম থেকে বের করে দিয়েছে সে। আজ যেন নতুন রূপ নিয়ে এসেছে মেয়েটা। প্রচন্ড তেজ আর অধিকার বোধ। অভিনবর দিকে করুন দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। অভিনবর ঠোঁটের কোনে হাসি। ঝিলের নাক ফোলানো দেখছে সে। সাথে ঠোঁট উল্টানো টা যেন ওকে সম্মোহিত করে তুলেছে।
_ আরো রেগে থাকবে ?
_ কথা বলবে না তুমি । তোমরা সবাই বাজে , পাপার সাথে তো আমি কখনোই কথা বলবো না।
যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো ?
_ তো কি হতো ?
_ আমি মরে যেতাম।
অভিনবর বুকে মাথা গুঁজে দেয় ঝিল। কান্নার উত্তাপে গাল দুটো রঙিন হয়ে গেছে উজ্জ্বল রঙে ব্যথার ছাপ যেন রঙধনুর মতো সেজেছে।
আলগা হাতে স্পর্শ করে অভিনব। খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে পারে না তাই নরম হাতে জড়িয়ে ধরে।
ঝিলের চোখের পানি অভিনবর ঘাড়ে পরে পুরে যাওয়া স্থানে জ্বালা সৃষ্টি করে। তাঁতে ও যেন সুখ অনুভূত হয়। হঠাৎ করেই অভিনব এক বিশ্রি কাজ করে ফেলে। ঝিলের চোখ বেরিয়া যাওয়ার উপক্রম।
নিজেকে ছাড়িয়ে রাগি চোখে তাকায়। অভিনব অনুনয়ের স্বরে বলে
_ স্যরি। বউ কে কাছে পেলে মানুষের হুস থাকে ?
_ ছিইই তাই বলে অসুস্থ শরীরে কিস ?
দুষ্টু হাসে অভিনব। ঝিল সে হাসি উপেক্ষা করে ডয়ার থেকে মলম নিয়ে খুব যত্নে লাগিয়ে দেয়।
**সবাই বুঝে নিবেন। আমি ঘটনা গুলো খুব ছোট করছি কারন আমার উপর প্রচন্ড চাপ রয়েছে। পরবর্তী গল্প অব্যক্ত প্রিয়তমা পড়বেন তো ?
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।
চলবে