ইচ্ছেপূরন পর্ব-৫

0
1160

ইচ্ছেপূরন
পর্ব-৫

“আতিক, তুমি যাও না মায়ের সাথে? আমি কয়েকদিন একটু রেষ্ট নেই। এই কয়েকমাসে আমি হাঁপিয়ে গেছি একেবারে। ”
বিভার কন্ঠে অনুনয়। আতিক নিজের কন্ঠে আরো দ্বিগুণ অনুনয় নিয়ে আসলো-
“বিভু, আমি যদি পারতাম তবে কি যেতাম না? মায়ের অসুস্থতার সময় কতগুলো দিন ছুটি নিলাম। এখন যদি আবার সাতদিনের ছুটি চাই তবে তো আমাকেও চাকরি থেকে অবসর দেবে? তুমি চাকরি করছো না, এমন অবস্থায় আমারও যদি চাকরি চলে যায় তাহলে কিভাবে কি হবে বলোতো? সংসার চালানো মুশকিল হয়ে যাবে তো? প্লিজ তুমি এবারের মতো ম্যানেজ করে নাও?”
আতিকের কথা শুনে বিভা কেবল একটা ক্লান্তিকর দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। গত তিনটে মাসে যেন একেবারে হাফিয়ে গেছে বিভা। শাশুড়ীর সেবা করতে করতে। প্রতিদিন তিনবেলা খাইয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে ধরে ধরে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া, গোসল করতে হেল্প করা ছাড়াও সংসারের আরো কতো কাজ করতে হয় বিভাকে। একেতো চাকরি ছেড়ে দিয়ে সারাক্ষণ বাসায় বসে থাকতে হচ্ছে যেটা বিভার জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক কষ্ট তার উপর এই কাজের অত্যাচার। শাশুড়ী অবশ্য এখন বেশ সুস্থ। ইদানীং নিজের কাজ নিজেই করতে পারে। সুস্থ হওয়ার সাথে সাথে তার নতুন বায়না উঠেছে যে বাড়ি যাবে। বিভা অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু তিনি বুজতে নারাজ। উনার নাকি পেনশনের টাকা তুলতে হবে,তাছাড়া জমিজিরাতেরও খোঁজ করতে হবে। বাসাবাড়ি ঠিকঠাক আছে কিনা সেসবও দেখতে হবে! বিভা এবার যেতে চাচ্ছিলো না শাশুড়ীর সাথে। এই কয়েক মাসের পরিশ্রমে ওর একেবারে দমবন্ধ হয়ে গেছে একেবারে। ভাবছিলো আতিক যদি ওর মাকে সাথে নিয়ে যায় তবে ওর কিছুদিন রেষ্ট হবে! কিন্তু আতিক তো অফিসের ছুতা দিয়ে এবারও দায়িত্ব ওর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে? বিভার কেন জানি খুব হাসফাস লাগছে খুব। মনেহচ্ছে ও খাঁচায় বন্দী পাখি একটা, যে উড়তে না পেড়ে ছটফটিয়ে মরছে।

আতিক মনেহয় বুঝতে পারলো বিভার মনের অবস্থা। ও বিভার কাঁধে হাত রাখলো-
“সরি, তোমায় খুব কষ্ট দিচ্ছি। কি করবো বলো? আমি নিরুপায় না হলে তোমায় বলতাম না। প্লিজ এবার ম্যানেজ করে নাও। তুমি সব গুছিয়ে নাও আজ। আমি আসার সময় টিকেট কেটে আনবো। রাতের গাড়িতে গেলে অতোটা কষ্ট হবে না। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে চলে যেতে পারবে।”
বিভা কোন কথা বলে না। আতিক তৈরি হয়েই ছিলো। ও বেড়িয়ে পরলো অফিসের উদ্দেশ্যে।
বিভা ক্লান্ত শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। সব গোছগাছ করতে হবে, অনেক সময়ের ব্যাপার। আজ নিজের শরীরটা নিজের কাছেই ভারী লাগছে। তবুও যেন থেমে থাকার নয় ওর জীবন? মনটা শক্ত করে কাজে নেমে পড়লো বিভা।

রাতের দিকে শাশুড়ীসহ বিভা রওনা দিলো চাপাইয়ের উদ্দেশ্যে। এতো কাজের মাঝে আতিকের জন্য কিছু রান্না করে রেখে যেতে পারলো না। এ কথা শুনে ওর ননদ কনা বললো-
“তুমি চিন্তা করো না। আমি কাল বিকেলে একসময় যেয়ে রান্না করে রেখে আসবো। দু’চার দিনের ব্যাপার। আতিক ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবে।”
বিভা অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গাড়িতে উঠলো। আতিক বাহিরের খাবার খেতে পারে না একেবারেই। তাই বিভা কখনো কোথাও গেলে আতিকের জন্য খাবার রান্না করে রেখে যায়। আতিক ওদের তুলে দিলো গাড়িতে। রাত দশটার গাড়ি ছিলো। আতিক বারোটা পর্যন্ত বিভার সাথে কিছুক্ষণ পর পর কথা বলেছে। বারোটা বেজে যাওয়ার পর বিভাকে ঘুমিয়ে যেতে বললো। ওর নিজেরও অফিস আছে কাল, এই কথা বলে আতিক ফোন রাখলো।

*******

অনেকক্ষণ ধরে সাবার ফোনটা বেজে যাচ্ছে কিন্তু ধরতে পারছে না। মেয়েকে ঘুম পারানোর চেষ্টা করছে বেশ অনেকক্ষণ ধরে। মেয়েটার আজ চোখ বন্ধ হচ্ছে না কিছুতেই। কারন অবশ্য আছে। মেয়ে তার বাবাকে না দেখলে ঘুমায় না। বাবা অন্তপ্রান মেয়ে, যতক্ষন পর্যন্ত বাবা এসে কোলে না নিবে মেয়ের ততক্ষণ পর্যন্ত ঘুম আসবে না। আবার ফোনটা বাজতে শুরু করেছে। সাবা এবার মেয়েকে বিছানায় রেখেই উঠলো। এমনিতেই ঘুমাচ্ছে না, আর কষ্ট করে শুয়ে থেকে কি হবে? সাবা মোবাইলটায় চোখ রাখতেই দেখলো আতিক ফোন দিয়েছে। সাবার চেহারায় একটা খুশির ঝলক খেলে গেলো-
“হ্যালো, এতোদিন পর হঠাৎ কি মনে করে? তাও এই রাতের বেলা?”
“তোমাকে মিস করছিলাম অনেকদিন ধরে কিন্তু উপায় কি বলো? যে অবস্থায় পরেছিলাম! হাত পা একদম বাঁধা। ”
“তা আজ সূর্য কোনদিকে উঠলো? ”
“আজ অবশ্য ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলতে পারো! বিভা মাকে নিয়ে চাপাই গেলো আজ। বাসায় আমি একদম একা।”
সাবার চোখে অদ্ভুত লোভের দ্যুতি খেলে গেলো। সে গলা আরো খাঁদে নামিয়ে আনলো-
“সত্যি বলছো? এতো মেঘ না চাইতে বৃষ্টি? ”
“তা না হলে আর বলছি কি?এই জন্যই তো তোমাকে ফোন দিলাম? কালকে আপুর আশার কথা আমার বাসায় রান্না করে দেওয়ার জন্য। আমি কোনো একটা অজুহাত দেখিয়ে আপুকে মানা করবো। তুমি কি আসতে পারবে কাল সন্ধ্যায়?”
“আরে নেকি আর পুছ পুছ? আমি তো কবে থেকে বসে আছি? চলে আসবো, কিন্তু একা কিভাবে যাবো এতোদূর?”
“বেবি! তুমি কেন কষ্ট করবে? আমি চলে আসবো তোমাকে নিতে।”
“ওকে, এখন রাখলাম তবে?”
“হুম, কাল সন্ধ্যা ছয়টার সময় আমি তোমাকে নিতে আসবো। মনে থাকে যেন!”
“থাকবে। আমি একটু এগিয়ে যেয়ে দাঁড়াবো তাহলে পথ কিছুটা আগাবে। রাখলাম তবে?”
ফুরফুরে মেজাজে ফোন রাখলো সাবা। তখনই কলিং বেল বাজলো। সাবা দৌড়ে যেয়ে গেট খুললো। শহিদ বিরস মুখে ঘরে ঢুকলো। সাবা একনজর শহিদের দিকে তাকিয়ে বুঝে গেলো আজও কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি টাকার। সাবা বিরস মুখে রান্নাঘরের দিকো এগিয়ে গেলো। মেয়েটা দৌড়ে এসে বাবার কোলে চড়লো। আর শহিদও মেয়েকে দেখে জোর করে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুললো-
“আম্মুটা আজ ঘুমায়নি?”
মেয়ে মাথা নাড়ে।
“আচ্ছা চলো,আমি ঘুম পাড়াবো আমার মামনিটাকে।”
শহিদ মেয়েকে কোলে নিয়ে বেডরুমে ঢুকলো। আধাঘন্টা মতো মেয়ের পাশে শুয়ে গল্প করলো আর কবিতা শোনালো। ততক্ষণে সাবা টেবিলে রাতের খাবার লাগিয়ে দিলো। খাবার বলতে ভাত, ডাল আর ভর্তা। শহিদ মেয়েকে ঘুম পাড়িয়ে একেবারে গোসল দিয়ে টেবিলে এসে বসলো। দুজন কিছুক্ষণ নিঃশব্দে কিছুক্ষণ খেয়ে গেলো। সাবা আড়চোখে কিছুক্ষণ শহিদকে দেখলো, তারপর বললো-
“আজ কোনো ব্যবস্তা হলো? নতুন কোনো কাজ পেলে?”
“নাহ, কিছু হলো কই? অনেক চেষ্টা করেও কিছু আগাচ্ছে না। অফিস গুলোতে আজকাল বাজেট কাটিং চলছে। সবাই খরচ কমাতে চায়।”
হতাশ কন্ঠে বলে শহীদ।
“আগামীকাল আমি একটু রিতার বাসায় যাবো সন্ধ্যায়। পরদিন চলে আসবো আবার। তুমি কাল বিকেলের মধ্যেই বাড়ি চলে এসো। বাবুকে তোমার কাছে দিয়ে আমি বেরুবো। ”
“তোমার আবার যাওয়ার কি দরকার? আমি কিছু একটা ম্যানেজ করে নেবো। একটু সময় দাও আমাকে।”
“ম্যানেজ তো হচ্ছে না শহিদ? অনেকদিন ধরেই তো দেখছি? এরকম চললে তো না খেতে পেয়ে মারা যাবো! আমরা না হয় চালিয়ে নিলাম? কিন্তু মেয়েটার খুব কষ্ট হয়, এটা তোমার বোঝা দরকার। আমি কাল যাচ্ছি ব্যাস। আর কোনো কথা শুনতে চাই না।”
এরপরের সময়টুকু অদ্ভুত নিরবতা গ্রাস করলো টেবিলজুড়ে। দুজনাই জানে কি ভীষণ অন্যায় তাড়া বয়ে নিয়ে যাচ্ছে নিজেদের কাঁধে। তবুও দুজনাই অপারগ। দুজনাই দুজনের কাছে খোলামেলা অথচ একে অপরের সাথে নজর মিলাতে দ্বিধা বোধ করে। শহিদ খেয়ে নিঃশব্দে উঠে যায়। এটা তারই ব্যর্থতা যে সে তার পরিবারের ভরন পোষন করতে পারছে না। সাবাকেও ঠেকাতে পারছে না।
সাবা বেশ খুশি মনে খাবার তুলতে লাগলো। কালকের রাতটা বেশ এক্সাইটমেন্টের মধ্যে দিয়ে যাবে ভাবতেই খুশি লাগছে ওর। শহিদের না আছে চাকরি না আছে অন্য কিছু করার মুরোদ! বরং ও আশেপাশে থাকা মানেই সাবার অকারন টেনশন আর মন খারাপের দেশে রওনা দেয়া। সে হিসেবে আতিকের সাথে থাকা মানে বেহেশতে থাকা! সাবা গুনগুন করতে করতে হাতের কাজ শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে মুখে ক্রিম ঘসে আর কালকের চিন্তা করে মনে মনে উত্তেজনা বোধ করে। সাবা টের পেলো না, মশারীর ভেতর থেকে শহিদ সাবার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ওকে দেখছে!

*******

সকালে আতিকের ঘুম ভাঙলো সাতটায়। আজ আতিকের মন বেজায় ভালো। উঠেই সে ফোন করলো বিভাকে, ওরা ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছেছে কিনা তা জানার জন্য।
“হুম,বিভু! তোমরা পৌঁছেছো ঠিকঠাক ভাবে? ”
“হ্যা, এই তো কেবল বাসায় আসলাম। গফুর চাচা নাস্তা দিয়ে গেলেন। ফ্রেশ হয়ে মাকে নিয়ে নাস্তা করে একটা ঘুম দেবো। তুমি কি করো?”
“আমি এইতো উঠলাম কেবল! এখন রেডি হয়ে খেয়ে দেয়ে অফিস যাবো। তুমি তাহলে নাস্তা করো, আমিও যাই! ঠিক আছে? ”
“হুম, ঠিক আছে। ”
বিভা ফোন কাটলো। আতিক গুনগুন করতে করতে বাথরুমে ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলো।

সারাটাদিন বেশ আনন্দে কাজ করলো আতিক। এরমধ্যেই বোনকে ফোন দিলো –
“হুম, কনাপু, কেমন আছো?”
“ভালো। আতিক, কখন ফিরবি অফিস থেকে? আমি তোর বাসায় যাবো। ”
“কনাপু, একটু সমস্যা হয়ে গেছে। আজ অফিস থেকে কাজের জন্য একটু গাজীপুর যাবো। আসতে আসতে রাত হয়ে যাবে। তাই তোমার আজ আর আসতে হবে না। আমি বাইরে কোথাও খেয়ে নেবো।”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। তুই যেদিন ফ্রি থাকবি আমায় বলিস। অথবা তুই চলে আসিস আমার এখানে। এখান থেকেই না হয় খেয়ে যাস!”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। সে পরে দেখা যাবে।”
বোনের সাথে কথা শেষ করে সাবাকে ফোন দেয় আতিক।
” কি অবস্থা তোমার? আমি কিছুক্ষণ পরেই বের হবো। তা না হলে দেরি হয়ে যাবে। তুমি তৈরি তো?”
“তুমি আসতে আসতে হয়ে যাবো। ঠিক আছে? ”
“ওকে।”
আতিক পাঁচটার মধ্যেই অফিস থেকে বের হয়ে গেলো। এখান থেকে পুরান ঢাকা যেতে অনেক সময় লাগে। তাই তড়িঘড়ি করে বের হওয়া। এই সময়টুকু রাস্তা ফাঁকা থাকবে,তাড়াতাড়ি পৌছে যাওয়া যাবে।

সাবাকে নিয়ে যখন আতিক নিজের বাসার সামনে দাড়িয়ে তখন ঘড়িতে বাজে পৌনো আটটা বাজে। একটু একটু ভয় করছিলো আতিকের। বাসাটা সিকিউরিটি খুব স্ট্রিক্টলি ফলো করে। দারোয়ান ব্যাটা আবার বিভাকে খবর না দেয়! গেটে ঢুকতেই দারোয়ান আটকালো-
“উনি কে? ভাবি তো বাসায় নাই।”
” ও আমার বোন, আজকে বাসায় আসার কথা ছিলো। আমার রান্না করে দিতে আসছে, রাতেই চলে যাবে আবার।”
আতিক ঝটপট উত্তর দিলো। দারোয়ান আর কিছু বললো না। আতিক সাবা কে নিয়ে উঠে এলো চারতলায়। এরমধ্যেই দারোয়ান ফোন দিলো বিভাকে-
“ভাবি, ভাইজানের সাথে এক আপা আসছে। তাই আপনাকে জানাইলাম।”
বিভা ভাবলো কনার তো আজ আসার কথা ছিলো? সেই মনেহয় এসেছে!
“হ্যা, চাচা। আজ আমার ননদের আসার কথা ছিলো, সেই মনেহয় আসছে। ধন্যবাদ চাচা আমাকে জানানোর জন্য। ”
বিভা দারোয়ানের ফোন কেটে দিয়ে আতিককে ফোন দিলো-
“হ্যালো, হ্যা। কনাপা আসছে নাকি? তোমার রান্না করে দেওয়ার জন্য আসার কথা ছিলো? ”
“হ্যা,আসছে তো। এখন বাথরুমে ঢুকেছে। ফ্রেশ হয়ে রান্না করতে ঢুকবে। তুমি এখন রাখো। আমি আপুর কাজে হেল্প করি যাতে তাড়াতাড়ি হয়। আমি তোমাকে পরে ফোন দিচ্ছি ফ্রি হয়ে।”
আতিক তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দেয়। সাবা এতোক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। আতিক ফোন কাটা মাত্রই ওর কাছে এসে দাঁড়ালো –
“তোমার বউয়ের কি কিছু সন্দেহ হলো নাকি? কি জিজ্ঞেস করছিলো?”
“আজ কনাপুর আসার কথা। সেটাই জানতে চাইছিলো।”
আতিক সাবাকে দু হাতে জড়িয়ে ধরলো।
“ও তুমি আমাকে কনা সাজিয়ে নিয়ে এলে? ওরে বুদ্ধি মাথায়!”
“তা না হলে বাসা বাড়িতে এভাবে কাউকো আনা যায় যখন তখন? তার উপর যখন বাসায় বউ থাকে না!”
“আজ তোমার বউয়ের বিছানায় আমাদের বাসর হবে আর বেচারি টেরও পাবে না। ”
মুখে আফসোসের আওয়াজ করে সাবা।
“শোনো, তোমার কাছে একটা আবদার করবো। রাখবে?”
“তোমার জন্য জান হাজির আমার ময়না। বলো কি লাগবে তোমার? ”
সাবাকে আরো একটু চেপে ধরে নিজের শরীরের সাথে। সাবা আতিকের গলা জড়িয়ে ধরে মুখে মোহনীয় হাসি ফুটিয়ে বলে-
“আমার না হাজার বিশেক টাকা দরকার! দিতে পারবে আজকে?”
এক মিনিট থমকে যেয়ে পরক্ষণেই আবার স্বাভাবিক আতিক। মুখে বদমায়েশি হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো-
” বিশ তো পারবো না তবে পনেরো দিতে পারবো। চলবে?”
“চলবে আপাতত।”
আতিক কথাটা শোনামাত্রই সাবাকে নিয়ে বিছানায় গড়িয়ে পড়লো। এখন আর সময় নষ্ট করাটা অর্থহীন!

*******

দিন দুয়েক পরে কি এক কাজে কনা ফোন দিলো বিভাকে-
“হ্যা, বিভা! কি খবর? তোমরা কবে ফিরছো ঢাকায়?”
“এই তো আপু, কাল বা পরশু। মায়ের কাজ তো মোটামুটি শেষ। তাই আর থেকে লাভ নেই। ”
“আচ্ছা, ভালোই হলো তাহলে। মায়ের শরীর ভালো আছে তো? ”
“হুম। কনাপু তোমাকে ধন্যবাদ অনেক, তুমি আতিককে রান্না করে দিতে গেছিলে বলে!”
“কি বলছো? আমি যেতে পারিনি শেষ পর্যন্ত। ঐ দিন আতিকের কি বা কাজ ছিলো, তাই ও মানা করলো যেতে। কেন…আতিক…তোমাকে…কিছু বলেনি….. ”
পরের কথাগুলো বিভা আর শুনতে পেলো না। ওর মাথা ঘুরাচ্ছে ভীষণ! মিথ্যা! এতোবড় মিথ্যা! তবে কাকে নিয়ে গেছিলো বাসায় আতিক? সেদিন সারারাত আতিক কথা বলেছিলো বিভার সাথে। চোখগুলো জ্বালা করছে বিভার। গা হাত পা কাঁপছে রীতিমতো। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করছে বিভা। মনেহচ্ছে সব ভেঙে চুরে চুরমার করে দেয়, শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে সব। বিভা মনে মনে গালি দিচ্ছে আতিককে-
“এবার যদি তুমি এরকম কিছু করো আতিক! আমি কিছুতেই তোমাকে ছাড়বো না! কিছুতেই না! নিজে তোমার শাস্তি দেবো। এতো কঠিন শাস্তি দেবো যা তুমি কল্পনাও করতে পারবে না!!!”

চলবে—–
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here