#সেই_আদুরে_দিন
#পর্বঃ১০
#Arshi_Ayat
ক্লান্ত শরীরটা চওড়া বারান্দার এক কোণে রাখা ডিভানের ওপর ছেড়ে দিলো শুদ্ধতা।এখন বিকেল আর সন্ধ্যা হওয়ার মাঝামাঝি সময়।সূর্য ডুবুডুবু করছে।আকাশের নীল ধীরে ধীরে রঙ পাল্টাচ্ছে।বিশাল বিশাল উঁচু গাছের ওপর দিয়ে একদল পাখি উড়ে যাচ্ছে বহুদূর।দিগন্তে নীল হয়ে রয়েছে হিমালয়ের রেখা।সাদা মেঘেদের অবাধ বিচরণ চলছে তাদের ওপর।
এই বাংলোটাকে চমৎকার লেগেছে শুদ্ধতার।প্রথমে একটু ভয় পেলেও এখন বেশ ভালো লাগছে।ভেতরে ঢোকার সময় একটা লোক রৌদ্রুপকে বাড়ির গেটের চাবি দিয়ে গেলো হয়তো লোকটা বাড়ির দেখাশোনা করে।ভেতরে আসার পর কিচেন থেকে দুইজন মহিলা এসে বলল,’আমাদের কাজ শেষ।সব রান্না করে রেখেছি।’
‘আচ্ছা।তাহলে আপনারা আবার কাল সকালে আসবেন।’
‘আচ্ছা।’
এবার ওরাও চলে গেলো।ওরা সবাই যাওয়ার পর রৌদ্রুপ মেইনগেটে একটা তালা ঝুলিয়ে এসে বাংলোর সদর দরজাও লাগিয়ে দিলো।তারপর বলল,’চলো শুদ্ধ তোমাকে আমাদের ঘরটা দেখাই।’
এই বলেই রৌদ্রুপ উত্তরের একটা ঘরে আনলো শুদ্ধতাকে।ঘরটা মাঝারি আকারে।আহামরি কোনো আসবাবও নেই ওই তো নরমাল ঘরে যা থাকে তাই তবে ঘর থেকে দৃশ্যমান বারান্দাটায় নজর পড়তেই শুদ্ধতা সেখানে ছুটে গিয়েছিলো।এই জিনিসটা বেশ লেগেছে ওর কাছে।পিছুপিছু রৌদ্রুপও এসেছিলো।শুদ্ধতাকে আরাম করে ডিভানের ওপর বসতে দেখে মুচকি হেসে বলল,’তুমি কিছুক্ষণ এখানে বসো আমি শাওয়ার নিয়ে আসি।’
‘আচ্ছা।’
রৌদ্রুপ ঘরের দিকে যেতে যেতেই আবার উঁকি মেরে বলল,’চাইলে কিন্তু তুমিও আসতে পারো।’
শুদ্ধতা চোখ ছোটছোট করে তাকাতেই রৌদ্রুপ হেসে ফেললো এরপর শাওয়ার নিতে গেলো।ও যাওয়ার পর থেকেই শুদ্ধতা এখানে বসে আছে।
খালি গায়ে কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পরে একটা সাদা তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় এসে রৌদ্রুপ বলল,’আমার হয়ে গেছে এবার তুমি যাও।’
শুদ্ধতা এক পলক ওর দিকে তাকিয়ে বলল,’আমার তো জামা নেই গায়েরটা ছাড়া।তো গোসল করে পরবো কি?’
‘হ্যাঁ তাও ঠিক।’কিছুটা চিন্তিত স্বরে বলল রৌদ্রুপ।তারপরেই আবার বলল,’একটা কাজ করতে পারো আজ আমার জামা কাপড় দিয়ে চালিয়ে নাও।’
এক ভ্রু তুলে শুদ্ধতা বলল,’কি!আপনার জামা কাপড় তো আমার বড়ো হবে।’
‘হ্যাঁ তো সমস্যা কই?তুমি তো আর ফ্যাশন করতে যাচ্ছো না যে ফিটফাট জামা কাপড় লাগবে।’
শুদ্ধতা তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলল,’আমি কি বলছি আমি ফ্যাশন করতে যাচ্ছি?একটা কথা সুন্দর করে বলতে পারে না।’
এটা বলেই বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে গটগট করে হেঁটে ঘরে চলে এলো শুদ্ধতা আর এদিকে রৌদ্রুপ বোকা বনে গেলো।কথাটা কি রেগে যাওয়ার মতো ছিলো?মেয়েটা হুট করে রেগে গেলো কেনো?
রৌদ্রুপ বারান্দা থেকে ঘরে এসে দেখলো শুদ্ধতা ওয়াশরুমে চলে গেছে।সে দরজার সামনে গিয়ে বলল,’জামা কাপড় নিয়েছো নাকি আমি দিবো?’
শুদ্ধতা চিল্লিয়ে বলল,’নিয়েছি।’এমন জোরে বলল যেনো রৌদ্রুপ এক মাইল দূরে দাঁড়িয়ে আছে।মেজাজ যে হটপট হয়ে আছে এটা বুঝতে অসুবিধে হলো না রৌদ্রুপে।তবে এখন মাথায় ঠান্ডা পানি পড়ে ঠান্ডা হলেই হয়।
রৌদ্রুপের নীল একটা শার্ট আর সাদা একটা থ্রি কোয়াটার পরে বেরিয়েছে শুদ্ধতা।যদিও থ্রি কোয়াটার’টা ওর ফুলপ্যান্ট হয়ে গেছে তার ওপর কোমড় লাগে না।কোথায় রৌদ্রুপের কোমড় আর কোথায় ওর।কোনমতে প্যান্টটা এক হাতে ধরে বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে।ওকে বের হতে দেখে রৌদ্রুপ তাকালো।তাকিয়েই পলক ফেলতে পারলো না।কোনো এক জাদু শক্তি মন্ত্রবলে পলক আটকে ফেললো তার।নয়নজোড়া যেনো সামনে দাড়ানো সদ্য স্নান করে আসা মায়া মানবীর পানে আটকে রইলো। তার আধো উন্মুক্ত সাদা বকের মতো মসৃণ বক্ষের ওপর আয়েশ করে বসে থাকা তিলটা যেনো আদেশ করে কাছে ডাকছে।
রৌদ্রুপ এমন এক পা এক পা করে সামনে এগুতে দেখে শুদ্ধতার সন্দেহ হলো চকিতে একবার ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে চাইতেই শিরদাঁড়াশ শীতল একস্রোত বয়ে গেলো।একহাতে প্যান্টের কাছা সামলে আরেক হাত দিয়ে শার্টের দুই নম্বর বোতামটা লাগানো শুরু করলো।যেনো ওর মুখের ওপর ঝামটা মেরে দিচ্ছে।এতক্ষণে রৌদ্রুপের হুশ এলো। জিভ কেটে নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই শুদ্ধতার সামনে এসে দাড়িয়ে বলল,’এক কাজ করো আমার কাছে একটা লুঙ্গি আছে সেটা পরতে পারো।এটা তো তোমার কোমড়ে হচ্ছে না।’
রৌদ্রুপের কথাশুনে দাঁত কিড়মিড় করে ওর দিকে তাকালো যেনো আজকে রাতের ডিনারে ওকে খেতে পারলে মন্দ হতো না।কি অসভ্য বলে লুঙ্গি পড়তে!তো লুঙ্গির নিচে কি পরবে?ওর আন্ডারওয়্যারও তো কোমরে লাগবে না।জাস্ট ইমাজিন লুঙ্গি আর শার্টে এক তরুণী তার বরের সাথে নেচে-কুঁদে বেড়াচ্ছে।ছি!
শুদ্ধতার চেহারার অবস্থা দেখে রৌদ্রুপ মেকি হেসে বলল,’না থাক লুঙ্গি পরা লাগবে না তোমাকে আমি বেল্ট পরিয়ে দেই।তাহলে সমস্যা হবে না।
শুদ্ধতা কিছু বলল না।রৌদ্রুপ ওর একটা বেল্ট শুদ্ধতাকে পরিয়ে দিয়ে বলল,’চলো খেয়ে আসি।’
‘চলুন।’
—————–
‘নিক্স ওই শালা মুখ খুলবে না।কাল রাত থেকে কম টর্চার করা হয় নি ওকে।অন্য পথ ধরতে হবে মনে হচ্ছে।’ভিকি বলল।
‘এই মেয়ের আর কেউ নেই?’রিভান কৌতুহলী গলায় বলল।
‘না,ওর মা মারা গেছে।আর ভাই বোনও নেই।’আনা বলল।
‘মেয়েটার বান্ধবীদের মধ্যে খোঁজ লাগাতে হবে।হতে পারে ওর বান্ধবীরা কোনো ইনফরমেশন দিতে পারে।’নিক্স বিজ্ঞের মতো বলল।
সবাই বুদ্ধিটায় সায় দিয়ে মাথা নাড়ালো শুরু হলো শুদ্ধতার বান্ধবীর খোঁজ।এদিকে আরমান সাহরীফের শুধু জানটাই বোধহয় আছে।কাল থেকে মার খেতে খেতে শরীরটা অসাড় হয়ে গেছে।মনে মনে শুধু দোয়া করে গেছেন যেনো তার কিছু হয়ে গেলেও মেয়েটার কিছু নাহয়।মেয়েটা তার নতুন সংসারে পা দিয়েছে।ওরা জানতে পারলে মেয়েটাকে মেরে ফেলবে।একজন বাবা হিসেবে মেয়ের জন্য যতোটুকু চিন্তা করা দরকার তার চেয়ে বেশি চিন্তা হচ্ছে আরমান সাহরীফের। একটা মাত্রই মেয়ে তার!
—————–
শুদ্ধতা মাত্রই ঘুম থেকে উঠলো।খাওয়া দাওয়ার পর সে আর রৌদ্রুপ বেশ একটা আদুরে ঘুম দিয়েছিলো।কিন্তু চোখ খুলে রৌদ্রুপকে পাশে না দেখতে পেয়ে ওর ভ্রু কুঁচকে গেলো কিন্তু পেটে ভারি ওজনের কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে শুদ্ধতা মাথা তুলে তাকাতেই দেখলো ওর উন্মুক্ত পেটে রৌদ্রুপ মুখ ডুবিয়ে শুয়ে আছে।এতক্ষণ ঘুমে ছিলো বলে নিজরেই হুশ ছিলো না কিন্তু এখন হুশ আসতেই লজ্জায় অবস্থা খারাপ ওর!এভাবে বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারলো না সে লজ্জায় মারা যাওয়ার মতো অবস্থা।তাই আলতো করে রৌদ্রুপকে ডাক দিলো,’এই যে শুনছেন।উঠুন না।’
নাহ!কোনো সাড়াশব্দ নেই।আবারও ডাকলো।কিন্তু এবারও একই অবস্থা।শুদ্ধতা তৃতীয়বার একটু জোরেই ডাক দিলো।ওর ডাকে রৌদ্রুপ পিটপিট করে চোখ খুলে আবারও আগের মতো শুয়ে পড়লো যেনো কিছুই হয় নি।শুদ্ধতা হতবাক।কি মানুষ রে বাবা!এরপর আরো কয়েকবার ডাকার পর রৌদ্রুপ ঘুমঘুম চোখে চেয়ে কাতর গলায় বলল,’শুদ্ধ প্লিজ ডেকো না।আমি কোথাও মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাতে পারছিলাম না শুধু এই জায়গাটা ছাড়া।আমি একটু ঘুমাই হ্যাঁ!’
শুদ্ধতা মিনমিনে গলায় বলল,’আমার লজ্জা লাগছে ছাড়ুন।’
এবার রৌদ্রুপ বিরক্তি নিয়ে বলল,’পেট’টা একটু সুন্দর বলে দাম বেড়ে গেছে তোমার তাই না?’চুপ একদম চুপ।এখানেই ঘুমাবো আমি।’
শুদ্ধতাকে ধমকে চুপ করিয়ে দিয়ে সে ওর পেটে গভীর একটা চুমে খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।আর শুদ্ধতা কাট হয়ে শুয়ে রইলো আগের মতো।রৌদ্রুপের চুমুতে যেনো সারা শরীরে বিদুৎ খেলে গেলো।এখন আল্লাহ জানে কতক্ষণ এভাবে থাকতে হয়!শুদ্ধতা বিড়বিড় করে বলল,’এহ!এমন ভাব দেখালো যেনো নিজের সম্পত্তি!অসভ্য একটা!’
চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)