#গজপ্রিয়া~4
#Chhamina Begam
   গ্রাম্য পরিবেশে সকালের ঘুম ভাঙা মানেই  হল মোরগের গলা ফাটিয়ে চিৎকার , আশেপাশের গাছ গুলিতে আশ্রয় নেওয়া পাখিদের কিচিরমিচির ,সাথে মোয়াজ্জিনের আযান শুনে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসা । তবে রানির ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোন শুনে । ঘুমঘুম চোখে  বিছানা হাতড়ে  রিংটোনের উৎস খুঁজে বের করল । রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে  একটা চিকণ সুরেলা কন্ঠ ভেসে আসল ,
-“আপু , কখন আসবি তুই ?”
   রানিদের রুমটা এখনো অন্ধকার হয়ে আছে । ঘুমের রেশটা তখনো কাটেনি ওর  ।  তাই এত রাতে বাণীর কন্ঠস্বর শুনে  একটু যেন চমকে গেল।  নিশ্চিত হওয়ার জন্য আর একবার ফোনটাকে চোখের সামনে ধরে দেখল । না, নাম্বার তো ঠিকই আছে ।  বিলকিসের ফোন দিয়ে কল করেছে  বাণী ।  সাথে সময়টাও দেখে নেয় । চারটা বেজে চুয়াল্লিশ ।   রানি ফোনটা  আবার কানের কাছে ধরে বলল  ,
 -”  আমি ফোন করে বলে দেব কখন যাব ? তখন  তোরা দুজনে তৈরি হয়ে থাকবি।  বুঝলি ।”
-” আচ্ছা ..”
বাণীর রুমঝুম করা কন্ঠস্বর শুনে  রানী  আবার বলল,
-“বিলকিস কোথায় রে ”
-“মেজপু তো ঘুমাচ্ছে ”
-“আর  তুই কি করছিস  ?”
-” আমার তো ঘুমই আসছিল না …। ”
রানি অবাক না হয়ে পারল না এবার ।  বলল,
-” আচ্ছা , এখন ঘুমিয়ে পর । ”
-“গুড নাইট আপু ”
-” উম হু ,  গুডমর্নিং বুনু ”
-“ওহ হ্যাঁ তো । ভুলেই গিয়েছিলাম যে  সকাল হয়ে গেছে ”
রানি  নিঃশব্দে হাসল ।  বলল,
-“রাখছি এখন …”
-“হুম …”
     নয়টার  মধ্যেই স্নান খাওয়াদাওয়া সেরে  রানিদের  তৈরি হতে বলল লাবিব ।   লাবিব অপেক্ষা করছে নিজের বোলেরোটা নিয়ে ।    মৌসুমী আর রানি তান্নুকে কোলে নিয়ে   উঠে বসল মাঝের সিটে   ।    মোস্তাফিনা  ড্রাইভিং সিটের পাশে  গিয়ে বসল ।  তান্নু ইতিমধ্যেই বেশ মিশে গেছে রানির সাথে  । মায়ের কোল থেকে  ওর ‘ আন্নির ‘কাছে থাকা বেশি পছন্দ করছে । গাড়ির জানালা ধরে বাইরে তাকিয়ে দেখছে  চলন্ত  সব গাড়ি । মাঝে মাঝে অবাক হচ্ছে আবার কখনো খুশিতে হাত তালি দিচ্ছে ।  রানি শক্ত করে ওর কোমড় ধরে রেখেছে । তান্নুর আধো আধো বুলিতে  গাড়ির ভেতর সবাই বেশ মজা পাচ্ছে ।   হঠাৎ  রানির বিলকিসদের কথা মনে পড়তেই  লাবিব কে বলে  ,
-“ভাইয়া , বিলকিসদের আনতে যেতে হবে ।  আম্মু কাল বলছিলেন আব্বু নাকি ছুটি পায়নি ।  তাই আজ আসতে পারবে না । কাল আসবে বলছে  কিন্তু  বানী, বিলকিস দুজনে আজকেই আসতে চাইছে … ”
-“বুঝলাম । কিন্তু যাবে টা কে ?  আমি তো আজ সারাদিনই ব্যস্ত থাকব ।”
-” ভাইয়া,  শপিং তো একটা নাগাদ শেষ হয়ে যাবে মনে হয় । আমি বরং তারপরেই চলে যাব বাড়ি ”
-”  কিন্তু  অতটা রাস্তা একা যাবি ….? ”
-“ভাইয়া , এত ভাবছ কেন ? আমি তো আজই প্রথমবার একা যাচ্ছি না ।  চিন্তা করো না । আমি বিকেলের মধ্যেই ওদের নিয়ে চলে আসব । ”
-“আচ্ছা, সে পরে দেখা যাবে । ”
ওরা প্রথমে জুয়েলারি শপে ঢুকল । প্রায় ঘন্টা খানেক বাছবিচারের পর গহনা পছন্দ করল । দাম মিটিয়ে ঢুকল গারমেন্ট সেকশনে । বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা দুদিন আগেই লাবিব আর মৌসুমী এসে করে গিয়েছিল । শুধু মোস্তাফিনা আর রাণীর কেনাকাটাই বাকি । বেনারসী, তার সাথে আনুসাঙ্গিক যা যা লাগে নেওয়ার ফাঁকে রানি নিজের জন্য পছন্দ করতে লাগল । ওর খুব ইচ্ছে আপুর বিয়েতে ও শাড়ি পড়বে । তাই কয়েকটা শাড়ি পছন্দ করে নিয়ে গেল আয়নার সামনে । একটা একটা করে শাড়ি গায়ে চাপিয়ে দেখতে লাগল কেমন লাগছে । তখনই আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের পাশে সম্রাটকে দেখে যারপরনাই অবাক হল রানী । নিজেকে কষে গালি দিল একটা । কোনো মানে হয় এসবের ? সম্রাট এখানে কিভাবে আসবে ? সকালেই ও দেখেছে সম্রাট ওদের গাড়িটা নিয়ে কোথায় যেন বেরিয়ে গিয়েছিল ? সবসময় ওর সাথে ঝগড়া করতে করতে ওর ছবিটা ব্রেইনে সেটে গেছে । এখন যার উপস্থিতিই নেই আশেপাশে ,তাকেই কিনা আয়নায় দেখতে পাচ্ছে । একটু বিরক্ত হল রানি । চোখ বন্ধ করে একবার মাথা ঝাকি দিল । চোখ খুলে আয়নায় শুধু নিজেকে দেখে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলল । তার মানে এটা ওর ভ্রম ছিল । আশ্চর্য, এমন বিরক্তিকর একজনকে দিনে দুপুরে কল্পনা করার কোনো মানে হয় । এই সম্রাটের জন্য শেষে পাগল হতে হবে নাকি !
দুটো শাড়ি রানির খুব পছন্দ হয়েছে । একটা কাচা হলুদ রঙের আর একটা রানি গোলাপি রঙের । দুটোই ব্লাউজ পিসটা নেভি ব্লু কালারের , পুরোটা মোটামুটি তৈরি করাই আছে । মাপজোক দিয়ে ফিটিংস করলেই হয়ে যাবে । অবশ্য দুটো শাড়ির সঙ্গেই নেভি ব্লু রঙটা ফোটে ভালো । রানি দ্বিধায় পড়ে যায় । কোন টা নেবে এখন? মোস্তাফিনা আর মৌসুমীর দিকে তাকিয়ে দেখে ওরা দুজনেই শাড়ি দেখতে ব্যস্ত । দুজনকেই ডাকল একসাথে । শাড়ি দুটোকে দুই কাধে ফেলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল । বলল,
-” আপু ,  ভাবি   বলো তো কোন টা নেব ? আমি ডিসিশন নিতে পারছি না । ”
 মৌসুমী , মোস্তাফিনা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে  কিছুক্ষণ জরিপ করল রানিকে । তারপর  প্রায় একসঙ্গেই তর্জনী উচিয়ে  বলল,
  -” এইটা ..”
  ওদের আঙুলী  অনুসরণ করে রানির দ্বিধা বাড়ল বই কমল না  । কারন মোস্তাফিনা হলুদ শাড়ি আর মৌসুমী গোলাপি শাড়িটার দিকে নির্দেশ করেছে ।  রানি হতাশ হয়ে বলল ,
-” তোমাদের একটা শাড়ি  পছন্দ করতে বললাম । আর তোমরা…. দুজনে দুটো চুস করলে …”
     লাবিব   এতক্ষণ  দেখছিল ওদের । বলল,
-”  দুটোই নিয়ে  নে রানি  ।  তাহলে দুজনেই মন রক্ষা হল  । ”
-“কিন্তু ভাইয়া , দুটো শাড়ি নিয়ে আমি কি করব ?”
একটা পরিচিত কন্ঠস্বর শুনে ঘুরে তাকাল রানি ।  
-” গাধি একটা । কি করবি মানে । এটাও বলে দিতে হবে তোকে । ….দুটোই নিয়ে নে । কাল বিয়েতে একটা পড়বি , পরশু বৌভাতে আর একটা । ব্যাস …হয়ে গেল ”
       তান্নুকে কোলে নিয়ে রানির  সামনে এসে  এমন ভাবে কথাটা বলল সম্রাট  রানির মনে হল  কথাটা বলে যেন ও দয়া করল রানিকে  । হাসিখুশি মুখটা নিমেষেই কালোমেঘে  ছেয়ে গেল । ঝাঝিয়ে উঠল রানি,
-” আমার সব কিছুতেই তোকে নাক গলাতে বলে কে ?  হ্যাঁ । আর কে চেয়েছে তোর সাজেশন ?  ”
  রানির কথাটাকে যেন  ফু দিয়ে উড়িয়ে দিল সম্রাট । বলল,
-” হুহ।  আজকাল কারো উপকার করাও যায় না দেখছি । কিসের  থ্যাঙ্কস জানাবে তা না উলটে তেড়ে আসে কাটতে …”
   রাগে সম্রাটের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে রানির । শাড়ি দুটো নিয়ে   পাশে দাড়ানো সেলস গার্ল টার হাতে দিয়ে বলল ,
-“এই দুটো রেখে দিন প্লিজ । আমি নিচ্ছি না । ”
   মেয়েটি  মৃদু হেসে  চলে যেতে নিলে লাবিব দাড় করায় । শাড়ি দুটো হাতে নিয়ে  সৌজন্যে মূলক হাসি দিয়ে বলে ,
-” আসলে ও একটু রেগে গেছে তো । দিন ..এগুলো আমাকে দিন  ….”
    মোস্তাফিনা  রানিকে  মৃদুস্বরে ধমক দেয়   ,
-“সমসময় টেম্পার এত হাই থাকে কেন তোর ?   ”
তারপর সম্রাটের দিকে ফিরে চাপা স্বরে বলে,
-“বাড়িতে ঝগড়া করিস । ঠিক আছে । তাই বলে পাবলিক প্লেসের তোরা একে অপরকে ছাড় দিস না।  …আশ্চর্য । বড় হবি কবে তোরা ? ”
    মোস্তাফিনার মৃদু শাসনে একটু কাজ হয় । পরবর্তী আধ ঘন্টা রানি, সম্রাট  দুজনেই মুখে কুলুপ এটে বসে থাকে । শপিং শেষ করে ওরা  ফুড কোর্টের দিকে এগিয়ে যায় । একটা আট চেয়ার সম্মিলিত  টেবিল দখল করে বসে । সম্রাট  ওয়েটারকে ডাকার জন্য হাত তুললে লাবিব থামিয়ে দেয় । একটু অপেক্ষা করতে বলে ।  পাচঁছয় মিনিট গল্প করার মাঝেই চেয়ার টানার শব্দ পেতেই মোস্তাফিনা  আর রানি ঘাড় ঘুরিয়ে জাহিদকে দেখেই জমে যায় বরফের মতো । এ কাকে দেখছে ওরা ? সামনে তাকিয়ে দেখে লাবিব আর মৌসুমী মুচকি মুচকি হাসছে । কাহিনী বুঝতে সময় লাগে না । নিশ্চয়ই লাবিব আসতে বলেছে ওদের ।  জাহিদ অবশ্য একা আসেনি। সাথে একটি মেয়ে এসেছে । জাহিদের বোন ওটা । কাল  ওদের ফ্যামিলি ফোটো দেখেছিল রানি ।   জাহিদরা আসায়   সম্রাট নিজের জায়গাটা ছেড়ে দিয়ে রানির পাশের চেয়ারে এসে বসে ।   ওর জায়গায় জাহিদ বসে ,পাশে বোন রিয়ানা  । মেয়েটা ভারি মিষ্টি দেখতে । বয়স উনিশ-কুড়ি হবে হয়তো । তবে চোখের দৃষ্টি দেখে  ইচড়ে পাকা মনে হয় রানির ।  
    সম্রাট রানির পাশে বসলে  রানি একবার ক্রুর দৃষ্টিতে তাকায় । সম্রাট অবশ্য এসবের ধার ধারে না । সে জাহিদের সঙ্গে পরিচয় করতে ব্যস্ত ।  রানি , মোস্তাফিনার  দুজনেই গতরাতের  কীর্তির জন্য মুখ তুলে তাকাতে পারছে না  । একবার শুধু জাহিদ ‘কেমন আছ ?’ জানতে চাইলে  রানি পাচঁ সেকেন্ডের জন্য মাথা তুলে ‘ভালো ‘শব্দটা উচ্চারণ করেই আবার মাথা নামিয়ে নিয়েছিল  লজ্জায় । সেই থেকে জাহিদ মুচকি মুচকি হাসছে । আর  এতে রানি ,মোস্তাফিনার অস্বস্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
   জাহিদরা আসার পর পরই লাবিব খাবারের অর্ডার দিয়ে দেয়  । কিছুক্ষণ গল্প করতেই খাবার চলে আসে ।    খেতে  খেতেই গল্প চলতে থাকে লাবিব , জাহিদ ,মৌসুমী আর সম্রাটের ।  রানি ,মোস্তাফিনা আর রিয়ানা এখানে নীরব দর্শক ।
    হঠাৎ পায়ে সুড়সুড়ি অনুভব করে    ভীষণ ঘাবড়ে যায় রানি ।  কেউ  খুব ধীরে ধীরে ওর পায়ে  নিজের পা দিয়ে স্লাইড করছে ।  পড়নের প্লাজোটা অনেকখানি উপরে উঠে পড়েছে  ।   ইচ্ছাকৃত ভাবে কেউ এমনটা করছে ।  অস্বস্তিতে রানির গায়ে কাটা দেয় । পা দুটো সরিয়ে আনে ।  মাথা তুলে সামনে তাকায় । এখন রানির ঠিক সামনে জাহিদ বসে আছে । তার ডান দিকে  লাবিব ,বামে রিয়ানা । রিয়ানার এমন করার তো প্রশ্নই আসে না । আর  লাবিব ভাইয়া এমন কাজ কক্ষনো করবে না । তাহলে  পা দুটো কার ?  জাহিদ ভাইয়া নাকি ?  চিন্তায় রানির ভ্রু দুটি কুচকে যায় । না না ,তা কেন হবে ?  কিন্তু চিন্তাটা ফেলে দিতে পারে না ।  চোখ তুলে  সামনে তাকালে   জাহিদ ওকে দেখে মুচকি হাসে ।  হাসিটা পবিত্র মনে হয়  । অন্তত রানির জন্য এই হাসিতে  খারাপ কিছু ছিল না । তাহলে কার পা ছিল  ওগুলো ?   আচ্ছা এই বান্দর টা নয় তো ? হতেই পারে । রানিকে জব্দ করার কোনো সুযোগ ই তো কখনও মিস করতে চায় না এই  সাদা বান্দরটা । চকিতে রানি ঘাড় ঘুরিয়ে সম্রাটকে দেখে  । সম্রাট খাচ্ছিল । রানি তাকালে ওও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় ।  রানির গম্ভীর মুখ দেখে মনে মনে একটু যেন  একটু  ভড়কে যায় । কিতু তা ওর চোখেমুখে প্রকাশ পায় না । ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে  কি হয়েছে । রানি সামান্য হেসে জোরে আঘাত করে সম্রাটের পায়ে । হিলের আঘাতে  ‘ আহ’  ককিয়ে ওঠে সম্রাট । ব্যাথায়  মুখ কুচকে যায় ।চকিতে  সবাই “কি হয়েছে, কি হয়েছে ” বলে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে । সম্রাট হাসার চেষ্টা করে । মৃদু স্বরে বলে ,
-“কিছু হয়নি ভাইয়া । ”
-“তাহলে আহঃ করে উঠলি কেন ?” বলল মোস্তাফিনা।
-“আসলে আপু, আজ সকালে  পায়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম । এখন আবার  ওখানেই বেখেয়ালে ব্যাথা লাগল …তাই ”
-“ওহ আচ্ছা । ….এমনিতে তুই ঠিক আছিস ?”
-“হ্যাঁ । আমি ঠিক আছি। ”
রিয়ানা মুগ্ধ , বিস্মিত হয়ে দেখছে সামনে বসা ছেলেটাকে । স্বাস্থ্যবান ছেলেটির উচ্চতা পাচ’ আট কি নয়ের কাছাকাছি হবে । ফর্সা মুখখানিতে ঘন, মোটা ভ্রু যুগল , টিকালো নাক , সিগারেট পোড়া কালো ঠোট দুটো সব মিলিয়ে সুদর্শন পুরুষ । সদ্য কৈশোর পেরিয়ে তারুণ্যে পড়েছে । মুখে খোচা খোচা দাড়ি । দুদিন আগেই হয়তো সেভ করেছে । প্রথম দেখাতেই পছন্দ হয়েছে খুব । অথচ ছেলেটা ওকে পাত্তাই দিচ্ছে না । যখন এল এখানে তখন শুধু একটু কথা বলেছিল । তারপর থেকে ইগনোর করে যাচ্ছে । যেন রিয়ানা বলে কেউ নেই এখানে । খুব রাগ হয়েছিল ওর । আজ অবধি কেউ ওকে এভাবে ইগনোর করেনি । নিজের লুকস এর জন্য সবার কাছে আদরনীয় সে । সবাই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে আসে । কিন্তু আজ এই ছেলেটাকে ও পছন্দ করল আর সে কিনা ইগনোর । অসহ্য লাগছিল রিয়ানার । তবুও নিজেকে শান্ত করে রাখে । মুখে মুচকি হাসিটা লেগেই ছিল , সাথে মুখে একটা নিরীহ ভাব । কিন্তু সম্রাটের দিক থেকে রিয়াকশন না পেয়ে কিছুটা হতাশ হয়েছিল রিয়ানা । কিন্তু হারতে শেখেনি ও। চেষ্টা জারি রাখতে পা দিয়ে আলতো করে স্লাইডও করল । আশ্চর্য, ছেলেটা রোবট নাকি !কোনো রিয়াকশনই নেই । অন্য কেউ হলে এতক্ষণে ইশারায় কত কথা হয়ে যেত । হাল ছেড়ে দিয়ে যখন খাওয়া শুরু করল তখনই সম্রাট পায়ের ব্যাথায় আহঃ করে উঠল । তখধ প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছিল রিয়ানা । ও কি এতক্ষণ সম্রাটের ব্যাথা পাওয়া জায়গাটাতেই স্লাইড করেছিল নাকি ? হবে হয়তো । তাই মনে হয় মাথা নিচু করে খাচ্ছিল সম্রাট । খুব খারাপ লাগে রিয়ানার । কিন্তু অনুশোচনা বোধ হয় না ।
     দেড়টার মধ্যেই লাঞ্চ সেরে সবাই  ফুড কোর্ট থেকে বেরিয়ে এল  । জাহিদ সবাইকে বিদায় জানিয়ে , মোস্তাফিনার সাথে চোখের ইশারায় কথা বলে  বোনকে নিয়ে চলে গেল । গাড়ির কাছে এসে  রানি  মোস্তাফিনাকে  বলল,
-“আপু , ব্লাউজ দুটো তুই শরীফ দাদার দোকানে বানাতে দিয়ে যাস ।  আমার  দুটোও দিয়ে দিস ।    আমার মেজারমেন্ট তো তুই জানিসই । বলবি কাল বিকেলে আমি নিয়ে যাব । ”
-“আচ্ছা । ”
-“হুম । আর ভাইয়া , আমি যাই তাহলে । সন্ধ্যার আগেই  বিলকিসদের নিয়ে চলে আসব । ”
-”  হুম । সম্রাট ও তোর সাথে যাবে …” লাবিবের কথা শেষ হয় না । রানি বলে ,
-“ভাইয়া । ওকে আমার সাথে যেতে হবে না । আমি একাই যেতে পারব । ”
-” রানি ,আমি জানি তুই একাই যেতে পারবি । কিন্তু আমি বলছি ..তুই ওকে নিয়ে যা ।   আসার সময় ঠিক মতো বাস নাও পেতে পারিস   । ও গেলে আমি চিন্তা মুক্ত থাকব । ”
     লাবিবের কথার ওপর রানি আর কথা বলতে পারে না । ঠিকই তো বলছে ভাইয়া । বিকেলের দিকে এমনিতেই বাস কম পাওয়া যায় ।  রানি একা হলে যখন তখন চলে আসতে পারত । কিন্তু বানি বিলকসকে নিয়ে ও সেই রিস্ক নিতে পারে না । সন্ধ্যা হয়ে গেলে নানু বাড়ির ওদিকে গাড়ি পাওয়া যায় না । তাছাড়া আজকাল যা যা হচ্ছে পথে ঘাটে ।  ভয় তো হওয়ারই কথা ।
     লাবিবরা ততক্ষণে চলে গেছে । কথা না বাড়িয়ে  রানি সম্রাটের সাথে ওর গাড়ির দিকে এগিয়ে যায় ।  যাওয়ার পথে  সম্রাটের একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটাটা নজর এড়ায় না রানির  । সুক্ষ্ম একটা অপরোধ বোধ কাজ করে মনের মধ্যে  । কিছু  তা আমলে  নেয় না রানি  । আজ সম্রাট যা করেছে তার জন্য এটুকু শাস্তি ওর প্রাপ্য ছিল । 
To be continue…





