#এ_শহরে_বৃষ্টি_নামুক❤️পর্ব-৩৩
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️
ঝড়ের তান্ডব শান্ত হয়ে গেলো হঠাৎই। বজ্রপাত যেনো লজ্জা পেয়ে থামিয়ে দিলো তার ভয়ংকর আওয়াজ, আলোর ঝলকানি। আঁধারে আঁধারে ঘনিয়ে এলো পরিবেশ। খুব নিরব নিভৃতে এক তৃষ্ণার্থ পুরুষ মেতে উঠলো আকাঙ্খিত নারীর ঠোঁটের ভাঁজে ভাঁজে। হাতের স্পর্শ হতে লাগলো গভীর থেকে গভীরতর। ঘনিষ্ট থেকে অতি ঘনিষ্ঠতম। খানিকবাদেই উন্মুক্ত পিঠে গাঁথলো ধারালো নখ।
নিভ্রান ঝুঁকে আছে অনেকটা।লম্বা হওয়ায় রাত্রির নাগাল পেতে হাল্কা বেগ পেতে হচ্ছে তাকে। রাত্রি লাজুক ভঙ্গিতে দু’হাত উঠিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলো গলা। পায়ের আঙ্গুল সর্বোচ্চ উঁচু করে উচ্চতা সমান করার চেষ্টা করলো। অঘোষিত সম্মতি পেয়ে নিভ্রান যেনো উন্মাদ হয়ে উঠলো। গাঢ় আদরে কাহিল করলো লজ্জায় মিইয়ে যাওয়া দেহকে। রেলিং ঘেঁষে দাড়ানোয় বৃষ্টির তেজি ছাঁটে ভিজে যাচ্ছে শরীর। গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে কপাল গাল বেয়ে।
কিছু সময় যেতেই হাঁসফাঁস করে উঠলো রাত্রি। নি:শ্বাস নিতে না পেরে অস্থির হলো শ্বাসকার্যক্রম।
নিভ্রান ছেড়ে দিলো সাথেসাথেই। রাত্রি পা ফ্লোরে নামালো। বুকে কপাল ঠেকিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানলো।
নিভ্রান মাথায় হাত বুলিয়ে কোমল স্বরে বললো,”পানি খাবা?”
রাত্রি উওর দিতে পারলোনা। মৃদুভাবে দু’পাশে মাথা নাড়ালো শুধু। গলা কেউ চেপে ধরেছে যেনো। লজ্জায় সব জট পাকিয়ে গেছে। মুখ তুলে তাকাতেই পারছেনা। চোখে ঝংকার দিয়ে উঠছে যেনো। রাত্রি মুখ তুললোনা। নিচেই নামিয়ে রাখলো। নিভ্রান থুতনি ধরে তার মুখ উঁচু করলো। রাত্রি চোখ মিলালোনা। অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো। নিভ্রান একহাতে তার ভেজা কপাল, রাঙা গাল মুছিয়ে দিলো। রাত্রি তার বাহুতে হাত ঠেকিয়ে রেখেছে। চোখের পাপড়ি কম্পমান। টকটকে লাল ঠোঁট শান্ত হয়ে আছে।
—“আরে..তাকাবে তো পাগল মেয়ে। কি হলো?”
রাত্রি একপলক তাকালো। পরক্ষণেই চোখ নামিয়ে লজ্জিত ভঙ্গিতে মাথা নোয়ালো। নিভ্রান হেসে ফেললো,”আহা…আমিই তো।
রাত্রি মিনমিন করলো কিছু একটা। নিভ্রান বুঝলোনা। পানিভর্তি ফ্লোর ছোঁয়া ভেজা আচঁল দু’হাতে চিপড়িয়ে পানি ঝড়িয়ে কাঁধে তুলে দিয়ে বললো,”আসো, ঘরে চলো। ভিজে গেছো।”
রাত্রি গুটিগুটি পায়ে ঘরে ঢুকলো। বিছানায় বসলো। নিভ্রান মুখে তুলে পানি খাইয়ে দিলো। চুলে খোঁপা বেঁধে দিলো নিজেই। বিছানায় শুয়ে বুকে টেনে বললো,
—“ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম তোমার। চোখ ফুলে গেছে। সকালে ভার্সিটি আছেনা?”
—“হু।”
—“আচ্ছা ঠি কাছে, ঘুমাও।”
________________
সকালে ঘুম ভাঙতে দেরি হলো রাত্রির। উঠে নিভ্রানকে পাশে পেলোনা। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। গোসলে গেছে লোকটা। ব্যালকনির কাঁচ বন্ধ তখন। পর্দা টানা। রাত্রি লম্বা হাই তুলে উঠে বসলো। নিচের ঠোঁটের মাঝবরাবর জায়গাটায় একটু ফুলে গেছে। হা করলে টান লাগে।
বিছানা থেকে নেমে আলমারি খুললো সে। অনেকক্ষণ দেখে দেখে নিভ্রানের শার্ট- প্যান্ট, টাই, ওয়ালেট বের করে সাজিয়ে রাখলো। গতরাতে বলেছে আজ কি মিটিং আছে যেনো। নিজের বই-পত্র ব্যাগে গোছাতে গোছাতেই নিভ্রান বের হলো। পরণে শুধু ধূসর ট্রাউজার। রাত্রি একপলক তাকালো। কিছু বললোনা। নিভ্রান নিজ থেকেই বললো,”আন্টির ব্যান্ডেজটা খুলতে হবে রাত। ডক্টর ফোন করেছিলো গতকাল। হসপিটালে যেতে বলেছে আজকে।”
রাত্রি নামানো গলায় প্রশ্ন করলো,
—“কখন যেতে হবে?”
নিভ্রান রাত্রির বের করা শার্ট গায়ে দিতে দিতে বললো,
—“আমি অফিস থেকে বাসায় এসে আন্টিকে নিয়ে নিবোনে। তারপর তোমাকে টি উশনির ওখান থেকে পিক করে হসপিটালে যাবো। বেশিক্ষণ লাগবেনা। খুব জোর হলে এক দেড়ঘন্টা।”
রাত্রি মুগ্ধ হলো। এমন মানুষ সত্যি আছে পৃথিবীতে? আছেতো। এইতো তার সামনেই দাড়িয়ে আছে। তার মানুষটা। একদম তার নিজের মানুষটা।”
নিভ্রান শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে এগিয়ে আসলো। ড্রয়ের খুলে বাদামী বেল্টের ঘড়ি বের করে রাত্রির হাতে দিয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে বললো,”লাগাওতো।”
রাত্রি বাধ্যমেয়ের মতোন ঘড়ি পরাতে ব্যস্ত হলো। নিভ্রান এবার খানিকটা গাঢ় স্বরে বললো,
—“তুমি আজকেও ওই বাসায় পড়াতে যাবানা?”
রাত্রির হাল্কা স্বর,”হু।”
নিভ্রান সাথেসাথেই পাল্টা প্রশ্ন করলো,”ওই লোকের ভাতিজা কি ওখানেই থাকে?”
—“নাহ। দেড় বছরে বড়জোর সাত- আটবার দেখেছিলাম। মাঝেমধ্য আসে মনেহয়। ওখানে শুধু রুমাইসা, ওর বড়বোন আর আংকেল- আন্টি থাকে।”
ঘড়ি লাগানো শেষ হলো। নিভ্রান কপালে টেনে ঠোঁট ছুঁইয়ে নরম গলায় বললো,
—“এ মাসটা যাক। পরের মাস থেকে ওখানে আর পড়াতে যাবেনা। ঠি কাছে?”
রাত্রি একমূহুর্ত ভাবলোনা। মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিয়ে বললো,
—“আচ্ছা।”
________________
রুবিনার ব্যান্ডেজ খুলে আনা হয়েছে। আ্যানেসথেসিয়ার প্রভাবে শরীর দূর্বল হয়ে আছে। মাথায় সেলাই লেগেছিলো। সেলাই কাটতে হয়েছে। বাসায় এসে রান্না করে মাকে আগেভাগেই খাইয়ে ওষুধ দিয়ে দিয়েছে রাত্রি। এই মা টা তার বড্ড মূল্যবান সম্পদ। বাবা ছিলো, বেঁচে থাকতে তার জন্য কিছুই করতে পারেনি সে। মা কে রেখে গিয়েছি তার ভরসায় এখন মার হেলাফেলা করলে তো বাবা কষ্ট পাবে তাইনা?
রাত্রি রুবিনার গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে কপালে চুমু খেলো। ঘরের আলো নিভিয়ে আস্তে করে বেরিয়ে গেলো।
নিভ্রান সোফায় হাত পা ছড়িয়ে বসে ছিলো। গায়ে এখনো সেই অফিসের জামাকাপড়ই। হাত- মুখটা পর্যন্ত ধোঁয়নি। গাঢ় ধূসর শার্টের উপরের একটা বোতাম খোলা। রাত্রি টেবিলে খাবার সাজিয়ে রুমে ঢুকলো। পরণে হাল্কা গোলাপি রংয়ের থ্রিপিস। একটু ফ্রেশ হয়েই রান্নাঘরে ঢুকেছিলো। সময় পায়নি শাড়ি পরার।
নিভ্রানকে উদ্ভ্রান্তের মতো বসে থাকতে দেখে সামনে যেয়ে শার্টের বোতাম খুলে দিতে দিতে তাড়া দিলো সে,”শাওয়ার নেননি কেনো? ঘেমে তো ভিজে আছেন, আপনার ঠান্ডা লাগবেনা? শুধু আমার বেলাতেই যতো বকাঝকা। যান ওয়াশরুমে যান।” কথা শেষ করতে করতেই শার্টের সব বোতাম ছাড়িয়ে দিলো সে। টাই খুলে দিলো। হাতের ঘড়ি খুলে টেবিলে রাখলো। নিভ্রান তখনো সোফার ব্যাকসাইডে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে রেখেছে। ঘর্মাক্ত মুখে রাজ্যর ক্লান্তি। রাত্রি আবার বললো,”উঠেন, গোসল করলে ভালো লাগবে।”
নিভ্রান আধবোজা চোখে তাকালো। রাত্রিরর ফর্সা চেহারা রান্নাবান্না করে লালাভ হয়ে গেছে।
নিভ্রান একমনে কি যেনো ভাবলো। ভাবা শেষ হতেই চোখের পলকে হেঁচকা টানে রাত্রিকে কোলের উপর বসিয়ে দিলো। একহাতে পেছন দিয়ে আগলে ধরে অপরহাতে গলার ওড়না সরাতে সরাতে জড়ানো কন্ঠে বললো,
—“রাত তুমি কি জানো? তোমার বিশেষ জায়গায় একটা মারাত্বক লাল তিল আছে। ও কত বিধ্বংসী জানো? সামান্য তিল হয়ে আমার দিনরাতের ঘুম ধ্বংস করে দিয়েছে।”
~চলবে~
[পর্ব ছোট। অনেক ছোট। একটা পুরো পর্বের অর্ধেকের মতো হতে পারে। আজকের মতো মানিয়ে নেন। লেখার সময় পাইনি একদম। কালকে প্রমিস বড়ো করে দিবো।]
[রিচেক হয়নি]