শ্রাবন আধারে তুমি
লেখিকা:আফরিন ইসলাম
পার্ট:২০
আবরার বাড়ীর সবাইকে নিয়ে বের হয়েছে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ৷আবরার যত দ্রুত সম্ভব গাড়ী চালাচ্ছে ৷আবরার বারবার নিজের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে নিচ্ছে ৷সাদির বলা ঠিকানায় আবরার সবাইকে নিয়ে যাচ্ছে ৷
অপর দিকে আবরার ফুপু বাড়ী থেকে বের হয়ে গেল ৷সবাই চলে যাওয়ার কিছুক্ষন পর সেও বেড়িয়ে গেল ৷গাড়ী চালাতে চালাতে আবরার ফুপু তার প্রেমিক দ্বীপ চৌধুরীকে কল করলো ৷কল করার কিছুক্ষন পরেই দ্বীপ ফোন রিসিভ করলো ৷রিসিভ করেই দ্বীপ চৌধুরী বলল
কি হয়েছে এই অসময়ে কল কেন করলে ৷
তোমার সাথে একটু দেখা করা প্রয়োজন ৷আমি বাসা থেকে টাকা পয়সা ,গহনা সব নিয়ে চলে এসেছি ৷তুমিও চলে এসো তাড়াতাড়ি ৷
দ্বীপ চৌধুরীর চোখ টাকা আর গহনার কথা শুনে চকচক করে উঠলো ৷নিজেকে সামলে সে বলল
এখন তুমি কোথায় আছো ৷
তোমার ফার্ম হাউজের কাছেই আছি আমি ৷তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো ৷আর হ্যা সাথে করে ড্রাইভার বা অন্য কাউকে নিয়ে এসো না ৷বুঝতেই তো পারছো কোটি কোটি টাকার ব্যাপার ৷কেউ দেখলে সন্দেহ করবে ৷ তারপর তুমি আর আমি যেখানে খুশি চলে যাব ৷এসে পড় ৷ আবরার ফুপু ফোন কেটে দিল ৷এদিকে দ্বীপ চৌধুরী খুশিতে মনে হয় পাগলই হয়ে যাবে ৷ সে সাথে সাথে নিজের অফিস থেকে বের হয়ে ফার্ম হাউজের দিকে রওনা দিল ৷
অন্যদিকে আবরার গাড়ী হাসপাতালে এসে পৌছে গেছে ৷আবরার গাড়ী থামিয়ে হাসপাতালের ভেতর দৌড়ে গেল ৷সাদির কথা মতো আবরার তিন তলায় চলে গেল ৷আবরার কোনো হুশ নেই ৷কিন্তু আবরার সেই কেবিনের কাছে যেয়ে দেখলো কেবিনটা ফাঁকা ৷কেবিনে কেউ নেই ৷আবরার একটু দুরেই একজন নার্সকে দেখতে পেল ৷ আবরার তার কাছে দৌড়ে গেল ৷ তারপর বলল
এই কেবিনে রাই নামের যেই রোগী ছিল উনি কোথায় ৷
নার্স বলল আপনি কি ওনার বাড়ীর লোক ৷
আমি ওর স্বামী ৷একটু দয়া করে বলুন না কোথায় আছে ৷এতক্ষনে সবাই চলে এসেছে আবরার কাছে ৷
নার্স নিরাশ কন্ঠে বলল রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ৷ঞ্জান ফেরার পর থেকেই শুধু সাদি নামের কাউকে খুজছে রোগী ৷কিন্তু অবস্থা খারাপ হওয়ার কারনে আমরা তাকে স্পেশাল কেবিনে পাঠিয়ে দিয়েছি ৷আপনারা আমার সাথে আসুন ৷
নার্স কিছুক্ষন পর সবাইকে নিয়ে গেল ৷কেবিনের ভেতরে ঢোকা নিষেধ ৷ তাই নার্স গিয়ে ডাক্তারকে খবর দিল যে সাদি এসেছে ৷ সাথে সাথেই কেবিনের ভেতর থেকে সিনিয়র ডক্টর বের হলেন ৷তারপর বললেন
আপনাদের মধ্যে সাদি কে ৷রোগী তাকে দেখতে চাইছে ৷আপনি তাড়াতাড়ি যান ৷
সাদি দেরি করলো না ৷ভেতরে প্রবেশ করলো ৷
একটু দূরেই একটা স্বচ্ছ বিছানায় রাই শুয়ে আছে ৷সাদিকে দেখে তার মুখে যেন হাসি ফুটঁলো ৷ সাদি কাদঁছে ৷সাদি রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিল ৷তারপর বলল
আমায় এত কেন খুজতে ছিলি ৷ আমি তোর কে হই ৷
সাদি ভাই এভাবে বল না ৷ তুমি আমার মায়ের পেটের ভাই না হলেও তার থেকে বেশি ৷ এত দেরি কেন করলে আসতে ৷আর একটু দেরি করে এলে হয়তো আমাকেই আর পেতে না ৷ তোমার কি হয়েছে ৷তোমাকে কি কেউ মেরেছে ৷
আমার কথা বাদ দে ৷আগে বল তুই কেমধ আছিস ৷
আমার কথা ছাড়ো ৷ আমার একটা কথা রাখবে ভাই ৷ধরে নাও শেষ ইচ্ছে ৷প্লিজ ৷
একদম আজেবাজে কথা বলবি না ৷তোর যা চাই সব আমি এনে দেব ৷বলে ফেল কি চাই তোর ৷
একবার আবরার কে আসতে বলবে ৷তাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে ৷তাকে একবার ফোন করে আসতে বল না সাদি ভাই ৷আমার হয়তো আর বেশি সময় নেই ৷ তার কাছে যে আমার অনেক কিছু চাওয়ার আছে ৷অনেক পাওনা মেটানোর আছে ৷ প্লিজ তাকে একবার এখানে আসতে বল ৷
আবরার বাইরে আছে ৷আমি ওর কাছেই গিয়ে ছিলাম ৷আমি ওকে পাঠিয়ে দিচ্ছি ৷রাইয়ের চোখে জল চলে এলো ৷লোকটা তার সব কথা বোঝে ৷সাদি বাইরে চলে গেল ৷তারপর আবরারকে দেখে বলল
ভেতরে যা আবরার ৷রাই শেষবারের মতো তোকে দেখতে চায় ৷দেরি করিস না আবরার যা তাড়াতাড়ি ৷
আবরার আর দেরি করলো না ৷কেবিনের মধ্যে ঢুকে গেল ৷আবরারকে দেখে বাকি সব নার্স আর ডাক্তাররা বেড়িয়ে গেল ৷
আবরার পা কাপঁছে ৷তার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে ৷আবরার তো এই রাইকে চেনে না ৷এই মেয়েটাই কি কয়েক দিন আগেও তার সব কাজ করতো ৷না এটা তার রাই হতেই পারে না ৷তার রাইয়ের এই কি অবস্থা ৷ আবরার এক ধ্যানে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ৷
আবরারকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে রাই বলল
কি ব্যাপার দাড়িয়ে আছেন যে ৷আমার কাছে আসবেন না ৷একটু আসুন না আমার কাছে ৷খুব বেশিক্ষন কষ্ট দেব না আপনাকে ৷
আবরার দৌড়ে রাইয়ের কাছে গেল ৷তারপর ঝাপটে জরিয়ে ধরলো ৷আবরার হাঊমাউ করে কাদঁতে কাদঁতে বলল
এত বড় একটা রোগের কথা আমাকে আগে কেন বললে না ৷আমি কি এতটাই অপদার্থ যে চিকিৎসা করাতাম না ৷এত রাগ আমার ওপর তোমার যে সব লুকিয়ে গেলে ৷আমি এখন কি নিয়ে বাচঁবো ৷তুমি এটা কেন করলে ৷
আপনি এভাবে কাদবেন না দয়া করে ৷আপনার কষ্ট দেখলে আমার বড্ড কষ্ট হয় আবরার ৷আমি আপনার কান্না সইতে পারি না ৷রাই কথা গুলো বলতে বলতে অক্সিজেন মাস্কটা খুলে ফেলল ৷রাইকে মাস্ক খুলতে দেখে আবরার বলল
এটা কেন খুলছো তুমি ৷
রাই হাসল ৷তারপর বলল এমনিতেও আমার প্রান বায়ু ফুরিয়ে এসেছে আবরার ৷আজরাইল আসবে এটা আর কেউ না বুঝলেও মৃত ব্যক্তি বোঝে ৷যেমন আমি বুঝছি এখন ৷আজ আমি যা যা বলবো আপনি ঠিক তাই তাই করবেন কথা দিন আবরার ৷
সারাজীবন তোমার কথা শুনবো ৷ তুমি শুধু আদেশ করে যেও ৷
সারাজীবন কথাটা আমার জন্য মানায় না আবরার ৷আপনার মনে আছে আপনি আমায় একদিন বলেছিলেন ৷আপনাকে সেবা করার বিনিময়ে আমার কি চাই ৷আজকে আমি তার বিনিময় চাইবো দিবেন আমাকে ৷
তুমি শুধু বলে যাও ৷
জানেন আপনার সাথে একবালিশে শুয়ে সারারাত গল্প করার বড্ড লোভ ছিল আমার ৷কিন্তু তা আর হলো না ৷আমার পাশে একটু শুয়ে পড়ুন না ৷আজ আপনার বুকে একটু শুতে দিবেন ৷আপনার বিছানার মতো বড় বিছানা নয় এটা কিন্তু ভালোবেসে আগলে নিলে জায়গা রয়েও যাবে ৷
আবরার দেরি করলো না রাইয়ের পাশে শুয়ে পড়লো ৷রাইকে নিজের বুকে জরিয়ে ধরলো আলতো হাতে ৷রাই তৃপ্তির হাসি হাসলো তারপর বলল
আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবেন ৷আবরার রাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ৷একটু পর পর আবরার কেঁপে উঠছে ৷ হয়তো আজ আবরার ও কাদঁছে ৷
রাই নিজের ভাঙ্গা গলায় বলল আমার মাথায় এখন আর আগের মতো চুল নেই ৷আপনার কি খুব বিরক্ত লাগছে আবরার ৷বিরক্ত লাগলেও আজ আপনার নিস্তার নেই ৷আবরার জানের আপনাদের বাগানে যেই রক্ত জবার গাছটা আগে ঐখান থেকে আপনার বারান্দা স্পষ্ট দেখা যায় ৷আমার শেষ ঘরটা ওখানে বানিয়ে দেবেন আপনি ৷আপনি যখন অকারনে সেখানে এসে দাড়াবেন বারান্দায় ৷তখন আমি নয়ন ভরে আপনাকে দেখবো ৷আপনি যখন আপনার স্ত্রীকে নিয়ে চন্দ্রবিলাস করবেন ৷তখন আমি আপনাদের দেখে আমার নিজের চাওয়া গুলো মিটিয়ে নেব ৷
আবরার এবার জোড়েই কেঁদে দিল ৷তারপর বলল আর বল না প্লিজ ৷আমি আর পারছি না ৷
আজ আমায় বলতে দিন আবরার ৷আমি যে আর সময় পাবো না ৷জানেন আমার ছোট বেলা থেকে খুব শখ ছিল লালা বেনারসি পরে ,গয়না পরে ,লাল টুকটুক বউ সেজে শ্বশুড় বাড়ী যাব কিন্ত তা আর যাওয়া হলো না ৷ কিভাবে সবাই ধরে বেধে বিয়ে দিয়ে দিল ৷তবে এবার সাদা শাড়ী পড়ে যাব ৷আপনার বাড়ীতে হয়তো পালকিতে চরে যাওয়া হলো না ৷কিন্তু খাটিয়াতে করে যেতে পারবো এবার ৷আপনার আর আমার বিয়েতে কাজী এলো না ৷সবাই আমার কবুল বলার জন্য আর অপেক্ষা করলো না ৷কিন্তু জানাযায় ঠিকই আসবে ৷কাতারে কাতারে লোক দাড়াবে ৷আমাকে একটা চুমু দেবেন আবরার ৷একটা প্রথম আর শেষ চুমু দেবেন আমাকে ৷দয়া করে এই চাওয়াটা থেকে আমাকে বঞ্জিত করবেন না ৷
আবরার রাইয়ের মুখটা দুই হাতে আগলে নিল ৷এই মুখটা তার ভালোবাসার মানুষের ৷কই আগে তো এভাবে দেখা হয় নি ৷আগে তো এত কাছে আসা হয় নি ৷সবই অসম্পূর্ন রয়ে গেল ৷ আবরার রাইয়ের কপালে চুমু দিতে গিয়ে আবারো কেদেঁ দিল ৷
আপনি কাদঁছেন আবরার ৷আর আমার কত ভালো লাগছে আপনি জানেন ৷প্রেমিকে প্রথম চুমু অমৃতের মত কাজ করে ৷ যা প্রেমিকাদের বাচঁতে শেখায় হাজার বছর ৷
ওপর দিকে আবরার ফুপু হাতে ধারালো অস্ত্র নিয়ে দাড়িয়ে আছে ৷তার চোখে পানি ৷একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে দ্বীপের কাছে তিনি ৷একটু দূরেই দ্বীপ চৌধুরী মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে ৷
কেমন হয়েছে জানাবেন ৷কেউ দয়া করে next বা nice লিখবেন না ৷আপনাদের অনুভূতি গুলো আজ আমি পড়তে চাই কমেন্টে ৷
চলবে