এ_শহরে_বৃষ্টি_নামুক❤️পর্ব-৩১

0
1994

এ_শহরে_বৃষ্টি_নামুক❤️পর্ব-৩১
#লেখিকা_মালিহা_খান❤️

নিভ্রানের ফোন বাজছে বিকট শব্দে। ঘুমের মধ্যই চোখমুখ কুঁচকে গেলো রাত্রির। ফোনটা বাজতে বাজতে একসময় থামলো। ঘরটা আবারো নিরবতায় ডুবে যেতেই চোখমুখ স্বাভাবিক করে ভালোকরে নিভ্রানকে আঁকড়ে ধরলো সে। ঘুম পাচ্ছে ভীষণ। আজকাল বড্ড বাজে অভ্যাস হয়েছে। লোকটার বাহু ছাড়া ঘুম আসেনা। বুকে মুখ না গুঁজলে চোখের পাতা বন্ধই হয়না। নিভ্রান গতকাল অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছে। অফিসের কি সব কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করতে করতেই রাত আড়াইটা বেজে গেছিলো। তারপর শুয়েছে। সেই ততক্ষণ তার চোখেও ঘুম ছিলনা কেনো যেনো।
মিনিট না পেরোতেই আবার দ্বিগুন উদ্যমে বাজতে লাগলো ফোন। এবার সরাসরিই চোখ মেললো রাত্রি। কোমড় থেকে নিভ্রানের হাতটা সরিয়ে একটু উঠে হাত বাড়িয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিলো। অফিসের ম্যানেজার ফোন করেছে। বাটন চেপে শব্দ বন্ধ করলো সে। মানুষটা একটু শুয়েছে তাও শান্তি নেই। সারাক্ষণ শুধু কাজ আর কাজ।
ফোনটা বালিশের নিচে ঢুকিয়ে নিভ্রানের দিকে তাকালো সে। মাথার ঝাঁকড়া চুল এলোমেলো। রাত্রি আলতো করে হাত চালিয়ে তা আরো অগোছালো করে দিলো। চোখের নিচে ভাঁজ পরে গেছে গভীর ঘুমের কারণে।গালের কাঁটা দাগটায়ও মানিয়ে গেছে সুদর্শন চেহারায়। রাত্রি হেসে ফেললো নিশব্দে। মাথা নামিয়ে কাছ থেকে দেখলো। কপালে কপাল ঠেকালো। কাটা জায়গাটায় আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতেই নিভ্রান ঘুমমাখা অস্ফুট কন্ঠে বললো,”কে ফোন করেছিলো রাত?”

রাত্রি চমকে গেলো। থতমত খেয়ে সরে যেতে চাইতেই নিভ্রান আটকে ফেললো। পিটপিট করে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললো,”তুমি কি আমাকে ভয় পাও?”

—“ভয় পাবো কেনো? ছাড়ুন।”

—“ভয় না পেলে ছাড়বো কেনো?”

—“আচ্ছা ভয় পাই, এখন ছাড়ুন।”

নিভ্রান হেসে বললো,”ভয় পাবা কেনো? আমি কি করেছি তোমাকে?” সদ্য ঘুম ভাঙা চেহারায় হাসিটা অবিশ্বাস্য সুন্দর দেখালো। রাত্রির চোখ আটকে গেলো। মন মিইয়ে গেলো। গাল রাঙা হলো। ভর করলো আছন্নতা, নিমগ্নতা।
নিভ্রান নরম গলায় বললো,”কি হলো?”

রাত্রি ঘোর কন্ঠে বললো,”আপনি এতো সুন্দর কেনো?

নিভ্রান হাসলো আবারো। আচমকাই দু’গালে হাত রেখে কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,”কে ফোন করেছিলো? দাওতো।”

রাত্রি সরে গেলো। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করে নিভ্রানের হাতে ধরিয়ে দিলো। নিভ্রান উঠে বসেছে ততক্ষনে। ঘুমটা পুরো হয়নি। গা ম্যাজ ম্যাজ করছে। ফোন চেক করলো। কলব্যাক করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ালো। রাত্রি ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে চুলে হাত খোঁপা করলো। বিছানাপত্তর ঝেড়ে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
_______________
নাস্তার টেবিলে বসে রাত্রি বললো,”আপনি খালা কে বলবেন উনার আর রান্না করা লাগবেনা। রান্না আমিই করতে পারবো।”

নিভ্রান চোখ ছোট ছোট করে বললো,”তুমি করবে কেনো? এত কষ্টের কোনো দরকার নেই।”

—“কষ্ট কোথায়? আমি তো আগে নিজের রান্না নিজেই করতাম।”

—“তো?”

—“তো এখনও আমি করবো। আপনার ভাললাগে রোজ রোজ একই খাওয়া খেতে?”

—“অভ্যাস হয়ে গেছে রাত।”

রাত্রি ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,

—“আমার অভ্যাস নেই। আপনি মানা করে দিবেন মানে দিবেন।”

রুবিনার সামনে আর কথা বাড়ালোনা নিভ্রান। ছোট্ট করে উওর দিলো,”আচ্ছা, ঠি কাছে।”
_________________

ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছে নিভ্রান। ঝালমুড়ির প্যাকেট চুপসে হাত হলুদ হয়ে যাচ্ছে অথচ মেয়েটার আসার নাম নেই। রোজ দেরি করে। নিভ্রান চুল ব্রাশ করতে করতে গেটের দিকে চেয়ে ছিলো একদৃষ্টে। সারাদিন দেখতে পায়না এমনেই। সন্ধ্যাবেলা কই একটু তারাতারি করবে। নাহ্। তাকে অপেক্ষা করিয়ে এই মেয়ে নিশ্চিত পৈশাচিক আনন্দ পায়।
হঠাৎ পাশ থেকে কেউ একজন ডাক দিলো,”বাবা, তোমার সাথে একটু কথা বলা যাবে?”

নিভ্রান ঘাড় ফিরালো। একজন মধ্যবয়স্ক লোক। পোশাক আশাকে বোঝা যাচ্ছে ভদ্রলোক ফালতু কথা বলার জন্য আসেনি। নিভ্রান নড়ে চড়ে দাড়ালো। ভদ্রভাবে বললো,”জি বলুন।”

ভদ্রলোক এবার হাসলেন। সহজ হয়ে বললেন,
—“কেমন আছো?”

নিভ্রান সৌজন্যমূলক হেসে বললো,
—“জি ভালো…কিন্তু আপনি কে? ঠি ক চিনতে পারলাম না আংকেল।”

—“আমাকে চিনবা না তুমি। চেনার কথাও না।”

নিভ্রান বলার মতো কিছু পেলোনা। ভদ্রলোক কিভাবে কথা এগিয়ে নিয়ে যাবে তাও বোধগম্য হলোনা। অপরিচিত একটা লোকের তার সাথে কি কথা থাকতে পারে?
ভদ্রলোক নিজে থেকেই একটু কাছে এসে দাড়ালেন। গলা নামিয়ে অনুসন্ধানি কন্ঠে বললেন,”তুমি রাত্রি মেয়েটাকে নিতে আসোনা? এই বাসায় পড়ায় যে?”

নিভ্রান কিন্চিৎ অপ্রস্তুত হয়ে বললো,”জি।”

ভদ্রলোকের চোখ চকচক করে উঠলো।
—“তুমি কি ওর আত্নীয়?”

নিভ্রান বুঝতে পারলোনা কি বলবে। সম্মতিসূচক মাথা নাড়ালো শুধু। ভদ্রলোকের কথাবার্তার শেষ টা কি দিয়ে হবে ভাবতেই মাথা ঘুরাচ্ছে।
ভদ্রলোক নিভ্রানের হাতের দিকে তাকালেন। ঝালমুড়ি দেখে বিস্তর হেসে বললেন,”ও কি তোমার বোন? তুমি বড়ভাই নিশ্চয়?”

নিভ্রান দুই ভ্রু উচিয়ে কয়েকবার পলক ঝাপটালো। কথাটা হজম করার চেষ্টা করতে করতে বললো,”সরি?”
ভদ্রলোক এবার আরো একটু এগোলেন। উজ্জ্বল চোখে চেয়ে বললেন,
—“আসলে ওকে আমাদের খুব পছন্দ বুঝলে? ও তো খুব চুপচাপ থাকে তাই ভাবছিলাম একেবারে ওর পরিবারের সাথেই কথা বলবো। আমার ভাতিজার জন্য…”

নিভ্রান খুক খুক করে গলা ঝাড়লো। একআঙ্গুলে কপালের কোণ ঘষে বললো,
—“রাত বিবাহিত আংকেল। আমি ওর হাসবেন্ড। ও আমার বউ, ছোটবোন না।”
ভদ্রলোক যেনো বিষম খেলেন। জোর গলায় বললেন,
—“বিবাহিত? কে বলেছে?”

নিভ্রান হতবিহ্বল কন্ঠে বললো,”আমার বউ, আমি জানবোনা ও বিবাহিত?”

—“না মানে…ও তো কখনো বলেনি।”

নিভ্রান বললোনা কিছু। হাসবে না কাঁদবে দোটানায় পড়ে গেছে।
ভদ্রলোক আবার বললেন,”ও আসলেই তোমার বউ?”

নিভ্রান হাঁফ ছেড়ে বললো,”জি আংকেল। আপনাকে কাবিননামার ছবি দেখাবো? আচ্ছা একমিনিট।” বলে সেকেন্ডেই ফোন বের করলো সে। ছবি ছিলো তার কাছে। বের করে জুম করে বললো,”এইযে আংকেল। পড়েন।”
ভদ্রলোক অসন্তুষ্টি নিয়ে চাইলেন। একপলক দেখে বললেন,”ও আচ্ছা আচ্ছা। কিছু মনে করোনা। আমি বুঝিনি।”

নিভ্রান ফোনটা পকেটে ঢুকালো। মেজাজটা চরম খারাপ হলেও মুখে বললো,”জি ঠি কাছে, সমস্যা নেই। কিছু মনে করিনি।’
ভদ্রলোক যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রাত্রির দেখা মিললো। গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে রাস্তা ফাঁকা হওয়ার জন্য। এপাশে আসবে। একহাতে মাথার ওড়না ঠি ক করছে। নিভ্রান নিজেই এগিয়ে গেলো। ওপাশে পৌঁছাতেই রাত্রি হাত বাড়িয়ে দিলো ধরার জন্য। নিভ্রান হাসলো। প্রশান্তির হাসি, পূর্ণতার হাসি, প্রেয়সীর ভরসা অর্জন করতে পারা অদম্য দূর্বার হাসি।
সাবধানে রাস্তা পার করে গাড়িতে বসিয়ে ঝালমুড়ি ধরিয়ে দিলো হাতে। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতেই রাত্রি ঝালমুড়ি চিবাতে চিবাতে বললো,

—“আপনি রুমাইসার বাবার সাথে কি কথা বলছিলেন?”

নিভ্রান বুঝলো ভদ্রলোক রাত্রির স্টুডেন্টের বাবা। কি বিশ্রি অবস্থা! পড়াতে এসেও শান্তি নেই। বউ নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু হয়ে গেছে।
গাড়ির চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে সে ফিচেল কন্ঠে বললো,
—“তোমার জন্য বিয়ের সমন্ধ এসেছিলো রাত। নাকচ করে দিয়েছি। আমার বউকে আমি কেনো বিয়ে দিবো?”

~চলবে~

[রি-চেক হয়নি। বানান ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here