শ্রাবন আধারে তুমি
লেখিকা : আফরিন ইসলাম
পার্ট :৭
রাই আবরারকে খাবার খাইয়ে দিল ৷তারপর ঔষুধ খাইয়ে দিয়ে ওরনা দিয়ে মুখ মুছে দিল ৷রাই ট্রে তে সব কিছু গুছিয়ে নিতে নিতে বলল
আমি দশ মিনিটের জন্য নিচে যাচ্ছি নাস্তা করতে ৷নাস্তা করা হয়ে গেলেই চলে আসবো ৷
রাই ট্রে নিয়ে চলে যাবে ৷ তখন আবরার বলল আমি অসুস্থ বলে দয়া করছো আমাকে ৷তুমি কি ভাবো তোমার অভিনয় আমি বুঝি না ৷একটা নার্সও রাখতে দিতেছো না ৷তোমার মতো মেয়েরা নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই করে না ৷সেবা করার বিনিময়ে কি চাও বলো ৷
রাই আবরার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ৷রাই কথা বলছে না ৷তাই আবরার বলল কি হলো কথা বলছো না কেন ৷কি চাই তোমার ৷
রাই এবার শান্ত গলায় বলল প্রথমত আপনাকে দয়া বা করুনা করার আগে যেন আল্লাহ আমার মৃত্যু দেয় ৷আর আমি বেচেঁ থাকতে আমার স্বামীকে অন্য মেয়ে সেবা করবে তা আমি হতে দেব না ৷আর হ্যা ঠিকই বলেছেন আমার মতো মেয়েরা স্বার্থ ছাড়া কিছু করে না ৷আপনি আগে সুস্থ হন ৷তারপর আমি চেয়ে নেব ৷
সবাইকে কেন বোঝাতে চাইছো তুমি আমায় ভালবাসো ৷এমন একটা ভাব করছো যেন আমরা একে অপরকে খুব ভালবাসি ৷কেন মিথ্যে নাটক করছো আবরার বলল ৷
মিথ্যে নাটক আমি করতে পারি না ৷আর হ্যা আপনাকে আমি ভালবাসি ৷আপনার ভালবাসার আমার দরকার নেই ৷আমি আপনাকে যতটুকু ভালবাসি তাই যথেষ্ট আমার জন্য ৷আর যদি মনে হয় আমি অভিনয় করছি ৷তাহলে হ্যা আমি অভিনয় করছি ৷কারন ভালবাসা আর যাই হোক আপনি বুঝবেন না ৷আমি মরার পর আরেকটা বিয়ে করে খুশি হবেন আশা করি ৷
রাই কথা গুলো বলে আর দাড়ালো না চলে গেল ৷আবরার রাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ৷তারপর বলল তুমিও আমাকে বুঝবে না ৷কেন তুমি আমাকে ঠকিয়েছো ৷আমার কি দোষ ছিল ৷
অনেকক্ষন হয়ে গেছে রাই আসছে না ৷পনেরো মিনিট পার হয়ে গেছে ৷এদিকে আবরার একা একা কিছু ভালো লাগছে না ৷আবরার খুব রাগ হচ্ছে মেয়েটার ওপর ৷মেয়েটা ইচ্ছে করে দেরি করছে ৷আবরার ভাবনা ছেদ করে রাই রুমে আসলো ৷রাইকে দেখে আবরার চোখ সরিয়ে নিল ৷রাই আবরার দিকে তাকিয়ে বলল
রাগ করার কারন কি মশাই ৷মুখটা এমন বাংলা পাচেঁর মতো করে রেখেছেন কেন ৷
আমি কারো ওপর রাগ করি নি আবরার বলল ৷
তা তো মুখটা দেখেই বুঝতে পারছি ৷সাদি ভাই এসেছে ৷তার সাথে একটু কথা বলতে গিয়ে দেরি হয়েছে ৷রাই খেয়াল করলো আবরার মুখের রং পরিবর্তন হচ্ছে ৷আবরার শরীর কাপঁছে ৷রাগে আবরার শরীর কাপঁছে খুব করে ৷রাই আবরার দিকে তাকিয়ে বলল
কি হয়েছে আপনার ৷হঠাৎ রেগে যাচ্ছেন কেন ৷আমি কি কোনো ভুল করেছি ৷তাহলে ক্ষমা করে দিন ৷আবরার রাইয়ের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
এখানে কেন এসেছো ৷যাও না তোমার সাদির কাছে ৷ওর সাথেই তো তোমার …….
আবরার আর কিছু বলল না ৷হঠাৎ থেমে গেল ৷রাই অস্থির কন্ঠে বলর আপনি কি সব বলছেন ৷আপনার কথা আমি বুঝতে পারছি না ৷আর এভাবে রেগে গেলেন কেন সাদি ভাইয়ের নাম শুনে ৷কি হয়েছে আমাকে বলুন না ৷
আবরার নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে খুব ৷আবরার নিজের চোখ বন্ধ করে নিল ৷তারপর কয়েকটা শ্বাস নিল ৷রাই আবারো বলল কি হয়েছে বলুন না ৷
আবরার রাইকে বলল আমাকে এখন একা থাকতে দাও ৷যাও সাদির সাথে কথা বলে এসো ৷
সাদি ভাইয়ের সাথে আমি কি বলবো ৷আপনি বরং একটু উঠে বসুন ৷রাই কথাটা বলে কাবার্ডের কাছে গেল ৷তারপর একটা সাদা কাপড় বের করলো ৷রাই কাপড়টা নিয়ে আবরার কাছে গিয়ে বলল এবার আমার কাছে আসুন ৷
কেন কি করবে এটা দিয়ে আগে বলো ৷
এটা আপনার গলায় বেধে দেব ৷
কেন বাধবে এটা ৷
বাধার পরেই দেখতে পারবেন ৷এবার কাছে আসুন ৷ কাপড়টা দিয়ে রাই আবরার শরীর ঢেকে দিল ৷ তারপর বলল এবার একটু বসুন আমি আসছি ৷
রাই একটু পরে নাইফ,রেজার ,সেইভিং ক্রিম সহ আরো কিছু জিনিস নিয়ে ঘরে এলো ৷আবরার রাইয়ের হাতে ঐ গুলো দেখে বলল
এগুলো কেন এনেছো তুমি ৷
আপনার গোফ আর চুল কত বড় হয়েছে দেখেছেন ৷আপনাকে এখন চিড়িয়াখানার হনুমানের মতো লাগছে ৷রাই কথাটা বলে মুচকি মুচকি হাসছে ৷অপর দিকে আবরার ছোট ছোট চোখ করে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
কি বললে আমাকে হনুমানের মতো দেখতে ৷
রাই শান্ত স্বরে বলল ভুল কি বললাম আমি ৷ বিশ্বাস না হলে একবার আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখে নিন ৷রাই কথাটা বলেই একটা ছোট আয়না আবরার সামনে ধরলো ৷আবরার আয়নার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে ৷সত্যি তার চুল আর গোফঁ বেশ বড় হয়ে গেছে ৷কিন্তু তাই বলে এই পুচকি মেয়েটা তাকে হনুমান বলল ৷
আবরার রাগী গলায় বলল আমার চুল দাড়ি তোমার কাটঁতে হবে না ৷আমাকে তো হনুমানের মতো দেখতে ৷আমার লাগবে না গোফঁ চুল কাটা ৷
আমি আমার স্বামীর চুল গোফঁ কেটে দেব তাতে আপনার কি হ্যা ৷আর আমার স্বামীকে আমি হনুমান বলবো ৷আমার যা ইচ্ছা তাই বলবো ৷আপনি এর মাঝে কথা বলার কে হ্যা ৷আমার স্বামীর সেবার কোনো ত্রুটি আমি হতে দেব না ৷এবার লক্ষী ছেলের মতো বসে থাকুন ৷
রাই আবরার চুল আর গোফঁ কেটেঁ ছোট করে দিয়েছে ৷আবরার সারাটা সময় রাইয়ের মুখের দিকেই তাকিয়ে ছিল ৷একটা কথাও আবরার বলে নি ৷চুল ,গোফ কাটার পর রাই ভেজা কাপড় দিয়ে আবরার শরীর সুন্দর করে মুছে দিল ৷আর আবরার শুধু রাইকেই দেখছে ৷রাই ড্রয়ার থেকে একটা মলম এনে আবরার ছোট ছোট কাটা জায়গায় লাগিয়ে দিল ৷
আবরার রাইকে বলল এতটা কেন করছো ৷এই করুনা গুলো না করলে হয় না ৷ সাদি অপেক্ষা করছে তোমার জন্য ৷আমাকে নিয়ে কেন এত অভিনয় করছো ৷আমার এই সব একদম ভালো লাগছে না ৷সত্যি বলছি আমার সাথে অভিনয় করো না ৷
চলবে