ভ্রমণ শেষ পর্ব

0
665

#ভ্রমণ
#পর্বঃ১৯
লেখাঃসামিয়া খান

ইনায়ার মৃত্যুর পরবর্তী নয় মাস অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।এ নয় মাসে সকলের জীবনে বিশেষ বিশেষ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে।সবথেকে ঘটেছে সাইরাহ্ এর জীবনের।সেদিন রাতে ইনায়ার থেকে ফেরার পর ইয়াদ সাইরাহ্ এর দিকে এক ঠান্ডা দৃষ্টি মাখা নয়নে তাঁকিয়ে ছিলেন।সাইরাহ্ বোকা হলেও বুঝতে পেরেছিলেন ইনায়া নামক অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে উবে গিয়েছে।যদিও সংশয়ে ছিলেন এ বিষয়ে যে ইয়াদ তাকে খুন করেছেন কিনা।পরে অবশ্য ইয়াদ নিজেই বলে যে ইনায়া তার সামনে আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়।এবং সে তাকে বাঁচানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছাপোষণ করেননি।।মানব জনম বড়ো অদ্ভুত।সাইরাহ্ এর গর্ভে বেড়ে উঠা সন্তানের জীবন খুব বেশী স্থায়ী ছিলনা।গর্ভে থাকাকালীন চার মাসে মিসক্যারেজ হয়ে যায় সাইরাহ্ এর।তখন থেকে ইয়াদের আসল রুপ প্রকাশ পেয়ে গেলো।যদিও আগে বেশ খানিকটা প্রকাশ হয়েছিল।ইনায়ার থেকে সেদিন রাতে বাসায় এসে ইয়াদ সাইরাহ্ কে একটা রুমে আঁটকে ফেলেন।সে থেকে তার বন্দি জীবন শুরু।কতো রকম ঝড়ঝাপটা এলো।তারপরও গত নয়মাসে মাসে সাইরাহ্ বাড়ি কেন রুমের ভেতর থেকে বের হতে পারেনি।প্রথম প্রথম ইয়াদ চোখের রাঙানিতে তাকে আঁটকে রাখতো।তা যখন নড়বড়ে তখন শুরু হলো গায়ে হাত তোলা,ক্ষুদা,গরম, অন্ধকার সহ্য করা।এটা আরো প্রকট পেলো যখন সাইরাহ্ এর গর্ভপাত ঘটলো।যদিও ইয়াদ খুব একটা জোরে সাইরাহ্ কে মারেন না।

ইয়াদের বাবা মারা যাওয়ার পরও ইয়াদ খুব একটা বাউন্ডুলে জীবনযাপন করেন না।নারীঘটিত ব্যাপার স্যাপার গুলো এখনো তার জীবনে আগের মতো।ইনায়া বা জেরিন নামক চরিত্রের জায়গায় নতুন মুখ। তা অবশ্য লোক চক্ষুর আড়ালে।কিন্তু সাইরাহ্ বা ইয়াদের দাদুর আড়ালে নয়।ইয়াদের দাদু এখন স্বাভাবিক।তার নাতি বেচে আছে ঠিক আছে এর থেকে বেশী আর কি চাই তার?সাইরাহ্ এখন তার দু চোখের বিষ।খুব শীঘ্রই ভাবছে ইয়াদকে আবার বিয়ে দিবে।

পড়ন্ত বিকেলে জানালার ধারে বসে আছে সাইরাহ্।বাহিরের প্রকৃতি দেখার একমাত্র মাধ্যম এখন এই জানালা।কি নৈসর্গিক সৌন্দর্য। আগের মতোই তো সব।তবে কি, যে বন্দি জীবন-যাপন করে তার কাছে খুব পরিচিত পরিবেশটাও একসময় মনোমুগ্ধকর হয়ে উঠে।তার মধ্যে বিশাল পরিবর্তন এসেছে।আগের মতো ভয়ে সিঁটিয়ে থাকা সাইরাহ্ এখন আর সে নয়।যে মেয়ে একা থাকতে ভয় পেতো এবং অন্ধকার যার এক জীবনের শত্রু সে মেয়ে এখন দিব্যি রাতের পর রাত অন্ধকার রুমে একা থাকেন।শরীরে আঘাত লাগলেও কাঁদেন না।প্রথম প্রথম খুব কাঁদতেন।ভাগ্যকে দোষ দিতেন।অথচ কি অমোঘ নিয়তি।মাত্র নয়মাসে সে অন্য কঠিন এক মানবীতে পরিণত হয়ে গিয়েছেন।খুঁট করে দরজা খোলার শব্দ হলো।ইয়াদ এসেছেন।কিন্তু এতে সাইরাহ্ এর কোন ভাবান্তর ঘটলো না।সে নিজের জায়গায় অবিচলিত অবস্থায় ঠায় বসে রইলেন।

এটা ইয়াদের বেড রুম নয়।নিচের দিকে একটা রুম।ইয়াদ কোর্ট খুলে বিছানাতে রাখলেন।রোজ রাতে বা সবসময় ইয়াদ আসেন এমন নয়।

“আমার কাছে আসেন।”

একদম নরম কণ্ঠ।এমন কণ্ঠে এতো সুন্দর আকর্ষণ।মাঝেমধ্যে সাইরাহ্ এর মন গলে যায় কিন্তু না সে ঠায় বসে থাকেন।সাইরাহ্ এর মতিগতি বুঝতে পেরে ইয়াদ কিছু বলল না।বিছানায় শুয়ে পড়লেন।আপাতত সে ঘুমাবে।বহুদিন ধরে ঠিকমতো ঘুমায় না।একটু পর সাইরাহ্ ও ইয়াদের পাশে এসে শুয়ে পড়লেন।পাশ ফিরে ইয়াদের তা দেখতে ইচ্ছা হলো না।কিন্তু তার সহধর্মিণীর পাশে ঘুমালে সে শান্ত থাকে।কঠোর শান্ত।
,
,
ঘুম থেকে উঠে সাইরাহ্ দেখতে পেলেন ইয়াদ তার পাশে নেই।অবশ্য থাকারও কথা নয়।বাথরুমের কাজ সম্পন্ন করে সাইরাহ্ দেখতে পেলেন ইয়াদ তার রুমে বসে আছে।পাশে খাবার রাখা।সাইরাহ্ সকাল থেকে না খাওয়া।মাঝেমধ্যে এমন করে ইয়াদ তাকে খেতে দেননা।আজও তেমন দিন ছিল।

“তখন কাছে আসতে বলেছিলাম আসেননি।এজন্য ভেবেছিলাম শাস্তি বেশী হবে কিন্তু পারলাম না শাস্তি দিতে।এমন কেন হয় একটু বলবেন?”

সাইরাহ্ জবাব দেন না।ইয়াদ তার মনের কথা বুঝে নেয়।

“কাছে আসেন।”

এবারও সাইরাহ্ আসেনা।তার থেকে দূরে গিয়ে হাঁটুমুড়ে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে থাকেন।ইয়াদ অপেক্ষা করেন কখন সাইরাহ্ উঠবেন।কিন্তু উঠেনা সে।

এবার ইয়াদের রাগ উঠে।হুট করে সে সাইরাহ্ এর গলা চেঁপে ধরে।

নখগুলো একদম গলায় গেঁথে যাচ্ছে সাইরাহ্ এর।চোখ দিয়ে ঠান্ডা অশ্রু টুপটুপ করে পড়ছে।তার সামনে থাকা সুদর্শন ব্যক্তির দৃষ্টি কঠিন এবং নির্বিকার।যেন এভাবে আঘাত করে সে পুলকিত বোধ করছে।সাইরাহ্ এর নাকের ফুল টান দিয়ে ধরে সে ফ্যাশফ্যাশ গলায় বলল–

“আমি না আপনাকে মরতে দিবো না বাঁচতে।একটা রাস্তার কুকুর অনাহারে যেভাবে আনচান করে ঠিক সেভাবে আপনি করবেন।তারপরও কেন এতো আপনার এই দেমাগ?”

সাইরাহ্ অস্ফুস্ট একটা শব্দ করলেন।অবশ্য এর থেকে বেশী শব্দ করার ক্ষমতা তার নেই।ইয়াদ বহু আগে তার জিহবা কেঁটে দিয়েছেন।কি সুন্দর হসপিটালে নিয়ে গিয়ে।যাতে করে সাইরাহ্ আর কখনো কথা না বলতে পারেন।তার কান্না দেখে আদ্রর্তা মিশ্রিত গালে ইয়াদ নিজের গাল মিশালেন।

“মারতে মন চায়না।কিন্তু জেদের কারণ মারতে হয়।কালকে রাত থেকে খেতে দেইনি।খুদা লাগেনি?”

এবার সাইরাহ্ মাথা নাড়ালেন।

“তবে আসেন খেয়ে নেন।”

খাওয়া সম্পন্ন হলে সাইরাহ্ আবার গিয়ে ইয়াদের থেকে দূরে বসেন।লোকটাকে তার এক মুহুর্ত নিজের নিকট রাখতে মন চায়না।যদি কথা বলতে পারতো তবে চিৎকার করে বলতো এখান থেকে চলে যান। আপনাকে আমার সহ্য হয়না।কিন্তু তা আর বলা হওয়া উঠেনা।
,
,

ইয়াদের দাদু বেশ পিড়াপিড়ি করছেন ইয়াদকে অন্যত্র বিয়ে করার জন্য।সে বাতাস নিজের গায়ে লাগাচ্ছেন না ইয়াদ।রাত এখন দশটা বাজে সে তার স্ত্রীর রুমে যাবে।রুমের সামনে গিয়ে বুঝতে পারলো দরজা লাগানো ভেতর থেকে।আর আজ খুলবেনা।দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়াদ বাবার স্টাডি রুমের দিকে এগুলেন।

রুমটা বেশীরভাগ সময় বন্ধ থাকে।বাবার স্মৃতি সহ সব যেন এখনো লেগে আছে।বড্ড ভালোবাসতো ইয়াদ তার বাবাকে।বাবার চেয়ার বসে কিছুসময় ঝিম ধরে বসে রইলেন ইয়াদ।টেবিলে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন।একটু পর বিলাপ করে বাবা বাবা বলে কাঁদছেন।

নিস্তব্দ তিমিরে নিমজ্জিত বাড়ীটিতে ইয়াদের বাবা ডাক আরো বেশী প্রকট হয়ে উঠে।ইয়াদের দাদু নিচে নিজের রুমে তজবি পড়তে পড়তে তা শুনতে পান।এ কান্না শুনে সাইরাহ্ নিজের রুমের দরজা খুলে দেয়।এটা তার উচিত হয়না সে জানে।তাও খুলে দেয়।ইয়াদ মনে করে তার বাবার মৃত্যুর জন্য ইনায়া,তারেক এবং সাইরাহ্ দায়ী।তারা যদি সেদিন তার বাবাকে ওগুলো না বলতো তবে তার বাবা বেঁচে থাকতেন।ইনায়া তার শাস্তি পেয়েছে,তারেককেও দিয়েছে।না সে তারেক কে মারেনি। কয়মাস আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক এক পা হাড়ান এবং তার মা মৃত্যুবরণ করেন।এবং ইয়াদ সাইরাহ্ কে ধমকি দেন যদি সে ঠিকমতো না থাকে তবে তারেক কে সে বাঁচতে দিবেনা।ভাইয়ের জন্য সে ঠিক থাকে।তারেক অবশ্য মাইমুনাকে বিয়ে করে কোনরকম আছে।সাইরাহ্ কে নিতে সে বহু চেষ্টা করেছেন কিন্তু সফল হতে পারেনি।

একটু পর ইয়াদ সাইরাহ্ এর পাশে এসে শুয়ে পড়লেন।এবার দূরে না একদম তার স্ত্রীকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিলেন।শারীরিক ব্যাপার গুলো এখনও আগের মতো ইয়াদ আর সাইরাহ্ এর মধ্যে।সাইরাহ্ রোবট এবং চালায় ইয়াদ।এজন্য সে একটু বাক্য ব্যয় না করে ইয়াদের সবগুলো অনাচার সহ্য করে নেয়।

মাঝে বেশ কয়েকটা দিন চলে গিয়েছে।সব সেই মন্থর গতিতে চলছে।সকালের খাবার খাওয়ার পর সাইরাহ্ বেশ কয়েকবার বমি করেছেন।পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে তার দেরী হলো না যে সে আবার সন্তান ধারণ করেছেন।আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের পেটে বেশ কয়েকবার হাত বুলালেন।পিছনে যে ইয়াদ ছিল তা অবশ্য খেয়াল করেনি।চুপ করে ইয়াদ এসে শুধু সাইরাহ্কে চারপাশ দিয়ে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে নিলেন।

“আবার আসতে চলেছে আমার রাজপুত্র তাই না?”

ইয়াদকে আর পায় কে।পুরো বাড়ী মাথায় উঠিয়ে নিলেন।সব আগের রুপ ধারণ করলো।সাইরাহ্ কে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সব কঠোর নিয়মে মানতে হচ্ছে তার।আগেরবার যে ভুল হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে কখনো সে চায়না তার এ সন্তানও মৃত্যুবরণ করুক।

সাইরাহ্ এর এখন পাঁচ মাস চলছে।ইয়াদ এক নাগাড়ে তার পেটে হাত বুলিয়ে চলেছেন।

“জানেন চাঁদ।সর্বপ্রথম ইনায়া আমাকে বলে যে আমি বাবা হতে চলেছি।ওর ব্যাপারে কখনো সিরিয়াস ছিলাম না আমি।এজন্য এবোর্শন করতে বলি।ও রাজি হয়না।অবশ্য আমি রাজি করাতে সক্ষম হয়েছিলাম।তারপর বলে জেরিন সে মা হবে।তাতে অবশ্য আমি সুখীই ছিলাম।অথচ সেই সন্তানকে নিজের হাতে মেরে ফেললাম।সৃষ্টিকর্তা শাস্তি দিলেন আমাদের প্রথম সন্তানকে কেঁড়ে নিয়ে।অবশ্য এখন সুপ্রসন্ন।দেখেন না জোড়া সন্তান আসতে চলেছে।”

সাইরাহ্ কিছু বলেনা।চুপ করে শুনে।ইয়াদ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে।হয়তো সন্তানের জন্য।ইয়াদের দাদুও এখন সাইরাহ্ কে মাথায় করে রাখে।শুধু তারেকের সাথে কথা বলতে দেয়না।সত্যিই কি এতো সহজ তবে সব?না এতো সহজ নয়।

ইয়াদের ফোন ঘাটতে গিয়ে সাইরাহ্ এক অদ্ভুত জিনিস আবিস্কার করেন।তার ভাবী মাইমুনাকে ইয়াদ নানাভাবে প্রলোভন করছেন তার শয্যা সঙ্গিনি হওয়ার জন্য।মাইমুনা কঠোর তবে স্বামীর বিপদ সংকট দেখে কিছুটা টলতে শুরু করেছেন।এসব তাদের ম্যাসেজের কথাবার্তা।ইয়াদ আসার আগেই সাইরাহ্ ফোন রেখে দেয়।তারা আপাতত নতুন একটা ফ্ল্যাটে এসেছে বেশ কয়েকদিন নির্জনে কাঁটানোর জন্য।

“আপনার বাসা পছন্দ হয়েছে তো চাঁদ?”

সাইরাহ্ হ্যাঁ মাথা নাড়ালেন।

“বেশ।বাবু হওয়ার পর এখানে থাকবো আমরা।”

সাইরাহ্ এর বিশ্বাস হচ্ছেনা।শেষে ইয়াদ এতোটা নিচে নামলো যে তার ভাবীকে!মনে মনে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো।ইয়াদ হালকা হেসে সাইরাহ্ এর দিকে অগ্রসর হলেন।

“জানেন চাঁদ,আমি কখনো কেন আপনার থেকে তেমন দূরে থাকতে পারিনা তা বুঝিনা।আপনাকে হয়তে ভালোবাসি তাই।সব শেষ হলেও ভালোবাসবো।”

সাইরাহ্ এর দৃষ্টিতে অনেক ঘৃণা।

ইয়াদ এসে তার কপালের সাথে সাইরাহ্ এর কপাল ঠেকালেন।

“আপনাকে ভালোবাসি চাঁদ,ভালোবাসি এবং ভালোবাসি।”

আর শুনতে পারলো না সাইরাহ্। হাতে থাকা বড়সড় চাকু চালিয়ে দিলো ইয়াদের ঘাড়ে।ইয়াদ আকস্মিত আঘাতে পিছিয়ে গেলেন।পরপর কয়েকটা ঘা বসিয়ে দিলেন ইয়াদের বুকে, গলায়।জোরে জোরে সাইরাহ্ কাঁদছে আর ইয়াদের চোখে বিস্ময়।সাইরাহ্ এতো অনাচার আর সহ্য করতে পারেননি।হাঁটু মেড়ে মেঝেতে বসে পড়লেন ইয়াদ।রক্তে ভেসে যাচ্ছে সে।নিভু নিভু চোখ।তাতেই মোহাবিষ্ট কণ্ঠে বললেন,

“ভালো করলেন না চাঁদ।আমার রাজপুত্রদের সাথে আমার খেলা হলো না।যাওয়ার আগে একটা উপহার দেবো আপনাকে।”

ইয়াদ কোন আক্রমণ করলো না।শুধু মেঝেতে অনেকটা জায়গায় নিজের রক্ত দিয়ে অর্ধ চাঁদ অংকন করলেন।পকেট থেকে চাবি বের করে অংকিত চাঁদের ওপাশে ফেললেন।সাইরাহ্ তেমন কেঁদেই চলেছে।প্রায় নিভু পর্যায়ে ইয়াদ।

“এটা শেষ উপহার।ওখানে দরজার চাবি আছে দরজা খুলে চলে যাবেন চাঁদ।”

আর কথা বলেনা ইয়াদ। দম যায়নি।দীর্ঘশ্বাস চলছে।সাইরাহ্ তার পাশে বসেই বড্ড কাঁদলো।সে আর করতো বা কি।এতো অনাচার এতো পাপ এক নিমিষেই শেষ করে দিলো।চোখ মুছে নিলো সাইরাহ্।ইয়াদের তখনও নিশ্বাস খানিকটা উঠানামা করছে।সব মিলিয়ে মাত্র পাঁচ মিনিট অতিবাহিত হয়েছে।সাইরাহ্ চোখ মুছলো।হালকা করে উঠে ইয়াদের পাশ থেকে উঠে চাবির জন্য অগ্রসর হলো।রক্ত অংকিত চাঁদ ডিঙিয়ে যখন সাইরাহ্ যেতে নিবে তখুনি তার পায়ে টান দিলো ইয়াদ।রক্তে স্লিপ কেঁটে সাইরাহ্ গিয়ে সামনের কাচের টেবিলে পড়লো একপাশে।একদিকে এতো ভার টেবিল না নিতে পেরে উল্টো গেলো সাইরাহ্ এর উপর।ঝনঝন করে সমস্ত কাচ সাইরাহ্ এর উপর গিয়ে ভাঙলো।টেবিলের কাচটা যে আলগা ছিল তা কালকে রাতে ইয়াদ বলেছিলেন।নষ্ট গিয়েছিল টেবিলটা।গলায়, পেটে বিভিন্ন জায়গায় কাচ ঢুকে গিয়েছে।রক্তে ভেসে যাচ্ছে সব।সাইরাহ্ ধীর গতিতে উঠার চেষ্টা করেও পারলো না।ইয়াদের মৃত্যু ঘটেছে।কিন্তু তার চোখ সাইরাহ্ এর দিকেই নিবদ্ধ।এক সময় হাল ছেড়ে দিলো সাইরাহ্।তার মৃত্যু আসন্ন।বহু কাচের টুকরো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঢুকে গিয়েছে।এক ভ্রমণ শেষ হলো ভ্রমণকারিনীর।ধীরে ধীরে সব অন্ধকারে পরিণত হলো।পুরো ফ্ল্যাট থমথমে অথচ দশ মিনিট আগেও তো সব ঠিক ছিল।

একটা মরা পঁচা গন্ধে পুরো বিল্ডিং ভরে যাওয়ায় সকলে এ গন্ধের উৎস খুঁজলো।যে ফ্ল্যাট থেকে গন্ধটা আসছে তার তালা ভেঙে দেখলো দুটো লাশ ডিকম্পোস প্রায় অবস্থান রয়েছে।পুলিশ আসলো।সেই একই পুলিশ।তাপস, যে এখনো মারুফ,জেরিন এবং প্রাক্তন স্ত্রী তরুলতার খুনের রহস্য পায়নি।ভদ্রলোক বেশ অবাক হলেন যখন ইয়াদের লাশ দেখলেন কারণ তের মাস আগে ইয়াদের সাথে থাকা ইনায়ারও লাশ এভাবে তিনদিন পর পেয়েছিলেন ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে।যদিও সে আত্নহত্যা।কিন্তু এখানে ঠিক কি ঘটেছে তা কেউ ধরতে পারলো না।

ইয়াদের দাদু সাইরাহ্ আর ইয়াদের তেমন খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি।যেহেতু তারা নির্জনে সময় কাঁটাতে গিয়েছিল।দশদিন পর যখন ইয়াদ আর সাইরাহ্ এর লাশ দেখলো তখন থেকে বৃদ্ধা চুপ। একদম চুপ।কেমন যেন পাগলাটে হয়ে গিয়েছে।বাড়ীতে নতুন দুটো কবর হলো।সারাদিন শুধু ওদিকে তাঁকিয়ে থাকে।পায়ে এখন আর কাঠের নকল পা লাগায় না।পঙ্গুর মতো বসে থাকে।মাঝে তারেক আসে বোনের কবর যিয়ারত করে যায়।অঝোর ধারায় কাঁদে।বৃদ্ধা দূর থেকে তা দেখে।হঠাৎ তার মতিভ্রম হয় মাঝেমধ্যে।সে দেখতে পায় তিন চার বছরের ছোট্ট ইয়াদ তার আপন বাবা মানে বৃদ্ধার ছেলের কাঁধে চড়ে পুরো বাড়ি ঘুরছে।বাচ্চা ইয়াদের খলখল হাসিতে মুখোর পরিবেশ।সেদিকে বৃদ্ধা হাত বাড়িয়ে দেয়।আর ডাকে “আমার সূর্য।”

সমাপ্ত

সব পাঠক এমনকি নিরব পাঠকও মন্তব্য করবেন।অনেকের মন মতো হবেনা জানি।কিন্তু আমার কাছে এরকম এন্ডিং সঠিক মনে হলো।কোন ভুল থাকলে অবশ্যই ধরিয়ে দিবেন।ফাঁক ফোকড় অবশ্য থাকতে পারে।ভুল ক্রুটি মাফ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here