#ভ্রমণ
#পর্বঃ১১
লেখাঃসামিয়া খান
নীল রঙের আকাশে কালো রঙের ঘুড়ি।অদ্ভুত এক মেলবন্ধন।ঢাকা শহরে সচরাচর এরকম ঘুড়ি দেখা যায়না।আকাশে আজ উড়তে দেখে একটু বেশীই অবাক হলেন ইয়াদ।জানালার পর্দা টেনে পিছনে ফিরে জেরিনের দিকে তাঁকালেন।অফ হোয়াইট রঙের এক তাঁতের কাপড় পড়েছিল জেরিন।তা রক্তে জর্জরিত।জেরিনের পিঠের নিচের দিক থেকে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।ইয়াদ বুঝতে পারলেন মিসক্যারেজ হয়ে গিয়েছে জেরিনের।বুট পায়ে ঠক ঠক করে জেরিনের সামনে গিয়ে হাঁটুমুড়ে বসে পড়লেন সে।আধোআধো দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রয়েছেন জেরিন।ঘামে জর্জরিত হয়ে গিয়েছেন।একটু ঢোক গিলে বললেন —
“নিজের বাচ্চাকে মারতে বুক কাঁপেনি আপনার ইয়াদ।”
“সত্যি বলতে এই প্রথম কাউকে মারতে এতো কষ্ট লাগলো আমার।আমার প্রাণ ছিল ওটা।”
একটু পর জেরিনের পেটে ঝুঁকে তাতে হাত বুলালেন সে।
“বাবুসোনা তুমি ভুল জায়গায় এসে গিয়েছিলে।তুমি যদি আমার সাইরাহ্ এর গর্ভে জন্মাতে তাহলে কিছুই হতো না তোমার।এমনিতেও সব ঠিক থাকতো।তোমার মৃত্যুর জন্য তোমার মা দায়ী।”
গলা ভেজা কণ্ঠে ইয়াদ কথাগুলো বলছিল।এতো কঠিন ব্যাথায়ও জেরিন একটু শব্দ করে হেসে উঠলো।
“আপনি তো মানুষ নন ইয়াদ।আচ্ছা আপনার সাইরাহ্ সব জানলে তখন কি হবে?”
“কিছুই না।সাইরাহ্ বেশ বোকাসোকা।ওর এতো সাহস নেই।একটা ঘটনা বলি আজকে সকালে ওর দিকে শুধু চোখ গরম করে তাঁকিয়েছি ভয়ে দশটা পর্যন্ত কাছেই ঘেঁষে নেই।কতো কিউট তাই না?”
“মাদার ফাকার আপনি একটা।”
জেরিনের মুখে একথা শুনে ইয়াদ হুট করে তার দুই পা ফাঁক করে সেখানে বুট দিয়ে একটা জোরে লাত্থি বসালো।এমনিতে কেবল মিসক্যারেজ হয়েছে।তার উপর এমন লাত্থি সহ্য করতে একটু বেশীই বেগ পেতে হলো জেরিনের।
“এমন তো তুই ছিলি না রে জেরিন এমন তো ছিলি না।তাহলে হঠাৎ মুখে মুখে জবাব কেন দিচ্ছিস?”
জেরিন কোন জবাব দিলেন না।তার চোখের কার্ণিশ বেয়ে দুই ফোঁটা অশ্রু মেঝেতে পড়লো।এই সেই ইয়াদ যার জন্য নিজের মা এবং বাবাকে ছেড়ে ছিল বড্ড অবাক লাগছে।তাহলে কি ভালোবাসার জন্য নিজের মা বাবাকে ছেড়ে আসা ভুল?
“আপনার ইনায়া?সে একদিন কিন্তু সব জানবে।”
“ও জানলেও কিছু বলবেনা।বাবা মায়ের কোন মিল ছিলনা তার।তাই ওর কাছে আমি ছাড়া দুনিয়া শূন্য।তাই যা বলি করে।”
“আর আমি?আপনার বউ তো আমিও।”
“উহু!বিয়েটা নকল ছিল।”
অন্তত্য ঠান্ডা গলায় জেরিন বললেন —
“আরো কিছু বাদ আছে?”
“হুম।এখন আমি তোমাকে মেরে ফেলবো।”
কথাটা এমন শোনালো যে এর থেকে সহজ কোন বাক্য পৃথিবীতে আর হতে পারেনা।
“আমার প্রতি ভালোবাসা ছিলনা?”
“না।তোমাকে পছন্দ হয়েছিল তাই বিয়ের নাটক করে কাছে রেখেছি।ইনায়ার মতো গর্দভ না।যে বিয়ের আগে সব দিবে।আর রইলো কথা বাচ্চার।আমি তোমাকে আজীবন সব দিতাম কিন্তু এই পাকনামি করে মারাটা খেলে।”
“আপনার তো দেখছি মুখের ভাষাও জঘন্য।”
“হুম আমার সব জঘন্য সব।”
কথাটা বলে পাশের ল্যাম্পশিড নিয়ে জেরিনের মুখে বারি মারলো ইয়াদ।তারপর গলা দিয়ে ঢুকিয়ে দিলো তার দন্ড।জেরিন তার মৃত্যুর আগে দেখতে পেলো তার মুখের সামনে বেস্ট হাজবেন্ড, বেস্ট ফাদারের অন্যরুপ।যে এখন বিভীষিকাময় খুনি। তার এবং তার সন্তানের।জেরিন মারা গিয়েছে বুঝতে পেরেও তার গলায় দশ বারো বার চাকু ঢুকালো এটা ইয়াদ কিচেন থেকে এনেছেন।কি অদ্ভুত মৃত্যু হলো জেরিনের।সকালেও তো জানতো না এমন।একটু ক্ষান্ত হয়ে রক্তমাথা হাত জেরিনের গর্ভে বুলালো ইয়াদ।
“রাজপুত্র! তুই আমার সাইরাহ্ এর গর্ভে আসিস।”
জেরিনের রক্তাক্ত শরীরের দিকে একবার তাঁকালো ইয়াদ।
“মিষ্টি ছিল মেয়েটা।”
উঠে দাঁড়ালো ইয়াদ।গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে বেসিং এ রক্তমাখা হাত ধুঁয়ে নিচ্ছিলেন।কিশোর কুমার স্যারের গান।
“জিন্দেগী সাফার হ্যে সুহানা,ইহা কাল ক্যা হো কিসনে জানা।হে উড়লে উড়লে উড়…”
পাশের রুমে এক মৃতদেহের কাছে এ গান বড্ড অদ্ভুত ঠেকলো।প্রচন্ড অদ্ভুত।
,
,
“বড্ড ক্লান্ত লাগছে চাঁদ।একটু কাছে আসেন তো।”
ইয়াদের থেকে খানিকটা দূরে আড়ষ্ট হয়ে বসে রয়েছেন সাইরাহ্।সকালে ইয়াদ তাকে বকেছিলেন।এজন্য অবশ্য তাকে দুপুরে শপিং করাতেও নিয়ে গিয়েছিল।একটু আমতা আমতা করে সাইরাহ্ জবাব দিলো।
“আমার কাজ আছে।”
“উফ!ঢং বিরক্ত লাগে আমার চাঁদ।এদিকে আসেন না।”
ইয়াদ টান দিয়ে সাইরাহ্ কে নিজের কাছে নিয়ে আসলেন।ইয়াদ বেডে হেলান দিয়ে রয়েছেন আর সাইরাহ্ তাকে হেলান দিয়ে রয়েছে।
“আপনি তুলোর মতো নরম।”
“হুম।”
“রাগ করে আছেন?”
“একটু।”
“একটু কেন বেশী হয়না? ”
“উহু।”
হেসে ফেললেন ইয়াদ।কি সুন্দর কথা বলে মেয়েটা।
“খুব শীঘ্রই আমাকে রাজপুত্র দিতে হবে।”
“কীভাবে?”
“আমার ভালোবাসা নিয়ে।”
সাইরাহ্ এর গালে অধর স্পর্শ করালো ইয়াদ।
“আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসেন তাই না ইয়াদ?”
“বেহিসেবি।”
চলবে,,,
বিঃদ্রঃএতো ছোট কেন হলো তা কেউ বলবেন না।আপনাদের যেমন পড়তে কষ্ট হয় তেমন আমার লিখতেও প্রচুর কষ্ট হয়েছে।