ভ্রমণ পর্বঃ৫

0
469

#ভ্রমণ
#পর্বঃ৫
লিখাঃসামিয়া খান

ইয়াদকে এতো রাতে নিজের বাসায় দেখে তারেক অন্য রকম ব্যস্ততা দেখাচ্ছেন।কি থেকে কি করবে তা ভেবে পাচ্ছেন না।তারেকের মা তাকে ব্যস্ত না হতে বলে ইয়াদের সামনে গিয়ে বসলেন।ইয়াদকে বাহির থেকে দেখে বেশ ভালো লেগেছে তার।চেহারার দিক দিয়ে ইয়াদকে ষাটের দশকের উত্তম কুমারের মতো লাগে।বেশ মায়াভরা মুখ এবং চোখের চাহনি।তারেকের মা কে দেখে ইয়াদ বেশ সুন্দর করে শুদ্ধ উচ্চারণে সালাম দিলেন।এতে আরো মুগ্ধ হলেন সে।চমৎকার হাসি প্রদান করে ইয়াদ তারেকের মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন–

“আমি ফর্মালিটি করতে পারিনা এবং তা করবো ও না।আপনি দেখতে অনেক সুন্দর আন্টি।”

“বাহ!প্রথমেই প্রশংসা করে দিলে?”

“অবশ্যই সব সুন্দরের প্রশংসা করা উচিত।এতে তার সৌন্দর্য্য আরো বৃদ্ধি পায়।”

“দারুণ বললে তো ছেলে তুমি।তোমার কথায় শান রয়েছে।”

“ধারালো তরবারির মতো?”

“অবশ্যই।”

কথাটা বলে ইয়াদ এবং সে দুজনেই হেসে উঠলেন।আলাদা মাধুর্য রয়েছে ইয়াদের হাসিতে।তাদের থেকে বেশ খানিকটা দূরে তারেক ও সাইরাহ্ বসে রয়েছেন।তারেকের ডান হাত শক্ত করে সাইরাহ্ ধরে রয়েছেন।সাইরাহ্ ভয় পাচ্ছে নাকী অন্য কিছু তা বুঝতে পারছেন না তারেক।আলাদাভাবে তার হাত ধরে রয়েছেন।

“মা অনেক কথা হবে।স্যারকে আগে কিছু খেতে দেও।”

তারেকের কথার জবাব না দিয়ে তার মা ইয়াদের উদ্দেশ্যে বললেন,

“দেখো বাবাজী!এতো দেরী করে আসলে এখন সব ফ্রীজের খাবার খেতে হবে।”

“নো প্রবলেম আন্টি।আমি ম্যানেজ করে নিবো।কিন্তু আপনার খাওয়া মিস করবো না।”

“ঠিক আছে বসো।”

তারেকের মা উঠে গেলে তার সাথে তারেকও উঠে গেলেন।এখন ড্রয়িংরুমে শুধু সাইরাহ্ আর ইয়াদ।সাইরাহ্ নিচের দিকে মাথা দিয়ে বসে রয়েছেন।

“আমার জন্য সেজেছিলেন চাঁদ?”

“চাঁদ কে?”

“আপনি সাইরাহ্।কেন আপনি কি চাঁদের মতো না?”

ইয়াদের এহেন কথায় বেশ লজ্জা পেলেন সাইরাহ্।মুখ টিপে হাসলেন।

“আমাকে কেন নিষ্ঠুর মনে হলো আপনাকে?”

“আপনি আসবে বলে আসলেন না কেন?”

“ব্যস্ত ছিলাম তো চাঁদ।”

সাইরাহ্ জবাব দেওয়ার আগে কলিংবেল বেজে উঠলো।সে গিয়ে খুলে দিলো।একটা যুবক দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।

“ভাইয়া কিছু বলবেন?”

নয়ন জবাব না দিয়ে সাইরাহ্ কে টপকে ভেতরে ইয়াদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন।একটু ভ্রু কুঁচকে ফেললেন সে।

“ওটা কে সাইরাহ্?”

কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না সাইরাহ্।তার আগে সেখানে তারেক উপস্থিত হলেন।

“এতো রাতে এখানে কেন নয়ন তুই?”

“একটা ছেলেকে ঢুকতে দেখলাম গেট দিয়ে তাই দেখতে আসলাম কে।”

“ওহ।সাইরাহ্ এর হবু।”

তারেকের এ কথায় নয়নের মুখ বেশ কালো হয়ে গেলো তা সোফায় বসেই বুঝতে পারলেন ইয়াদ।তারেকের জোড়াজুড়িতে নয়নে ভেতরে এসে বসলো।এদিকে ইয়াদের ডাইনিং রুমে ডাক পড়লো।খাবার টেবিলেও ইয়াদ বেশ অন্যমনস্ক ছিলেন।বারবার ড্রয়িং রুমে দেখছিলেন যেখানে সাইরাহ্ আর নয়ন খোশগল্পে মেতে রয়েছেন।

“ও আমার বন্ধু।পাশের ফ্ল্যাটে থাকেন।”

“সমস্যা নেই তারেক।”

ইয়াদ আর কিছু বললেন না।কিন্তু তার হাবভাবে একটু পরিবর্তন আসলো।যা একমাত্র সাইরাহ্ এর মা খেয়াল করতে পারলেন।
,
,

“মা ইয়াদ স্যারকে তোমার কেমন লাগলো?”

একটু গম্ভীর হয়ে জবাব দিলেন সাইরাহ্ এর মা।

“মুখে প্রচুর মধু।এই মধু দিয়ে যে কাউকে বাঁচাতেও পারে আবার খুনও করতে পারে।”

“এরকম কেন বললে?”

“মনে হলো তারেক।”

“তাহলে তুমি এ বিয়েতে রাজী নও?”

“বুঝতে পারছিনা কি বলবো।”

তারেক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

“মা জানো নয়ন সাইরাহ্কে পছন্দ করে?”

তারেকের মা চমকে উঠলেন।

“কই না তো।”

“পছন্দ করে অনেকদিন ধরে।অথচ ছেলেটা নেশাখোর।আমি আমার বোনকে একটা ভালো ভবিষ্যত দিতে চাই।আর তা জানি ইয়াদ স্যারের সাথেই।”

এতো টুকু কথা শুনে সাইরাহ্ আর শুনলো না।তার মন চাচ্ছেনা এখন এগুলো শুনতে।সবসময় তার মা আর ভাই তাকে নিয়ে চিন্তা করে। যা খুবই দুঃখজনক তার জন্য।

রুমে এসে তার আরেক দফা মন খারাপ হয়ে গেলো।ইয়াদ যাওয়ার সময় বেশ কড়া আচরণ করেছেন তার সাথে।কেন করলেন তাও বুঝলো না।কৌতূহলবশত সাইরাহ্ ফোন হাতে নিয়ে দেখেন ইয়াদের ম্যাসেজ।এবং ম্যাসেজ দেখে বেশ অবাকই হলেন।

“তোকে মেরে ফেলবো জাস্ট মেরে ফেলবো।ওই ছেলের সাথে এতো কি?”

আর কিছু নেই।এবং সাইরাহ্ এটা খেয়াল করলো ম্যাসেজ দিয়ে তাকে ম্যাসেজ ব্লক করেছে ইয়াদ।লোকটা কি পাগল?তা নয় এরকম অদ্ভুত আচরণ তো সহজে কেউ করেনা।
,
,

ইনায়া আজকে ইয়াদের অন্যরুপ দেখতে পাচ্ছে।হুট করে রাত এক টায় এসেছে।এবং এসেই তার সাথে শরীরের খেলায় মেতে উঠেছেন।কিন্তু অন্যদিনের মতো না।বেশ এগ্রেসিভ সে আজকে বিছানায়।মনে হচ্ছে তার মন কিছু একটা নিয়ে প্রচন্ড বিক্ষিপ্ত।

“আপনার কি হয়েছে ইউসুফ?”

“কিছুনা।”

বেশ কাঠখোট্টা জবাব ইয়াদের।কিছুসময় পর ইনায়াকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে।লাত্থি দিয়ে পাশের ল্যাম্পশেড ফেলে দিলেন।

“ইয়াদ কি হয়েছে আপনার?এমন করছেন কেন?”

“প্রজাপতি আপনার চাঁদকে যদি কেউ টাচ করে তো কেমন লাগবে আপনার?সহ্য হবে?আমার চাঁদে হাত বাড়িয়েছে কেউ।”

“মানে?”

ইয়াদ আর কোন কথা বলল না।টি শার্ট পড়ে তখুনি বের হয়ে গেলেন ইনায়ার বাসা থেকে।
,
,

সকালে ঘুম থেকে উঠে সাইরাহ্ আরেক দফা চমকে উঠলেন।ইয়াদ তার পাশে বসে রয়েছেন।চোখগুলো জবা ফুলের মতো লাল।

“আপনি?এখন কেন?”

ইয়াদ কিছু বলার আগে পাশ থেকে তারেক জবাব দিলেন।

“তোর ঘুম শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।সেই রাত দুটোয় এসেছে।তোর সাথে বলে কি খারাপ ব্যবহার করেছে।তার জন্য।”

সাইরাহ্ অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেন।এ লোক কি সত্যিই পাগল?

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here