#ভ্রমণ
#পর্বঃ২
লিখাঃসামিয়া খান
“নারীর প্রেমে বেইশ্যা,পুরুষের প্রেমে রইস্যা।”
এই বাক্যটার মর্ম মরমে মরমে টের পাচ্ছেন এখন সাইরাহ্।তার পাশের প্রতিবেশীর বাড়িতে এখন তুমুল ঝগড়া শুরু হয়েছে।প্রতিবেশীতে যে কর্তা রয়েছে সে সম্প্রীতি পরকীয়া করতে গিয়ে ধরা পড়েছে।ঝামেলা সে জন্য নয় ঝামেলার কারণ হচ্ছে স্ত্রী তার প্রতিবাদ করায়।তার কথা পুরুষ মানুষের ওরকম একটু সখ না থাকলে সে কীসের পুরুষ মানুষ?ঝগড়াগুলো বেশ কিছু সময় বারান্দা থেকে দেখে সাইরাহ্ রুমের ভেতর এসে পড়লেন।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে সাইরাহ্।বাবা গত হয়েছেন দশ বছর আগে।মূলত সাইরাহ্ এর পিতা তাকে বাঁচাতে গিয়েই মৃত্যুবরণ করেন।সে থেকে সাইরাহ্ মানসিকভাবে প্রচন্ড ভীতু।বাবার মৃত্যুর শকটা নিতে পারেনি।বাসায় বর্তমানে সাইরাহ্ তার বড় ভাই তারেক এবং তার মা রুনা রয়েছেন।তারেক একটা মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করেন এবং সাইরাহ্ ন্যাশনালে পড়ছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে।
বারান্দা থেকে এসে বিছানায় গিয়ে বসলেন সাইরাহ্।ফোন হাতে নিয়ে একটু ফেসবুকে ঢুকলেন।নতুন একটা নোটিফিকেশন এসেছে একটা।
“Eiad Yusuf sent you friend request ”
একটু চমকে উঠলো সাইরাহ্।হঠাৎ তার ভাইয়ের বস কেন তাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন এ বিষয়ে বোধগম্য হলেন না সে।একবার ভাবলেন ক্যান্সেল করে দিবে।আবার কি মনে করে যেন রিকোয়েস্ট এক্সসেপ্ট করে নিলেন।
,
,
ফোনের ওয়ালপেপারে একটা নোটিফিকেশন দেখে মুচকি হাসলেন ইয়াদ। সাইরাহ্ তাকে ফেসবুকে এড করেছেন।বেশ কিছুসময় মনোযোগ দিয়ে তার বিগত পোস্ট এবং ডে গুলো দেখলেন।এতে ইয়াদ একটা বিষয়ে একদম নিশ্চিত হলেন যে তার কারো সাথে কোন সম্পর্ক নেই।
“নতুন চিড়িয়া নাকী এটা?”
“উহু!এটা অন্যরকম।”
ভ্রুঁ কুঁচকালেন মারুফ।
“অন্যরকম মানে?”
“এখনো বুঝতে পারবিনা বন্ধু।এটা অন্যরকম।”
“আমার বুঝারও তেমন দরকার নেই।তা ভাই তোর আর কয়টা লাগে?”
হাতে থাকা সোফার কুশন ছুঁড়ে মারলো মারুফের দিকে ইয়াদ।
“আমার একটাতেই হয়।আমি একটাতে তুষ্ট।”
“ওরে ঘুঘু।অলরেডি তুমি এক বাচ্চার বাপ হতে চলেছো।আবার ইয়ানা এখন আবার সাইরাহ্।আর কতো?”
“আচ্ছা বল তো সম্রাট শাহজাহান এর স্ত্রী সংখ্যা অনেক থাকলেও তাজমহল কিন্তু সে তার অতি প্রিয় স্ত্রী মমতাজের জন্যই গড়েছিলেন।”
“এখানে কিন্তু রয়েছে।সে তার প্রতিপত্তের জন্যই তাজমহল তৈরী করে ছিলেন।”
“আমি তাজমহল নয় ভালোবাসা মহল গড়বো যেখানে আমার প্রেয়সীর সংখ্যা অগণিত থাকবে কিন্তু স্ত্রী একজনই।”
“জেরিন তাই নাহ?”
“নাহ তো।জেরিন আমার স্ত্রী নয়।”
মারুফ অতি আশ্চর্য হয়ে গেলেন ইয়াদের কথায়।থতমত খেয়ে ইয়াদকে প্রশ্ন করলেন–
“জেরিনকে তুই বিয়ে করিসনি?”
“মটেও না।”
“তাহলে ওগুলো কি?”
“জেরিন হচ্ছে উচ্চ মধ্যবিত্ত ঘরের একমাত্র কন্যা।কিছুর অভাব ছিলনা।তবুও ভালোবাসার জন্য তার বাবা মা কে ছেড়ে দিলো।ওর বাবা, মা নিসন্তান ছিলেন।খুব কষ্টে জেরিন জন্ম নেয়।তাদের ছাড়তে যে মেয়ের বুক কাঁপেনি তার আমাকেও ছাড়তে লাগবেনা।”
“কিন্তু তোদের বিয়ে তো আমি নিজে দিয়েছি।”
“তুই তো গাঁধা তাই দেখিসনি যে পেপারস গুলো আসল ছিল নাকী নকল।একটা কথা বল আমরা কবুল বলে বিয়ে করেছি?”
“না তো।”
“তাহলে বিয়ে জায়েজ কীভাবে?আর লিগ্যালি কিছু হয়নি।তো সিম্পল জেরিনের সাথে আমার সত্যি করে কোন দায় দায়িত্ব নেই।”
ইয়াদের কথাগুলো শুনে মারুফ কি রিয়াকশন দিবে বুঝতে পারছেনা। তার অতীব কাছের বন্ধু হচ্ছেন ইয়াদ।এজন্য ইয়াদের সব অপকর্মের একমাত্র সঙ্গী বা সাথী অথবা সাক্ষী যাই বলুক তা হচ্ছেন মারুফ।
“কি ভাবছিস মারুফ?”
“তাহলে বাচ্চা?”
“ওটার ব্যাপারে পরে ভাববো।”
“ইনায়া!ওর সাথে কেন?”
“যে মেয়ে বিয়ের বয়ফ্রেন্ড দিয়ে দুবার প্রেগনেন্ট হয়ে আবার দুবার এবোর্শন করাতে পারে তার সাথে শরীরের ব্যাপার ছাড়া আর কিছু চলেনা।”
“ভাই তোকে একটা কথা বলি?”
“হুম বল।”
“মেয়েগুলো কিন্তু খারাপ নয়।তুই যেভাবে চালাস সেভাবে চলে?”
গ্লাসে একটু স্কচ ঢেলে মারুফের সামনে বসলো ইয়াদ।
“আমি ওদের কিন্তু বলিনি আমার কথায় চলতে।ওরা নিজেরা আমার কাছে এসেছে।”
মারুফের মনে হলো ইয়াদের সাথে কথা বলা বোকামো।অন্তত এ বিষয়ে আরো।
“তাহলে সাইরাহ্ এর বিষয়টা?”
“ওটা পরের ব্যাপার।সময় আসলে দেখবি।দেখ ভ্রমররা নিজে আমাকে মধু বিলায়।সেখানে মধু আহরণকারী এই ইয়াদ ইউসুফের কি দোষ?”
,
,
“সাহেবান সাইরাহ্,এখন কোথায় ভ্রমণে আছেন?”
হুট করে ইয়াদের আইডি থেকে এরকম ম্যাসেজ প্রত্যাশিত ছিলো না সাইরাহ্ এর।ভাইয়ের বস রিপ্লাই না করেও পারলেন না।
“দুঃখিত আমি বুঝিনি স্যার।”
“সাহেবান আমিও কি আপনার স্যার?আমি যতোদূর জানি আমার অধীনে আপনার ভাই কাজ করে আপনি নয়।”
ইয়াদের কথা বলার ভঙিমাতে হেসে ফেললেন সাইরাহ্।লোকটা ভারী অদ্ভুত ভাবে কথা বলেন তো।
“আপনি এভাবে কেন কথা বলেন।”
“কথা কোথায় বলছি?আমি তো লিখছি।”
“সেটাও ঠিক।”
“তো বলেন কোথায় ভ্রমণে গেলেন?”
“ভ্রমণ!”
“আপনার নামের অর্থ বলেন তো কি?”
“জানিনা তো।”
“সাইরাহ্ মানে যে ভ্রমণ করে।”
“কিন্তু আমি তো কখনো ভ্রমণ করিনি।”
“কেন?”
“এমনি?”
“আচ্ছা সমস্যা নেই।আপনার জীবনে সবথেকে বড় ভ্রমণ আমার সাথেই হবে।”
“বুঝলাম না।”
“সময় আসুক।সময় সব বুঝাবে।
চলবে,,,
#ছবিয়াল_আয়াত আহমেদ
লিংক কমেন্টে–