বান্ধবীর ভাই যখন বর ? Part – 13

0
1911

? বান্ধবীর ভাই যখন বর ?
Part – 13
_____________________________
13.
সকাল বেলা সূর্যের কোমল রশ্মি চোখে পড়তেই পরির ঘুম হালকা হয়ে গেল।
ঘুমু ঘুমু চোখে দেয়াল ঘড়িটির দিকে তাকিয়ে দেখল 7 টা বেজে গেছে।
পরির তো মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম।
এখন সে প্রাইভেট এ যাবে কি করে?
পরি বেড থেকে লাফ দিয়ে উঠে হন্তদন্ত হয়ে রান্না ঘরে গেল।
মাকে রান্না করতে দেখে পরির মাথা টা রাগে কটমট করে উঠলো।
পরি রাগি স্বরে বলল
– আম্মু তুমি আমাকে ডাক দাও নি কেন ?
কয়টা বেজে গেছে ,,,, এখন আমি প্রাইভেট এ যাবো কি করে ?
পরির কথাতে মিসেস রাহেলা ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেলেন।
কি বলছে কি মেয়ে ?
পরির দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে থেকে আবার রান্না তে মনোযোগ দিলেন।
মায়ের কাছে গুরুত্ব না পেয়ে পরির ইচ্ছে করছে নিজের চুল নিজেই ছিড়তে।
পরি রান্না ঘর থেকে গট গট করে বের হয়ে ডয়িং রুমে চলে আসলো।
ডয়িং রুমে বসে তার বাবা টিভিতে সংবাদ দেখছিলেন।
পরি হা হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল
– আব্বু তুমি তোমার অফিস এ যাও নি ?

আফজাল হোসেন বললেন
– আজ কী করতে যাবো অফিসে ?

পরি চোখ ছোট ছোট করে বলল
– অফিসে তুমি যা করতে যাও তাই করতে যাবে।
এতে না যাওয়ার সাথে কি সম্পর্ক?

আফজাল হোসেন মেয়ে কে বললেন
– টিভির দিকে তাকা,,,,,

পরি কিছু না ভেবেই টিভির দিকে তাকালো।
টিভিতে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেলো,,,,, পরি বোকা হাসি দিয়ে বলল
– আসলে বার মনে ছিল না।

পরি তাড়াতাড়ি ডয়িং রুম থেকে বের হয়ে গেল।
আর আফজাল হোসেন মেয়ের কান্ডে হাসতে লাগলেন।
আজকাল তার মেয়েটা শুক্র বার টা ও ভুলে যাচ্ছে ।
হাহাহ

_______________________

পরি ছাঁদে দাড়িয়ে খোলা আকাশ কে উপভোগ করছিলো।
তখনি আমান এসে বলল
– আপু তোমাকে নানা ভাই আর, নানু ডাকছে।

পরি ভাবলেশহীন ভাবে বলল
– কেন ?
কি হয়েছে?

আমান বাকা চোখে তাকিয়ে বলল
– আমি কি করে জানাবো?

পরি কিছুক্ষণ আমানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
– যাহহহ আসছি।

আমান গেল না ,,,, উল্টো পরির সাথে ই দাড়িয়ে থাকলো।
পরি ব্রু কুঁচকে বলল
– কি হয়েছে,,, এমন করছিস কেন ?

আমান মেকি হাসি দিয়ে বলল
– আপু একটা কথা বলব ?

পরি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলল
– তুই কোন দিন থেকে আমার কাছে কথা বলার জন্য অনুমতি চেয়েছিস ?
আমার তো মনে পরছে না।
শরীর ঠিক আছে তো ,,,,, জ্বর হলো না তো আবার ?

আমান হেসে বলল
– আসলে আপু একশ টাকা দেও না।
আমি আইসক্রিম খাবো,,,,

পরি মুখ কুঁচকে বলল
– এহহহ আসছে ।
আব্বুর থেকে নে ,,,,,,

আমান মুখ গোমড়া করে বলল
– আব্বুর কাছ থেকে একশ টাকা নিয়েছি।

পরি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলল
– আর একশ টাকা দিয়ে কি হবে ?
আমার তো জানা নেই ক্লাস 3 তে পরুয়া ছেলের একদিনে দুইশ টাকা লাগে তা ও আইসক্রিম খাওয়ার জন্য ।

আমান এক নিশ্বাসে বলল
– আসলে আমি আম্মুর প্রিয় ফ্লাওয়ার ওয়াচ টা ভেঙে ফেলেছি।
আমার কাছে পাঁচশ টাকা আছে ,,,, আর ও টাকা লাগবে।
আম্মু জানলে একটা মার ও মাটিতে পড়বে না।

পরি কিছুক্ষণ আমানের দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকলো।
তারপর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো।
পরি কে হাসতে দেখে আমান গোমড়া মুখ করে বলল
– হাসছো কেন ?
এখন দিবা কিনা বলো।

পরি কোনো মতে হাসি থামিয়ে বলল
– আমি পুরো ফ্লাওয়ার ওয়াচ টাই এনে দিবো।

আমান খুশি হয়ে বলল
– সত্যি ?

পরি বাকা হেসে বলল
– হুমমম সত্যি ,,কিন্তু

আমানের খুশি উবে গেল।
আমান বলল
– কিন্তু কি ?
পরি কোমরে হাত গুঁজে বলল
– কিন্তু রাতে তোকে মেয়ে সেজে ডান্স করতে হবে।
রাজি ?

আমানের চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
আমান বলল
– নাহহ নাহহ আমি পারবো না।
পরি আফসোসের সুরে বলল
– আচ্ছা তাহলে কোনো হেল্প করতে পারবো না।

আমান পরির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল
– আমি রাজি।
কথায় আছে না হাতি খাদে পড়লে পিঁপড়ে ও লাথি মারে।
আমার অবস্থা হয়েছে তেমন ।

পরি হাসতে হাসতে বলল
– নিজেকে হাতি বলছিস ?
আমান মুখ বাঁকিয়ে বলল
– মোটে ও না।

পরি হাসতে হাসতে বলল
– আচ্ছা নিচে চল।
তারপর দুজনে নিচে চলে গেল।

_______________________

বিকেলে পরি চকের মাঝ খান দিয়ে যাওয়া মাটির রাস্তাতে হাটতে বের হলো।
পরিবেশটা বেশ সুন্দর,,,, চারিপাশে ধানের গন্ধে ম ম করছে।
পরি এই সকল অনুভূতির সাথে পরিচিত হলে ও একেক টা দিন কে একেক রকম ভাবে অনুভব করে ।
পরি হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে আসলো ,,,,,, সন্ধ্যা প্রায় ছুঁই ছুঁই।
পশ্চিম আকাশে সূর্যের লাল আভার কারনে রঙিন রূপ ধারণ করেছে।
বেশ লাগছে দেখতে ,,,, পরির ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে।
কিন্তু সব ইচ্ছে পূরন হয় না।
মসজিদ থেকে সন্ধ্যার আজান পড়তেই পরি মাথায় ওড়না টেনে নিলো।
গ্রামের মেয়েরা আর যাই হোক না কেন আজান পড়লে মাথায় ঘোমটা দিতে ভুলে না।
পরি আজান শেষ হওয়ার পূর্বেই বাসায় ফিরে আসলো।
বাসায় এসে অজু করে নামাজ পড়ে নিলো।
পরি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ না পড়লে ও মাগরিবের নামাজ মিস করে না।
সন্ধ্যা পেরিয়ে প্রকৃতিতে খানিকটা অন্ধকার ছেয়ে গেছে।
পরি বারান্দায় গিয়ে কিছুক্ষণ আকাশের দিকে চেয়ে রইলো ।
কিছুক্ষণের মাঝেই পুরো আকাশ গভীর অন্ধকারে তলিয়ে গেল।
পরি ভেবে পায় না ,,,, কিভাবে রাত হয়ে গেল।
প্রকৃতি বড় রহস্য ময় ,,,,, তাকে বোঝা দায়।
পরি রুমে গিয়ে বেডে আধসোয়া হয়ে ফোন ওপেন করলো।
ফেসবুকে যেতেই দেখলো নীল প্রোফাইল চেন্সজ করেছে,,,, একটা লাভ রিয়েক্ট দিয়ে কমেন্ট ও করলো।
তারপর একটা ম্যাসেজ দিলো,,,,, নীল অনলাইনে নেই দেখে পরি কিছুক্ষণ ফোন স্ক্রল করে পড়তে বসলো।
__________________

পরি আজ সকালেই জানতে পারলো তার আম্মুর চাচাতো ভাইয়ের ছেলের বিয়ে।
পরি খুব খুশি ,,,,, যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে আবার হাফসার ফুফাতো বোন।
পরি আর হাফসা একসাথে স্কুল থেকে চার দিনের ছুটি নিলো।
এক আলাদা আনন্দ কাজ করছে ,,,,, চারদিনের ফাংশনের জন্য পরি শপিং এ ব্যস্ত।
গ্রামের দিক হওয়ায় সকাল
সকাল ই শপিং এ চলে গেল।
বিকালের দিকে এক গাদা শপিং ব্যাগ হাতে ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরলো।
বাসায় ফিরে একটু রেস্ট নিচ্ছিল ,,,,,, তখন ই ফোনে টুং করে ম্যাসেজ আসলো ।
পরি ব্রু কুঁচকে ম্যাসেজ চেইক করলো ,,,,,
নীল রিপলে দিয়েছে ,,,,,,
পরি ম্যাসেজ লিখলো
– তোমার ফুফাতো বোনের বিয়ে নাকি আমাদের এলাকাতেই ?
তা ভালোই তো ,,,,,, এখান থেকে জি এফ খুজে নিও।
নীল- হুমমম।
খুঁজে দেও একটা ,,,,,,,,,, আজকাল জি এফ ছাড়া কি চলে ?

– হুম তাই তো আর তোমার তো চার পাঁচ টা ছাড়া চলেই না ।

নীল – হাহাহা চার পাঁচ টা না ,,,,,, দশ বারো লাগবে এখন।

পরি ভাবছে আসলেই এই ছেলেটা টা নাম্বার ওয়ান ছেছরা।
দশ বারোটা জি এফ লাগে যত্তসব ফাজিলের ফাজিলের হাড্ডি ।
আজিব পোলাপাইন

তারপর আর কিছুক্ষণ কথা বলে পরি অনলাইন হয়ে গেল।
কালকে গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠান,,,,, ভাবতেই বেশ লাগছে পরির।
বিশাল বড় ফাংশন করা হচ্ছে।

( আসসালামুআলাই রির্ডাস। গল্প কেমন হচ্ছে জানাবেন প্লিজ।
ছোট করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।
গল্প শেষ হয়ে গেছে বলে কমেন্ট করে যাবে না এমন নয়।
গল্পের প্রতি টা পার্ট এ আপনাদের কমেন্ট আর বেশি উৎসাহ দেয়।
তাই বেশি গঠনমূলক কমেন্ট করুন।
আমার লেখা গল্প পেতে পেজ এ লাইক ফলো আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন )

বি: দ্র: ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

? হ্যাপি রিডিং ?

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here