মেঘের_বন্ধু_বৃষ্টি ৭

0
605

#মেঘের_বন্ধু_বৃষ্টি (৭)

ব্যাগ থেকে হাজার টাকার কতো গুলো বান্ডিল বের করলেন সুষমা। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছেন তিনি। এসি টা ঠিক ঠাক কাজ করছে না। পুরনো হয়ে গেছে কি না। টাকা গুলো খুব দ্রুততার সাথে গুনে নিয়ে বিভক্ত করলেন তিনি। এতো গুলো টাকা দেখে থমকে গেল আওয়ান। কম করে হলে ও বিশ লাখ টাকা আছে এখানে। এতো গুলো টাকা সুষমার কাছে এলো কি করে সেই বিষয়ে চিন্তিত হতে দেখা গেল। ব্যাংক একাউন্ট খালি পরে আছে নিঃসন্দহে। এতো টাকা সঞ্চয় করা সুষমার পক্ষে সম্ভব নয়। দশ বছর পূর্বেই আদালত ছেড়েছেন তিনি। এখন প্রাভেট অফিসে মোটা অঙ্কের বেতনে চাকরি করেন। ছেলে মেয়ের পড়াশোনা তে অবলীল ভাবে টাকা খরচ করেন তিনি। সমাজে চলার মতো সব রকমের ব্যবস্থা করা আছে ওনার। মাস শেষে সঞ্চয় করা হয় না। এমন টাই জানতো আওয়ান। তবে এখন কি ওর ধারণার বদল ঘটবে?
” পাশে বসো আওয়ান। ”

” আম্মি এতো টাকা– ”

” প্রশ্ন করবে না। বসতে বলেছি বসো। ”

টাকা গুলো এক সাইট করে তিনি বললেন
” আরুশি নিজের ঘরে আছে? ”

” জী আম্মি। ”

” মূল কথায় আসা যাক। এখানে তেইশ লাখ টাকা আছে। আরুশির চার বছরের পড়াশোনার খরচ। ”

” এতো টাকা! ”

” আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রাইভেট ভারসিটি তে এডমিশন করিয়ে দিবো।
পাবলিক যেহেতু হয় নি তাই এতো ভেবে কাজ নেই। ”

” কিন্তু আম্মি– ”

” কোনো কিন্তু নয় আওয়ান। তোমার বোন কে হারাতে চাই না আমি। তাছাড়া টাকা নিয়ে আমি পিছু হটতে চাই না। খোঁজ নিয়ে দেখো তোমার বোনের ড্রিম ভারসিটি এটা। ”

সুষমা টাকা বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। ভরসা করেন ছেলে কে। তবে নিজেকে ভরসা করেন না একটু ও। হাতে টাকা থাকলেই খরচ করা হয়ে যাবে।

দুটো হৃদয় যখন কাছাকাছি হয় তখন একে অপরের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে। সারাক্ষণ কাছে পেতে চায়। আর যখন সেটা হয় না তখনি হয় অভিমান। মধুপ্রিয়ার অন্তঃকরনে এখন যেটা চলছে সেটা অভিমান। প্রত্যাশা অনুযায়ী পাচ্ছে না সে। সহসা নিজ থেকে ফোন ও করে না আওয়ান। মনে হয় ভালোবাসা কমে গেছে। কল করেই অভিযোগের খাদ নামাতে শুরু করলো মধু। এপাশ থেকে তেমন কোনো শব্দ এলো না। এবার হুংকার তুলে কেঁদে উঠলো মেয়েটি। সান্ত্বনা দেওয়ার মতো অনুভূতি নেই এখন। তবু ও বলল
” নিজেকে সামলাও মধু। সারাক্ষণ একে অপরের কাছাকাছি থাকবো না আমরা। এটাই তো স্বাভাবিক তাই না? ”

” আমার যে ভালো লাগছে না আওয়ান। আমি কেমন ছন্নছাড়া অনুভব করি। সব কিছু তে অনীহা। তোমাকে না দেখতে পেলেই বুকের ভেতর কষ্ট হয়। ”

” বিগত কিছু দিন ধরে আমি খুব চাপের মাঝে আছি মধু। কাল দেখা করবো নিশ্চিত। ”

” সত্যি বলছো তো তুমি? ”

” হ্যাঁ রে বাবা। এখন আর কেঁদো না প্লিজ। না হলে আমার খারাপ লাগবে। ”

কান্না থামালো না মধুপ্রিয়া। বরং আবারো কান্না শুরু করলো। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ঘন শ্বাস ফেললো আওয়ান। সত্যি বলতে এই মুহূর্তে প্রেমের বানী শোনাতে ইচ্ছে করছে না তার। পারিবারিক ভেজাল টা সব কিছুর ঊর্ধে চলে এসেছে। তবে প্রেমিকার রাগ অভিমান ভাঙানো প্রেমিকের দায়িত্ব। সেই নিয়মানুসারে মধুপ্রিয়ার সাথে মুধলাপ শুরু হলো।

*

পূর্বের ন্যায় বন্ধুবাৎসল হাসি থাকে না আওয়ানের ঠোঁটে। এখন শুধুই হতাশা ভরা কিছু অমায়িক চাহনি ফুটে উঠে। প্রথমে নিজেকে সংযত রাখলে ও এখন স্থির থাকতে পারছে না তিয়াশা। বার বার মন আকুপাকু করছে কথা বলার জন্য। হাজার হোক বন্ধু মানুষ!
” কিছু সময় হবে আওয়ান? ”

চট করেই মেয়েটার মুখচ্ছায় তাকালো আওয়ান। তিয়াশার সাথে কথা হয় না পনেরো দিনের ও অধিক। মন যে কথা বলতে চায় নি এমন নয়। তবে ভেতর থেকে স্বচ্ছলতা পাচ্ছিলো না।

ক্যাম্পাস চত্বরের কফি শপ থেকে দু কাপ কফি দিয়ে গেল ওদের। কিছুক্ষণ পূর্বেই অর্ডার করেছিলো তিয়াশা। দুজনের মাঝে কোনো কথা হলো না। বেশ কিছু টা সময় পাশাপাশি বসেই কাঁটিয়ে দিলো। কফি শেষ করে প্রশ্ন করলো তিয়া–
” কোনো কিছু নিয়ে আপসেট তুই? ”

” তেমন কিছু না রে। আরুশির বিষয় নিয়েই যা মন খারাপ। ”

” বাচ্চা মেয়ে ভুল করে বসেছে। আসলে ডিপ্রেশন তো বলে কয়ে আসে না। আমার মনে হয় তুই নিজেও ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছিস। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা কর। ”

” আমি স্বাভাবিক ই আছি। ”

” তোর কথাতেই প্রকাশ পাচ্ছে কতো টা স্বাভাবিক তুই। দেখ আওয়ান আমি বলবো না আমি নিজে খুব সাধু। তবে এটা জানি মন খারাপ করে বসে থাকলে লাভ হয় না। সর্বশেষ খারাপ ই হয়। ”

” আমি ভেঙে গেছি তিয়া। আমার মস্তিষ্ক সচল নেই আগের মতো। চারপাশে এতো এতো ঝামেলা যে আমি নিতে পারছি না। মানুষ কি করে বাঁচে এতো দুঃখ নিয়ে। ”

এবার তিয়া নিশ্চুপ। খারাপ ই লাগছে তার। চোখের সামনে প্রিয় বন্ধু কে শেষ হতে দেখা কারোই কাম্য নয়। সমাধান না দিতে পারলে সান্ত্বনা দিতে নেই। তাই তিয়া স্থির করলো আওয়ান কে খুশি রাখার চেষ্টা করবে। আগের মতো আবার আড্ডা দিবে সবাই।

ক্লান্তি তে চোখ বুঁজে আসছে তিয়ার। সারা দিন লাফালাফি করে এসেছে। তবে সুখ লাগছে এটা ভেবে যে আওয়ানের মন কে স্বস্তি দিতে পেরেছে। তামজীদের আসার খবর পেয়ে নিজের রুমে গেল না আর। সোজা বাবার রুমে এসে বসলো।গা থেকে বাহিরের পোষাক অব্দি খুলে নি তামজীদ।মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য এসেছেন। কাজ শেষেই চলে যাবেন অফিসে। সেখান থেকে মিটিং শেষ করে রাতে বাসায় ফিরবেন। বাবার ব্যস্ততা দেখে চলে যেতে নিচ্ছিলো। তবে তামজীদ ই ডাক দিলেন। চুপটি করে বসে রইলো তিয়া। কাজ করতে করতেই তামজীদ বললেন
” বিজনেস নিয়ে কি মতামত তোমার? ”

” তোমার কথা বুঝি নি আব্বু। ”

” দেখো মামুনি আমার অবর্তমানে সব কিছুর এক মাত্র মালিক তো তুমিই হবে। সব কিছু না বুঝে নিলে পরবর্তী তে সমস্যা তে পড়তে হবে। ”

” আমি বিজনেসের প্রতি আকর্ষণ পাই না আব্বু। তাই প্লিজ আমাকে এসবে টেনো না। ”

” তিয়াশা। রাগ করছো কেন। তুমি কেন বুঝতে চাচ্ছো না সব কিছু সামাল দিতে পারে যে সেই জয়ী। চাকরির পাশাপাশি ও বিজনেস করা যায়। ”

” সেটা কি বোকামি নয় আব্বু? ”

” বোকামি কোনটা আমি জানি না। তবে জীবনে যদি সাধারন হয়ে বাঁচতে চাও। তাহলে চাকরি করো, আর যদি অসাধারন হতে চাও তবে বিজনেস করো। এখন তুমি বলতে পারো এতে কি লোভ প্রকাশ পেলো না। আমি বলবো না, জীবনে বড় হতে চাওয়ার ইচ্ছা কখনোই লোভ নয়। তবে বড় হওয়ার জন্য অসৎ উপায় অবলম্বন করা টা হলো লোভ। যা বোকামির পরিচয়।”

বাবার কথায় বিমুগ্ধ হলো তিয়া। ভেতরে ভেতরে প্রচন্ড শ্রদ্ধা পাচ্ছে তাঁর। কখনো বাবার সাথে অধিক সময় কাটানো হয় নি। সব সময় ই কাজ নিয়ে ব্যস্ত তামজীদ। তবে এই ব্যস্ততার মাঝে ও লুকিয়ে থাকা প্রজ্ঞা ব্যক্তিটির কথা কখনোই স্মরনে আসে নি।

জীবন টা কখনো একপাক্ষিক ভাবে চলে না। সব কিছুর অপোজিট সাইট রয়েছে। আর সেই সাইট ছাড়া সে অপূর্ণ। এই যে রওনাকের কাছে প্রতারিত হয়ে বেশ অনেক গুলো দিন ভারসিটি তে যাওয়া হয় নি তিয়ার। সেই কারনে নোট নিয়ে কতোই না জ্বালিয়েছে আওয়ান কে। জীবন আজ নতুন কিছুর সৃজন করলো। বিপরীত ভাবেই তিয়াশার পানে ছুটে এসেছে আওয়ান। সামনেই টেস্ট এক্সাম। আর বিগত দিনের নোট নেই তাঁর কাছে। নাস্তা দিয়ে গেলেন তাহমিদা। সকালে না খেয়েই চলে আসাতে খাবার দেখে লোভ সামলাতে পারলো না। গপগপ করে মুখে পুরতে লাগলো শুধু। ওয়াসরুম থেকে ফিরে এসে আওয়ানের খাওয়ার গতি দেখে ভরকে গেল। নিজের প্লেট শেষ করে তিয়াশার প্লেটে হাত বাড়িয়েছে। ওর হাত চেপে ধরলো তিয়া। রাগি দৃষ্টি তে অবলেকন করে বলল
” আমার খাবারে হাত দিবি না। ”

” ক্ষিদে পেয়েছে খুব। উফ ছাড় না। ”

” তাহলে আমি খাবো কি? ”

” উপবাস থাকবি আজ। এখন প্লেট ছাড়।”

ঝটকা মেরে প্লেট নিয়ে গেল আওয়ান। স্যান্ডুইচ এ কামড় বসিয়ে বলল
” দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কত বল তো। ”

” মনে নেই। ”

” এই তোর পড়াশোনা। দেখবি সেই আমাকেই খোঁচাতে হবে পরীক্ষার হলে। ”

” ক্যান দেখাবি না নাকি? ”

” আসছে ওনি। এতো কষ্ট করে আমি পড়বো আর ওনাকে দেখাবো। ”

সরাসরি প্রত্যাখান করায় আগুনের ফুলকির মতো তেঁতে উঠলো তিয়া। আধ খাওয়া স্যান্ডুইচ টা কেড়ে নিয়ে খেতে লাগলো। যাঁর অর্থ তুই আমাকে এক্সাম হলে সাহায্যে না করলে আমি আমার খাবারের ভাগ তোকে দিবো ক্যান!

গ্রুপ : Fatema’s story discussion

#ফাতেমা_তুজ
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here