#স্বপ্নছায়া
#বোনাস_পর্ব
শ্রাবণের প্রথম সপ্তাহ। ঝলমলে আকাশের এক কোনায় মন খারাপের মেলা বসেছে। কালচে মেঘজোড়া যেনো গলা জড়িয়ে দুঃখবিলাসে মেতে উঠেছে। এখন ই বুঝি সব দুঃখ উজার করে ক্রন্দন করে উঠবে। আর সেই সাথে নেমে আসবে বৃষ্টির ঘনঘটা। শূন্য দৃষ্টিতে মেঘমালার দিকে অধিক উৎকন্ঠায় তাকিয়ে রয়েছে পিউ৷ কালচে মেঘজোড়ার ন্যায় তার মনেও বিষাদের মেলা বসেছে। মনটা আজকাল মোটেই ভালো থাকে না। কারণটা জানা নেই তার৷ হুটহাট করেই মন খারাপ হয়ে যাওয়াটা এক প্রকার মুদ্রাদোষে পরিণত হয়েছে তার। একটা সময় সবকিছু ঝলমলে লাগে, তখন করোলা ভাজি ও খেতে অমৃত লাগে। আবার মাঝে মাঝে মনটা এতো উদাস হয়ে উঠে যে প্রিয় কফিটাও খেতে বিস্বাদ মনে হয়। আবার মাঝে মাঝে খুব রাগ উঠে, কিন্তু সেই রাগটা দেখানোর মতো মানুষ খুজে পায় না সে। কার উপরে দেখাবে, দিশা? বেচারির জীবনটা বুলেট ট্রেনের মতো ছুটছে৷ ভার্সিটিতে উঠেছে বলে কথা। সারাদিন ক্লাস করে, টিউশনি করে ক্লান্ত শরীরে বাড়ি ফিরে। মেয়েটাকে খামোখা জ্বালাতে ইচ্ছে হয় না তখন। আর নীলাদ্রি, সেই মহাশয়ের কথা আর নাই বা তোলা হোক। প্রমোশন পাবার পর থেকে লোকের দেখা রাত নয়টার আগে পাওয়া যায় না। আবার মাঝে মাঝে নাইট ডিউটিও থাকে। ঢাকার চিরন্তন জ্যামে ধাক্কা খেতে খেতে ক্লান্ত শরীরে বাড়িতে যখন ফিরে, পিউ এর দয়া হয় লোকটার উপর। তখন লোকটাকে বিরক্ত করতে ভালো লাগে না তার। তাই রাগগুলো নিজের মাঝেই আটকে রাখতে হয়। নীলাদ্রির শুক্র এবং শনিবার ছুটি থাকে। কিন্তু সেই দিনগুলো পিউ এর ছুটি থাকে না। সেই দিন গুলোতে তার ক্লাস থাকে। বাসার সব কাজ শেষে, বিকেল চারটা থেকে সাড়ে সাতটা অবধি ক্লাস করার পর, সেই এসাইনমেন্ট, প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে করতে পিউ এতোটাই ক্লান্ত থাকে যে নীলাদ্রির সাথে কফি হাতে দুটো কথাও বলা হয় না তার। পিউ এর মাঝে মাঝে মনে হয় বিয়ের আগের সময়টাই সুখময় ছিলো। শেষ বিকেলে নীলাদ্রির সাথে ঘুরতে যাওয়া, রমনা পার্কে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা, বাদাম, আমড়া মাখা হাতে সূর্যের অস্ত যাওয়া দেখা; ব্যাপারগুলো আজও মনে দাগ কেঁটে আছে পিউ এর। নীল আকাশ আধার করে বৃষ্টি নামলো। অঝর ধারায় আকাশের ক্রন্দন চলছে। পিউ হাত ছড়িয়ে শ্রাবনের ধারাকে আলিঙ্গন করছে। তার বিষাধসিন্ধুও ঢেউ তুলছে। অজানা কারণে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে পিউ এর। নোনাজলের ধারাকে বাঁধা দিতে ইচ্ছে করলো না তার৷ বৃষ্টির ধারার সাথে তার নোনাজল মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। কেউ তো দেখছে না! এর মাঝে হৃদয়টা হালকা করলে ক্ষতি কি!
একরাশ বিরক্তি নিয়ে একাডেমিক বিল্ডিং এর নিচে দাঁড়িয়ে আছে দিশা। মাত্র ক্লাস শেষ হলো তার। সাড়ে ছয়টার মধ্যে ছাত্রীর বাসায় উপস্থিত হতে হবে। নয়তো আজ ও দক্ষযোগ্য বাঁধাবেন ছাত্রীর মা। মহিলার সমস্যাটা কি দিশা বুঝে উঠতে পারে না। যতই হোক সে তো একটা মানুষ, তার একটা ব্যাক্তিগত জীবন আছে। মাঝে মাঝে ছুটিছাটা পড়তেই পারে, এক আধদিন একটু দেরি হতেই পারে। কিন্তু তাতে খুব আপত্তি মহিলার। মেয়েকে সাড়ে ছয়টায় পড়াতে যেতে হবে মানে ঠিক সাড়ে ছয়টায় ই যেতে হবে। একমিনিট এদিক ওদিক করা যাবে না। একদিন ছুটি দিলে উনি বেতন কেটে রাখেন। মাঝে মাঝে দিশার ইচ্ছে করে লাথি মেরে টিউশনি টা ছেড়ে দিতে। কিন্তু টাকার কথা চিন্তা করে আর ছাড়া হয় না। ঢাকা শহরে আজকাল ছাত্র-ছাত্রী থেকে টিউটরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। তাই একবার টিউশনিটা চলে গেলে আর পাবে কি না সন্দেহ। আর বেতনটা বেশ ভালো, পনেরো হাজার টাকা। দিশার পড়াশোনার সকল খরচ এই টাকার মাঝেই হয়ে যায়। বাবার কাছে চাউতে হয় না। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এই উপায়টা হারাতে চায় না সে। তাই যতই তান্ডব করুক ছাত্রীর মা, দাঁতে দাঁত চেপে সয়ে যায় সে। আজও একই কাজ করতে হবে। বন্ধ সে দিতে পারবে না। আর বিনা নোটিসের বৃষ্টির কারণে ছাতাও আনা হয় নি তার। তাই বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত এখানেই অপেক্ষা করতে হবে তাকে। বৃষ্টি ব্যাপারটা কোনো কালেই পছন্দ নয় দিশার। ঢাকা শহরের ড্রেইনিং সিস্টেম এতোটাও ভালো নয়, তাই টানা তিন-চার ঘন্টা বৃষ্টি হলেই শহর তলিয়ে যায়। কর্দমাক্ত, ড্রেইনের পানির মাঝে ছাতা মাথায় হাঁটা ব্যাপারটায় বেশ অস্বস্তিকর লাগে তার জন্য। ঘরের মধ্যে কফি হাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাশটা শুনতে মনোরম লাগলেও হাটু অবধি নোংরা কালো পানিতে ছাতা হাতে চলাচল করাটা মোটেও মনোরম নয়। আধ ঘন্টা কেটে গেছে, কিন্তু বৃষ্টি থামার নাম নেই। এখন রওনা না দিলে আর সাড়ে ছয়টার মধ্যে পৌছানো সম্ভব নয়। উপায়ন্তর না পেয়ে ব্যাগটা মাথার উপর রেখেই বিল্ডিং এর বাহিরে পা দিলো দিশা। তখনই একটা লাল ছাতা তার মাথার উপরে ছাওনি দিলো। দিশা কৌতুহলী চোখে পাশে তাকাতেই দেখলো একজন সাদা শার্ট পরিহিত পুরুষ তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। খানিকটা গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“শ্রাবণ মাসে পাগলও ছাতা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়! এই বুদ্ধিটা আজকালকার লোকের মধ্যে নেই। এই ব্যাগটা আর যাই করুক এই অঝর বৃষ্টি থেকে রক্ষা দিবে না।”
বলেই দিশার হাতে ছাতাটা ধরিয়ে বৃষ্টির মাঝে দ্রুত গতিতে হাটা দিলো লোকটি। তার সমস্ত গা ভিজে যাচ্ছে। সাদা শার্টটা শরীরের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে। তবুও তার ছাতাটা দিশাকে দিয়ে দিয়েছে সে৷ দিশা কিছুক্ষণ বেকুব নজরে লোকটার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। লোকটাকে সে চিনে, তাদের ডিপার্টমেন্টের নতুন লেকচারার। কিন্তু সেই সুবাদে তাকে দিশা চিনে না। চিনে ঐন্দ্রিলার সুবাদে। এই লোকটার সাথেই একটা সময় ঐন্দ্রিলার বিয়ে হবার কথা ছিলো। কিন্তু কোনো একটা কারণে বিয়েটা আর হয় নি। লোকটাকে একবার দেখেছিলো সে আড়াই বছর আগে, যখন ঐন্দ্রিলার সাথে তার বিয়ের কথা হচ্ছিলো। এর পর কলেজেই য়ার দেখা মিলে। হ্যা, লোকটি আহাশ। আহাশ সেই কলেজের টিচার, যে কলেজে দিশা ভর্তি হয়েছে। এটাকে কি কাকতালীয় ঘটনা বলা যায় নাকি নিয়তি জানা নেই তার। বৃষ্টির বেগ বেড়েছে, চারিদকটা ঝাপসা লাগছে। এই বৃষ্টির মাঝেই কোথাও হারিয়ে গেছে আহাশ। তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। দিশা এখনো একাডেমিক বিল্ডিং এর সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আজ হয়তো টিউশনিতে আর যাওয়া হবে না___________
চায়ের আড্ডা বসেছে নীলাদ্রিদের বাসায়। বদরুল সাহেব, শরীফ সাহেব এবং তাদের কিছু বন্ধু। জীবনের শেষ কটা দিন বেশ ফুরফুরে ভাবেই কাটাতে চান শরীফ সাহেব। বদরুল সাহেবের রিটায়ার্ডের পর এই আড্ডার আসর যেনো তার নিত্যদিনের কর্মের তালিকায় যুক্ত হয়েছে। বসার ঘরের আড্ডার আসরকে আরোও জীবন্ত করে তুলেছে পিউ এর হাতের চা এবং আসমা বেগমের পিয়াজু। রান্নাঘরে আসমা বেগমের সাথে হাতে হাতে কাজ করছে পিউ৷ পিউ এর ভেজা চুল দেখে আসমা বেগম উদ্বিগ্ন স্বরে বলে উঠলেন,
” তুই কি ভোর সন্ধ্যায় গোসল করেছিস?”
” না মামি, বিকেলে ছাদে ভিজেছিলাম একটু”
আসমা বেগমের প্রশ্নে স্মিত হাসি দিয়ে কথাটা বলে পিউ। আসমা বেগম চিন্তিত কন্ঠে বললেন,
” তোরা যে কি করিস! তুই খুব ভালো করে জানিস অসময়ে ভিজলে তোর ঠান্ডা লাগে। চোখজোড়া লাল হয়ে এসেছে। আবার জ্বর বাধাবি। আমার কোনো কথা কেনো তোরা শুনিস না বল তো! এই তো সপ্তাহ খানেক আগে জ্বর থেকে সুস্থ হয়েছিস। আবার কেনো আজকে ভিজতে গেলি?”
” মামী, তুমি চিন্তা করো না। আমি ঔষধ খেয়ে নিবো। এবার আর জ্বর বাঁধাচ্ছি না।”
” নীলকে ফোন দে তো! বলিস আসার সময় আদা আর লবঙ্গ আনতে।”
” তোমার ছেলের কি সময় আছে? এখন ফোন দিলেই খিটমিট করবে।”
” ছেলেটার জন্য মায়াই হয়। সারাক্ষণ পরিশ্রম করে বেঁচারা। এভাবে বলিস না। তোর মামা কম ঝাড়ি দিতো আমাকে? আমাদের সময় তো মোবাইল ফোন ছিলো না। ছিলো ল্যান্ডলাইন। চাঁদনি আপার বাসায় ফোনের লাইন ছিলো৷ অফিসে ফোন দিলে রেগে যেতেন। খট করে ফোন কেটে দিতেন। কি জীবন ছিলো! একা একা ঘরে কার ভালো লাগতো! আমি সারাদিন ঘরে ঘুরে বেড়াতাম। তুই তো বই পড়িশ, গান শুনিস, আমাদের সময় সেগুলো ছিলো না। তারপর যখন তুই আসলি আমাদের বাসায় সব বদলে গেলো। আমার সময় কাটতে লাগলো তোর সাথে। তোর সাথে কখন দিন কেটে যেতো টের ই পেতাম না। তাই বলছি একটা বাচ্চা নিয়ে নে। দেখবি, সময় কেটে যাবে। তখন আর এই মান,অভিমান হবে না”
আসমা বেগমের কথাটা যে আগে ভাবে নি পিউ, তা নয়। কিন্তু নীলাদ্রি মোটেই রাজী নয় এতো তাড়াতাড়ি বাচ্চা নিতে। বিয়ের দু বছর এখনো হয় নি। শুধু তাই নয়, পিউ এর মাস্টার্স এখনো শেষ হয় নি। নীলাদ্রি পিউ এর পড়ালেখার প্রতি খুব সচেতন। সে চায় পিউ নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলুক৷ তাই এখন বাচ্চা নিয়ে পিউ কে ঘরের চার দেয়ালের মাঝে আটকে দিতে মোটেই রাজী নয় সে৷ বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো পিউ এর। বিয়ের পর সব যেনো কেমন গবলেট হয়ে গিয়েছে। হঠাৎ কলিংবেলটা বেজে উঠে। হাতটা ধুয়ে আঁচলে মুছতে মুছতে দরজাটা খুলে পিউ। দরজাটা খুলতেই দেখে ভিজা শরীরে তার বর মহাশয় দাঁড়িয়ে আছে। পিউ ঘড়ির দিকে তাকালে দেখে মাত্র সাতটা বাজে। এতো তাড়াতাড়ি নীলাদ্রি বাসায় আসবে ব্যাপারটা যেনো স্বপ্ন। জুতোটা খুলতে খুলতে নীলাদ্রি বলে,
” এক কাপ গরম কফি নিয়ে রুমে আয় তো, কথা আছে”
বলেই গটগট করে রুমের দিকে হাটা দেয় নীলাদ্রি। পিউ ও তাড়াতাড়ি কফি বানাতে ছুটে। কেনো যেনো আজ দুকাপ কফি বানাতে ইচ্ছে হলো পিউ। অনেক দিন বাদে নীলাদ্রির সাথে কফি খাওয়া যাবে। আসমা বেগম মুচকি হেসে বলে,
” পিয়াজুর প্লেটটা নিয়ে যা। এই বুড়োর দলকে আমি সামলে নিবো”
আসমা বেগমের কথায় মুখ লাল হয়ে যায় পিউ। লাজুক হাসি হেসে ট্রে টা নিয়ে রওনা দেয় নিজের ঘরে। ঘরে কেউ নেই, ওয়াশরুম থেকে শাওয়ারের শব্দ পাচ্ছে পিউ। ট্রে টা টেবিলের উপর রেখে ওয়াশরুমের বাহিরের পড়ে থাকা ভেজা কাপড় গুলো গুছিয়ে নিলো পিউ। নীলের মানিব্যাগ, চাবি, ঘড়ি বিছানায় এলোমেলোভাবেই পরে রয়েছে। সাথে রয়েছে একটা পলিথিনের প্যাকেট এবং দুটো টিকিট। পলিথিনের প্যাকেটটা খুলতেই দেখলো একটা মোটা বেলী ফুলের মালা। মালাটা হাতে নিলে কিছুক্ষণ মন দিয়ে গন্ধ নিলো পিউ। সেই কবে এমন মালা এনেছিলো নীলাদ্রি তার মনে নেই। সেই মাথা ডাইরির পাতার ভাজে শুকিয়ে লেপ্টে আছে। হঠাৎ খেয়াল করলো একজোড়া শীতল হাত তার কোমড় আকড়ে ধরেছে। উন্মুক্ত বুক তার পিঠে লেপ্টে রয়েছে। উষ্ণ ঠোঁট কানে ছুয়ে মৃদু স্বরে বললো,
” পছন্দ হয়েছে?”
পেছনে না ফিরেই খানিকটা অভিমানী কন্ঠে বললো পিউ,
” ঘুষ দেওয়া হচ্ছে বুঝি?”
” অনেকটা সেটাই। এখন ঘুষ বাদে কোনো আরজি পাশ করা হয় না। তাই এই সামান্য ঘুষ”
” কিসের আরজি?”
” সময় চাই, আমার বউ এর একান্ত সময়।”
” হেয়ালি না করে ঝেড়ে কাশুন মশাই”
” আমার বউ টাকে নিয়ে পালিয়ে যাবো তিনদিনের জন্য।৷ কক্সবাজার পালাচ্ছি। তিনদিন শুধু আমি আর আমার বউ। তার সময়টাকে একান্ত ভাবে পেতেই আমার এই আরজি।”
নীলাদ্রির কথাটা শুনে বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠে পিউ এর ঠোঁটে। হিনহিনে স্বরে বলে,
” আমার সময়! ভাবটা এমন যেনো আমি ব্যস্ততা দেখাই”
” অনেক অভিযোগ জমেছে বুঝি!”
পিউ এর ঘাড়ে নাক ঘষে কথাটা বলে নীলাদ্রি। পিউ ধীর কন্ঠে বলে,
” একা থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। মাঝে মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়। আচ্ছা বিয়ের পর সব পাল্টে যায় কেনো বলতে পারো?”
” দায়িত্ব বেড়ে যায় বিয়ের পর। দায়িত্ব গুলো পালন করতে করতে নিজেদের সময়টুকুই হারিয়ে যায়”
” তাহলে কি আমাদের ভালোবাসাটুকুও দায়িত্বের ভারে হারিয়ে যাবে?”
আকুল কন্ঠে কথাটা বলে পিউ। নীলাদ্রি মুচকি হেসে বলে,
” ভালোবাসা হারায় না, শুধু রুপ বদলায়। আগে যে ভালোবাসা শুধু দুজনে সীমাবদ্ধ ছিলো এখন তা দুই পরিবারে ভাগ হয়ে গেছে। দিন যত যাবে তত ভালোবাসার সীমা পারবে, দায়িত্ব বাড়বে। এর মাঝেই নিজেদের চাওয়া পাওয়া টুকু বুঝে নিতে হবে। এখন তোর কিশোরী মনটা বিদ্রোহ করছে ঠিকই, কিন্তু যতদিন যাবে তত দেখবি এই না পাওয়ার অভিযোগ গুলো মিলিয়ে যাবে।”
” এতো সুন্দর করে কথা বলো কিভাবে তুমি? কথার জালে প্রতিবার পার পেয়ে যাও”
পিউ এর কথায় হো হো করে হেসে উঠলো নীলাদ্রি। পিউ কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে কপাল ঠেকায় সে। তারপর আকুল কন্ঠে বলে,
” পিউ?”
” হুম?”
” ভালোবাসি”
” জানি তো, তাই তো শত অভিযোগের মাঝেও বারবার বলি, ভালোবাসি”
পিউ এর ঠোঁট জোড়ায় আলতো করে ঠোঁট ছোয়ায় নীলাদ্রি। তখনই দরজায় কড়া পড়ে। নীলাদ্রি ধীর কন্ঠে বলে,
” তোর শ্বশুর আর মামুর ডাক পড়েছে। শুনে আয়। আমি অপেক্ষা করছি। আজ কফিটা একসাথেই খাবো”
পিউ এর স্মিত হাসি দেয়। তারপর আঁচলটা ঠিক করে পা বাড়ায় ঘরের বাহিরে। একে অপরকে এতোটা নিবিড়ভাবে উপলদ্ধি করে বলেই তাদের ভালোবাসার স্বপ্নছায়া আজ পরিপূর্ণ________
চলবে
[আসসালামু আলাইকুম, সবাইকে ঈদ মোবারক। চাঁদরাত উপলক্ষে আজ এই বোনাস পর্ব। এই পর্বে অভ্র ঐন্দ্রিলা নেই। চিন্তা করবেন না, তাদের নিয়ে ইনশাআল্লাহ আগামীকাল আরেকটি বোনাস পর্ব পোস্ট করবো। বোনাস পর্বটি শুধু আমার পেজেই পোস্ট করছি। দয়া করে কার্টেসি বাদে কপি করবেন না]
মুশফিকা রহমান মৈথি