পানপাতার ঘর? পর্ব ৩১+৩২

0
552

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ৩১+৩২
লেখা – Mahfuza_Monira

নতুবা বেগম আহ্লাদী গলায় ডাকেন মিশিকে। মিশি উদয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। উদয় মিশির কাধে হাত রেখে বলে-
————-যেয়ে দেখো কি বলে।
————-আমি সিউর রেজাল্ট নিয়ে কিছু বলবে।
————-বললে বলবে। তুমি কোনো জবাব দিও না।
মিশি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে-
————-চেষ্টা করবো।

মিশি দরজা খুলে নতুবা বেগম এর রুমের দিকে এগিয়ে যায়। উদয় দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকে। বুকের ভেতর টা ঢিপঢিপ করছে তার। এক অজানা ভয়ে বুক জমে আছে। সেও তো মিশিকে হারাতে চায়না। মাত্রই তো শুরু হলো তাদের প্রেম কাহিনী, এত তাড়াতাড়িই কি শেষ হয়ে যাবে!!
.
মিশিকে দেখে নতুবা বেগম মুখে পান গুঁজে বলেন-
———-আজকে তোমার রেজাল্ট দেওয়ার কথা ছিল না?
মিশি নিচু গলায় বলে-
———–হুম।
———–৭০ এর উপরে পেয়েছো? নাকি নিচে?

মিশি জবাব দেয়না।
নতুবা বেগম আবার বলেন-
———–মৌনতা সম্মতির লক্ষণ,তাহলে ভেবে নিচ্ছি ৭০ এর নিচে পেয়েছো।

মিশি এবারো কোনো কথা বলে না। মিশির চুপ থাকা যেন নতুবা বেগম এর বুকে একটা প্রশান্তির বাতাস বইয়ে দিচ্ছে। তিনি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলেন-
————–কালকে ছেলে পক্ষ দেখতে আসছে তোমায়। ছেলে ভালো,শিক্ষিত। ম্যাট্রিক পর্যন্ত পড়েছে। এরপর বিদেশ গিয়েছিল। মোটা অংকের টাকা পয়সা নিয়ে ঘুরে সব সময়। খালি একটাই সমস্যা। ছেলের বয়স একটু বেশি,৩০ এর কোঠায় তার বয়স। তাতে আর কি সমস্যা! ছেলেদের একটু বেশি বয়স হলেই ভালো হয়। তারা সংসার বুঝে ভালো করে। তোমাকে সুখেই রাখবে।

মিশি অবাক হয়ে নতুবা বেগম এর দিকে। বলে-
————আমি কি দেখতে অসুন্দর,নাকি একটা হাত বা পা নেই আমার! নাকি আমার চোখ অন্ধ! যে এরকম একটা বুড়োর সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছো!!

নতুবা বেগম তাচ্ছিল্যের সুরে বলেন-
————-অংকে ফেইলটুশ তুমি। এটাই তো যথেষ্ট তোমার কমতির দিক থেকে। তাই নয় কী?

মিশির রাগে গা রি রি করে। নতুবা বেগম তার মা না হয়ে যদি অন্য কিছু হতো,এতক্ষণে তাকে বুঝিয়ে দিতো একদম। মিশি কোনো উত্তর দেয়না। নতুবা বেগম এর রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য এগোতেই বকর মোল্লা সে রুমে ঢুকে পড়ে। তার পিছু পিছু উদয় ও ঢুকে।
মিশি মনে জোর পায়। এবার বাবাই উচিত জবাব দিয়ে দিবে এই মহিলা কে।

বকর মোল্লা মিশির দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে বলেন-
———–কি নিয়ে কথা চলছিল মা-বেটির?
মিশি আহত গলায় বলে-
———–মা আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে বাবা। ছেলের বয়স ৩০! আমার দ্বিগুন!! ব্যাপার টা কেমন না?

বকর মোল্লা অবাক হওয়ার ঢং করে বলেন-
————-সে কী! তুমি তো বাজি তে জিতেই গেছো। তবে আবার কেন তোমাকে বিয়ে দেওয়ার কথা বার্তা চলছে! আজব!

মিশি অবাক হয়। তার থেকেও বেশি অবাক হয় নতুবা বেগম। তিনি চোখ বড়বড় করে বলেন-
———-ও ফেইল করেনি?
বকর মোল্লা স্মিত হেসে বলেন-
———-আমার মেয়ে কে কি একদম ধুলোবালি ভাবো নাকি! সে ৭১ পেয়েছে। ৭০ এর বেশি। বুঝেছো?

নতুবা বেগম চুপসে যান। ধ্যাৎ! সব কিছুতে বালি পড়ে গেলো যেন।

মিশি অবাক হয়। উদয় মুখ টিপে টিপে হাসে। ইচ্ছে করছে বকর মোল্লাকে জড়িয়ে ধরতে শক্ত করে। আসলেই,পৃথিবীর বেস্ট বাবা তিনি…

বকর মোল্লা নতুবা কে উদ্দেশ্য করে বলেন-
———–আমি দেখতে চাচ্ছিলাম তুমি কি করো মিশি ফেইল করলে তাই ওর খাতা টা আমার কাছে আটকে রাখছিলাম আর ওকে মানা করেছিলাম তোমাকে কিছু বলতে রেজাল্ট এর ব্যাপারে। আমি অবাক হয়ে গেলাম তোমার কার্যকলাপ দেখে। যেখানে মেয়েকে তুমি আঁকড়ে ধরবে, উৎসাহ দিবে যে ফেইল করেছে বড় কিছু তো হয়নি,সেখানে তুমি তার ফেইল করাতে উল্টো খুশি হচ্ছো। আমার কি টাকা পয়সা কম? আমি চাইলে সারাজীবন আমার মেয়েকে আমার কাছে রেখে খাওয়াতে পারবো। তাকে বিয়ে দেওয়ার দরকার হবে না। নতুবা,একটাই মেয়ে আমাদের। একটু ভালোবাসতে শিখো। তোমারই তো মেয়ে সে! এমন না হয়,তুমি মরে গেলেও তোমার লাশের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে মিশি! সেরকম আঘাত তার মনে দিও না।

নতুবা বেগম চুপ করে বিছানার উপর বসে পড়েন। বকর মোল্লার বলা প্রতিটা কথা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সে কী আসলেই মিশির মা হয়ে উঠতে পারলো না!
.
বকর মোল্লা নিজের স্টাডি রুমে যেতেই তাকে চেঁপে ধরে মিশি। সে তো পেয়েছিল ৬৯ তাহলে এখন ৭১ হলো কী করে..!

————বাবা বলো না। কিভাবে ৭১ বানালে? ৬৯ কেটে ৭১ বানিয়ে দিছো??

বকর মোল্লা হাসেন।
————-ওরকম করলে তো আগেই করা যেতো। এত কাহিনী করে আলী বাবুর বাসায় যাওয়া লাগতো না আমার!

মিশি অবাক হয়ে উদয়ের মুখের দিকে তাকায়। তারপর বকর মোল্লার দিকে ফিরে বলে-
———-তুমি স্যারের বাসায় গিয়েছিলে বাবা?
————হুম। সেখান থেকেই তোমার নাম্বার দুই বাড়িয়ে আনলাম।
————আমার জন্য তুমি স্যার কে রিকোয়েস্ট করেছো দুই বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য??
————-রিকোয়েস্ট করবো কেন?দুই নাম্বার তোমার প্রাপ্য ছিল,শুধু তুমিই খেয়াল করে দেখোনি।

মিশি বিষ্ময়ের গলায় বলে-
———–বাবা বুঝলাম না। বুঝিয়ে বলো।
———–তোমার একটা অংক হয়েছিল। কিন্তু আলী বাবু সেখানে নাম্বার দিতে ভুলে গিয়েছিল। সেটাই যখন উনাকে দেখালাম,উনি বাড়িয়ে দিলো। যদি কান্না কাটি না করে খাতা টা একটু ভালো করে দেখতা,তবে এত কান্না কাটি করা লাগতো না এতক্ষণ।

মিশি খুশিতে ডগমগ হয়ে বকর মোল্লা কে জড়িয়ে ধরে।
————লাভ ইউ সো মাচ বাবা। তুমি আসলেই পৃথিবীর বেস্ট বাবা। আমার জন্য কত কিছু করলা তুমি..

বকর মোল্লা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন-
————একটা মাত্র মেয়ে আমার। তার জন্য করবো না তো কার জন্য করবো।

মিশি আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। বকর মোল্লা হাতের ইশারায় উদয় কে কাছে ডেকে বলে-
————–মিশি আমাকে সবই বলেছে। আমি তো মেনে নিয়েছি তোমাদের কিন্তু…ভালো করে পড়াশোনা করবে দুজনে। নিজেদের পায়ে দাঁড়াবে। তারপর বিয়ে…বুঝেছো?

উদয় মাথা দুলিয়ে বলে-
———–জ্বি আংকেল বুঝেছি।

বকর মোল্লার স্টাডি রুম থেকে বের হতেই উদয় বলে-
————–বলেছিলাম না,তোমার বাবার প্রতি আমার পুরো বিশ্বাস আছে। দেখলে তো?
মিশি উদয়ের কোমড়ে গুতো মেরে বলে-
————-আমার বাবার প্রতি আমারো বিশ্বাস আছে। হুহ!!
.
.

সময় কেটে যায়।
এস এস সি এক্সাম শেষ হয়েছে আরো ৫ মাস আগে। উদয় মিশির ফলাফল ভালো হয়েছে বেশ। একটা ভালো কলেজেও এডমিশন নিয়েছে তারা। দুজনে চুটিয়ে পড়াশোনায় ডুবে গেছে। নতুবা বেগম আর আগের মতো মেয়ের বিয়ে বিয়ে করেন না। উল্টো কেউ মিশির বিয়ের জন্য প্রস্তাব নিয়ে আসলে তাকে ধমকে ধামকে রাখেন না নতুবা বেগম। লিমা আর মেঘ এখন মেঘের বাড়িতেই। বিয়ের ২ মাসের মাথায় তাদের কে মেনে নিয়েছে সোহেলা বেগম। শত হোক ছেলে তো! আর কত দূরে দূরে রাখবেন।
.
.
মিশি উদয়ের অপেক্ষা করছে ক্লাসরুমে। ছেলেটা আজ তাকে নিতেও আসেনি তার বাড়িতে। ক্লাস শুরু হতে আর ১০ মিনিট বাকি। এখনো দেখা নেই উদয়ের।
মিশি ব্যাগের ভেতর থেকে ফোন বের করে উদয় কে ফোন করার জন্য। ঠিক তখনি ক্লাসে ঢুকে উদয়। চোখ লাল,রাতে ঘুমায় নি যেন। মিশি অবাক হয়। বলে-
————এটা কী অবস্থা করে রাখছো নিজের! রাতে ঘুমাও নি? আর আজ আমাকে নিতেও আসো নি। কেন??

উদয় কাশতে কাশতে বলে-
———-সন্ধ্যা থেকেই শরীরে খুব জ্বর। ঘুমাতে পারিনি ঠিক মতো রাতে। তাই সকালে উঠতেও দেড়ি হয়ে গেছে।

মিশি উদয়ের কপালে হাত রেখে বলে-
————এখনো তো অনেক জ্বর। হাত পুড়ে যাচ্ছে আমার। আসতে গেলা কেন তাহলে?
আজ না আসলেই হতো। বিশ্রাম করতে তার চেয়ে বরং।

উদয় মুচকি হেসে বলে-
————তোমার জন্যেই আসা। আমি না আসলে তুমিও বুঝি খুব ক্লাস করতা?

মিশি স্মিত হাসে। ছেলেটা তাকে কত্ত ভালোবাসে..!

বেল বেজে উঠে। স্যার চলে আসবে এখুনি। মিশি বেঞ্চের দিকে এগোয়। পিছু পিছু উদয়।

এক পা….দুই পা…..
হঠাৎ ধপ করে কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ হতেই মিশি চমকে পিছে তাকায়। আরো চমকায় যখন দেখে,উদয় মাটিতে চেতনা হারিয়ে পড়ে আছে।

চলবে…….

পানপাতার ঘর ??
পর্বঃ৩২
লেখা – Mahfuza_Monira

উদয়ের মাথার কাছে বসে আছে মিশি। ডাক্তার এসে উদয়ের বাবা কে ডেকে নিয়ে গেলো অনেকক্ষণ হলো। উদয় মিট মিট করে চোখ খুলতেই মিশির ফ্যাকাশে মুখ টা চোখে পড়ে তার। জোর করে হাসার চেষ্টা করে একটু। মিশি উদয়ের চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে-
—————এখন কেমন বোধ করছো?
উদয় হালকা করে মাথা দুলিয়ে বলে-
—————মোটামোটি। কিন্তু কি হয়েছিল আমার? আর কোথায় আছি এখন?
—————ক্লাসরুমে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে। পরে আংকেল আর বাবাকে ডেকে তোমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসছি। এখন হাসপাতালেই আছো।
উদয় অন্যদিকে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে-
—————ওহ।
.
মইনুল সাহেব আসেন। সাথে বকর মোল্লাও। দুজনেরই মুখ ফ্যাকাশে। মিশি তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে চিন্তিত গলায় বলে-
—————ডাক্তার কি বললো আংকেল? বাবা ও ঠিক হয়ে যাবে তো?

মইনুল সাহেব ও বকর মোল্লা একে অপরের দিকে তাকায়। তারপর দুজনেই মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে-
—————–কি হবে আমার ছেলের! একদম ঠিক আছে সে। এখুনি বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে।

মইনুল সাহেব উদয়ের পাশে দাঁড়িয়ে উদয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলে-
————আর কত শুয়ে থাকবি! চল উঠ। বাড়ি যাবি চল।
.
রাত বাড়তেই মিশির মনের খচখচানি বেড়ে যায়।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে মিশি বারবার ফোন করে যায় উদয়ের নাম্বারে। রিং হয় কিন্তু ধরে না। সাতবারের বার কল করার পরেও যখন উদয় ফোন ধরে না,মিশির মনের খচখচানি তখন ছটফটানি তে পরিনত হয়।
মিশি দ্রুত পায়ে বকর মোল্লার রুমের দিকে আগায়।
মাত্রই রাতের খাবার খেয়ে শুয়েছেন বকর মোল্লা। দরজায় মৃদু টোকা পড়তেই উঠে পড়েন আবার।

———–কে?
———–বাবা আমি মিশি।

বকর মোল্লা মিশিকে এত রাতে দেখে অবাক হন খানিকটা। ভ্রু কুঁচকে বলেন-
———–কি হয়েছে মামণি?

মিশি দুর্বল গলায় বলে-
————বাবা উদয় ফোন ধরছে না। আমার চিন্তা হচ্ছে খুব। আমি যাই ওদের বাসায়? প্লিইইইজ।

বকর মোল্লা সাথে সাথেই বলেন-
———–হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে ও। আর এখন অনেক রাত ও হয়েছে। কাল সকালে যেও বরং!
————না বাবা।আমার মন মানছে না। প্লিজ বাবা,যাই?

মিশির ঝাপসা চোখ দুটো দেখে বকর মোল্লা আর না করতে পারেন না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন-
————ঠিক আছে যাও। আমি মইনুল ভাই কে বলে দিচ্ছি ফোন করে। গাড়ি নিয়ে যাও।
————-থ্যাংকস বাবা।

মিশি আর অপেক্ষা করে না। গায়ে শাল জড়িয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ছোটে গাড়ির দিকে। উদয়ের কাছে তার যে এক্ষুনি যাওয়া প্রয়োজন।
.
.
রাত ১১ টা প্রায়।
উদয়দের বাসায় ঢুকতেই ড্রয়িংরুমে মইনুল সাহেব কে বসে থাকতে দেখে মিশি। মইনুল সাহেব গম্ভীর গলায় বলেন-
———–তোর বাবা ফোন করলো। বললো তুই আসবি!

মিশি এদিক ওদিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে-
————কাকু,উদয় কই?

মইনুল সাহেব আগের মতোই গম্ভীর গলায় বলেন-
————আছে ওর ঘরে।

মিশি সেদিকে এগোতে নিলেই মইনুল সাহেব ডেকে উঠেন মিশির নাম ধরে। মিশি থমকে দাঁড়ায়। পিছন ঘুরে বলে-
———–কি কাকু?

মইনুল ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলে-
————এভাবে হুট হাট করে আসা ঠিক না! আমরা বাসায় দু বাপ ছেলে থাকি! দিনে আসা এক কথা,আর এত রাতে আসা আরেক কথা। নেহাৎ তোর বাবা বললো তাই না করতে পারিনি। এরপর থেকে তুই আর এভাবে আমাদের বাসায় আসবি না মিশি। উদয় কে একটু ছাড় দে!!
কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে মইনুল সাহেব ভেতরের রুমে চলে যান। মিশি সেখানেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে রয়। কি বলে গেলো মইনুল কাকু এসব!! হঠাৎ কি হলো আজ কাকুর!!
মিশির মাথা আকাশ ভেঙে পড়ে যেন। চোখ ভেঙে কান্না পায় তার। মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়,’উদয় ঠিক হলেই ওর কাছে বিচার দিকে কাকুর নামে।’
বা হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে মিশি উদয়ের রুমের দিকে আগায়।
.
.
কম্বল জড়িয়ে চুপ করে শুয়ে আছে উদয়। মিশি রুমে প্রবেশ করতেই উদয় বলে-
————-মিশি আসছো?
মিশি চমকায়। বলে-
————কি করে বুঝলা যে আমি আসছি?
————বাবা বললো।
মিশি ছোট করে জবাব দেয়-
————-ওহ!

মিশি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে উদয়ের পাশে বসে। উদয় কে উদ্দেশ্য করে বলে-
————-এভাবে কম্বল জড়িয়ে আছো কেন? খুব শীত করছে?
————-হুম। শীতকাল তো শীত করবে না?
————কিন্তু তুমি যেভাবে শুয়ে আছো,দেখে মনে হচ্ছে বরফের রাজ্যে শুয়ে আছো। এত গুটিয়ে আছো ক্যান?

উদয় ফ্যাকাশে মুখে জবাব দেয়-
———–এমনি।

মিশি উদয়ের কপালে হাত রাখে। ভীষণ গরম শরীর। মিশি অবাক হয়ে বলে-
————-তোমার দেখি গায়ে জ্বর!
উদয় নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলে-
————-কই?
————-ঢং করো না? এই যে আমার হাত পুড়ে যাচ্ছে!
————তুমি বাহির থেকে আসছো না। তাই হাত ঠান্ডা তোমার। আর আমি অনেকক্ষন যাবত কম্বলের তলায় বিধায় আমার শরীর গরম। তাই হঠাৎ ঠান্ডা হাতে গরম স্পর্শ পেয়ে তোমার হাত পুড়ে যাচ্ছে।

মিশি উদয়ের চোখে চোখ রেখে বলে-
————-কি হয়েছে উদয় তোমার বলো তো। আমার কিন্তু খুবই বিরক্ত লাগতেছে। আমি স্পষ্ট দেখতেছি তোমার জ্বর। আর তুমি বলতেছো জ্বর না!! আবার আজকে মইনুল কাকু ও আমার সাথে কেমন ব্যবহার করলো।

উদয় চুপ করে মিশির অভিযোগ শুনে যায়। মুখে কিছুই বলে না।

উদয় কে চুপ থাকতে দেখে মিশি বলে-
————-কি হলো জবাব দাও!!

উদয় শান্ত গলায় বলে-
————-বাবা যা বলেছে হয়তো ঠিকই বলেছে মিশি। এত সিনক্রিয়েট করার কি আছে?

মিশি আশ্চর্যের সপ্তম আসমানে উঠে যায়। চোখ বড়বড় করে বলে-
—————-জাস্ট বলতেছি তোমাকে,এখানে সিনক্রিয়েট এর কি পাইলা??

উদয় কথা ঘুরিয়ে বলে-
—————বাদ দাও মিশি। শরীর খারাপ লাগছে খুব। বাসায় যাবেনা?

মিশি নিচু গলায় বলে-
————-যাবো পরে। তুমি ঘুমাও।

উদয় আর কোনো জবাব দেয়না। চোখ বন্ধ করে ফেলে তার।
.
.
প্রায় দু ঘন্টা কেটে যায়। ঘড়ির কাটা দেড়টা ছুই ছুই। মিশি এক ধ্যানে বসে উদয় কে দেখে যাচ্ছে আর উদয় ঘুমে কাতর।

জানালা দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করে। উদয় ঘুমের মধ্যেই কেঁপে উঠে। মিশি জানালা টা বন্ধ করে দিয়ে নিজের গায়ের শাল টা আরো শক্ত করে জড়িয়ে নেয়। বলা বাহুল্য,তারও বেশ শীত করছে। ঘড়িতে তাকাতেই দেখে রাত ১ টা ২৫। মিশি ভাবে এখন বাসায় চলে যাওয়া উচিত তার। উদয়ের কপালে আলতো চুমু দিতেই দ্রুত মুখ সরিয়ে নেয় সে। প্রচন্ড গরম কপাল। মিশি উদয়ের গলায় হাত দেয়। শরীরও গরম।
মিশি আন্দাজ করে কম হলেও ১০৩-১০৪ জ্বর। মিশি চিন্তিত হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় উদয় কে ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে কী?
.
মিশি উঠে দাঁড়ায়। একবার উদয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা। তারপর এগোয় রান্নাঘরের দিকে। রান্নাঘরে যেতে হলে মইনুল সাহেব এর ঘর হয়ে যেতে হয়। মিশি দেখে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছে। মিশি তাকে ডাকে না,নিঃশব্দে রান্নাঘরে যায় সে। ছোট স্টিলের বাটিতে পানি নেয়। তারপর ফিরে আসে উদয়ের রুমে।
বিছানার পাশেই গামছা টা অবহেলিত হয়ে পড়ে আছে। মিশি উঠায় সেটা। বাটির পানিতে গামছার এক মাথা ভিজিয়ে ভাঁজ করে উদয়ের কপালে চেঁপে ধরে।
বারবার একই ভাবে উদয়ের কপালে জলপট্টি দিতে থাকে মিশি। উদয় ঘুমের ঘোরেই মিশির একহাত চেঁপে ধরে খুব শক্ত করে।
.
.
ফজরের আজান পড়েছে কিছুক্ষণ আগে। রাতে উদয়ের কপালে জলপট্টি দিতে দিতেই মিশি ঘুমিয়ে পড়েছিল। আজান কানে আসতেই সে জেগে উঠে। ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসে মিশি। রিডিং টেবিলের উপর থেকে জায়নামাজ নিয়ে বিছিয়ে নেয়।

ফজরের নামাজ আদায় করে সালাম ফেরাতেই উদয় দুর্বল গলায় বলে-
————–তুমি বাসায় যাওনি এখনো?

মিশি কথার জবাব দেয় না। মোনাজাত ধরে। মোনাজাতেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠে সে। একটাই চাওয়া তার,উদয় সুস্থ হয়ে উঠুক।

মোনাজাত শেষ করে উঠে দাড়াতেই উদয় আবার বলে-
————-সকালের আলো ঠিক করে ফোটার আগেই চলে যাও মিশু। পরে কেউ দেখলে আবার অনেক কথা রটাবে।

মিশি এবারো কোনো জবাব দেয় না। জায়নামাজ রেখে এসে উদয়ের পাশে বসে। কপালে হাত দেয় তার। জ্বর অনেকটা কম এখন। মিশি কিছুটা শান্তি অনুভব করে। নিচু হয়ে উদয়ের কপালে চুমু খায় আলতো করে। তারপর বলে-
————বাসায় যাচ্ছি,১০ টার দিকে আবার আসবো আমি। তুমি ঘুমাও উদু। আমি দোয়া করেছি,তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবা দেইখো।

উদয় চুপ করে থাকে।
মিশি উদয়ের কপালে চুলে নাকে মুখে হাত বুলিয়ে দেয়। উদয় আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

————আসি।

মিশি বেরিয়ে যায়। উদয় বিছানাতেই শুয়ে থাকে। ইচ্ছে করছে,মিশিকে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরুক একবার। উঠার চেষ্টা করেও উঠতে পারেনা উদয়। শরীরে এক বিন্দু শক্তি নেই তার।
উদয়ের চোখ ছাপিয়ে জলে আসে। মনে মনে বলে-
————-লাস্ট স্টেজের ব্লাড ক্যান্সারের রোগী কোনোদিন ভালো হয়না মিশি।

চলবে…….
(আচ্ছা,উদয় আর মিশি কে আলাদা করে দিলে কি আমাকে তোমরা গুলি করে মেরে ফেলবা??)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here